ETV Bharat / bharat

Bhaskar Halami: প্রত্যন্ত গ্রামের আদিবাসী ছেলেটাই আজ মার্কিন মুলুকের বিজ্ঞানী !

মহারাষ্ট্রে গড়চিরোলীর (Gadchiroli) এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম হয় ভাস্কর হালামির (Bhaskar Halami) ৷ আজ তিনি বিজ্ঞানী (Senior Scientist) এবং আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত ৷ কেমন ছিল তাঁর জীবনের এই সফর ?

Bhaskar Halami is the Tribal Boy From Maharashtra Now Scientist In US
Bhaskar Halami: প্রত্যন্ত গ্রামের আদিবাসী ছেলেটাই আজ মার্কিন মুলুকের বিজ্ঞানী !
author img

By

Published : Nov 13, 2022, 7:53 PM IST

নাগপুর, 13 নভেম্বর: কঠোর পরিশ্রম আর দৃঢ় সংকল্প করতে পারলে যে অসাধ্য সাধন হয়, তা আরও একবার প্রমাণ করে দেখালেন ভাস্কর হালামি (Bhaskar Halami) ৷ বর্তমানে তিনি মার্কিন মুলুকের বাসিন্দা ৷ পেশায় বিজ্ঞানী (Senior Scientist) ৷ অর্থের কোনও অভাব নেই ৷ কিন্তু ছোটবেলায় প্রতিদিন একবেলার খাবারও জুটত না তাঁর ৷ ভাস্কর আদতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি ৷ মহারাষ্ট্রে গড়চিরোলীর (Gadchiroli) এক প্রত্যন্ত গ্রামে তাঁর জন্ম ৷ ভাস্করের গ্রামের নাম চিরচড়ি ৷ কুরখেদা তহসিলের এই গ্রামের দূরত্ব আধুনিক পৃথিবী অনেকটাই বেশি ! 'সেই দূরত্ব' পেরিয়েই আমেরিকা পাড়ি দেন ভাস্কর ৷ বর্তমানে সেখানকার মেরিল্য়ান্ডের (Maryland) একটি বায়োফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থার গবষেণা ও উন্নয়নের দায়িত্বে রয়েছেন এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৷

ভাস্কর যে সংস্থায় কাজ করেন, তারা মূলত জেনেটিক ওষুধ নিয়ে গবেষণা করে ৷ আর 44 বছরের ভাস্কর নিজে আরএনএ তৈরি এবং সংশ্লেষ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন ৷ তবে, তাঁর সাফল্যের পথ ছিল কাঁটায় ভরা ৷ সবথেকে বড় সমস্য়া ছিল, তাঁর জন্ম পরিচয় ৷ আদিবাসী পরিবারের সন্তান হওয়ায় অনেক অবাঞ্ছিত সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে ৷ তাঁর গ্রামে তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি করেছেন ৷ বস্তুত, ভাস্করের আগে চিরচড়ি গ্রামের কেউ কলেজ পর্যন্ত পৌঁছননি !

আরও পড়ুন: বাবার শেষকৃত্য সেরে ভোট দিলেন হিমাচলের তিন ভাই !

সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কৃতী জানিয়েছেন, "একবেলার পেট ভরা খাবার জোগাড় করতেও আমাদের অনেক লড়াই করতে হত ৷ আমাদের কাছে না ছিল খাবার, না কোনও কাজ ৷ সেই সময়টা যে আমরা কীভাবে পার করেছিলাম, সে কথা ভাবলে এখনও বাবা-মা অবাক হয়ে যান ৷" ছোটবেলায়, বিশেষ করে বর্ষাকালে সবথেকে বেশি সমস্যা হত ৷ ভাস্কর জানান, "আমরা মহুয়া ফুল রান্না করে খেতাম ৷ কিন্তু, এই ফুল জোগাড় করা এবং খাওয়ার পর হজম করা খুব কঠিন ৷ আমরা পরসদ নামে এক ধরনের বুনো ধান আর চালের গুঁড়ো জলে ফুটিয়ে খেতাম ৷ যাতে পেট ভরে থাকে, তার জন্য ঢক ঢক করে ওই বুনো চাল আর চালের গুঁড়ো সেদ্ধ জল সমেত খেয়ে নিতাম ৷ শুধু আমরা নয়, আমাদের গ্রামে 90 শতাংশ বাসিন্দাই এভাবে বেঁচে থাকতেন ৷"

