নয়াদিল্লি : কেরালায় শরদ পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টিতে যোগ দেওয়া প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা পি সি চাকোর সাম্প্রতিক পদক্ষেপ হয়তে ইউডিএফ-এর ভোট ফলাফলে ততটা প্রভাব ফেলবে না । কিন্তু এলডিএফ-ই কেবল এর ব্যবহার করতে পারবে তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে অস্বস্তিতে ফেলতে।
চাকো, কংগ্রেসে যাকে একেবারে কোণঠাসা করে দেওয়া হয়েছিল, দু’দিন আগে দলবদল করেন এবং মনে করা হচ্ছে, তিনি ক্ষমতাসীন সিপিআইএম নেতৃত্বাধীন লেফ্ট ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের (এনসিপি যাদের অন্যতম শরিক) হয়ে প্রচারে তেড়েফুঁড়ে নামবেন ।
74 বছর বয়সি চাকো দীর্ঘ সময় ধরে রাজ্য রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন । কিন্তু 1991, 1996 এবং 1998 সালের লোকসভা ভোটে ত্রিশূর, মুকুন্দাপুরম এবং ইদুক্কির মতো কেন্দ্রে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
যদিও এনসিপি-তে যোগদান করার তাঁর এই সিদ্ধান্তকে প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা ঘরে ফেরা বলেই অভিহিত করেছেন । তবুও বর্তমানে শরদ পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এই দল, দলের অন্দরেই বিভাজনের সমস্যায় ভুগছেন । যার জেরে পালার সাংসদ মণি সি কাপ্পান ফেব্রুয়ারিতে তার নয়া দল ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস (কেরালা) গঠনের পরিকল্পনা, হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়েছেন । তিনি ঘোষণা করেছেন তিনি কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টে যোগ দেবেন ।
কংগ্রেসের কেরালা শাখার প্রধান মুলাপ্পলি রামচন্দ্রন চেয়েছিলেন, কাপ্পান দলে যোগ দিন । কিন্তু এনসিপি-এর এই বিদ্রোহী নিজের জন্য নিরপেক্ষ মঞ্চই বেছে নিয়েছেন ।কাপ্পান, যিনি এলডিএফ-এ পালা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাননি, কংগ্রেসের তরফে তাঁকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল এই বিধানসভা আসনে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া হবে । পাশাপাশি আরও দু’টি আসনের মধ্যে নির্বাচনের সুযোগও দেওয়া হয়েছিল ।
সিপিআইএম নেতা এবং কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এনসিপি নেতা প্রফুল্ল প্যাটেলের সঙ্গে কাপ্পানের পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলেছিলেন, কিন্তু তা আটকাতে কিছু করে উঠতে পারেননি । পাওয়ার যে চাকোকে দু’হাত তুলে স্বাগত জানিয়েছেন, সেই দৃশ্য শুধুই প্রতিফলিত করেছে কংগ্রেস এবং এনসিপি-র মধ্য়ে চলতে থাকা ছায়ার লড়াইকে, যা দক্ষিণের রাজ্যে চলছে এই দু’টি দলের মধ্যে । অথচ পশ্চিমের রাজ্য, মহারাষ্ট্রে এই দুই দল একজোট হয়ে রাজ্য চালাচ্ছে ।
ইউডিএফ ম্যানেজাররা বলেছিলেন, চাকোর গ্রাফ ক্রমশ নিম্নমুখী হয়েছে যখন তাঁর নজরে থাকা দিল্লিতে কংগ্রেস ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছিল । এমনকী, দেশের রাজধানী শহরে তাঁর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে (যিনি তিন বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন) টার্গেট করাও কংগ্রেস হাই কম্যান্ড সুনজরে দেখেনি, কারণ তারা এই কেরালা নেতাকে বিশ্বাস করেছিল যে তিনি দিল্লিতে কংগ্রেসকে পুনরুজ্জীবিত করতে সমর্থ হবেন ।
আরও পড়ুন : দিল্লি নিয়ে কেন্দ্রের বিল রুখতে রাজধানী ছুটলেন তৃণমূল সাংসদরা
এনসিপি-তে চাকোর চলে যাওয়ার আভাস ছিল বলে কংগ্রেসের ভিতরেই কবর ছিল । এও বলা হয়েছিল যে ত্রিশূর এবং চালাকুডির কিছু অংশে এই নেতার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে যদিও তিনি 14 জেলায় সফর করবেন বলে পরিকল্পনা করেছেন ।
কংগ্রেস সূত্রে খবর, এই নেতাকে এলডিএফ ব্যবহার করবে কংগ্রেসের রাজ্য শাখার দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে আনার জন্য এবং তার বদলে সিপিআইএম নেতৃত্বাধীন জোট যে অনেক ভাল বিকল্প, সেই কথা প্রচার করার জন্য।
ইউডিএফ ম্যানেজাররা 2019 সালের লোকসভা ভোটে জোটের বিপুল সাফলে্যর দিকে তাকিয়ে কোমর বাঁধছেন কারণ ওই ভোটে জোট 20 টি লোকসভা আসনের মধ্যে 19 টি তেই জয়লাভ করেছিল । এবার তাদের আশা, এই ধারা 2021 সালেও অব্যাহত থাকবে । এডিএফ, যারা 2019 সালে মাত্র একটি লোকসভা আসনে জয় পেয়েছিল, এবার আশায় ভর করে রয়েছে যে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফিরবে । এর কারণ 2020 সালের ডিসেম্বরে স্থানীয় ভোটে তারা ভাল ফল করেছিল । নির্বাচন বিশ্লেষকদের চোখে, তা ছিল 2021 সালের বিধানসভা ভোটের আগে সেমিফাইনালের মতো। 140 সদস্যের কেরালা বিধানসভা ভোটের নির্বাচন আগামী 6 এপ্রিল । ফল বেরোবে 2 মে।