ETV Bharat / bharat

জল আছে সর্বত্র, কিন্তু ভালো জল ? - জাতীয় নমুনা জরিপ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (2019)-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বে মোট জনসংখ্যার 146 মিলিয়ন মানুষ ( প্রায় 19 শতাংশ ) সঠিক-বিশুদ্ধ-স্বচ্ছ জল পান করেন না । জল দূষণ নিয়ে লিখছেন আচার্য নন্দীপাতি সুব্বারাও ৷

water pollution
প্রতীকী ছবি
author img

By

Published : Dec 22, 2019, 12:52 PM IST

Updated : Dec 22, 2019, 7:19 PM IST

বহু রোগের কারণ জলদূষণ ৷ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জলের গুরুত্ব অপরিহার্য ৷ ঠিক তেমনই সমান গুরুত্বপূর্ণ তার শুদ্ধতা । মানব শরীরের 50 থেকে 75 শতাংশ অধিকার করে রয়েছে জল । দেহের দৈনিক তাপমাত্রা এবং শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলি সক্রিয় রাখতে জল অত্যন্ত গুরুদায়িত্ব পালন করে । আমরা যদি নিয়ম করে জল পান করি তাহলে শরীরের অনেক সমস্যাই মিটে যাবে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (2019)-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বে মোট জনসংখ্যার 146 মিলিয়ন মানুষ ( প্রায় 19 শতাংশ ) সঠিক-বিশুদ্ধ-স্বচ্ছ জল পান করেন না ।

জাতীয় নমুনা জরিপ (NSS) জানিয়েছে, মূলত গ্রামীণ এলাকায় অধিকাংশ মানুষ পরিশুদ্ধ না করেই জল পান করেন । একাধিক পর্যবেক্ষণের ফলে উঠে এসেছে, বিশ্বজুড়ে 80 শতাংশ রোগের কারণ অবিশুদ্ধ জল পান করা । ডায়ারিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, পোলিয়োর মতো একাধিক রোগের প্রধান কারণ দূষিত জল পান । পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর পাঁচ মিলিয়ন শিশুর মৃত্যু হয় ডায়ারিয়াতে ।

যকৃত এবং পেটের রোগের অন্যতম কারণ অবিশুদ্ধ জল । দেখা গেছে, বিশ্বে 68.5 কোটি মানুষ পেটের সমস্যায় ভুগছেন । যকৃতের সমস্যা রয়েছে প্রায় 32.5 কোটি মানুষের । স্বাস্থ্য, সুরক্ষা, পরিচ্ছন্নতা, আবর্জনা পরিষ্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিশ্বের অনেক দেশেই সঠিক, নিয়মিত, প্রয়োজনীয় পর্যায়ে হয় না । আজকাল মানুষজন ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে অভাব বোধ করছেন ৷ ভারতের অবস্থাও একই রকম । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের 78.5 মিলিয়ন মানুষ পরিশুদ্ধ পানীয় জল ব্যবহার করতে পারেন না । এর মধ্যে 14.4 মিলিয়ন ভূ-গর্ভের নিচের জল ব্যবহার করেন, যা সমান হারে দূষিত । রাষ্ট্রসংঘের মতে, পরিশুদ্ধ পানীয় জল প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্য পড়ে । কিন্তু এটা বার বার দেখা গেছে সরকার বিষয়টিতে কখনই তেমন গুরুত্ব দেয়নি ।

রাষ্ট্রসংঘ মানবজীবনের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে 2010 সালে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে । 'মানব উন্নয়ন সূচক' শীর্ষক সেই রিপোর্টে জলসম্পদ-সংরক্ষণের পাশাপাশি সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা হয় । বিশ্বের 189 দেশের মধ্যে অনুসন্ধান চালানো হয় । ছোট্ট দেশ নরওয়ে এই তালিকার শীর্ষে । 189 তম দেশটি হল নাইজেরিয়া ৷ ভারতের স্থান 128 নম্বরে । প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কার অবস্থা ভারতের থেকে বেশ কিছুটা ভালো ৷ স্থান 75 নম্বরে । এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে সামাজিক-অর্থনৈতিক এবং উন্নয়নের নিরিখে জল সম্পদের ব্যবহার এবং সংরক্ষণ কেমন প্রভাব বিস্তার করে ।

সম্প্রতি 2019 সালে কেন্দ্রীয় সরকার গ্রামীণ এলাকায় জরিপ চালায়, তাতে দেখা গেছে গ্রামীণ এলাকায় 18.3 শতাংশ বাড়িতে ট্যাপের জল ব্যবহার করা হয় । শহরতলিতে প্রায় 90 শতাংশ বাড়িতে পানীয় জল সরবরাহ করা হয় । রাজধানী শহর হলেও দিল্লির অবস্থা তথৈবচ । পর্যবেক্ষণের ফলে দেখা গেছে দিল্লিতে যে জল সরবরাহ করা হয়, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পানের উপযুক্ত নয় ।

