হায়দরাবাদ: বহু দিন হয়ে গেল, ভারতে রাজনীতি কার্যত বাজারে (Politics Turns into Market) পরিণত হয়েছে ৷ এখানে নির্বাচনের ফল নির্ভর করে ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীর আর্থিক সক্ষমতার উপর ৷ মানুষই গণতন্ত্রকে সচল রাখে ৷ কিন্তু, আমজনতার ভোট যদি টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়ে যায়, তাহলে তা শুধুমাত্র বেদনাদায়ক নয়, সেইসঙ্গে তা গোটা একটা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেওয়ার পক্ষেও যথেষ্ট ৷
যখন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার সবরকমের প্রচেষ্টা করা হয়, তখন তা সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্রকেই উপড়ে ফেলে ৷ সম্প্রতি তেলাঙ্গানাতেও এমন চেষ্টা করা হয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী কেসিআর-এর অভিযোগ, বিজেপি অর্থ এবং চুক্তির বিনিময়ে তাঁর দলের বিধায়কদের ভাঙানোর চেষ্টা করছেন ৷ দিল্লি এবং পঞ্জাবে শাসকদল আম আদমি পার্টিও একই অভিযোগ করেছে ৷ বিজেপি-এর বিরুদ্ধে দল ভাঙানোর চেষ্টার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল ৷ দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, সমস্ত রাজনৈতিক দলই অন্যদের দোষারোপ করে ৷ কিন্তু, সুযোগ পেলে মূল্যবোধ ছুড়ে ফেলে তারাও একই অন্য়ায় করে ৷
আরও পড়ুন: বুলডোজারের রাজত্বে
এক্ষেত্রে 60 বছর আগে ঘটে যাওয়া এক ঘটনার উল্লেখ না-করলেই নয় ৷ সেই সময় কেরালায় ইএমএস নাম্বুদিরিপাদের নেতৃত্বাধীনকে সরকারকে উৎখাত করা হয়েছিল ৷ সেইসঙ্গেই, একাধিক রাজ্য়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সরকার ফেলে দিয়েছিল কংগ্রেস ৷ 1984 সালে যে এনটিআর সরকার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে অস্থিরতা তৈরি করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধি ৷ পরবর্তীতে বিজেপি-এর শক্তিবৃদ্ধি হয় ৷ তার প্রধান কারণই হল, এই দলের ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন এবং আরএসএস-এর সমর্থন ৷
এরপর থেকেই ভারতে এক অদ্ভূত খেলা শুরু হয়েছে ৷ যেকোনও শক্তিশালী দল বিরোধী রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে চেষ্টার কোনও কসুর করে না ৷ এমনকী, সেই দল যদি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে জিতে সরকারও গঠন করে, তবু তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা চলে ৷ এই প্রেক্ষাপটে সংগঠনের জোরেই একে একে অরুণাচলপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মণিপুর, গোয়া এবং কর্ণাটকে সরকার গঠন করেছে বিজেপি ৷ মহারাষ্ট্রের জোট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে ৷ তবে, বিজেপি-এর আচরণে অবাক হওয়ার কিছু নেই ৷ এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে ৷ আসলে, যে কোনও উপায়ে ক্ষমতা দখল করাই এখন তাদের একমাত্র লক্ষ্য ৷
সমস্য়া আসলে অন্য জায়গায় ৷ সুস্থভাবে ভাবলে, যেকোনও অনিয়মই খুব বেশি হলে ব্যতিক্রম হিসাবে গণ্য হতে পারে ৷ কিন্তু, সেই অনিয়মের ব্যতিক্রমই নিয়মে পরিণত হয়, তাহলে সেটা চিন্তার বিষয় ৷ কোনও রাজনৈতিক দলের হাতে প্রচুর অর্থ আর পেশীশক্তি থাকলেই তারা যদি মনে করে, ভোটের ফল যাই হোক, আমরা টাকা দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কিনে নেব, তাহলে তা গণতন্ত্রের জন্য ভয়ঙ্কর (Democracy in Danger) ৷ আর এখন ভারতে ঠিক এমনই একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে এবং তা লাগাতার বাড়ছে ৷