মীরাট, 7 মার্চ: ভোটের বাজারে বিজেপির রাজনৈতিক হিটলিস্টে থাকা ব্য়ক্তিদের মধ্যে অন্য়তম যদি হন বাংলার মমতা-অভিষেক জুটি, তাহলে তালিকার তৃতীয়জন অবশ্য়ই গান্ধি পরিবারের ছেলে তথা কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হোন, কিংবা কেন্দ্রের সেকেন্ড ইন কমান্ড অমিত শাহ, অথবা বিজেপির যেকোনও ছোট, বড় নেতা, সুযোগ পেলেই রাহুলকে আক্রমণের কোনও সুযোগ ছাড়েন না তাঁরা ৷ পাল্টা জবাব দিতে তৈরি থাকে কংগ্রেসও ৷ এ বিষয়ে তাঁদের সবথেকে পছন্দের লক্ষ্যস্থল অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ৷ রবিবার সেই ধারা অব্যাহত রাখলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রাহুল গান্ধির বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢরা ৷ রবিবার মীরাটে আয়োজিত মহাপঞ্চায়েতের মঞ্চ থেকে সরাসরি মোদিকে আক্রমণ করলেন তিনি ৷ কৃষক আন্দোলনকে সামনে রেখে শানালেন একের পর এক অস্ত্র ৷
কেন্দ্রের আনা নয়া তিন কৃষি আইনের প্রতিবাদে লাগাতার আন্দোলনে নেমেছেন কৃষকরা ৷ দিল্লির সীমানায় চলছে তাঁদের অবস্থান বিক্ষোভ ৷ কৃষকদের এই আন্দোলনকে খোলাখুলি সমর্থন জানিয়েছে কংগ্রেস ৷ আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়াতেই আয়োজন করা হয়েছে মহাপঞ্চায়েতের ৷ এদিন উত্তরপ্রদেশের মীরাটে আয়োজিত সেই কর্মসূচির মঞ্চ থেকেই মোদিকে নিশানা করেন প্রিয়াঙ্কা ৷ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কৃষকদের জন্য, নাকি নিজের অতি ধনী বন্ধুদের জন্য এই আইন এনেছেন প্রধানমন্ত্রী ?’’
দিল্লির সীমানায় কৃষকদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত বছরের 26 নভেম্বর থেকে ৷ এখনও আন্দোলনকারীদের সেখান থেকে হঠাতে পারেনি মোদি সরকার ৷ সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এদিন প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘100 দিন পেরিয়ে গিয়েছে, দিল্লির সীমানাগুলিতে বসে হত্যে দিচ্ছেন কৃষকরা ৷ যদি আপনাদের ভালোর জন্যই এই আইন তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে আপনারা এখনও সেখানে বসে আছেন কেন?’’ সভামঞ্চের সামনে উপস্থিত কৃষকদের এভাবেই একের পর এক প্রশ্ন করেন প্রিয়াঙ্কা ৷ প্রশ্ন ছুড়ে দেন কেন্দ্রের সরকার ও তার মাথায় থাকা মানুষটির উদ্দেশেও ৷ প্রিয়াঙ্কা জানতে চান, ‘‘যে কৃষকরা দিল্লির সীমানায় এসে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি কি সম্মান দেখানোর দরকার ছিল না মোদি ও তাঁর সরকারের ? কৃষকরা কি এতটাই গুরুত্বহীন যে আপনি একবারও তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারলেন না ?’’
এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কৃষকদের অদম্য মনোভাবকেও কুর্নিশ করেন প্রিয়াঙ্কা ৷ যেভাবে হাজারো প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, তাকে স্য়ালুট জানান কংগ্রেস নেত্রী ৷ প্রসঙ্গত, কৃষক আন্দোলনের 100 দিনের পূর্তিতে গত শনিবারই বিষয়টি নিয়ে নতুন প্রচার কর্মসূচি শুরু করে কংগ্রেস ৷ তাদের মতে, আন্দোলনকারী কৃষকদের প্রতি কেন্দ্রের আচরণ অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ৷ তারা এই গোটা পর্বকে ভারতীয় গণতন্ত্রের ‘কালো অধ্য়ায়’ বলে ঘোষণা করে ৷ টুইটারে শুরু হয় নতুন ট্রেন্ডিং #100DaysOfBJParrogance ৷
আরও পড়ুন : যোগী রাজ্য়ে প্রত্য়েকদিন কোনও না কোনও পরিবার ন্য়ায়বিচার চাইছে : প্রিয়াঙ্কা
এখন দেখার, কৃষক আন্দোলনকে ইস্য়ু করে দেশের রাজনীতিতে বিজেপিকে কতটা কোণঠাসা করতে পারে আপাতত পিছিয়ে থাকা কংগ্রেস ৷ তার থেকেও বড় প্রশ্ন হল, এতে চলতি বছর যে চারটি রাজ্য এবং একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিধানসভা ভোট হচ্ছে, সেখানে এর কোনও সুফল কি পাবে তারা ?
এদিকে, আন্দোলন নিয়ে ঝাঁঝ বাড়াচ্ছেন কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতও ৷ সম্প্রতি হরিয়ানায় আয়োজিত একটি মহাপঞ্চায়েতে যোগ দেন তিনি ৷ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, কৃষকদের লড়াই শুধু কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নয় ৷ এই লড়াই কৃষক বনাম বড় ব্য়বসায়ীদেরও লড়াই ৷ যাঁরা রুটিকেও সিন্দুকে ভরে রাখার পণ্য ভাবছেন ৷ প্রসঙ্গত, দিল্লি লাগোয়া গ্রামগুলিতে নয়া তিন কৃষক আইনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে ঘরে ঘরে প্রচারও শুরু করেছেন রাকেশ ৷