দিল্লি, 25 জুন : হিন্দিতে চোস্ত নন । বক্তৃতার মাঝে বাংলার টান ভালোই বোঝা যাচ্ছিল । থমকে থমকে বলছিলেন ইংরাজিও । তবু, অধীরময় হয়ে উঠল সংসদ । ফের একবার । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন তাঁকে যোদ্ধা বলেছেন, তা বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছেন বহরমপুরের সাংসদ ।
আগেও বলার সুযোগ পেতেন । তবে, বেশিক্ষণ নয় । স্পটলাইট থাকত রাহুল গান্ধির দিকে । এবার যেন 'অধীর' আগ্রহে মানুষ অপেক্ষা করছে । অপেক্ষারত কংগ্রেস সাংসদরাও । প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, লেটার মার্কস নিয়ে পাশ করেছেন অধীর । এমন কী, BJP সাংসদরাও তাঁর বক্তব্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ।
গতকাল রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের উপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন হয় । মোদি বেছে নেন তাঁর দলের আর এক "মোদি"কে । অর্থাৎ, ওড়িশার সাংসদ প্রতাপচন্দ্র সারেঙ্গিকে । তাঁর বক্তব্যে শুধুই ছিল মোদির বন্দনা । আর গান্ধি পরিবারের প্রতি খোঁচা । স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে মোদির তুলনাও করে ফেললেন । মহাজোটকে কটাক্ষ করতেও ছাড়লেন না । টু-জি, থ্রি-জি, কয়লা কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ তুলে একহাত নিলেন গান্ধি পরিবারকে ।
এই সংক্রান্ত আরও খবর : অভিনন্দনের গোঁফকে 'জাতীয় গোঁফ' ঘোষণা করা হোক, দাবি অধীরের
জবাব দিতে উঠলেন বাংলার অধীর । শুরুতেই আক্রমণ । বলেই দিলেন, "নাম নরেন্দ্র বলে স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির তুলনা মেনে নিতে পারছি না ।" এরপর একটু ভুল কথা বলে ফেলেছিলেন । যা শুনে রে রে করে ওঠেন BJP সাংসদরা । এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে ক্ষমা চেয়ে নেন । বলেন, "আমার হিন্দি খুব বাজে । প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করতে চাইনি । কিছু ভুল বললে ওঁর কাছে ক্ষমা চাইছি । দরকার হলে সামনাসামনি আবার ক্ষমা চাইব ।" ব্যাস, ভুল এইটুকুই । তারপর সংসদ শুধুই অধীরময় । একের পর এক বাউন্সার উড়িয়ে দিলেন নিমেষে । সামনে থেকে যত চিৎকার হল, অধীর পালটা দিলেন ।
এই সংক্রান্ত আরও খবর : মোদির সঙ্গে বিবেকানন্দর তুলনা শুনে অধীর রেগে যা বললেন
BJP সাংসদদের প্যাঁচে ফেললেন প্রশ্ন করে । তুলে ধরলেন মোদির সাংহাই সফরে গিয়ে করা একটি বক্তব্য । অধীর বলেন, 2015 সালে সাংহাইয়ে ভারতীয় কমিউনিটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী । সেখানে তিনি বলেন, 'আগে আপনারা নিজেদের ভারতীয় বলতে লজ্জিত বোধ করতেন । এখন গর্ববোধ করেন ।' অধীরের প্রশ্ন, তাহলে আপনারা কি এটা মেনে নিচ্ছেন ? সামনের সারি থেকে আওয়াজ উঠল "হ্যাঁ" । সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন । এবার কংগ্রেস সাংসদ বলে উঠলেন, "তাহলে বাজপেয়িজি, ভাগবতজি, সাভারকরজি ভারতীয় হিসেবে গর্ববোধ করতেন না ?" জি-জি কথা উঠতেই BJP সাংসদরা চেঁচিয়ে বলতে শুরু করেন, "টু-জি, থ্রি-জি ।" তখন মুচকি হাসছেন অমিত শাহ । মোদি কিন্তু নিশ্চুপ । গালে হাত দিয়ে শুনছেন বক্তব্য । অধীর বলে উঠলেন, "টু-জি, এ-জি করতে করতে তো আমরা এখানে বসে (বিরোধী আসনে) গেছি । এবার তো আর আপত্তি হওয়ার কথা নয় । ক্ষমতা থাকে তো আপনারা রাহুল গান্ধি, সোনিয়া গান্ধিকে জেলে ভরুন না । আমরাও চাই, দোষীরা শাস্তি পাক । যাদের চোর বানিয়ে আপনারা সরকারে এসেছেন, তারা কেন জেলে নেই ? সংসদে কীভাবে বসে আছেন ?" মোদিকে কটাক্ষের সুরে বলেন, "এবারের নির্বাচনে তো আর টু-জি, থ্রি-জি শুনিনি । কারণ, এই প্রোডাক্টটা পুরোনো হয়ে গেছে । আসলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বড় সেলসম্যান । উনি প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পেরেছেন । জিতেছেন । আমরা পারিনি । হেরেছি ।"
অধীর, বিহারে শিশুমৃত্যুর ঘটনাও তুলে ধরেন । কীভাবে শাসকদলের সাংসদরা এত বড় ঘটনা এড়িয়ে যাচ্ছেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন । বলেন, "বিহারে এত শিশু মারা যাচ্ছে । আপনারা কিছু করছেন ? একটা কথাই ভাবছেন, মোদি বাবা পার করেগা । আপনারা সবাই এটাই ভাবেন । সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন না । এখানে জনতার পুজো হয় না, মোদিবাবার পুজো হয় । আমরা সংখ্যায় নগণ্য হতে পারি । কিন্তু, আমজনতার জন্য লড়াই বন্ধ করব না । আমজনতার পুজো করব ।"
সবশেষে কংগ্রেস আমলে কাজের ফিরিস্তি দিয়ে একহাত নেন মোদি সরকারকে । উঠে আসে পাকিস্তান প্রসঙ্গ । বলেন, "এই যে পাকিস্তানকে এত ভয় দেখান । কীসের ভরসায় ? মিজ়াইলের । মিজ়াইল কারা বানিয়েছে ? কংগ্রেস । আমাদের আমলে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হয়েছিল বলে এখন বিভিন্ন স্যাটেলাইটের কথা ভাবতে পারছেন মোদি । বিভিন্ন প্রকল্পও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছেন ।"
51 মিনিট 53 সেকেন্ডের মাথায় বক্তব্য শেষ করলেন অধীর । সংসদে হাততালির ঝড় উঠল । হাত মেলালেন স্বয়ং সোনিয়া গান্ধি । তবে, এদিন রাহুল গান্ধিই যা ছিলেন না । কংগ্রেস "যোদ্ধার" বক্তব্য হয়তো তাঁকেও অনেক প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিত ! সাধে তো আর মোদি বলেননি, "অধীরই আসল যোদ্ধা ।"