মোরবি (গুজরাত), 31 অক্টোবর: বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা ৷ মোরবিতে গতকালের সেতু বিপর্যয়ের কথা পৌঁছে গিয়েছে বিদেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কানেও ৷ গুজরাতের দুর্ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন-সহ অনান্য রাষ্ট্রনেতারা (Vladimir Putin condoles tragic incident of Guajarat) ৷ এখনও পর্যন্ত মোরবিতে বিপর্যয়ের বলি 134, অসমর্থিত সূত্রে সংখ্যাটা আরও বেশি ৷ নিখোঁজ বহু ৷ কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় এই বিপর্যয়ের দায় কার ? তাহলে সামনে আসবে স্থানীয় প্রশাসনের চূড়ান্ত গাফিলতি এবং অপেশাদারিত্ব ৷ এ বিষয়ে সর্বপ্রথম উল্লেখ্য যে বিষয়টি সেটি হল, ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া মোরবি সেতুর সাম্প্রতিক সময়ে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল এক ঘড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থার হাতে (Clock manufacturing firm entrusted with Morbi bridge upkeep preponed its opening) ৷
সেতু রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে ওরেভা-র (Oreva) সঙ্গে গত 27 মার্চ মোরবি পৌরসভার স্বাক্ষর হওয়া চুক্তিপত্র হাতে এসেছে ইটিভি ভারতের (Etv Bharat) ৷ যা চমকে দেওয়ার মতোই ৷ ইতিপূর্বে সেতু সংস্কার কিংবা রক্ষণাবেক্ষণের কোনও অভিজ্ঞতা ছাড়াই মোরবি সেতুর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিল সংস্থাটি ৷ আট থেকে বারো মাসের মধ্যে পরিত্যক্ত সেতুটি পুনরায় চালু করে দেওয়ার বিষয়টি উল্লিখিত রয়েছে সেখানে ৷ ঘড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়ার কারণ অজানা, কিন্তু চুক্তির সাত মাসের মধ্যে অর্থাৎ সময়ের আগেই প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো এই সেতু পুনরায় খুলে দেওয়া হয় জনসাধারণের জন্য ৷
মর্মান্তিক বিপর্যয়ের পর সিএফএল বাল্ব, দেওয়াল ঘড়ি তৈরি করা সংস্থাটির তরফ থেকে এখনও কোনও প্রতিনিধি মুখ খোলেননি ৷ তবে মোরবি পৌরসভার তরফে এক আধিকারিক চাপের মুখে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, কোনওরকম ফিট সার্টিফিকে না-নিয়েই পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছিল সেতুটি ৷ মোরবি পৌরসভার চিফ অফিসার সন্দীপ সিং ঝালা ইটিভি ভারতকে বলেন, "সংস্থাটিকে 15 বছরের জন্য সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ৷ সংস্কারের পর ফের খুলে দেওয়াও হয়েছিল ৷ কিন্তু কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তা অজানা ৷ সেতু সংস্কারে কী ব্যবহার করা হয়েছিল তারও উত্তর নেই ৷"
আরও পড়ুন: গুজরাতের সেতু বিপর্যয়ে মর্মাহত বিশ্ব, শোকবার্তা পুতিন-দেউবার
অন্যদিকে ফিট সার্টিফিকেট ছাড়া 230 মিটার লম্বা এই ঐতিহাসিক সেতু সাধারণের জন্য খুলে দেওয়ায় হতবাক গুজরাত ইনস্টিটিউট অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস-এর সভাপতি বৎসল প্যাটেল ৷ পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঝুলন্ত মোরবি সেতুতে সর্বাধিক 100 জনের উপস্থিত থাকার বন্দোবস্ত থাকলেও দুর্ঘটনার মুহূর্তে সেতুতে দাঁড়িয়েছিলেন অন্ততপক্ষে 400 জন ৷ এটাও মোরবিতে সেতু বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে ৷
নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে একসঙ্গে এত মানুষ দুর্ঘটনার সময় সেতুটিতে ছিলেন ? উত্তর অজানা ৷ তবে পৌরসভা আধিকারিকের জানান, পরিত্যক্ত সেতুটি সংস্কারের জন্য যে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন ছিল, তা এক্ষেত্রে গ্রহণ করা হয়নি মোটেই ৷ ইতিমধ্যে ঘটনায় পুলিশ পরিকল্পিত খুনের মামলা রুজু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইজি মোরবি রেঞ্জ অশোক যাদব ৷ গ্রেফতার হওয়া 9 জনের মধ্যে রয়েছেন ওরেভা-র একাধিক আধিকারিক, টিকিট বিক্রেতা থেকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা ৷