দিল্লি ও কলকাতা, 16 জানুয়ারি : নজরে আসন্ন বিধানসভা ভোট । বঙ্গের মসনদে কি পদ্ম ফুটবে ? মোদি-শাহের অধরা বঙ্গ বিজয় সফল হবে কি না সময়-ই তার উত্তর দেবে ৷ আপাতত, রাজ্যে তৃণমূল থেকে যেন 'বেনোজল' দলে ঢুকে পড়তে না পারে সেজন্য বাঁধ দিলেন অমিত শাহ ৷ গতকাল বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বকে অমিত শাহ এই নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর ।
আর কয়েকমাস পরই রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন । তাই পশ্চিমবঙ্গের দিকে বাড়তি নজর দিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা । বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা যেমন রাজ্য সফরে আসছেন । তেমনই অমিত শাহও সমস্ত কিছু নজরে রাখছেন । প্রয়োজনমতো রাজ্য নেতৃত্বকে নির্দেশ দিচ্ছেন । বৃহস্পতিবারও রাজ্য নেতারা জানতেন না তাঁদের দিল্লি যাওয়ার কথা ৷ হঠাৎ শাহের তলব পেয়ে তড়িঘড়ি দিল্লির উদ্দেশে পাড়ি জমাতে হয় দিলীপ-মুকুল-কৈলাসদের ৷
তৃণমূল থেকে আসলেই বিজেপি তাঁকে গ্রহণ করবে, এমন একটা হাওয়া রাজ্য-রাজনীতিতে উঠেছে ৷ এই প্রবণতাকে কটাক্ষ করে অধীর-বিমানরা বিজেপিকে তৃণমূলের বি-টিম বলেছেন ৷ দলে ভাঙন নিয়ে সন্ত্রস্ত তৃণমূলের শীর্ষ নেতারাও প্রশ্ন তুলতে ছাড়েননি ৷ এতদিন দলের খেয়ে পরে আজ কোন শুদ্ধিকরণের জন্য তাঁরা বিজেপিতে পা বাড়াচ্ছেন ? বিরোধীদের মন্তব্য, টিপ্পনি নিয়ে না ভাবলেও চলে ৷ কিন্তু দলের মধ্যেই যখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তৃণমূলের বোনোজল ঢুকিয়ে দলেরই ক্ষতি হচ্ছে না তো ? দলের একটা অংশ তৃণমূল নেতাদের বাছবিচার না করে দলে নেওয়ার ঘোর বিরোধী ৷ বিজেপি-র নেতাদের বক্তব্য ছিল, এতদিন যাদের হুমকি, অত্য়াচার সহ্য় করে বিজেপি করে গিয়েছি আজ তাঁরা দলে এসে মাথায় ছড়ি ঘোরোবে তা কি করে সহ্য করা যাবে ? দলের মধ্যে এই নিয়ে আদি-নব্য বিরোধ লোকসভা ভোটের আগে থেকেই ৷ বিশেষ করে বিজেপিতে তৃণমূলের বেনোজন যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে নিজেদের মত স্পষ্ট করেছেন সংঘ নেতারা ৷ সূত্রের খবর, পূর্বাঞ্চলীয় প্রান্ত প্রচারক প্রদীপ যোশি এই বিষয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের আগেই বার্তা পাঠিয়েছেন ৷ লোকসভা ভোটের আগে মণিরুলকে দলে নেওয়া নিয়ে বিজেপির আদি-নব্য অসন্তোষ সামনে এসে পড়ে ৷ মণিরুলের মতো নেতাদের দলে নিয়ে আরএসএস নেতৃত্ব তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল ৷ তখনও সাততাড়াতাড়ি দলের মধ্যে এই বিভেদ কাটাতে হাল ধরতে হয় অমিত শাহকে ৷ তারপর থেকে মণিরুল দলে থেকেও অন্তরালেই থাকছেন বেশি ৷ এবারও রাজ্য নেতাদের ডেকে আগেভাগে সতর্ক করে দিলেন অমিত শাহ ৷ শুধু তাই নয়, বিজেপি সূত্রের খবর অনুযাযী, তৃণমূলের কোন নেতাকে দল গ্রহণ করবে আর কাকে গ্রহণ করবে না সে বিষয়েও গাইডলাইন দিলেন শাহ ৷
দলের দীর্ঘদিনের কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে ৷ বিধানসভা ভোটের আগে দলকে তাই শাহের নির্দেশ, এই অসন্তোষকে যত তাড়াতাড়ি দূর করতে হবে ৷ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক(সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, রাজ্যে বিজেপির মুখ্য পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়, বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেননদের শাহ জানিয়ে দেন, বাছবিচার করে তবেই বিজেপিতে অন্য দল থেকে আসা নেতাদের গ্রহণ করতে হবে ৷ নজর রাখতে হবে এলাকায় মানুষের মধ্যে সেই নেতার গ্রহণযোগ্যতাকে ৷ বিজেপির এক নেতা বলেন, "অমিতজি বলেছেন, দল বড় হচ্ছে ক্ষতি নেই, তবে অন্য দল থেকে বিজেপিতে আসতে চাইলে তাঁকে পরীক্ষা করে নিতে হবে ৷ বাছবিচার আগেও চলেছে, এখন এই কাজটা আরও গুরুত্ব দিয়েই করা হবে ৷"
আরও পড়ুন :অমিত শাহর সঙ্গে আজ বৈঠক, দিল্লিতে রাজ্য বিজেপির নেতারা
বুথ কেন্দ্রিক সংগঠন কতটা মজবুত হয়েছে সে বিষয়েও রাজ্য নেতাদের কাছে খোঁজ খবর নেন শাহ ৷ রাজ্যে 77 হাজারের বেশি বুথ আছে ৷ এবার বিধানসভা ভোটের আগে এই বুথের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে ৷ তাই প্রত্যেক বুথে বিজেপির কমিটি তৈরি করতে আগেই নির্দেশ দিয়েছেন শাহ ৷ সেই কাজ কতটা বাস্তবায়িত হল সে বিষয়েও খোঁজ নেন তিনি ৷ অমিত শাহ এই মাসের 30 ও 31 তারিখ রাজ্যে আসতে পারেন বলে জানা গিয়েছে ৷ তার আগে প্রস্তুতি কতটা এগোল তা খতিয়ে দেখেন ৷ বিজেপি সূত্রের খবর, শাহের পর পরই ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যে আসছেন জে পি নাড্ডা ৷ মুকুল রায় রাজ্যে নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে একটি জনসমাবেশ ও ব়্যালি করার আবেদন জানান এই বৈঠকে ৷ সূত্রের খবর, মুকুল বলেন, বাংলার মানুষকে বিজেপিমুখী করতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ও ব়্যালি কার্যকর হবে ৷ এই নিয়ো অবশ্য এখনই কোনও সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি ৷