দেরাদুন, 30 নভেম্বর: 17 দিন ধরে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা টানেলে যে উদ্ধার কাজ চলেছে তা ভারতে প্রথম আর বিশ্বে তৃতীয় দীর্ঘ উদ্ধারকাজ ৷ কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি বিদেশী বিশেষজ্ঞ এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছিল টানেলে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করতে ৷ কিন্তু তাঁরা 60 মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ ধ্বংসাবশেষ সরাতে পারেননি ৷ আমেরিকান অগার মেশিনও শেষ পর্যন্ত ভেঙে যায় । যখন সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, বিশেষজ্ঞরা তখন প্রাচীন পদ্ধতিতেই ইঁদুরের মতো গর্ত খুঁড়ে শ্রমিকদের উদ্ধারের কৌশল অবলম্বন করেছিলেন ৷ কিন্তু এই ব়্যাট হোল মাইনিং পদ্ধতি 2014 সালে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল অর্থাৎ এনজিটি বন্ধ করেছিল । কারণ এত ছোট ছোট গর্ত খোঁড়ার ফলে ধস নামার প্রবল সম্ভাবনা থাকে ৷ কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞাই উদ্ধারকাজের প্রধান চাবিকাঠি হয়ে উঠল। শেষ 10 মিটার পর্যন্ত শুধুমাত্র এই ইঁদুরের মতো গর্ত খুঁড়েই 41 জন শ্রমিককে সুড়ঙ্গ থেকে বের করা সম্ভব হয় ।
উত্তরাখণ্ড স্টেট কাউন্সিল ফর সাইট অ্যান্ড টেকনোলজি (UCAST)-এর পরিচালক ডঃ দুর্গেশ পান্ত জানান, প্রযুক্তির পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যগত জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে । এই দুটির মিশ্রণ সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম, যা সারা বিশ্বে ব্যবহৃত হয় । প্রয়োজন অনুযায়ী সব কাজ করা হয় । যেখানে ড্রিলিং প্রয়োজন ছিল সেখানে প্রযুক্তি অর্থাৎ বড় মেশিন ব্যবহার করা হত । যেখানে মেশিন দিয়ে কাজ করা যেত না, সেখানে কাজ করা হত হাতে । বিশেষজ্ঞরাও একই পদ্ধতিতে এই উদ্ধার অভিযান চালিয়েছেন ।
এদিকে, জেএনইউ-এর দুর্যোগ গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক পি কে যোশি বলেছেন যে,"উদ্ধারকারী দলের প্রথম ভাবনা ছিল যে কোনও পরিস্থিতিতে সুড়ঙ্গে আটকে পড়া 41 জন শ্রমিককে উদ্ধার করা ৷ যাতে দলটি সফল হয়েছিল ৷ এই উদ্ধার অভিযানে, নতুন প্রযুক্তি এবং ঐতিহ্যগত পদ্ধতি উভয়ই ব্যবহার করা হয় । কারণ আজকের আগে এমন ঘটনা ঘটেনি । উদ্ধারকারী দল বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলেও প্রতিকূল পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জের সামনে সবই অকার্যকর হয়ে পড়ে । এরপরে ব়্যাট হোল মাইনিং পদ্ধতি অবলম্বন করে শ্রমিকদের উদ্ধার করা হয় ৷ উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা টানেলের এই উদ্ধার কাজ সারা বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে ৷ এর উপর আরও গবেষণা করা যেতে পারে ।"
তিনি আরও জানান, লক্ষণীয় বিষয় হল যে উদ্ধারকারী দল থেকে শুরু করে ভিতরে আটকে পড়া 41 জন শ্রমিক; 17 দিনের এই উদ্ধার অভিযানে কেউই ধৈর্য হারাননি । সবাই ধৈর্যের সঙ্গে এই চ্যালেঞ্জিং মিশনটি সম্পন্ন করেছে ।
এই দুর্ঘটনা শুধু উত্তরাখণ্ডের জন্য নয়, গোটা দেশের জন্য একটি শিক্ষা । এই কারণেই ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই সুড়ঙ্গগুলির নিরাপত্তা নিরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে । উত্তরাখণ্ডে রেল ও সড়ক সম্পর্কিত অনেক টানেল প্রকল্প চলছে । এই সমস্ত প্রকল্প কেন্দ্রীয় সরকারের অন্তর্গত ৷ তবে উত্তরাখণ্ড সরকারও সমস্ত প্রকল্পের পর্যালোচনা করবে, যার তথ্য দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি নিজেই ।
আরও পড়ুন :
2 অবশেষে অপেক্ষার অবসান, 17 দিন পর উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার আটকে পড়া 41 শ্রমিক
3 অন্ধকূপে শ্রমিক উদ্ধারে ইঁদুর-গর্ত! 'খুব ভালো কাজ হচ্ছে', বললেন আন্তর্জাতিক মাইক্রো টানেল বিশেষজ্ঞ