যে সব রাজনীতিবিদ ইতিহাসের গতি নির্ধারণ করেছেন, শান্তি, মানবতা ও সাম্যপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম মহাত্মা গান্ধি । 2 অক্টোবর তাঁর জন্মদিন ভারতে গান্ধি জয়ন্তী হিসেবে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয় । পাশাপাশি 2007 সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় 2 অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় । রাষ্ট্রসংঘের সকল সদস্য দেশ এই দিবস পালনে সম্মতি জ্ঞাপন করে । তবে বিশ্বের অনেক দেশই গান্ধিকে সম্মানজ্ঞাপন করলেও তাঁর পথ অনুসরণে শান্তি স্থাপনে অনীহা প্রকাশ করে ।
ভারতের বর্তমান আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় মহাত্মা গান্ধির আদর্শ, জীবন ও শিক্ষা অনুকরণীয় । গান্ধি সারা জীবন অহিংস আন্দোলন করেছেন । শান্তির বাণী শুনিয়েছেন । বর্তমান বিশ্বে যখন উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, তখন গান্ধির আদর্শ আমাদের কাছে শান্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে । মহাত্মা গান্ধির আদর্শ ও শিক্ষা সারা বিশ্বের মানব সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে শান্তি স্থাপন করার কথা এককালে নেলসন ম্যান্ডেলা বা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ভেবেছিলেন বটে । তবে বর্তমান প্রজন্মের অনেক নেতা তা ভাবেন না ।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রদূত ও অহিংস আন্দোলনের প্রতীক মহাত্মা গান্ধি । তাঁর দীর্ঘ অথচ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই ভারতকে স্বাধীনতা অর্জনে সাহায্য করেছে । তাঁর সেই অহিংস আন্দোলন, মানবতাবাদী দর্শন ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের জন্য এক আলোকস্তম্ভ । গান্ধি অহিংসার সঙ্গে আপোশ করতেন না । তাই চৌরি চৌরায় গণহত্যার পর গান্ধি মাঝপথে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলেন ।
গান্ধির সেই আন্দোলনের পথকে স্মরণ করিয়ে দিয়েই কত কয়েক বছরের শান্তির জন্য নোবেলজয়ীরা মনে করেন, তাঁর আদর্শ অনুসরণের মধ্যে দিয়ে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব । গান্ধিবাদে বিশ্বাসী সেই ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন, মারত্তি আহতিসারি (2008 সালের নোবেলজয়ী), মুহম্মদ ইউনুস (2006 সালের নোবেলজয়ী), ওয়াঙ্গারি মাথাই (2004 সালের নোবেলজয়ী), শিরিন এদাবি (2003 সালের নোবেলজয়ী) । এই শতাব্দীর এই সমস্ত শান্তিকামী মানুষের আদর্শ গান্ধি । তাঁদেরই মতো বিশ্বের রাষ্ট্রনেতারাও যদি গান্ধির অহিংসার আদর্শকে মেনে নেন, তবে বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত করার ক্ষমতা কারও থাকবে না ।