ETV Bharat / bharat

আইনসভায় মূল্যবোধ লঙ্ঘন !

যে বিলের সঙ্গে দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষের জীবন জড়িয়ে রয়েছে, সেই বিলকে সিলেক্ট কমিটিতে কেন পাঠাল না NDA?

author img

By

Published : Sep 24, 2020, 9:59 PM IST

Legislatures
Legislatures

দিল্লি, 25 সেপ্টেম্বর : গত পাঁচ বছরে দেশে প্রায় চার লক্ষ কৃষক মৃত্যুকে বেছেনিতে বাধ্য হয়েছেন । এর থেকেই বোঝা যায় যে দেশের কৃষিক্ষেত্রে এখন কি গভীর সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়ে রয়েছে । কৃষি অর্থনীতিকে একত্রীভূত করতে এবং কৃষকদের কল্যাণ করতে এক ছাতার তলায় আনার জন্য NDA সরকার যে গুরুত্বপূর্ণ বিল এনেছে, তা পঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকরা তাতে খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছেন । আর তার জেরে সংসদের উচ্চ কক্ষেও গোলমাল হয়েছে । কিন্তু শাসক জোটে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে শিরোমনি অকালি দলের মন্ত্রীর পদত্যাগ করার পর । এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে BJD, AIADMK, TRS, তৃণমূল ও অকালি দল ক্রমশ NDA বিরোধী শিবিরের দিকে সরে যাচ্ছে । আর তার জেরেই সংসদের উচ্চকক্ষে উত্তেজনা ছড়ায় । যে সমস্ত দলগুলি দাবি করছে যে এই বিলের ফলে কৃষকদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে, তাদের বক্তব্য এই বিলকে ভালো মতো পর্যালোচনা করার জন্য হয় সিলেক্ট কমিটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হোক । অথবা এই বিল নিয়ে ভোটাভুটি হোক । কিন্তু এর মধ্যেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায় এবং সম্মানীয় সদস্যরা নিয়ম লঙ্ঘনকারী ব্যবহার করেন । এই গোলমালের মধ্যে ঘোষণা করা হয় যে বিলটি ধ্বনি ভোটে পাস করানো হবে । তখন মৌলিক অধিকার নিয়ে সন্দেহ আরও বৃদ্ধি পায় ।

যে বিলের সঙ্গে দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষের জীবন জড়িয়ে রয়েছে, সেই বিলকে সিলেক্ট কমিটিতে কেন পাঠাল না NDA? যেখানে তিন মাসের মধ্যে এর রিপোর্ট চলে আসত । তার পর সংসদে এনিয়ে আলোচনা করা যেত । কোনও ভুল থাকলে তা শুধরে নেওয়া যেত । আর ভালো ও গ্রহণযোগ্য বিল ভোট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাস করানো যেত ৷ রাজ্যসভাকে রাজ্যগুলির কাউন্সিল বলে মনে করা হয় । সেখানে রাজ্যগুলির মতামতকে শোনা হল না । আর দ্বিতীয়ত, বিরোধীরা সংসদের নিয়ম ভেঙে অনৈতিক আচরণ করল । দু’টোই খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা । যেদিন আট জন সাংসদ সাসপেন্ড করা হল, সেই দিনটি উচ্চকক্ষের ইতিহাসে সবচেয়ে কালোদিন হিসেবে থেকে যাবে ।

