ETV Bharat / bharat

কিং নন, তিনি ছিলেন রাজনীতির কিংমেকার

author img

By

Published : Aug 1, 2020, 10:08 PM IST

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি মুম্বইয়ে থাকতে শুরু করলেও তাঁর পরিচয় কিন্তু ছিল পূর্বাঞ্চলের বাবুসাহেব । সমাজবাদী পার্টির হাত ধরেই রাজনীতিতে আসা । তখন খুব কম সময়েই ঠাকুর সম্প্রদায়ের মধ্যে তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন । জীবনের একটা লম্বা সময় তিনি মুম্বইয়ে কাটালেও পূর্বাঞ্চলে তাঁর জনপ্রিয়তা কোনওদিনও কমেনি ।

অমর সিং
অমর সিং

দিল্লি, 1 অগাস্ট : প্রয়াত হলেন সমাজবাদী পার্টির প্রাক্তন মহাসচিব তথা রাজ্যসভার সাংসদ অমর সিং । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল 64 বছর । আজ সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি । শেষ কয়েকমাস ধরে কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি । গতকালই তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভরতি হয়েছিলেন অমর সিং ।

বিগত কয়েক মাস ধরে সিঙ্গাপুরের ওই হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল । শেষ কিছুদিন তিনি ICU-তে ছিলেন । এর আগে 2013 সালে তাঁর কিডনি বিকল হয়ে যায় । সে সময়ে তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় । আজ সকালেও বাল গঙ্গাধর তিলকের মৃত্যুবার্ষিকীতে টুইট করেন তিনি । পাশাপাশি অনুগামীদের বখরি-ইদের শুভেচ্ছাও জানান ।

একসময় সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো মুলায়ম সিং যাদবের খুব কাছের মানুষ ছিলেন অমর সিং । কিন্তু, 2010 সালের 6 জানুয়ারি সমাজবাদী পার্টির সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দেন । আলাদা দলও গঠন করেন । এরপর থেকেই ভারতীয় রাজনীতির আঙিনায় গুরুত্ব হারাতে থাকেন তিনি ।

শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন অমর সিং । 22 মার্চ তিনি হাসপাতালের বেডে শুয়েই অনুগামীদের জন্য টুইটারে একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেন । সেই ভিডিয়োয় কোরোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুগামীদের কাছে অনুরোধ করেন ৷

সাংসদ অমর সিংয়ের প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করে টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । টুইটারে তিনি লেখেন, "অমর সিং-জি একজন শক্তিশালী জনপ্রতিনিধি ছিলেন । বিগত কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘাত-প্রতিঘাতের ছিলেন । জীবনের বহু ক্ষেত্রে তিনি তাঁর বন্ধুত্বের পরিচয় দিয়েছেন । তাঁর মৃত্যুতে দুঃখিত । তাঁর বন্ধু ও পরিবারবর্গকে সমবেদনা জানাই । ওম শান্তি ।"

  • Amar Singh Ji was an energetic public figure. In the last few decades, he witnessed some of the major political developments from close quarters. He was known for his friendships across many spheres of life. Saddened by his demise. Condolences to his friends & family. Om Shanti.

    — Narendra Modi (@narendramodi) August 1, 2020 " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data=" ">

ভারতীয় রাজনীতিতে অমর সিং

1990-এর দশক । সমাজবাদী পার্টি ও অমর সিং তখন একে অপরের পরিপূরক মনে করা হত । রাজনীতিতে আসার আগে শিল্পমহলেও তাঁর নাম যথেষ্ট নাম-ডাক ছিল । কিন্তু সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো মুলায়ম সিং যাদবের সাহচর্যে আসার পর থেকেই তাঁর ভূমিকা বদলে যেতে থাকে । শিল্পপতির পরিচয় ঝেড়ে ফেলে তিনি হয়ে ওঠেন দেশের প্রথম সারির রাজনীতিবিদদের মধ্যে একজন । ভারতের রাজনীতির কিংমেকার বলা হত তাঁকে ।

জন্ম 1956 সালের 27 জানুয়ারি । আজ়মগড়ের তরওয়া এলাকায় । কলকাতায় পড়াশোনা । এরপর 1987 সালে পঙ্কজা কুমারী সিংয়ের সঙ্গে বিয়ে । দুই যমজ মেয়ে । দৃষ্টি ও দিশা ।