কলকাতা, জয়পুর, দেরাদুন, রাঁচি এবং রায়পুরের মতো শহরে ট্যাপের জলের মান খারাপ । যদিও এই সব শহরে জল পরিশুদ্ধ করার জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ করা হচ্ছে । আবার হায়দরাবাদ, ভুবনেশ্বর, তিরুবনন্তপূরম, পটনা, ভোপাল, অমরাবতী, শিমলা, বেঙ্গালুরু, চণ্ডীগড়, লখনউ এবং জম্মুতে যে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়, তার মান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খুবই নিম্নমানের । দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বইয়ের অবস্থা সে দিক থেকে খানিকটা হলেও ভালো ।

দেশের 20টি রাজ্যের অধিকাংশ শহরে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে সেখানে অধিকাংশ মানুষই নিরাপদ-স্বচ্ছ পানীয় জল পান করতে পারেন না । ভারত জল বিভাগ (2019)-এর একটি রিপোর্ট থেকে জানা গেছে প্রতিবছর দেশের 37.3 কোটি মানুষ জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় । এর মধ্যে 10.5 লাখ শিশুর মৃত্যু হয় ডায়রিয়াতে । দেশজুড়ে বহু মানুষ জল বাহিত রোগের দ্বারা আক্রান্ত এবং নানাভাবে এর প্রভাব পড়ছে তাঁদের কাজের ক্ষেত্রেও । সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে, কিন্তু তা কোনও ভাবেই প্রয়োজনীয়তাকে স্পর্শ করতে পারেনি । সম্প্রতি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের 100টি স্মার্ট শহর এবং জেলার সদর দপ্তরে ( উত্তর-পূর্ব-সহ) জলের মান পর্যালোচনা করবে ৷ এই কাজ করা হবে 2020 সালের মধ্যে । এরপরই কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করে 2024 সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে শুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেবে ৷

এই কাজের জন্য 3.5 লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । উচ্চমানের পাম্পের সাহায্যে জল সরবরাহ করা হলে অনেক ক্ষেত্রেই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব হয় । যে সকল এলাকায় শুদ্ধ জল সরবরাহ হচ্ছে, সেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা দরকার । আর সব থেকে বড় কথা সবার আগে দরকার সচেতনতা ৷ এর মাধ্যমেই একমাত্র জলবাহিত রোগের হাত থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি ৷

আচার্য নন্দীপাতি সুব্বারাও ( লেখক)

বহু রোগের কারণ জলদূষণ ৷ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জলের গুরুত্ব অপরিহার্য ৷ ঠিক তেমনই সমান গুরুত্বপূর্ণ তার শুদ্ধতা । মানব শরীরের 50 থেকে 75 শতাংশ অধিকার করে রয়েছে জল । দেহের দৈনিক তাপমাত্রা এবং শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলি সক্রিয় রাখতে জল অত্যন্ত গুরুদায়িত্ব পালন করে । আমরা যদি নিয়ম করে জল পান করি তাহলে শরীরের অনেক সমস্যাই মিটে যাবে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (2019)-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বে মোট জনসংখ্যার 146 মিলিয়ন মানুষ ( প্রায় 19 শতাংশ ) সঠিক-বিশুদ্ধ-স্বচ্ছ জল পান করেন না ।

জাতীয় নমুনা জরিপ (NSS) জানিয়েছে, মূলত গ্রামীণ এলাকায় অধিকাংশ মানুষ পরিশুদ্ধ না করেই জল পান করেন । একাধিক পর্যবেক্ষণের ফলে উঠে এসেছে, বিশ্বজুড়ে 80 শতাংশ রোগের কারণ অবিশুদ্ধ জল পান করা । ডায়ারিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, পোলিয়োর মতো একাধিক রোগের প্রধান কারণ দূষিত জল পান । পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর পাঁচ মিলিয়ন শিশুর মৃত্যু হয় ডায়ারিয়াতে ।

যকৃত এবং পেটের রোগের অন্যতম কারণ অবিশুদ্ধ জল । দেখা গেছে, বিশ্বে 68.5 কোটি মানুষ পেটের সমস্যায় ভুগছেন । যকৃতের সমস্যা রয়েছে প্রায় 32.5 কোটি মানুষের । স্বাস্থ্য, সুরক্ষা, পরিচ্ছন্নতা, আবর্জনা পরিষ্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিশ্বের অনেক দেশেই সঠিক, নিয়মিত, প্রয়োজনীয় পর্যায়ে হয় না । আজকাল মানুষজন ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে অভাব বোধ করছেন ৷ ভারতের অবস্থাও একই রকম । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের 78.5 মিলিয়ন মানুষ পরিশুদ্ধ পানীয় জল ব্যবহার করতে পারেন না । এর মধ্যে 14.4 মিলিয়ন ভূ-গর্ভের নিচের জল ব্যবহার করেন, যা সমান হারে দূষিত । রাষ্ট্রসংঘের মতে, পরিশুদ্ধ পানীয় জল প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্য পড়ে । কিন্তু এটা বার বার দেখা গেছে সরকার বিষয়টিতে কখনই তেমন গুরুত্ব দেয়নি ।