রাজ্যসভার প্রথম অধিবেশন বসেছিল 1952 সালের মে মাসে । সেই অধিবেশনে সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন আবেদন করেছিলেন, "সংসদ শুধু একটা আইনসভা নয় । এটা তর্ক-বিতর্ক করার একটা ফোরাম । এই উদ্দেশ্যেই আমাদের সকলকে প্রয়োজনীয় পরিষেবা দিতে হবে ।" যদিও পণ্ডিত নেহরু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দুইটি কক্ষকে নিয়েই ভারতের সংসদ তৈরি হবে । সেই সময় উচ্চকক্ষের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সংবিধান সভায় অনেক বিতর্ক হয়েছিল । সেই সময় যে দাবি সবচেয়ে জোরালো ও স্পষ্ট ভাবে শোনা গিয়েছিল, তা হল যে দল সরকারে থাকবে তারা তাদের রাজনৈতিক কারণে কোনও আইন লোকসভায় আনতে পারে । তাই আরও একটা সভার প্রয়োজন রয়েছে, যারা ওই আইনকে ভালো করে খতিয়ে দেখবে । রাজ্যসভাও তাই অনেক আশা নিয়ে তৈরি হয়েছিল । যেখানে দুই বিভাগযুক্ত ব্যবস্থা থাকবে । যেখানে থাকবেন দক্ষ ও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সদস্যরা । যাঁরা কোনও আইনকে গভীর ভাবে খতিয়ে দেখার জন্য একেবারে আদর্শ হবেন । আর সব মিলিয়ে তাদের সদিচ্ছা দেশের অনেক উপকারে লাগবে । জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টদের মধ্যে অন্যতম জর্জ ওয়াশিংটনের বলা কথা এরকম ছিল যে … উচ্চকক্ষ তপ্ত আইনকে ঠান্ডা করার কাজ করে । … অধিবেশন চলার সময় উচ্চকক্ষ ঠিক কেমন ভাবে কাজ করবে, সেটাই এর মাধ্যমে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন । রাজ্যসভা যেখানে সংযমী ও ভারসাম্যযুক্ত ব্যবহার করার উদাহরণ আগেই তুলে ধরেছে । এখন তা বিক্ষোভ দেখানোর মঞ্চ হয়ে গিয়েছে । সেখানে অনৈতিক ব্যবহার করা হচ্ছে । আর তা ভালো চিন্তা ভাবনার মানুষদের কাছে হয়ে উঠেছে ভয়ের কারণ । দেশের সর্বোচ্চ আইনসভার উঁচুমানের সংসদীয় অনুশীলনকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত । এবং সারা দেশের বিধানসভাগুলির কাছে আদর্শ উদাহরণ হওয়া উচিত । অনৈতিক ও আক্রমণাত্মক ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের শাসক ও বিরোধী দলগুলি সারা দেশের কাছে কী বার্তা দিতে চাইছে ?

মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন যে ভালো কাজ করা একেবারে পর্যাপ্ত নয় । ভালো কাজ করা আসলে গুরুত্বপূর্ণ । যদিও অনেক কৃষক সংগঠন ও রাজ্য সরকার এই বিল নিয়ে নিজেদের সন্দেহ ব্যক্ত করেছেন । ব্যাপক আলোচনা ও উপযুক্ত পর্যালোচনা ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার অকারণে এই বিল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে । সংসদ কেবলমাত্র আইন প্রণয়নের জায়গা নয় । এটা বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করারও একটা ফোরাম । এই মৌলিক সচেতনতা কীভাবে ভারতীয় গণতন্ত্রের দিকে পরিচালিত হচ্ছে ?

দিল্লি, 25 সেপ্টেম্বর : গত পাঁচ বছরে দেশে প্রায় চার লক্ষ কৃষক মৃত্যুকে বেছেনিতে বাধ্য হয়েছেন । এর থেকেই বোঝা যায় যে দেশের কৃষিক্ষেত্রে এখন কি গভীর সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়ে রয়েছে । কৃষি অর্থনীতিকে একত্রীভূত করতে এবং কৃষকদের কল্যাণ করতে এক ছাতার তলায় আনার জন্য NDA সরকার যে গুরুত্বপূর্ণ বিল এনেছে, তা পঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকরা তাতে খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছেন । আর তার জেরে সংসদের উচ্চ কক্ষেও গোলমাল হয়েছে । কিন্তু শাসক জোটে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে শিরোমনি অকালি দলের মন্ত্রীর পদত্যাগ করার পর । এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে BJD, AIADMK, TRS, তৃণমূল ও অকালি দল ক্রমশ NDA বিরোধী শিবিরের দিকে সরে যাচ্ছে । আর তার জেরেই সংসদের উচ্চকক্ষে উত্তেজনা ছড়ায় । যে সমস্ত দলগুলি দাবি করছে যে এই বিলের ফলে কৃষকদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে, তাদের বক্তব্য এই বিলকে ভালো মতো পর্যালোচনা করার জন্য হয় সিলেক্ট কমিটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হোক । অথবা এই বিল নিয়ে ভোটাভুটি হোক । কিন্তু এর মধ্যেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায় এবং সম্মানীয় সদস্যরা নিয়ম লঙ্ঘনকারী ব্যবহার করেন । এই গোলমালের মধ্যে ঘোষণা করা হয় যে বিলটি ধ্বনি ভোটে পাস করানো হবে । তখন মৌলিক অধিকার নিয়ে সন্দেহ আরও বৃদ্ধি পায় ।

