কালাবুর্গি (কর্ণাটক), 1 ডিসেম্বর: প্রথম দর্শনে আর পাঁচটা সাধারণ চপ্পলের সঙ্গে কোনও ফারাক ধরা পড়বে না ৷ কিন্তু, এই চপ্পলই প্রয়োজনে উচিত শিক্ষা দেবে 'স্ট্রিট রোমিও'দের ৷ কর্ণাটকের (Karnataka) কালাবুর্গির (Kalaburagi) একটি হাইস্কুলের ছাত্রী তৈরি করেছে 'ধর্ষণবিরোধী স্মার্ট চপ্পল' (Anti Rape Smart Foot Wear) ৷ কী বিশেষত্ব রয়েছে এই চপ্পলের ? আসুন, জেনে নেওয়া যাক ৷
এই চপ্পলের আবিষ্কারক বিজয়লক্ষ্মী বীরেন্দ্র (Vijayalakshmi Biradara) ৷ সে কালাবুর্গির প্রখ্যাত এসআরএন মেহতা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী ৷ দেশে যেভাবে নারী নিগ্রহ (Crime Against Women) বাড়ছে, ঘরে-বাইরে যেভাবে মেয়েদের ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের শিকার হতে হচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন এই ছাত্রী ৷ সেই উদ্বেগ থেকেই বিশেষ ধরনের এই চপ্পল আবিষ্কার করেছে বিজয়লক্ষ্মী ৷ এই চপ্পলের প্রধান সুবিধা হল, এর সাহায্যে হামলাকারীকে বিদ্যুতের 'শক' দেওয়া যায় ৷ একইসঙ্গে, সাহায্য চেয়ে বার্তা পাঠানো যায় প্রিয়জনদের কাছে ৷
আরও পড়ুন: অশ্লীল ভিডিয়োতে আসক্তি, 'ধর্ষণের পর খুন' নাবালিকা
বিজয়লক্ষ্মীর তৈরি এই চপ্পলের প্রতিটি জোড়ায় রয়েছে দু'টি করে নারী নিরাপত্তা সংক্রান্ত সফ্টওয়্যার (Women Safety Software) ৷ বিজয়লক্ষ্মী জানিয়েছে, একজোড়া চপ্পলের মধ্যে দু'টির নীচেই রয়েছে গোপন কুঠুরি ৷ দু'টির ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়েছে একটি বিশেষ ধরনের অ্যাপ লিংক (Blink App Link) ৷ এর মধ্যে একটি চপ্পলে থাকছে বিদ্যুতের 'শক' দেওয়ার ব্যবস্থা ৷ আর অন্যটিতে রয়েছে জিপিএসের (GPS) মাধ্যমে নিজের অবস্থান বোঝানো-সহ বিপদ সঙ্কেত পাঠানোর বন্দোবস্ত ৷
চম্পলের 'হিল'-এর কাছে একটি সুইচ বা বোতাম থাকবে ৷ যেটি সহজে পায়ের পাতার সাহায্য়েই চালু করা সম্ভব ৷ সেই বোতাম টিপে দিলেই হামলাকারী 0.5 এএমপিএসের বিদ্যুতের ঝটকা খাবে ৷ যতক্ষণে হামলাকারী ধাক্কা সামলে সুস্থ হবে, ততক্ষণে আক্রান্ত মহিলা দৌড়ে পালানোর সুযোগ ও সময় পাবেন ৷ কিন্তু, যদি একসঙ্গে তিন-চারজন হামলা করে ? তাহলে চপ্পলের আঙুলের দিকে আরও একটি বোতাম বা সুইচ রয়েছে ৷ পায়ের চাপে সেটিকে চালু করতে হবে ৷ সেক্ষেত্রে আক্রান্ত মহিলার অবস্থান জিপিএসের মাধ্যমে তাঁর প্রিয়জনদের মোবাইলে 'মেসেজ' আকারে পৌঁছে যাবে ৷ তাঁরা বুঝে যাবেন, বিপদ হয়েছে এবং সাহায্য পাঠানো দরকার ৷ অন্য একটি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আপদকালীন সময়ের জন্য এই চপ্পলে ব্যবহৃত সফ্টওয়্য়ারে বেশ কয়েকটি মোবাইল নম্বর 'সেভ' করে রাখা যাবে ৷ যাতে প্রয়োজনের সময় সেই নম্বরগুলিতে 'মেসেজ' পাঠানো যায় ৷
সূত্রের খবর, বিজয়লক্ষ্মীর আবিষ্কার নজর কেড়েছে সরকারি মহলেরও ৷ বিজ্ঞানের শিক্ষিকা সুমায়া খানের সহযোগিতায় সে মাত্র 13 মাসে এই বিশেষ চপ্পল আবিষ্কার করেছে ৷ এর জন্য খরচ হয়েছে 3 হাজার টাকা ৷ বিজয়লক্ষ্মী এবং তাঁর বিজ্ঞানের শিক্ষিকার বক্তব্য, সরকার যদি উদ্যোগী হয়, তাহলে বাণিজ্যিকভাবে এই চপ্পলের উৎপাদন করা সম্ভব ৷ এমনকী, এটিকে আরও উন্নতভাবেও তৈরি করা যেতে পারে ৷
সম্প্রতি গোয়ায় আয়োজিত আন্তর্জাতিক উদ্বাভনী মেলায় (India International Invention and Innovation Expo 2022) বিজয়লক্ষ্মী তার এই আবিষ্কারের জন্য রুপোর মেডেল জিতেছে ৷ একইসঙ্গে, আগামী বছর অনুষ্ঠিত হতে চলা আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান মেলায় (International Science Expo 2023) প্রদর্শনের জন্যও তার এই আবিষ্কার নির্বাচিত হয়েছে ৷