কলকাতা, 28 এপ্রিল: সুপ্রিম নির্দেশে নিয়োগ দুর্নীতির মামলা সরেছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে । দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি । সাত মাস আগে একটি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় । প্রসঙ্গ, তাঁরই এজলাসে চলা নিয়োগ দুর্নীতি মামলা । সেই সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতেই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ।
কী বলছে ওয়াকিবহাল মহল ?
সপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি রুমা পাল জানান, একজন বিচারক বা বিচারপতি যেই মামলাগুলি শুনছেন সেগুলি নিয়ে তিনি জনসমক্ষে বা সংবাদমাধ্যমকে কোনও সাক্ষাৎকার দিতে পারেন না । তবে বিচারপতিরা 'বেঙ্গালুুরু প্রিন্সিপাল' অনুযায়ী সাক্ষাৎকার দিতে পারেন সেই বিষয়ে কোনও দ্বিমত নেই । কারণ এর আগেও প্রধান বিচারপতিরা একাধিকবার সাক্ষাৎকার দিয়েছেন । সুপ্রিম কোর্টের একাধিক বিচারপতি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন । তবে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে যেটি সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হল তাঁর এজলাসে যেই বিষয়গুলি বিচার্য ছিল সেইগুলি নিয়ে তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কি না ? এই বিষয়টাই সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্টার জেনারেলের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ।
সুপ্রিম কোর্ট কী বলছে ?
সম্প্রতি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ওই সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং পিএস নরসিমার বেঞ্চ জানিয়েছিল, একজন বিচারপতি তাঁর এজলাসে মামলা চলাকালীন তার সম্বন্ধে সংবাদমাধ্যমকে কোনও সাক্ষাৎকার দিতে পারেন না । যদিও সুপ্রিম নির্দেশের পরেই সেই নির্দেশের কপি ও সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো তাঁর সাক্ষাৎকারের তর্জমার কপি চেয়ে পাঠিয়েছেন জাস্টিস গঙ্গোপাধ্যায় । পাশাপাশি সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়ও বেঙ্গালুরু প্রিন্সিপাল মেনেই এই সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন তবে ওয়াকিবহুল মহলের তরফে বলা হচ্ছে যে তিনি সেই সাক্ষাৎকারে যে প্রসঙ্গ গুলির উত্থাপন করেছিলেন সেই সব মামলা তার এজলাসেই শুনানি চলছিল।
আরও পড়ুন: সাক্ষাৎকারের তর্জমা ও সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো রিপোর্ট চাইলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়
বেঙ্গালুরু প্রোটোকল কী ?
দ্য বেঙ্গালুরু প্রিন্সিপলস অফ জুডিশিয়াল কনডাক্ট নামে পরিচিত একটি নীতিমালা । রাষ্ট্রপুঞ্জের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাউন্সিলের উদ্যোগে 2002 সালে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে এই নীতিমালা তৈরি করা হয় । মোট ছ'টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল এই সম্মেলনে ৷ সেগুলি হল- স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা, সংহতি, অধিকার, সাম্য এবং যোগ্যতা ও পরিশ্রম ।
এই নীতিমালায় পরিষ্কার বলা রয়েছে, একজন বিচারপতি সাধারণ মানুষের মতোই কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে পারেন । তবে তাতে যেন বিচারালয়ের নিরপেক্ষতা ও পবিত্রতা নষ্ট না হয় । এখানেই অনেকে মনে করছেন ওই সাক্ষাৎকার দিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নিরপেক্ষতার বিষয়টি উপেক্ষা করেছেন ৷