ভুলেও কেউ এই গ্রামে আসতে চান না । সবাই ভয় পান এখানে আসতে । আতঙ্কে থাকেন । এমনকী এই গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে কেউ তাঁর মেয়ের বিয়েও দিতে চান না । যেন কোনও এক অভিশাপ ঘিরে রেখেছে এই গ্রামটাকে ।
মুকেশ জয়সওয়াল । মাঝবয়সি যুবক । দেখতে শুনতেও বেশ ভালো । কথায় মিষ্টতা । একেবারে অমায়িক ছেলে । বছর তিনেক আগে বিয়ে ঠিক হয়েছিল মুকেশের । মেয়ের বাড়ির লোকেরাও রাজি হয়ে গেছিলেন প্রথমে । কিন্তু পরে গ্রামের নাম শুনতেই বেঁকে বসলেন তাঁরা । মুখ গোমড়া করে না করে দিলেন । তারপর থেকে এখনও বিয়ে হয়নি মুকেশের ।
মুকেশ একা নয় । মুকেশের গ্রামে ওঁর বয়সি আর যে যে আছেন, সকলেরই একই হাল । সকলেই বিয়ের প্রস্তাবে পেয়েছেন শুধুই প্রত্যাখ্যান । গ্রামের নাম শুনেই আর কথা এগোতে চাননি মেয়ের বাড়ির লোকেরা । লোকে বলে, এই গ্রাম নাকি "কুমার"-দের গ্রাম ।
এই গ্রামেই থাকেন পুরুষোত্তম জয়সওয়াল । চুলে পাক ধরেছে । বৃদ্ধের তিন ছেলে । তিনজনেরই বিয়ের বয়স হয়েছে । কিন্তু সমস্যা সেই এক । গ্রামের নাম শুনলেই পিছিয়ে যান সকলে । অনেক সম্বন্ধ দেখা হয় তিন ছেলের জন্য । কিন্তু লাভ হয় না । শেষে ছেলেরা কেউ এই গ্রামে থাকবে না, এই শর্তে বিয়েতে রাজি হন মেয়েদের বাড়ির লোকেরা । আজ প্রায় দশ বছর হতে চলল । পুরুষোত্তমবাবুর তিন ছেলে গ্রাম ছেড়ে অন্য়ত্র উঠে গেছে । ন'মাসে-ছ'মাসে এক-দু'দিনের জন্য় আসে বাবার সঙ্গে দেখা করতে । এমনকী আত্মীয় পরিজনেরাও সচরাচর আসতে চান না এখানে ।
গ্রামের সকলেই সজ্জন । তবুও এই গ্রামের কোনও যুবকের বিয়ে হয় না । আসলে এই গ্রামে বিয়ে করে আসতেই ভয় পায় মেয়েরা । কিন্তু কেন ! কী আছে এই গ্রামে ?
উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ । সেখান থেকে দক্ষিণে প্রায় 35 কিলোমিটার গেলেই শ্রী তারা মাজরা গ্রাম । এটাই সেই "কুমার"-দের গ্রাম । গ্রামে সবই আছে । মাটির রাস্তা । গাছপালা । বাড়ি আছে । কিন্তু কোথাও কোনও ইলেকট্রিক পোস্ট নেই । থাকবেই বা কীভাবে । গ্রামে যে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি । নেই জলের ব্যবস্থাও । গ্রামে জল বলতে একটিমাত্র টিউবওয়েল । 2002 সালের আগে এটাও ছিল না । গ্রামে অবশ্য একটা কুয়ো আছে । কিন্তু তার জলের যা অবস্থা... কোনও সুস্থ মানুষই তা আর ব্যবহার করতে চাইবেন না ।
গ্রামে বিদ্যুৎ নেই । আলো নেই । ফলে বুঝতেই পারছেন, এই গ্রামে বিয়ে করে যদি কেউ আসেন, তবে তাঁর জীবন কতটা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে । মোবাইলে চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা নেই । নেই টিভি দেখার সৌভাগ্যও । তাই এই গ্রামের ছেলেদের বিয়ে করতে চান না কোনও মেয়ে ।
অবস্থা এতটাই খারাপ যে গ্রামের অনেকেই এখন ভিটেমাটি ছেড়ে অন্য়ত্র উঠে গেছেন । বাকি যাঁরা রয়ে গেছেন, তাঁরাও এভাবে কতদিন থাকতে পারবেন, নিজেরাও জানেন না ।