ইউনেস্কোর সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যাঁদের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, তাঁদের মধ্যে ক্রমশ অপরাধ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে । এই ধরনের ব্যবহারকে যদি আগেই চিহ্নিত করা যায় এবং তাঁদের সঠিক পথ দেখানো যায়, তাহলে এই ধরনের অপরাধ ও হিংসার ঘটনা অনেকটাই কমানো যাবে ।
আধুনিক যুগে তরুণ-তরুণীদের ক্রমশ আপত্তিজনক কাজ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে । প্রচুর সংখ্যক পড়ুয়া তাদের বেড়ে ওঠার সময়ে মাদক, বাইক নিয়ে প্রতিযোগিতা, মদ ও অনলাইন জুয়ার নেশায় সময় নষ্ট করছে । এই ধরনের প্রবণতাকে চিহ্নিত করার দায়িত্ব অভিভাবকদেরই । আর তাঁদেরই শোধরানোর কাজ করতে হবে । এমন অনেক অভিভাবক আছেন, যাঁরা সন্তান যা চায়, তাই কিনে দেয় । সাম্প্রতিক অতীতে দুজন প্রযুক্তিবিদ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন । তাঁদের দ্রুতগতির গাড়ি উড়ালপুলের উপর থেকে পড়ে যাওয়ার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটে । গাড়িতে পুলিশ ম্যারিজুয়ানা পেয়েছিল । বাজি ধরে কয়েক সেকেন্ডে ট্রাফিক সিগন্যাল টপকানোর মতো ভয়ঙ্কর খেলায় অংশগ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে কিছু কলেজ পড়ুয়াকে । এই ধরনের প্রতিযোগিতা অনেক প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে । এর ফলে মৃতদের অভিভাবক এবং কাছের মানুষরা একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছেন । এই ধরনের চিন্তাজনক প্রবণতা শুধু যে উচ্চবিত্তদের মধ্যেই আটকে আছে তা নয়, এটা ক্রমশ মধ্য ও নিম্নবিত্তের পরিবারের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে । বেশ কিছু সমীক্ষায় উঠে এসেছে, 40 শতাংশ অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে 18 থেকে 25 বছর বয়সিরা ।
মনোবিদরা বলেন, শৈশবের পরিবেশ, অভিভাবকের প্রভাব, পরিবারের সঙ্গে বন্ধন এবং বন্ধুত্ব একজন ব্যক্তির জীবনে প্রভাব ফেলে । স্মার্টফোনের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে । বই পড়া অথবা খেলার বদলে মানুষ এখন বেশি সময় কাটায় স্মার্টফোনের স্ক্রিনের দিকে তাঁকিয়ে । খুব কম বয়সেই শিশুদের এই ধরনের ব্যবহারকে চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের একজন ভালো নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সঠিক দিশা দেখাতে হবে । শৈশবে অভিভাবকের অবহেলা এবং কৈশোরে সঠিক দেখভাল না করলে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে । অর্থনৈতিক ও সামাজিক লাভই সামাজিক দুর্দশার পিছনে মূল ভূমিকা পালন করছে । বিলাসবহুল জীবনযাপন করার জন্য মানুষের মধ্যে চুরি ও ডাকাতি করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে । সামাজিক মূল্যবোধ কমে যাওয়ার জন্য চলচ্চিত্র ও সোশাল মিডিয়া সমানভাবে দায়ী । মানুষ খারাপ জিনিসগুলি খুব তাড়াতাড়ি গ্রহণ করে ।
বিপজ্জনক ব্যবহার করলে তার ফল কী হতে পারে, তা নিয়ে শিশুদের সঙ্গে অভিভাবকদের নিয়মিত কথা বলতে হবে । শিশুরা সহজেই অভিভাবকদের দুর্বলতা ধরতে পারে । সুতরাং, মা-বাবাদের শক্তিশালী শৃঙ্খলাবদ্ধ কৌশল ব্যবহার করে নজর রাখতে হবে । শিশুদের ঠিক রাখা খুব সহজ কাজ নয় । দম্পতিদের নিজেদের সমস্যার সমাধান করে ফেলতে হবে এবং শিশুকে সঠিক পথে রাখতে বিস্তারিত পরিকল্পনা করতে হবে । এই বিষয়ে অভিভাবক এবং শিক্ষকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তরুণ প্রজন্ম যে কোনও দেশের ভিত্তিস্তম্ভ । ভবিষ্যতের প্রজন্মকে সঠিক দিশা দেখাতে সরকারেরও সমান দায়িত্ব রয়েছে । নেতাদেরও এটা বুঝতে হবে যে সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে শহর ও গ্রামের তরুণ-তরুণীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সব সময় বজায় রাখতে হবে ।