নয়াদিল্লি, 8 জানুয়ারি: সুপ্রিম কোর্ট সোমবার বিলকিস বানো মামলায় 11 জন আসামিকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে গুজরাতের জেল কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছে ৷ একই সঙ্গে শীর্ষ আদালত বলেছে, "যেখানে আইনের শাসন প্রয়োগ করা প্রয়োজন, সেখানে করুণা ও সহানুভূতির কোনও ভূমিকা নেই ৷"
বিলকিস বানো মামলায় দোষীদের মুক্তির নির্দেশ সোমবার খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগারথনা ও উজ্জল ভুঁইয়ার বেঞ্চ ৷ এই নির্দেশ দেওয়ার পর বেঞ্চের তরফে জানতে চাওয়া হয় যে সমস্ত অভিযুক্তকে জেলে ফেরত পাঠানো কি উচিত ? কারণ, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি অযোগ্য কর্তৃপক্ষ তাদের মুক্তি দিলেও মামলার অভিযুক্তদের অবশ্যই স্বাধীনতার সুবিধা থাকতে হবে ৷
বিচারপতি নাগারথনা জানান যে এটার উত্তর দেওয়া আদালতের জন্য একটি স্পর্শকাতর প্রশ্ন ছিল ও আবেদনকারীদের আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন যে অভিযুক্তদের কেবল আইন অনুসারেই ছাড় দেওয়া যেতে পারে । আদালতে শুনানির সময় যে প্রশ্নগুলি উঠেছিল, তা উল্লেখ করতে গিয়ে বিচারপতি নাগারথনা জানতে চান, কখন ব্যক্তিস্বাধীনতা সুরক্ষিত হয় ? আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির স্বাধীনতা কি সুরক্ষিত হতে পারে ?
তিনি আরও জানতে চান যে আইনের শাসন কি একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উপর প্রাধান্য পাবে, নাকি তার বিপরীত হবে ? বিচারের দাঁড়িপাল্লা কি আইনের শাসনের বিরুদ্ধে হেলে পড়া উচিত ? আইনের শাসন বজায় রেখে আদালত কি আসামিদের স্বাধীনতার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে ?
বেঞ্চ বলে, "আমরা এটা স্পষ্ট করতে চাই যে শুধুমাত্র যখন আইনের শাসন বিরাজ করবে, সমতার অধিকার এবং সংবিধানের 14 অনুচ্ছেদে বর্ণিত আইনের সমান সুরক্ষা-সহ স্বাধীনতা ও অন্যান্য সমস্ত মৌলিক অধিকার আমাদের সংবিধানে প্রাধান্য পাবে ৷ ... একজন ব্যক্তির স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আইনের লঙ্ঘন উপেক্ষা করা হবে কি ? ...এই আদালত তার বিভিন্ন রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসনের বিষয়ে যা বলেছে তা পুনর্ব্যক্ত করতে চাই ৷ আইনের শাসন মানে যখনই রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তখন আইনের শাসন নিশ্চিত করতে আদালত পদক্ষেপ করবে । আইনের শাসন বিরাজ করছে... ৷"
বিচারপতি নাগারথনা জানিয়েছেন, আইনের শাসন লঙ্ঘন সংবিধানের 14 অনুচ্ছেদে সমতাকে অস্বীকার করার সমান ৷ আরও গুরুত্বপূর্ণ হল, আইনের শাসন মানে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন । তিনি বলেন, “আইনের সামনে সমতা না থাকলে কোনও আইনের শাসন থাকতে পারে না ৷ ...আমাদের দৃষ্টিতে, এই আদালত অবশ্যই আইনের শাসনকে বজায় রাখার জন্য পথ দেখাবে ৷ ...একটি গণতন্ত্রে আইনের শাসন অপরিহার্য, এটি বিশেষ করে আইন-আদালতের মাধ্যমে সংরক্ষণ ও প্রয়োগ করতে হবে ।’’
বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘যেখানে আইনের শাসন প্রয়োগের প্রয়োজন হয়, সেখানে করুণা ও সহানুভূতির কোনও ভূমিকা নেই ৷ ...আদালতকে ভয় বা পক্ষপাতিত্ব, স্নেহ বা অস্বাভাবিক ইচ্ছা ছাড়াই এটি (আইনের শাসন) প্রয়োগ করতে হবে ৷ ...এইভাবে আইনের শাসনের কাঠামোর মধ্যে থাকা প্রত্যেকেই আদেশ মেনে চলেন ও এটা অমান্য করা হলে শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে ৷’’
উল্লেখ্য, ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়া নিয়ে গুজরাত সরকারের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বিলকিস বানো নিজেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন ৷ পাশপাশি একাধিক জনস্বার্থ মামলাও হয়েছিল এই নিয়ে ৷ সিপিএম নেত্রী শুভাশিনী আলি, স্বাধীন সাংবাদিক রেবতী লাউল ও লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য রূপরেখা বর্মা, তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র-সহ বেশ কয়েকজন জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন ৷
আরও পড়ুন: