নয়াদিল্লি, 18 নভেম্বর: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে খুনের ঘটনায় দোষীদের ছাড়া পাওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল কেন্দ্র ৷ রাজীব গান্ধি হত্যা মামলায় 11 নভেম্বর মুক্তি পেয়েছেন নলিনী শ্রীহরণ, তাঁর স্বামী মুরুগান, সান্থান-সহ 6 জন ৷ এর আগে মে মাসে পেরারিভালানও জেল থেকে বেরিয়ে আসেন ৷ সর্বোচ্চ আদালত তাঁদের মুক্তির রায় ঘোষণা করে ৷ দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর হত্যাকারীদের কারামুক্তিতে কংগ্রেসের তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে শাসক শিবির ৷ রাজনৈতিক মহল মনে করছে সেই চাপের মুখে বৃহস্পতিবার মোদি সরকার নলিনী-সহ 6 জনের মুক্তির রায় পূর্নবিবেচনা করার আবেদন জানাল সর্বোচ্চ আদালতে (Centre Challenges Rajiv Gandhi Assassination Convicts Release) ৷
কেন্দ্রের পুনর্বিবেচনার আবেদন (Centre Review Petition)
এদিন কেন্দ্র জানায়, রাজীব গান্ধি হত্যা মামলায় তারা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পার্টি ৷ কিন্তু নলিনী-মুরুগানদের মুক্তির শুনানিতে তারা তাদের বক্তব্য বলার যথেষ্ট সুযোগ পায়নি ৷ মোদি সরকার প্রক্রিয়াগত ত্রুটির (procedural lapse) নিয়েও অভিযোগ জানায় ৷ দোষীরা সর্বোচ্চ আদালতে মুক্তির আবেদন জানালেও সরকারি ভাবে কেন্দ্রকে পার্টি করেনি (did not formally implead) ৷ এর ফলে কেন্দ্র এই মামলায় অংশ নেওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে ৷ সরকারের আরও দাবি, "আবেদনকারীদের প্রক্রিয়াগত ত্রুটির জন্য ভারত সরকার এই মামলায় অনুপস্থিত থেকেছে ৷ এদিকে মামলাটির চূড়ান্ত শুনানি এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আদালত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পর্যালোচনা করতে পারেনি ৷ যদি তা হত, তাহলে আদালত এই মামলায় (রাজীব গান্ধি হত্যা) যথার্থ এবং সঠিক রায় দিতে পারত ৷"
11 নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালত সময়ের আগেই নলিনী শ্রীহরণ-সহ 6 জন দোষীকে মুক্তি দেয় ৷ তামিলনাড়ু সরকার তাঁদের কারাবাসের সময় কমানোর বিষয়টিতে অনুমোদন দিয়েছিল ৷ নলিনী ছাড়াও জেল থেকে ছাড়া পান আর পি রবিচন্দ্রন, সান্থান, মুরুগান, রবার্ট পায়াস এবং জয়াকুমার ৷
আরও পড়ুন: কারা মুক্তি ! ভেলোর জেল থেকে ছাড়া পেলেন নলিনী শ্রীহরণ
কেন্দ্র পুনর্বিবেচনার আর্জিতে (Review Plea) জানিয়েছে, 6 জনের মধ্যে 4 জন শ্রীলঙ্কার নাগরিক ৷ তাঁদের 'জঙ্গি' হিসেবে উল্লেখ করে মোদি সরকার আবেদন করে, "দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধির হত্যাকাণ্ডের মতো নৃশংস অপরাধে যুক্ত অন্য দেশের জঙ্গিদের মুক্তি আন্তর্জাতিক বিষয় ৷ আর তাই এটা পুরোপুরি ভারত সরকারের সার্বভৌম ক্ষমতার অধীন ৷ এরকম একটি সংবেদনশীল বিষয়ে ভারত সরকারের বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ তা দেশের সাধারণ জনমানসের শান্তি, অপরাধীদের বিচারপদ্ধতিকে ভীষণ ভাবে প্রভাবিত করে ৷" প্রসঙ্গত উল্লেখ্য রাজীব গান্ধি হত্যায় দোষী মুরুগান এলটিটিই জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ৷ তিনি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ষড়যন্ত্রকারী ৷
11 নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালত সংবিধানের 142 ধারা প্রয়োগে দোষীদের মুক্তি দেয় ৷ এর আগে পেরারিভালানের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল ৷ তামিলনাড়ু সরকারের রাজ্যের বিশেষ আইন বলে নলিনী এবং রবিচন্দ্র 2021 সালের 27 ডিসেম্বর থেকে প্যারোলে ছিলেন ৷ 17 জুন তাঁরা হাইকোর্টে মুক্তি আবেদন জানালে, আদালত রাজ্যপালের সম্মতি ছাড়া তা সম্ভব নয় জানিয়ে খারিজ করে দেয় ৷
1991 সালের 21 মে তামিলনাড়ুর শ্রীপেরামবুদুরে একটি নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন রাজীবন গান্ধি ৷ সেখানে ধানু নামের এক আত্মঘাতী হামলাকারী তাঁকে ফুল হাতে প্রণাম করতে যান এবং সঙ্গে সঙ্গে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়৷ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর দেহ ৷
1999 সালে সুপ্রিম কোর্ট পেরারিভালান, মুরুগান, সান্থান এবং নলিনীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখে ৷ তবে 2014 সালে তাঁদের ফাঁসির সাজা মুকুব করে আজীবন কারাবাসের নির্দেশ দেয় আদালত৷ তার আগে 2001 সালে নলিনীর মেয়ে থাকায় তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ খারিজ করে আদালত ৷
আরও পড়ুন: রাজীবের হত্যাকারীদের মুক্তি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সমালোচনা কংগ্রেসের