নয়াদিল্লি, 18 সেপ্টেম্বর: আদানি গোষ্ঠী-হিন্ডেনবার্গ বিতর্ক নিয়ে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে সদস্যদের মধ্যে স্বার্থের সংঘাত রয়েছে ৷ এমনই অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে নতুন একটি আবেদন জমা পড়েছে ৷ ওই আবেদনে এই নিয়ে নতুন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে ৷
এই আবেদন জানিয়েছেন অনামিকা জয়সওয়াল ৷ তিনি আগের আবেদনকারীদের মধ্যে একজন ৷ তাঁর দাবি, এসবিআইয়ের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ওপি ভাট, আইসিআইসিআই প্রাক্তন চেয়ারম্যান এমভি কামাথ, আইনজীবী সোমশেখর সুন্দরেসন ও আদানি গোষ্ঠীর মধ্যে স্বার্থের সংঘাত রয়েছে ৷ উল্লেখ্য, ওই কমিটিতে বিচারপতি জে পি দেবধর ও ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নন্দন নিলকোনিও রয়েছেন ।
আবেদনে দাবি করা হয়েছে যে ওপি ভাট বর্তমানে গ্রিনকো-র চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছেন ৷ এটা একটা পুনর্নবীকরণযোগ্য বিদ্যুৎ সংস্থা ৷ এই সংস্থা ভারতে আদানি গোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ৷ 2022 সালের মার্চ থেকে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে ওই সংস্থার অংশীদারিত্ব রয়েছে ৷
অনামিকা জয়সওয়াল সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের হয়ে এই মামলায় সওয়াল করছেন ৷ তিনি আদালতে আরও জানিয়েছেন যে ওপি ভাটের বিরুদ্ধে বিজয় মালিয়াকে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে ৷ এই কারণে 2018 সালে তাঁকে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল ৷
আরও পড়ুন: আদানিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করতে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আরও 15 দিন সময় চাইল সেবি
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ওপি ভাট 2006 থেকে 2011 সালের মধ্যে এসবিআইয়ের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন ৷ সেই সময় বিজয় মালিয়ার সংস্থাকে বেশিরভাগ ঋণ দেওয়া হয় ৷ এই নিয়ে প্রাসঙ্গিক তথ্য আদালতকে জানানো উচিত ৷ অন্যদিকে এমভি কামাথের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি 1996 থেকে 2009 সাল পর্যন্ত আইসিআইসিআই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন ৷ আইসিআইসিআই ব্যাংক জালিয়াতির মামলায় সিবিআই এফআইআর-এও তাঁর নাম রয়েছে ৷
অনামিকা জয়সওয়াল আদালতে আরও জানিয়েছেন যে চন্দা কোছার 2009 সাল থেকে 2018 সাল পর্যন্ত আইসিআইসিআই ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও ছিলেন ৷ সেই সময় নিয়ম ভেঙে ভিডিয়োকন গ্রুপকে ঋণ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ৷ সিবিআইয়ের অভিযোগ, ভিডিয়োকন গ্রুপকে দেওয়া ঋণের পরিবর্তে তিনি ও তাঁর পরিবার অনেক সুবিধা পেয়েছে ৷ ওই ঋণগুলি পরে নন-পারফর্মিং অ্যাসেট বা এনপিএ-তে পরিবর্তিত হয় ৷ ভিডিয়োকনকে যখন এই ঋণগুলি দেওয়া হয়, তার মধ্য়ে অনেকগুলি ঋণ দেওয়ার সময় নন-এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান ছিলেন এমভি কামাথ ৷
সুন্দরেসনের বিষয়ে আবেদনকারী দাবি করেছেন যে তিনি সেবি বোর্ড-সহ বিভিন্ন ফোরামে আদানির প্রতিনিধিত্বকারী একজন আইনজীবী ছিলেন ।
সেই কারণে অনামিকা জয়সওয়াল তাঁর আবেদনে জানিয়েছেন, বর্তমান বিশেষজ্ঞ কমিটি দেশের জনগণের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে ৷ তাই স্বার্থের সংঘাত নেই আদালত এমন একটি নতুন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা যেতে পারে ।
আরও পড়ুন: ভাবমূর্তি ফেরাতে মরিয়া আদানি গোষ্ঠী, ঋণ পরিশোধের উদ্যোগ
উল্লেখ্য, হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলি তদন্ত করতে এবং তাতে কোনও নিয়ন্ত্রক ব্যর্থতা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে 2023 সালের মার্চ মাসে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছিল সুপ্রিম কোর্ট ৷ কমিটির সমস্ত সদস্যকে মনোনীত করেছিল শীর্ষ আদালত ৷ কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অভয় মনোহর সাপ্রে । আইনজীবী বিশাল তিওয়ারি ও অন্যদের দায়ের করা আবেদনের ভিত্তিতে এই নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট ৷
কমিটি মে মাসে পেশ রিপোর্ট পেশ করে সুপ্রিম কোর্টের কাছে ৷ সেখানে বলা হয়েছে, আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলির দ্বারা শেয়ারের দরের হেরফের বা এমপিএস নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ এই পর্যায়ে প্রমাণ করা যাবে না ।