ETV Bharat / bharat

অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করেন ? সাবধান, রক্ত জমাট বাঁধতে পারে ফুসফুসে

অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করেন ? সাবধান, রক্ত জমাট বাঁধতে পারে ফুসফুসে

প্রতীকী ছবি
author img

By

Published : Nov 9, 2019, 8:04 PM IST

সমস্যা : আমার বাবার বয়স ৫৭ । তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল । আমরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাই । সেখানে বাবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর চিকিৎসক জানালেন, ফুসফুসে রক্ত জমাট বেঁধেছে । কিন্তু কেন এমনটা হল ? এই সমস্যার সমাধানই বা কী ? এমন সমস্যা এড়াতে কী কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত? যদি দয়া করে বিস্তারিত বলেন ।

সমাধান : আপনার বাবার যে সমস্যা হয়েছে তাঁকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় পালমোনারি থ্রম্বএমবোলিজম বা সংক্ষেপে PE । এই রোগে ফুসফুসে সমস্যা হয় এবং রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়, কিন্তু আদতে রোগটা শুরু হয় রোগীর পায়ের শিরায় । মানুষের শরীরে রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি এমন যে, সারা শরীর থেকে দূষিত রক্ত শিরার মাধ্যমে ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রে পৌঁছায় । সেই দূষিত রক্ত প্রথমে ফুসফুস থেকে অক্সিজেন নেয়, তারপর সেখান থেকে হৃদযন্ত্রে পৌঁছায় । তারপর হৃদযন্ত্র থেকে সারা শরীরে ধমনীর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বিশুদ্ধ রক্ত । আজীবন মানুষের শরীরে এই প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে । কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে পায়ের ও উরুর পেশীর শিরায় রক্ত জমাট (ক্লট) বেঁধে যায় । এর জেরে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়, শিরার দেওয়ালে চাপ বাড়ে এবং রক্ত স্বাভাবিকের তুলনায় ঘন হয়ে পড়ে । অফিসে বা অন্যত্র কাজ করার ক্ষেত্রে যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেয়ারে বসে থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি । যাঁদের পায়ের শিরায় এভাবে রক্ত জমাট বাঁধে, তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রে এই জমাট রক্তপিণ্ড শিরা বেয়ে ফুসফুসে পৌঁছায় । এর জেরে ফুসফুসের কাজ করতে সমস্যা হয় । ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় দূষিত রক্ত ফুসফুসে যাওয়ার পর পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না । আর এভাবে রক্তে যেহেতু পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাব ঘটে, তাই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় । পাশাপাশি রোগী বুকে ব্যথা অনুভব করেন ।

এই ধরণের সমস্যায় রোগীর D-Dimer পরীক্ষা করা হয় । এই পরীক্ষায় চিকিৎসক নিশ্চিতভাবে জানতে পারেন রোগীর ফুসফুসে রক্ত জমাট বেঁধেছে কি না। যদি পরীক্ষায় বিষয়টি ধরা পড়ে, সেক্ষেত্রে রোগীকে স্যালাইনের মাধ্যমে হেপারিন (পোরসিন) ওষুধ দীর্ঘক্ষণ ধরে দেওয়া হয় । ওই ওষুধটি ফুসফুসে জমাট রক্ত দূর করতে সাহায্য করে । এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে হেপারিন ইঞ্জেকশনও রোগীকে দেওয়া হয় যা ২৪ ঘণ্টা কাজ করে । রোগীর প্রাথমিক বিপদ কেটে যাওয়ার পর তাঁকে হেপারিন ট্যাবলেট দেওয়া হয় । এই ওষুধ সাধারণত ছয় মাসের জন্য দেওয়া হয়। ওষুধ সেবনের পাশাপাশি ফের যাতে এই সমস্যা না হয় সেদিকেও রোগীকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয় । তবে অনেক ক্ষেত্রে ওষুধে কাজ হয় না । সেক্ষেত্রে রোগীর অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি করা প্রয়োজন ।

অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টির ক্ষেত্রে একটি ক্ষুদ্র টিউব উরুর পেশীর শিরায় প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয় । এরপর সেই টিউবটি শিরার মাধ্যমে ফুসফুসের যে অংশে রক্তপিণ্ড রয়েছে সেখানে পৌঁছায় । সেখানে পৌঁছে টিউবটি এনজাইমের সাহায্যে জমাট রক্তকে দূর করতে সাহায্য করে ।

যদি আপনার বাবা ইতিমধ্যে হেপারিন ওষুধ খেতে শুরু করেন, তাহলে তাঁকে সতর্ক থাকতে বলুন যাতে ফের এই সমস্যা না হয় । তবে এই ওষুধটি কিন্তু সঠিক মাত্রায় নেওয়া প্রয়োজন । যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মাত্রায় হেপারিন কেউ সেবন করেন, সেক্ষেত্রে রোগীর শরীরে কোনও সামান্য কাটাছেঁড়া থেকেও প্রচুর রক্তপাত হতে পারে । তাই ওষুধের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য এই ধরনের চিকিৎসায় নিয়মিত রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা । ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি ফের যাতে পায়ের শিরায় রক্ত জমাট বাঁধতে না পারে, সেজন্য নিয়মিত শরীরচর্চা করা দরকার । অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা ছাড়াও যাঁরা নিয়মিত গাড়ি বা বিমানে দীর্ঘ যাত্রা করেন, তাঁদেরও এই সমস্য হতে পারে । সেক্ষেত্রে তাঁদের মাঝেমধ্যেই আসন ছেড়ে উঠে হাঁটাচলা করা উচিত ।