ভাস্করদের গ্রামে সব মিলিয়ে সেই সময় 400 থেকে 500টি পরিবার থাকত ৷ তাদের মধ্যে যারা কিছুটা অবস্থাপন্ন, তাদের বাড়িতে পরিচারক এবং পরিচারিকা হিসাবে কাজ করতেন ভাস্করের বাবা-মা ৷ তাঁদের একটি ছোট্ট ক্ষেত ছিল ৷ কিন্তু, তাতে যেটুকু ফসল উঠত, তা পরিবারের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ছিল ৷ ভাস্করের বাবা সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন ৷ হঠাৎই একদিন 100 কিলোমিটার দূরের একটি স্কুলে রাঁধুনীর চাকরি পান তিনি ৷ পরে সেখানেই পুরো পরিবার থাকতে চলে আসে ৷

এই নতুন জায়গাতেই প্রাথমিক স্কুলের পাঠ শুরু করেন ভাস্কর ৷ একটি আশ্রম স্কুলে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন তিনি ৷ এরপর স্কলারশিপ পেয়ে কেলাপুরের একটি সরকারি স্কুল ক্লাস 10 পর্যন্ত পড়াশোনা করেন ৷ পরবর্তীতে গড়চিরোলীর একটি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক হন ভাস্কর ৷ স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা করেন পুণের ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স থেকে ৷ 2003 সালে নাগপুরেরই প্রখ্য়াত লক্ষ্মীনারায়ণ ইনস্টিটিউট অফ টেকনলজিতে সহকারী অধ্যাপকের চাকরি পান ভাস্কর ৷ এরপর মহারাষ্ট্র পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষাতেও পাশ করেন তিনি ৷ তারও পরে মিশিগান টেকলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন ৷

ভাস্কর জানান, তাঁর বাবা শিক্ষার মর্ম বুঝতেন ৷ বাবা-মায়ের সহযোগিতা ছিল বলেই আজ তিনি সফল ও বিখ্যাত ৷ আপাতত কিছুদিনের জন্য ভারতে এসেছেন ভাস্কর ৷ এই সফরে নিজের গ্রাম, স্কুল, কলেজ, সব জায়গায় যাচ্ছেন তিনি ৷

নাগপুর, 13 নভেম্বর: কঠোর পরিশ্রম আর দৃঢ় সংকল্প করতে পারলে যে অসাধ্য সাধন হয়, তা আরও একবার প্রমাণ করে দেখালেন ভাস্কর হালামি (Bhaskar Halami) ৷ বর্তমানে তিনি মার্কিন মুলুকের বাসিন্দা ৷ পেশায় বিজ্ঞানী (Senior Scientist) ৷ অর্থের কোনও অভাব নেই ৷ কিন্তু ছোটবেলায় প্রতিদিন একবেলার খাবারও জুটত না তাঁর ৷ ভাস্কর আদতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি ৷ মহারাষ্ট্রে গড়চিরোলীর (Gadchiroli) এক প্রত্যন্ত গ্রামে তাঁর জন্ম ৷ ভাস্করের গ্রামের নাম চিরচড়ি ৷ কুরখেদা তহসিলের এই গ্রামের দূরত্ব আধুনিক পৃথিবী অনেকটাই বেশি ! 'সেই দূরত্ব' পেরিয়েই আমেরিকা পাড়ি দেন ভাস্কর ৷ বর্তমানে সেখানকার মেরিল্য়ান্ডের (Maryland) একটি বায়োফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থার গবষেণা ও উন্নয়নের দায়িত্বে রয়েছেন এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৷

ভাস্কর যে সংস্থায় কাজ করেন, তারা মূলত জেনেটিক ওষুধ নিয়ে গবেষণা করে ৷ আর 44 বছরের ভাস্কর নিজে আরএনএ তৈরি এবং সংশ্লেষ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন ৷ তবে, তাঁর সাফল্যের পথ ছিল কাঁটায় ভরা ৷ সবথেকে বড় সমস্য়া ছিল, তাঁর জন্ম পরিচয় ৷ আদিবাসী পরিবারের সন্তান হওয়ায় অনেক অবাঞ্ছিত সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে ৷ তাঁর গ্রামে তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি করেছেন ৷ বস্তুত, ভাস্করের আগে চিরচড়ি গ্রামের কেউ কলেজ পর্যন্ত পৌঁছননি !

