ETV Bharat / bharat

9 জনকেই খুন করেছিল সঞ্জয়, ওয়ারাঙ্গলে দেহ উদ্ধারের কিনারা - Telangana

21 মে ওয়ারাঙ্গলের গোরেকুন্টা এলাকার একটি কুয়ো থেকে চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয় ৷ পরদিন আরও পাঁচটি দেহ উদ্ধার হয় । আর আজ সেই ঘটনার কিনারা করল পুলিশ ।

warangal  mystyery
ওয়ারাঙ্গল খুনের কিনারা
author img

By

Published : May 25, 2020, 7:41 PM IST

Updated : May 26, 2020, 6:14 PM IST

ওয়ারাঙ্গল, 25 মে : 21 মে ওয়ারাঙ্গলের গোরেকুন্টায় একটি কুয়ো থেকে উদ্ধার হয় চারজনের মৃতদেহ ৷ রহস্য তৈরি হয় সেখান থেকেই ৷ পরদিন সকালে কুয়োতে ভাসতে দেখা যায় আরও একজনের মৃতদেহ ৷ তৎপর হয় প্রশাসন ৷ প্রশাসনের নির্দেশে কুয়ো থেকে সমস্ত জল বের করা হয় ৷ জল বের করার পর দেখা যায়, কুয়োর ভিতরে পড়ে রয়েছে, আরও চার মৃতদেহ ৷ একটি কুয়ো থেকে ন’টি মৃতদেহ উদ্ধারে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় ৷ এতজনের একসঙ্গে কীভাবে মৃত্যু হল, সবাই কি আত্মহত্যা করেছিল ? এই প্রশ্নগুলি উঠতে শুরু করে ৷ জোরকদমে তদন্ত শুরু করে ওয়ারাঙ্গল পুলিশ ৷

তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, মৃত নয়জনের মধ্যে ছয়জন বাঙালি ৷ এই বাঙালি পরিবারের কর্তা ছিলেন মকসুদ ৷ স্থানীয় একটি জুটমিলে কাজ করতেন ৷ আদতে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে তিনি বিগত 20 বছর ধরে তেলাঙ্গানায় বসবাস করছিলেন ৷ স্ত্রী নিশা, মেয়ে বুসরা, দুই ছেলে শাবাজ (21) ও সোহেল (20) এবং তিন বছরের নাতি মকসুদের সঙ্গেই থাকতেন ৷ এই ছয়জন ছাড়া বাকি যে তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয় তাঁদের নাম শ্রীরাম (35), শ্যাম (40) ও শাকিল (40) ৷ শ্রীরাম ও শ্যাম বিহারের বাসিন্দা ছিলেন ৷ শাকিলের বাড়ি তেলাঙ্গানাতেই ৷

উদ্ধার হওয়া মৃতদেহগুলিতে আঘাতের কোনও চিহ্ন না থাকায় প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের মনে হয়েছিল, সকলেই হয়তো আত্মহত্যা করেছেন ৷ তদন্তে নেমে প্রথমেই ফরেনসিক টেস্ট করে পুলিশ ৷ পাশাপাশি খতিয়ে দেখে এলাকার CCTV ফুটেজ ৷ সেই ফুটেজে একজনের গতিবিধি সন্দেহজনক বলে মনে হয় তদন্তকারীদের ৷ পুলিশ জানতে পারে, সেই ব্যক্তির নাম সঞ্জয় কুমার যাদব ৷ তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয় ৷ জেরায় খুনের কথা স্বীকার করে নেয় সঞ্জয় ৷

জেরায় সঞ্জয়ের বয়ান শুনে চোখ কপালে ওঠে পুলিশের ৷ সঞ্জয় জানায়, এই প্রথম নয়, আগেও সে খুন করেছে ৷ ওয়ারাঙ্গলের CP ভি রবিন্দরের বয়ানে জানা যায় গোটা ঘটনা ৷ আদতে বিহারের নুর্লপুরের বাসিন্দা সঞ্জয়ের সঙ্গে মকসুদের আলাপ হয় পাঁচবছর আগে ৷ দু'জনের মধ্যে পরিচয় গড়ে ওঠে ৷ এরইমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মকসুদের বাড়িতে আসেন তাঁর শ্যালিকা রফিকা ৷ সঞ্জয়ের সঙ্গে রফিকার আলাপ হয় ৷ সেই আলাপ গড়ায় প্রেমে ৷ সম্পর্ক ভালোই চলছিল ৷ কিন্তু, সঞ্জয় রফিকার মেয়ের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ৷ রফিকা তা জানতে পারে ৷ এই নিয়ে দুইজনের ঝামেলা শুরু হয় ৷ পরিস্থিতি একটু ঠান্ডা হওয়ার পর সঞ্জয় সবাইকে জানায়, সে রফিকাকে বিয়ে করতে চায় ৷ পশ্চিমবঙ্গে বাড়ি রফিকার ৷ সেজন্য রফিকাকে সঙ্গে নিয়ে সে পশ্চিমবঙ্গে যাচ্ছে বিয়ের কথা বলতে ৷

মুখে বিয়ের কথা বললেও অন্য ছক কষে সঞ্জয় ৷ রফিকাকে সে খুনের পরিকল্পনা করে ৷ আর সেই পরিকল্পনা সফল হয় ৷ পশ্চিমবঙ্গগামী ট্রেনে চড়ার পর বাটারমিল্কের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রফিকাকে খাইয়ে দেয় সঞ্জয় ৷ রফিকা অজ্ঞান হয়ে গেলে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে খুন করে ৷ মৃতদেহ অন্ধ্রপ্রদেশের নিডাডাভালুর কাছে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয় ৷ সঞ্জয় ফিরে আসে ওয়ারাঙ্গলে ৷ এসে সকলকে জানায়, এক আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছে রফিকা ৷

তবে মকসুদের স্ত্রী নিশা পশ্চিমবঙ্গে ফোন করে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারে, রফিকা কারও বাড়িতে নেই ৷ সন্দেহ হওয়ায় সঞ্জয়কে রফিকার বিষয়ে জানতে চায় নিশা ৷ পুলিশে খবর দেওয়ার হুমকিও দেয় ৷ নিশার হুমকিতে ভয় পেয়ে যায় সঞ্জয় ৷ সে তখনই ঠিক করে, নিশাকে খুন করবে ৷ এরপর থেকেই 'সঠিক সময়ের' অপেক্ষা করছিল সঞ্জয় ৷

20 মে মকসুদের নাতির জন্মদিন ছিল ৷ সেকথা জানতে পেরে খুনের ছক কষে সঞ্জয় ৷ 18 মে ওষুধের দোকান থেকে 60টি ঘুমের ট্যাবলেট কেনে ৷ মকসুদের নাতির জন্মদিনের অনুষ্ঠানে খাবার বানানোর দায়িত্ব নিয়েছিল শ্যাম ও শ্রীরাম ৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী, তাদের তৈরি খাবরের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয় সঞ্জয় ৷ সেই খাবার খেয়ে সবাই অজ্ঞান হয়ে যায় ৷ এবার একে একে অচৈতন্য দেহগুলিকে বাড়ি থেকে এনে পাশের জমির কুয়োয় ফেলে দেয় ৷

একটি খুনের ঘটনা চাপা দিতেই আরও ন’টি খুন ৷ মকসুদের পরিবারকে খুনের পরিকল্পনা থাকলেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকায় বেঘোরে প্রাণ হারাতে হয় শ্যাম, শ্রীরাম ও শাকিলকেও ৷ এই বিষয়ে এক পুলিশকর্মী বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল ওই নয়জনই আত্মহত্যা করেছে ৷ কিন্তু, তদন্তে নেমে কেঁচো খুড়তে কেউটে বের হল ৷

ওয়ারাঙ্গল, 25 মে : 21 মে ওয়ারাঙ্গলের গোরেকুন্টায় একটি কুয়ো থেকে উদ্ধার হয় চারজনের মৃতদেহ ৷ রহস্য তৈরি হয় সেখান থেকেই ৷ পরদিন সকালে কুয়োতে ভাসতে দেখা যায় আরও একজনের মৃতদেহ ৷ তৎপর হয় প্রশাসন ৷ প্রশাসনের নির্দেশে কুয়ো থেকে সমস্ত জল বের করা হয় ৷ জল বের করার পর দেখা যায়, কুয়োর ভিতরে পড়ে রয়েছে, আরও চার মৃতদেহ ৷ একটি কুয়ো থেকে ন’টি মৃতদেহ উদ্ধারে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় ৷ এতজনের একসঙ্গে কীভাবে মৃত্যু হল, সবাই কি আত্মহত্যা করেছিল ? এই প্রশ্নগুলি উঠতে শুরু করে ৷ জোরকদমে তদন্ত শুরু করে ওয়ারাঙ্গল পুলিশ ৷

তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, মৃত নয়জনের মধ্যে ছয়জন বাঙালি ৷ এই বাঙালি পরিবারের কর্তা ছিলেন মকসুদ ৷ স্থানীয় একটি জুটমিলে কাজ করতেন ৷ আদতে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে তিনি বিগত 20 বছর ধরে তেলাঙ্গানায় বসবাস করছিলেন ৷ স্ত্রী নিশা, মেয়ে বুসরা, দুই ছেলে শাবাজ (21) ও সোহেল (20) এবং তিন বছরের নাতি মকসুদের সঙ্গেই থাকতেন ৷ এই ছয়জন ছাড়া বাকি যে তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয় তাঁদের নাম শ্রীরাম (35), শ্যাম (40) ও শাকিল (40) ৷ শ্রীরাম ও শ্যাম বিহারের বাসিন্দা ছিলেন ৷ শাকিলের বাড়ি তেলাঙ্গানাতেই ৷