- ডাঃ আর বিজয় কুমার

সিনিয়র পালমোনোলজিস্ট

সমস্যা : আমার বাবার বয়স ৫৭ । তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল । আমরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাই । সেখানে বাবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর চিকিৎসক জানালেন, ফুসফুসে রক্ত জমাট বেঁধেছে । কিন্তু কেন এমনটা হল ? এই সমস্যার সমাধানই বা কী ? এমন সমস্যা এড়াতে কী কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত? যদি দয়া করে বিস্তারিত বলেন ।

সমাধান : আপনার বাবার যে সমস্যা হয়েছে তাঁকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় পালমোনারি থ্রম্বএমবোলিজম বা সংক্ষেপে PE । এই রোগে ফুসফুসে সমস্যা হয় এবং রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়, কিন্তু আদতে রোগটা শুরু হয় রোগীর পায়ের শিরায় । মানুষের শরীরে রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি এমন যে, সারা শরীর থেকে দূষিত রক্ত শিরার মাধ্যমে ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রে পৌঁছায় । সেই দূষিত রক্ত প্রথমে ফুসফুস থেকে অক্সিজেন নেয়, তারপর সেখান থেকে হৃদযন্ত্রে পৌঁছায় । তারপর হৃদযন্ত্র থেকে সারা শরীরে ধমনীর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বিশুদ্ধ রক্ত । আজীবন মানুষের শরীরে এই প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে । কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে পায়ের ও উরুর পেশীর শিরায় রক্ত জমাট (ক্লট) বেঁধে যায় । এর জেরে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়, শিরার দেওয়ালে চাপ বাড়ে এবং রক্ত স্বাভাবিকের তুলনায় ঘন হয়ে পড়ে । অফিসে বা অন্যত্র কাজ করার ক্ষেত্রে যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেয়ারে বসে থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি । যাঁদের পায়ের শিরায় এভাবে রক্ত জমাট বাঁধে, তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রে এই জমাট রক্তপিণ্ড শিরা বেয়ে ফুসফুসে পৌঁছায় । এর জেরে ফুসফুসের কাজ করতে সমস্যা হয় । ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় দূষিত রক্ত ফুসফুসে যাওয়ার পর পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না । আর এভাবে রক্তে যেহেতু পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাব ঘটে, তাই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় । পাশাপাশি রোগী বুকে ব্যথা অনুভব করেন ।

এই ধরণের সমস্যায় রোগীর D-Dimer পরীক্ষা করা হয় । এই পরীক্ষায় চিকিৎসক নিশ্চিতভাবে জানতে পারেন রোগীর ফুসফুসে রক্ত জমাট বেঁধেছে কি না। যদি পরীক্ষায় বিষয়টি ধরা পড়ে, সেক্ষেত্রে রোগীকে স্যালাইনের মাধ্যমে হেপারিন (পোরসিন) ওষুধ দীর্ঘক্ষণ ধরে দেওয়া হয় । ওই ওষুধটি ফুসফুসে জমাট রক্ত দূর করতে সাহায্য করে । এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে হেপারিন ইঞ্জেকশনও রোগীকে দেওয়া হয় যা ২৪ ঘণ্টা কাজ করে । রোগীর প্রাথমিক বিপদ কেটে যাওয়ার পর তাঁকে হেপারিন ট্যাবলেট দেওয়া হয় । এই ওষুধ সাধারণত ছয় মাসের জন্য দেওয়া হয়। ওষুধ সেবনের পাশাপাশি ফের যাতে এই সমস্যা না হয় সেদিকেও রোগীকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয় । তবে অনেক ক্ষেত্রে ওষুধে কাজ হয় না । সেক্ষেত্রে রোগীর অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি করা প্রয়োজন ।

অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টির ক্ষেত্রে একটি ক্ষুদ্র টিউব উরুর পেশীর শিরায় প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয় । এরপর সেই টিউবটি শিরার মাধ্যমে ফুসফুসের যে অংশে রক্তপিণ্ড রয়েছে সেখানে পৌঁছায় । সেখানে পৌঁছে টিউবটি এনজাইমের সাহায্যে জমাট রক্তকে দূর করতে সাহায্য করে ।

যদি আপনার বাবা ইতিমধ্যে হেপারিন ওষুধ খেতে শুরু করেন, তাহলে তাঁকে সতর্ক থাকতে বলুন যাতে ফের এই সমস্যা না হয় । তবে এই ওষুধটি কিন্তু সঠিক মাত্রায় নেওয়া প্রয়োজন । যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মাত্রায় হেপারিন কেউ সেবন করেন, সেক্ষেত্রে রোগীর শরীরে কোনও সামান্য কাটাছেঁড়া থেকেও প্রচুর রক্তপাত হতে পারে । তাই ওষুধের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য এই ধরনের চিকিৎসায় নিয়মিত রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা । ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি ফের যাতে পায়ের শিরায় রক্ত জমাট বাঁধতে না পারে, সেজন্য নিয়মিত শরীরচর্চা করা দরকার । অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা ছাড়াও যাঁরা নিয়মিত গাড়ি বা বিমানে দীর্ঘ যাত্রা করেন, তাঁদেরও এই সমস্য হতে পারে । সেক্ষেত্রে তাঁদের মাঝেমধ্যেই আসন ছেড়ে উঠে হাঁটাচলা করা উচিত ।

- ডাঃ আর বিজয় কুমার

সিনিয়র পালমোনোলজিস্ট

New Delhi, Nov 09 (ANI): National Vice President, Bharatiya Janata Party Uma Bharti on November 9 expressed her delight on Supreme Court's verdict on Ayodhya land dispute. She said that SC has taken impartial and magnificent decision. Bharti hailed veteran leader Lal Krishna Advani for his role in temple movement by saying that Advani is the one who challenged pseudo-secularism and because of him the party is here now.
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.