আরও পড়ুন: বাবার শেষকৃত্য সেরে ভোট দিলেন হিমাচলের তিন ভাই !

সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কৃতী জানিয়েছেন, "একবেলার পেট ভরা খাবার জোগাড় করতেও আমাদের অনেক লড়াই করতে হত ৷ আমাদের কাছে না ছিল খাবার, না কোনও কাজ ৷ সেই সময়টা যে আমরা কীভাবে পার করেছিলাম, সে কথা ভাবলে এখনও বাবা-মা অবাক হয়ে যান ৷" ছোটবেলায়, বিশেষ করে বর্ষাকালে সবথেকে বেশি সমস্যা হত ৷ ভাস্কর জানান, "আমরা মহুয়া ফুল রান্না করে খেতাম ৷ কিন্তু, এই ফুল জোগাড় করা এবং খাওয়ার পর হজম করা খুব কঠিন ৷ আমরা পরসদ নামে এক ধরনের বুনো ধান আর চালের গুঁড়ো জলে ফুটিয়ে খেতাম ৷ যাতে পেট ভরে থাকে, তার জন্য ঢক ঢক করে ওই বুনো চাল আর চালের গুঁড়ো সেদ্ধ জল সমেত খেয়ে নিতাম ৷ শুধু আমরা নয়, আমাদের গ্রামে 90 শতাংশ বাসিন্দাই এভাবে বেঁচে থাকতেন ৷"

ভাস্করদের গ্রামে সব মিলিয়ে সেই সময় 400 থেকে 500টি পরিবার থাকত ৷ তাদের মধ্যে যারা কিছুটা অবস্থাপন্ন, তাদের বাড়িতে পরিচারক এবং পরিচারিকা হিসাবে কাজ করতেন ভাস্করের বাবা-মা ৷ তাঁদের একটি ছোট্ট ক্ষেত ছিল ৷ কিন্তু, তাতে যেটুকু ফসল উঠত, তা পরিবারের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ছিল ৷ ভাস্করের বাবা সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন ৷ হঠাৎই একদিন 100 কিলোমিটার দূরের একটি স্কুলে রাঁধুনীর চাকরি পান তিনি ৷ পরে সেখানেই পুরো পরিবার থাকতে চলে আসে ৷

এই নতুন জায়গাতেই প্রাথমিক স্কুলের পাঠ শুরু করেন ভাস্কর ৷ একটি আশ্রম স্কুলে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন তিনি ৷ এরপর স্কলারশিপ পেয়ে কেলাপুরের একটি সরকারি স্কুল ক্লাস 10 পর্যন্ত পড়াশোনা করেন ৷ পরবর্তীতে গড়চিরোলীর একটি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক হন ভাস্কর ৷ স্নাতকোত্তরের পড়াশোনা করেন পুণের ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স থেকে ৷ 2003 সালে নাগপুরেরই প্রখ্য়াত লক্ষ্মীনারায়ণ ইনস্টিটিউট অফ টেকনলজিতে সহকারী অধ্যাপকের চাকরি পান ভাস্কর ৷ এরপর মহারাষ্ট্র পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষাতেও পাশ করেন তিনি ৷ তারও পরে মিশিগান টেকলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন ৷

ভাস্কর জানান, তাঁর বাবা শিক্ষার মর্ম বুঝতেন ৷ বাবা-মায়ের সহযোগিতা ছিল বলেই আজ তিনি সফল ও বিখ্যাত ৷ আপাতত কিছুদিনের জন্য ভারতে এসেছেন ভাস্কর ৷ এই সফরে নিজের গ্রাম, স্কুল, কলেজ, সব জায়গায় যাচ্ছেন তিনি ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.