28 জুলাই । প্রতিবছর এই দিনটাতে পালন করা হয় বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস । এই বছরে থিম ‘ হেপাটাইটিস মুক্ত ভবিষ্যৎ ’ । বিশ্বজুড়ে এই দিনটি পালন করা হয় হেপাটাইটিসের জন্য সতর্কতা পালনের জন্য । 2030 সালের মধ্যে WHO বিশ্বের প্রতিটি দেশের সঙ্গে একসাথে কাজ করে হেপাটাইটিস মুক্ত সমাজ তৈরির প্রচেষ্টায় রয়েছে। বিশ্বের 325 মিলিয়ন মানুষ ভাইরাল হেপাটাইটিস B ও C তে আক্রান্ত । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের 1.3 মিলিয়ন মানুষ প্রতিবছর হেপাটাইটিস B ও C তে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় । কোরোনা ভাইরাস প্যানডেমিকের মধ্যেও হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে ।
1967 সালে ডক্টর বারুচ ব্লুমবার্গ প্রথম হেপাটাইটিস B ভাইরাস আবিষ্কার করেন । তার দু'বছর পর তিনি হেপাটাইটিস B ভাইরাসের ভ্যাকসিনও আবিষ্কার করেন । সেই থেকে ডক্টর বারুচ ব্লুমবার্গের জন্মদিনে 28 জুলাই প্রতিবছর বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয় । তিনি তার এই অসামান্য আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ।
কি এই হেপাটাইটিস ?
হেপাটাইটিস লিভারের এক ধরনের রোগ । যা ভাইরাল । পাঁচ রকমের হেপাটাইটিস ভাইরাস রয়েছে A, B, C, D ও E । এই প্রত্যেকটি ভাইরাসই লিভারের উপর আক্রমণ করে । ক্রনিক হেপাটাইটিস B এবং C জীবনহানি করতে পারে । এর থেকে লিভারের মারাত্মক রোগ ক্যান্সারের মত রোগ হতে পারে কিংবা মৃত্যুও হতে পারে ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বিশ্বের 90% মানুষ হেপাটাইটিস B তে আক্রান্ত এবং 80% মানুষ হেপাটাইটিস C তে । তারা নিজেরাও জানে না তাদের হেপাটাইটিস হয়েছে । হেপাটাইটিস থেকে লিভারের অসুখ কিংবা লিভার ক্যান্সার হতে পারে এবং আক্রান্ত রোগীর থেকে অন্যদেরও ছড়াতে পারে ।
হেপাটাইটিসের বিভিন্ন প্রকার
হেপাটাইটিস A - এটি দূষিত জল ও খাবার থেকে ছড়াতে পারে কিংবা যার হেপাটাইটিস এ রয়েছে তার থেকেও ছড়াতে পারে ।
হেপাটাইটিস B - এটি যার হেপাটাইটিস B রয়েছে এমন ব্যক্তির রক্ত কিংবা শরীরের অন্যান্য অঙ্গের তরল থেকে ছড়াতে পারে ।
হেপাটাইটিস C - এটি যার হেপাটাইটিস C রয়েছে তার শরীরের সঙ্গে সুস্থ ব্যক্তির সরাসরি সম্পর্কে যেমন ইনজেকশন কিংবা শারীরিক সম্পর্ক হলে ছড়াতে পারে ।
হেপাটাইটিস D - এর থেকে লিভারের মারাত্মক অসুখ হতে পারে । হেপাটাইটিস রয়েছে এমন ব্যক্তির রক্তের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শে আসলে এটি ছড়াতে পারে ।
হেপাটাইটিস E - এই রোগটি জল থেকে হয় অপরিষ্কার থাকলে দূষিত জল পান করলে এই রোগটি হতে পারে ।
উপসর্গ
বেশিরভাগ মানুষেরই হেপাটাইটিসের কোনও উপসর্গ ধরা পড়ে না । কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুবই অল্প উপসর্গ দেখা দেয় । আবার কিছু ক্ষেত্রে খুব বেশি উপসর্গ দেখা দেয় ।
হেপাটাইটিস A B ও C এর ক্ষেত্রে জ্বর-মালাইস-খিদে কম হওয়া ডায়রিয়া মাথাব্যথা জন্ডিস পেটে ব্যথা মোটা হয়ে যাওয়া এই সমস্ত উপসর্গ দেখা দেয় ।
হেপাটাইটিস D এর ক্ষেত্রে লিভার সিরোসিস হতে পারে । তবে হেপাটাইটিস বি দি খুব বেশি মারাত্মক আকার নেয় না ।
হেপাটাইটিস E এর ক্ষেত্রে অল্প জ্বর খিদে কম হওয়া মাথা ঘোরানো বমি পেটে ব্যথা ত্বকের সমস্যা চুলকুনি হাঁটুতে ব্যথা জন্ডিস ও খারাপ ইউরিন এর মত উপসর্গ দেখা যায় ।
ভাইরাল হেপাটাইটিস হলে সঠিক চিকিৎসা ভ্যাকসিন ডায়াগনোসিসের মাধ্যমে সেরে ওঠা যায় । হেপাটাইটিস এড়াতে গেলে সুরক্ষিত এবং সাবধান থাকতে হবে । পরিষ্কার পানীয় জল এবং খাদ্য খেতে হবে । ইঞ্জেকশন কিংবা ট্যাটু করার ক্ষেত্রে স্টেরিলাইজ ছুঁচ ব্যবহার করতে হবে । হেপাটাইটিস B এবং C হলে অবস্থা মারাত্মক হয় কি না তা জানা নেই । তবে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি ।