কলকাতা, 27 নভেম্বর: আবারও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট (Enforcement Directorate) বা ইডি (ED)-এর তলব পেলেন সুকন্যা মণ্ডল (Sukanya Mondal) ৷ আগামী 1 ডিসেম্বর সংস্থার দিল্লির দফতরে ফের একবার হাজিরা দিতে হবে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) মেয়েকে ৷ সূত্রের খবর, গরুপাচার (WB Cattle Smuggling Scam) কাণ্ডে বিপুল অঙ্কের আর্থিক নেলদেন নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সুকন্যাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে ৷
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, ওই একই দিনে অনুব্রত মণ্ডলের ভবিষ্যৎ নিয়েও জরুরি শুনানি হতে চলেছে দিল্লি হাইকোর্টে (Delhi High Court) ৷ অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের মতো তাঁকেও ট্রানজিট রিমান্ডে দিল্লি নিয়ে যেতে চান ইডি আধিকারিকরা ৷ কিন্তু, তাতে আপত্তি রয়েছে অনুব্রতর ৷ আর তা নিয়েই মামলা রুজু হয়েছে দিল্লি হাইকোর্টে ৷ আগামী 1 ডিসেম্বর সেই মামলার রায় দিতে পারে আদালত ৷
আরও পড়ুন: নয়া সমন ! সুকন্যাকে ফের দিল্লিতে তলব ইডির
এর আগে চলতি নভেম্বর মাসে একাধিকবার দিল্লিতে ইডি-এর সদর কার্যালয়ে হাজিরা দিতে হয়েছে সুকন্য়া মণ্ডলকে ৷ দফায় দফায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ইডি আধিকারিকরা ৷ যদিও সূত্রের দাবি, সুকন্যার উত্তরে মোটেও সন্তুষ্ট নন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা ৷ কারণ, অধিকাংশ প্রশ্নেরই উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি ৷ দাবি করেছেন, সেইসব প্রশ্নের উত্তর তাঁর জানা নেই ৷ তবে, তাঁর বাবা বিষয়টি জানতে পারেন ! ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ বলছে, সুকন্য়ার এই বয়ানকেই এখন হাতিয়ার করছে ইডি ৷ অনুব্রতকে তাঁর চেনা গণ্ডীর বাইরে এনে জেরা করতে চাইছে তারা ৷ এতে মানসিকভাবে বীরভূমের বাহুবলীকে অনেকটা দমানো সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ আর তাহলে ইডি-এর কাজ অনেক সহজ হবে ৷ অনুব্রত মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে তাঁর কাছ থেকে আরও বহু তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন গোয়েন্দারা ৷
অন্যদিকে, আগামী 1 ডিসেম্বর ইডি-এর দফতরে বেকায়দায় পড়তে পারেন সুকন্যাও ৷ কারণ, তাঁর জন্য ইডি-এর এবারের প্রশ্নমালা আরও কঠিন ও ধারাল হতে চলেছে বলে দাবি সূত্রের ৷ সেটা কেমন ? প্রথমত, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করেছে ইডি ৷ ঠিক হয়েছে, সুকন্য়াকে নির্দিষ্ট বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রশ্নই করা হবে ৷ যাতে কোনওভাবেই তিনি সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক প্রশ্নের সঙ্গেই কেন সেই প্রশ্ন তাঁকে করা হচ্ছে, সেই সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ পেশ করবে ইডি ৷
ইডি-এর হাতে আসা তথ্য বলছে, সুকন্যার নিজের পেশ করা দাবি অনুযায়ী, 2013-14 অর্থবর্ষে তাঁর বার্ষিক রোজগার ছিল মাত্র 3 লক্ষ টাকা ৷ কিন্তু, এর আট বছরের মাথায়, অর্থাৎ, 2021-22 অর্থবর্ষে তাঁর বার্ষিক উপার্জন বেড়ে হয় 1 কোটি টাকা ! কীভাবে এটা সম্ভব হল, তার বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইবে ইডি ৷
দ্বিতীয়ত, খাতায়-কলমে সুকন্যা সরকারি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষিকা ৷ একইসঙ্গে, তিনি দু'টি প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থার ডিরেক্টর ৷ এছাড়াও, ভোলে বোম চালকলের যৌথ মালিকানা রয়েছে তাঁর নামে ৷ এক্ষেত্রে ইডি-এর প্রশ্ন হবে, সরকারি স্কুলের চাকরি সামলেও কীভাবে, কখন এত বাড়তি কাজ করছেন সুকন্য়া ? সোজা কথায়, এই বিষয়ে তাঁর রোজের রুটিন কী ? তৃতীয়ত, গত তিন বছরে অনুব্রত ও তাঁর মেয়ে সুকন্যা একাধিক লটারি জিতেছেন ! কোন জাদুতে এমনটা সম্ভব হল, সেই প্রশ্নেরও উত্তর চাইবেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা ৷