পুরী, 17 জুন: রথযাত্রার মাত্র তিন দিন বাকি ৷ পুরীতে চলছে শেষ মুহূর্তের চূড়ান্ত প্রস্তুতি ৷ আর তার মাঝেই বিপত্তি ৷ শনিবার দেবী সুভদ্রার দর্পদলন রথের একটি চাকায় দেখা গেল ফাটল ৷ এরপর কার্যত ঘুম উড়েছে জগন্নাথ মন্দিরের সেবায়েত থেকে আমজনতা, সকলেরই ৷ চিন্তার ভাঁজ পড়েছে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের কপালেও ৷
পুরীতে জগন্নাথের রথ বিশ্বখ্যাত ৷ দেশ তো বটেই বিদেশ থেকেও অসংখ্য মানুষ চাক্ষুষ করতে রথের সময় পুরীতে জড়ো হন ৷ ইতিমধ্যেই কার্যত সাজসাজ রব পুরী জুড়ে ৷ প্রশাসনিক স্তরেও প্রস্তুতি চূড়ান্ত ৷ রথযাত্রাকে ঘিরে প্রায় 10 হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে পুরীর মন্দির সংলগ্ন এলাকায় ৷ চলবে ড্রোন নজরদারিও ৷ প্রস্তুতি তুঙ্গে জগন্নাথ মন্দিরেও ৷ প্রায় সমাপ্ত তিনটি রথ তৈরির কাজও ৷ পুরীতে তিন রথের বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে জানাচ্ছেন মন্দিরের সেবায়েতরা ৷ তিন ভাইবোনের জন্য পৃথক আকারের এবং পৃথক রংয়ের রথ তৈরি হয় প্রতি বছর ৷ তেমনই রথের চাকার সংখ্যাও ভিন্ন ভিন্ন থাকে ৷ ব্যবহৃত হয় 12 ধরণের কাঠ ৷
জগন্নাথের রথের নাম নন্দীঘোষ ৷ এর চাকার সংখ্যা 16, উচ্চতা 44 ফুট ৷ অন্যদিকে বলভদ্রের রথের নাম তালধ্বজ এবং সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন ৷ যথাক্রমে বলভদ্রের রথে থাকে 14টি এবং সুভদ্রার রথে থাকে 12টি চাকা ৷ আর এই দর্পদলনেরই একটি চাকায় ফাটল ধরা পড়েছে ৷ আর তাতেই আশঙ্কিত সকলে ৷ সূত্রের খবর, রথের চাকার ফাটল গোপন করার চেষ্টা করছে প্রশাসন ৷ লোহার ক্ল্যাম্প ব্যবহার করে ফাটল আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ৷ পাশাপাশি সুভদ্রার রথের চাকা তড়িঘড়ি রং করা হয়েছে বলেও সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে।
আগামী 20 জুন অর্থাৎ মঙ্গলবার রথযাত্রা ৷ আর সেই উপলক্ষ্যে রথ টানার জন্য ইতিমধ্যেই পুরীতে হাজির হয়েছেন কয়েক লক্ষ পূণ্যার্থী ৷ অনেকেরই আশঙ্কা, ফাটল লোকানো হলে রথের দিন সমস্যা তৈরি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকবে ৷ এমনকী বড়সড় কোনও বিপত্তি ঘটতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ মন্দিরের সেবায়েতরা। দৈতাপতি বিনায়ক দাশমহাপাত্র বলেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি যে রথের একটি চাকায় ফাটল রয়েছে। আমরা চাইছি জেলা প্রশাসন এবং মন্দিরের আধিকারিকরা দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুক ৷ যাতে 2017 সালে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি এমন কোনও সমস্যা না হয় ৷" দশমহাপাত্র আরও জানান, যে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছিল কি না, বা কারিগরি কমিটি ফাটল সম্পর্কে অবগত ছিল কি না, তা এখনও তাঁদের কাছে স্পষ্ট নয়।
আরও পড়ুন: বেলগাছিয়া ছাত্রমিলন সংঘের পুজোর চমক পুরীর জগন্নাথ মন্দির
অন্যদিকে, রথের ফাটল প্রসঙ্গে প্রযুক্তিগত কোর কমিটির প্রধান এনসি পাল বলেন, “আমরা উপযুক্ত জায়গায় লোহার ক্ল্যাম্প দিয়ে চাকাটি মেরামত করেছি। রথের আর কোথাও কোনও অসুবিধা আছে কি না, তার সঙ্গে প্রতিটি দিক খতিয়ে দেখা হয়েছে।" রথযাত্রার সময় যাতে বড় কোনও সমস্যা তৈরি না হয়, তার জন্য এদিন একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেন মন্দির কমিটি এবং রাজ্য প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা।