আমেদাবাদ, 18 অগস্ট: তাঁকে নিয়ে দেশজুড়ে চর্চা চলছে ৷ স্বাধীনতা দিবসের দিনই বিলকিস বানোকে গণধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত 11 জনকে সময়ের আগে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছে গুজরাত সরকার ৷ স্বভাবতই এ নিয়ে বিরোধী শিবিরের সমালোচনার মুখে পড়েছে গেরুয়া শিবির ৷ খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন 2002-এ গুজরাত সংঘর্ষের সময় গণধর্ষিতা বিলকিস বানো ৷ জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর দোষীদের মিষ্টি মুখ করানোর ছবি সামনে এসেছে ৷ স্বভাবতই সকলের প্রশ্ন, নির্যাতিতা বানোর প্রতিক্রিয়া কী ? এ নিয়ে প্রথমে তিনি ও তাঁর পরিবার প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি ৷ বুধবার তিনি একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন (Bilkis Bano publishes a statement over 11 convict release in Gujarat) ৷
বিবৃতিতে বিলকিস বানোর দাবি, "দু'দিন আগে 15 অগস্ট, 2022 তারিখে 20 বছর আগের আতঙ্ক আমায় ফের ঘিরে ধরেছে ৷ 11 জন দোষী আমার পরিবার এবং জীবন তছনছ করে দিয়েছিল ৷ আমার 3 বছরের মেয়েকে কেড়ে নিয়েছে ৷ সেই দোষীরা জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে ৷ এটা শোনার পর আমার সব শব্দ হারিয়ে গিয়েছে ৷ এখনও আমি স্তব্ধ ৷
মহিলাদের বিচারের দিকটি নিয়েও প্রশ্ন করেন তিনি ,"আজ, আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি - একজন মহিলার প্রতি বিচার এভাবে কী করে শেষ হতে পারে ? আমাদের দেশে সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আমার আস্থা ছিল ৷ এই বিচারব্যবস্থায় আমি বিশ্বাস করেছিলাম এবং ধীর ধীরে নিজের আতঙ্ক নিয়ে বেঁচে থাকাটা শিখছিলাম ৷ এই দোষীদের মুক্তি দিয়ে আমার কাছ থেকে শান্তি কেড়ে নেওয়া হয়েছে ৷ বিচারের প্রতি আমার ভরসা নাড়িয়ে দিয়েছে ৷ আমার এই যন্ত্রণা এবং নড়বড়ে হয়ে যাওয়া বিশ্বাস শুধুমাত্র আমার একার নয়, সেই প্রতিটি মহিলার, যাঁরা আদালতে ন্যায্য বিচার পাওয়ার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন ৷"
দোষীদের মুক্তির পর তিনি সুরক্ষিত থাকবেন তো ? এই প্রশ্ন তুলে বিলকিস জানিয়েছেন, "এরকম একটা অন্যায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমার নিরাপত্তা এবং ভালো থাকা নিয়ে কেউ কিছু ভাবেনি। আমায় জিজ্ঞেসও করেনি ৷ গুজরাত সরকারের কাছে আমার আবেদন, এই সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিন ৷ ভয় ছাড়া শান্তিতে আমার বেঁচে থাকার অধিকারটা ফিরিয়ে দিন আমায় ৷ নিশ্চিত করুন যে, আমি এবং আমার পরিবার সুরক্ষিত থাকব ৷" বিলকিস বানোর পক্ষ থেকে এই বিবৃতিটি প্রকাশ করেন আইনজীবী শোভা গুপ্তা ৷
আরও পড়ুন: অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানোর গণধর্ষণ ও 7 খুন, সাজাপ্রাপ্ত 11 জন দোষীর মুক্তি
2002-এর ফেব্রুয়ারির শেষে গোধরা কাণ্ডের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গুজরাত ৷ 3 মার্চ, দাহোদ জেলায় লিমখেড়া তালুকায় রাধিকাপুর গ্রামে একদল দুষ্কৃতী বিলকিস বানোর পরিবারের উপর হামলা চালায় ৷ সেই সময় বানো 5 মাসের গর্ভবতী ছিলেন ৷ তাঁকে গণধর্ষণ করা হয় ৷ তাঁর পরিবারের 7 জন সদস্যকে হত্যা করা হয় ৷ তার মধ্যে অন্যতম তাঁর 3 বছরের মেয়ে ৷
11 জন দোষীর মধ্যে রাধেশ্যাম শাহ 15 বছর 4 মাস জেলে কাটিয়ে গুজরাত হাইকোর্টে তার কারাবাসের সময় কমানোর আবেদন জানায় ৷ আদালত পর্যবেক্ষণ করে বিষয়টি মহারাষ্ট্রের একটি আদালতের কাছে পাঠায় ৷ ওই আদালতই দোষীদের যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছিল । এ বছরের 1 এপ্রিলে অন্যতম দোষী রাধেশ্যাম শাহ সুপ্রিম কোর্টে মুক্তির জন্য আবেদন করে ৷ 13 মে সর্বোচ্চ আদালত জানায়, এই অপরাধ গুজরাতে ঘটেছিল ৷ তাই গুজরাত সরকারকেই শাহের আবেদন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ৷
আরও পড়ুন: গুলবার্গ হত্যাকাণ্ডে ফের ক্লিনচিট মোদিকে, জাকিয়া জাফরির আবেদন খারিজ সুপ্রিম কোর্টে
সেই অনুযায়ী সুুপ্রিম কোর্ট গুজরাত সরকারকে 19 জুলাই, 1992-এর নীতি অনুযায়ী সময়ের আগে শাহের মুক্তির আবেদনটি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয় এবং দু'মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে বলে ৷ সোমবার রাধেশ্যাম শাহ ছাড়াও মুক্তি পেল যশওয়ান্তভাই নাই, গোবিন্দভাই নাই, শৈলেশ ভাট, বিপিন চন্দ্র যোশী, কেশরভাই ভোহানিয়া, প্রদীপ মোরধিয়া, বাকাভাই ভোহানিয়া, রাজুভাই সোনি, মিতেশ ভাট এবং রমেশ চন্দনা ৷