যে বিলের সঙ্গে দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষের জীবন জড়িয়ে রয়েছে, সেই বিলকে সিলেক্ট কমিটিতে কেন পাঠাল না NDA? যেখানে তিন মাসের মধ্যে এর রিপোর্ট চলে আসত । তার পর সংসদে এনিয়ে আলোচনা করা যেত । কোনও ভুল থাকলে তা শুধরে নেওয়া যেত । আর ভালো ও গ্রহণযোগ্য বিল ভোট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাস করানো যেত ৷ রাজ্যসভাকে রাজ্যগুলির কাউন্সিল বলে মনে করা হয় । সেখানে রাজ্যগুলির মতামতকে শোনা হল না । আর দ্বিতীয়ত, বিরোধীরা সংসদের নিয়ম ভেঙে অনৈতিক আচরণ করল । দু’টোই খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা । যেদিন আট জন সাংসদ সাসপেন্ড করা হল, সেই দিনটি উচ্চকক্ষের ইতিহাসে সবচেয়ে কালোদিন হিসেবে থেকে যাবে ।

রাজ্যসভার প্রথম অধিবেশন বসেছিল 1952 সালের মে মাসে । সেই অধিবেশনে সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন আবেদন করেছিলেন, "সংসদ শুধু একটা আইনসভা নয় । এটা তর্ক-বিতর্ক করার একটা ফোরাম । এই উদ্দেশ্যেই আমাদের সকলকে প্রয়োজনীয় পরিষেবা দিতে হবে ।" যদিও পণ্ডিত নেহরু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দুইটি কক্ষকে নিয়েই ভারতের সংসদ তৈরি হবে । সেই সময় উচ্চকক্ষের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সংবিধান সভায় অনেক বিতর্ক হয়েছিল । সেই সময় যে দাবি সবচেয়ে জোরালো ও স্পষ্ট ভাবে শোনা গিয়েছিল, তা হল যে দল সরকারে থাকবে তারা তাদের রাজনৈতিক কারণে কোনও আইন লোকসভায় আনতে পারে । তাই আরও একটা সভার প্রয়োজন রয়েছে, যারা ওই আইনকে ভালো করে খতিয়ে দেখবে । রাজ্যসভাও তাই অনেক আশা নিয়ে তৈরি হয়েছিল । যেখানে দুই বিভাগযুক্ত ব্যবস্থা থাকবে । যেখানে থাকবেন দক্ষ ও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সদস্যরা । যাঁরা কোনও আইনকে গভীর ভাবে খতিয়ে দেখার জন্য একেবারে আদর্শ হবেন । আর সব মিলিয়ে তাদের সদিচ্ছা দেশের অনেক উপকারে লাগবে । জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টদের মধ্যে অন্যতম জর্জ ওয়াশিংটনের বলা কথা এরকম ছিল যে … উচ্চকক্ষ তপ্ত আইনকে ঠান্ডা করার কাজ করে । … অধিবেশন চলার সময় উচ্চকক্ষ ঠিক কেমন ভাবে কাজ করবে, সেটাই এর মাধ্যমে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন । রাজ্যসভা যেখানে সংযমী ও ভারসাম্যযুক্ত ব্যবহার করার উদাহরণ আগেই তুলে ধরেছে । এখন তা বিক্ষোভ দেখানোর মঞ্চ হয়ে গিয়েছে । সেখানে অনৈতিক ব্যবহার করা হচ্ছে । আর তা ভালো চিন্তা ভাবনার মানুষদের কাছে হয়ে উঠেছে ভয়ের কারণ । দেশের সর্বোচ্চ আইনসভার উঁচুমানের সংসদীয় অনুশীলনকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত । এবং সারা দেশের বিধানসভাগুলির কাছে আদর্শ উদাহরণ হওয়া উচিত । অনৈতিক ও আক্রমণাত্মক ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের শাসক ও বিরোধী দলগুলি সারা দেশের কাছে কী বার্তা দিতে চাইছে ?

মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন যে ভালো কাজ করা একেবারে পর্যাপ্ত নয় । ভালো কাজ করা আসলে গুরুত্বপূর্ণ । যদিও অনেক কৃষক সংগঠন ও রাজ্য সরকার এই বিল নিয়ে নিজেদের সন্দেহ ব্যক্ত করেছেন । ব্যাপক আলোচনা ও উপযুক্ত পর্যালোচনা ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার অকারণে এই বিল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে । সংসদ কেবলমাত্র আইন প্রণয়নের জায়গা নয় । এটা বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করারও একটা ফোরাম । এই মৌলিক সচেতনতা কীভাবে ভারতীয় গণতন্ত্রের দিকে পরিচালিত হচ্ছে ?

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.