উদ্ধার হওয়া মৃতদেহগুলিতে আঘাতের কোনও চিহ্ন না থাকায় প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের মনে হয়েছিল, সকলেই হয়তো আত্মহত্যা করেছেন ৷ তদন্তে নেমে প্রথমেই ফরেনসিক টেস্ট করে পুলিশ ৷ পাশাপাশি খতিয়ে দেখে এলাকার CCTV ফুটেজ ৷ সেই ফুটেজে একজনের গতিবিধি সন্দেহজনক বলে মনে হয় তদন্তকারীদের ৷ পুলিশ জানতে পারে, সেই ব্যক্তির নাম সঞ্জয় কুমার যাদব ৷ তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয় ৷ জেরায় খুনের কথা স্বীকার করে নেয় সঞ্জয় ৷

জেরায় সঞ্জয়ের বয়ান শুনে চোখ কপালে ওঠে পুলিশের ৷ সঞ্জয় জানায়, এই প্রথম নয়, আগেও সে খুন করেছে ৷ ওয়ারাঙ্গলের CP ভি রবিন্দরের বয়ানে জানা যায় গোটা ঘটনা ৷ আদতে বিহারের নুর্লপুরের বাসিন্দা সঞ্জয়ের সঙ্গে মকসুদের আলাপ হয় পাঁচবছর আগে ৷ দু'জনের মধ্যে পরিচয় গড়ে ওঠে ৷ এরইমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মকসুদের বাড়িতে আসেন তাঁর শ্যালিকা রফিকা ৷ সঞ্জয়ের সঙ্গে রফিকার আলাপ হয় ৷ সেই আলাপ গড়ায় প্রেমে ৷ সম্পর্ক ভালোই চলছিল ৷ কিন্তু, সঞ্জয় রফিকার মেয়ের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ৷ রফিকা তা জানতে পারে ৷ এই নিয়ে দুইজনের ঝামেলা শুরু হয় ৷ পরিস্থিতি একটু ঠান্ডা হওয়ার পর সঞ্জয় সবাইকে জানায়, সে রফিকাকে বিয়ে করতে চায় ৷ পশ্চিমবঙ্গে বাড়ি রফিকার ৷ সেজন্য রফিকাকে সঙ্গে নিয়ে সে পশ্চিমবঙ্গে যাচ্ছে বিয়ের কথা বলতে ৷

মুখে বিয়ের কথা বললেও অন্য ছক কষে সঞ্জয় ৷ রফিকাকে সে খুনের পরিকল্পনা করে ৷ আর সেই পরিকল্পনা সফল হয় ৷ পশ্চিমবঙ্গগামী ট্রেনে চড়ার পর বাটারমিল্কের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রফিকাকে খাইয়ে দেয় সঞ্জয় ৷ রফিকা অজ্ঞান হয়ে গেলে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে খুন করে ৷ মৃতদেহ অন্ধ্রপ্রদেশের নিডাডাভালুর কাছে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয় ৷ সঞ্জয় ফিরে আসে ওয়ারাঙ্গলে ৷ এসে সকলকে জানায়, এক আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছে রফিকা ৷

তবে মকসুদের স্ত্রী নিশা পশ্চিমবঙ্গে ফোন করে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারে, রফিকা কারও বাড়িতে নেই ৷ সন্দেহ হওয়ায় সঞ্জয়কে রফিকার বিষয়ে জানতে চায় নিশা ৷ পুলিশে খবর দেওয়ার হুমকিও দেয় ৷ নিশার হুমকিতে ভয় পেয়ে যায় সঞ্জয় ৷ সে তখনই ঠিক করে, নিশাকে খুন করবে ৷ এরপর থেকেই 'সঠিক সময়ের' অপেক্ষা করছিল সঞ্জয় ৷

20 মে মকসুদের নাতির জন্মদিন ছিল ৷ সেকথা জানতে পেরে খুনের ছক কষে সঞ্জয় ৷ 18 মে ওষুধের দোকান থেকে 60টি ঘুমের ট্যাবলেট কেনে ৷ মকসুদের নাতির জন্মদিনের অনুষ্ঠানে খাবার বানানোর দায়িত্ব নিয়েছিল শ্যাম ও শ্রীরাম ৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী, তাদের তৈরি খাবরের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয় সঞ্জয় ৷ সেই খাবার খেয়ে সবাই অজ্ঞান হয়ে যায় ৷ এবার একে একে অচৈতন্য দেহগুলিকে বাড়ি থেকে এনে পাশের জমির কুয়োয় ফেলে দেয় ৷

একটি খুনের ঘটনা চাপা দিতেই আরও ন’টি খুন ৷ মকসুদের পরিবারকে খুনের পরিকল্পনা থাকলেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকায় বেঘোরে প্রাণ হারাতে হয় শ্যাম, শ্রীরাম ও শাকিলকেও ৷ এই বিষয়ে এক পুলিশকর্মী বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল ওই নয়জনই আত্মহত্যা করেছে ৷ কিন্তু, তদন্তে নেমে কেঁচো খুড়তে কেউটে বের হল ৷

Last Updated : May 26, 2020, 6:14 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.