রাষ্ট্রসংঘ মানবজীবনের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে 2010 সালে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে । 'মানব উন্নয়ন সূচক' শীর্ষক সেই রিপোর্টে জলসম্পদ-সংরক্ষণের পাশাপাশি সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা হয় । বিশ্বের 189 দেশের মধ্যে অনুসন্ধান চালানো হয় । ছোট্ট দেশ নরওয়ে এই তালিকার শীর্ষে । 189 তম দেশটি হল নাইজেরিয়া ৷ ভারতের স্থান 128 নম্বরে । প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কার অবস্থা ভারতের থেকে বেশ কিছুটা ভালো ৷ স্থান 75 নম্বরে । এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে সামাজিক-অর্থনৈতিক এবং উন্নয়নের নিরিখে জল সম্পদের ব্যবহার এবং সংরক্ষণ কেমন প্রভাব বিস্তার করে ।

সম্প্রতি 2019 সালে কেন্দ্রীয় সরকার গ্রামীণ এলাকায় জরিপ চালায়, তাতে দেখা গেছে গ্রামীণ এলাকায় 18.3 শতাংশ বাড়িতে ট্যাপের জল ব্যবহার করা হয় । শহরতলিতে প্রায় 90 শতাংশ বাড়িতে পানীয় জল সরবরাহ করা হয় । রাজধানী শহর হলেও দিল্লির অবস্থা তথৈবচ । পর্যবেক্ষণের ফলে দেখা গেছে দিল্লিতে যে জল সরবরাহ করা হয়, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পানের উপযুক্ত নয় ।

কলকাতা, জয়পুর, দেরাদুন, রাঁচি এবং রায়পুরের মতো শহরে ট্যাপের জলের মান খারাপ । যদিও এই সব শহরে জল পরিশুদ্ধ করার জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ করা হচ্ছে । আবার হায়দরাবাদ, ভুবনেশ্বর, তিরুবনন্তপূরম, পটনা, ভোপাল, অমরাবতী, শিমলা, বেঙ্গালুরু, চণ্ডীগড়, লখনউ এবং জম্মুতে যে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়, তার মান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খুবই নিম্নমানের । দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বইয়ের অবস্থা সে দিক থেকে খানিকটা হলেও ভালো ।

দেশের 20টি রাজ্যের অধিকাংশ শহরে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে সেখানে অধিকাংশ মানুষই নিরাপদ-স্বচ্ছ পানীয় জল পান করতে পারেন না । ভারত জল বিভাগ (2019)-এর একটি রিপোর্ট থেকে জানা গেছে প্রতিবছর দেশের 37.3 কোটি মানুষ জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় । এর মধ্যে 10.5 লাখ শিশুর মৃত্যু হয় ডায়রিয়াতে । দেশজুড়ে বহু মানুষ জল বাহিত রোগের দ্বারা আক্রান্ত এবং নানাভাবে এর প্রভাব পড়ছে তাঁদের কাজের ক্ষেত্রেও । সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে, কিন্তু তা কোনও ভাবেই প্রয়োজনীয়তাকে স্পর্শ করতে পারেনি । সম্প্রতি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের 100টি স্মার্ট শহর এবং জেলার সদর দপ্তরে ( উত্তর-পূর্ব-সহ) জলের মান পর্যালোচনা করবে ৷ এই কাজ করা হবে 2020 সালের মধ্যে । এরপরই কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করে 2024 সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে শুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেবে ৷

এই কাজের জন্য 3.5 লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । উচ্চমানের পাম্পের সাহায্যে জল সরবরাহ করা হলে অনেক ক্ষেত্রেই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব হয় । যে সকল এলাকায় শুদ্ধ জল সরবরাহ হচ্ছে, সেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা দরকার । আর সব থেকে বড় কথা সবার আগে দরকার সচেতনতা ৷ এর মাধ্যমেই একমাত্র জলবাহিত রোগের হাত থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি ৷

আচার্য নন্দীপাতি সুব্বারাও ( লেখক)

New Delhi, Dec 21 (ANI): Speaking on anti-CAA protests, Congress leader KTS Tulsi said that CAA is bound to create disharmony in the society. "CAA is bound to create disharmony in the society because entire thing is loading against people of one religion. It is unfortunate and unconstitutional act," said KTS Tulsi.
Last Updated : Dec 22, 2019, 7:19 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.