শুধুমাত্র রাজনীতির আঙিনাতেই নয়, শিল্পমহলে ও সিনেমার দুনিয়াতেও যথেষ্টই খ্যাতি ছিল তাঁর । অমিতাভ বচ্চন তাঁকে নিজের বড় ভাই বলতেন । আবার মুকেশ আম্বানি ও অনিল আম্বানি তাঁকে ডাকতেন ছোটো ভাই বলে । প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবেগৌড়া ও চন্দ্র শেখর থেকে শুরু করে সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুলায়ম সিং যাদব, সকলেরই খুব কাছের মানুষ ছিলেন অমর সিং । অমিতাভ বচ্চনকে একসময় দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি । অনিল আম্বানি যখন উত্তরপ্রদেশে পাওয়ার প্রজেক্ট বসানোর কাজ করছিলেন, তখন তাঁকে রাজনৈতিকভাবে সমর্থন দিয়েছিলেন অমর সিং ।

2008 সালে অ্যামেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি, সরকারের প্রতি বামেদের সমর্থন টানা, মনমোহন সিংয়ের সরকারকে বাঁচানো । প্রতিটি ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন প্রয়াত সাংসদ । শুধু তাই নয়, 1999 সালে বাজপেয়ী সরকারের পতনের পর বিদেশি নাগরিকের প্রশ্ন তুলে সোনিয়া গান্ধিকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া থেকে আটকানোতেও বিশেষ ভূমিকা ছিল তাঁর ।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি মুম্বইয়ে থাকতে শুরু করলেও তাঁর পরিচয় কিন্তু ছিল পূর্বাঞ্চলের বাবুসাহেব । সমাজবাদী পার্টির হাত ধরেই রাজনীতিতে আসা । তখন খুব কম সময়েই ঠাকুর সম্প্রদায়ের মধ্যে তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন । জীবনের একটা লম্বা সময় তিনি মুম্বইয়ে কাটালেও পূর্বাঞ্চলে তাঁর জনপ্রিয়তা কোনওদিনও কমেনি । নব্বইয়ের দশকে বীর বাহাদুর সিং ও চন্দ্রশেখরের মতো রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল অমর সিংয়ের । এই বীর বাহাদুর সিংয়ের সূত্র ধরেই মুলায়ম সিং যাদবের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল ।

শিল্পপতি ও প্রভাবশালী ঠাকুর নেতা হিসেবে অমর সিং খুব কম সময়েই মুলায়ম সিং যাদবের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন । ক্রমে তিনি এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন যে তাঁকে সমাজবাদী পার্টির কেন্দ্রীয় মহাসচিব পদে বসান মুলায়ম সিং যাদব । রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, 2000-র আশেপাশের সময়টায় দলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি ।

সমাজবাদী পার্টির সমর্থন নিয়ে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন অমর সিং । কিন্তু শুধুমাত্র সমাজবাদী পার্টিই নয়, এক সময় গোটা উত্তরপ্রদেশের রাজনীতির সব থেকে বড় ম্যানেজার বলা হত তাঁকে । দল কোনও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়লে, দলের সেখান থেকে উদ্ধার করার দায়িত্ব ছিল অমর সিংয়ের । পাশাপাশি, অখিলেশ যাদবের পড়াশোনা ও অন্যান্য দায়িত্বও একসময়ে সামলেছেন তিনি । মুলায়মের পরিবারের সঙ্গে তিনি যতটা ঘনিষ্ঠ ছিলেন, এতটা হয়ত আর কেউই ছিলেন না ।

বলিউডের দুনিয়াতেও তিনি ছিলেন সমান জনপ্রিয় । অমর সিংয়ের শুধুমাত্র রাজনীতিবিদ ও শিল্পপতিদের সঙ্গেই ওঠাবসা ছিল না, বলিউডের একাধিক নায়ক নায়িকার সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল । অনেক নায়ক-নায়িকাকেই রাজনীতির আঙিনায় নিয়ে এসেছিলেন তিনি ।

এমনও শোনা যায়, মুলায়ম সিং যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী করার পিছনেও তাঁর বড় হাত ছিল । অমিতাভ বচ্চন ও তাঁর পরিবারকে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে যুক্ত করার ক্ষেত্রেও তাঁর বিশেষ অবদান ছিল । কিন্তু এরপর 2010 সালে দলের সমস্ত পদ থেকে তিনি ইস্তফা দিয়ে দেন । এর কিছুদিন পর তাঁকে দল থেকে বহিস্কার করা হয় । দল থেকে বহিস্কৃত হওয়ার পরেও তিনি রাজনীতির আঙিনা কোনওদিনই ছাড়েননি । পৃথক পূর্বাঞ্চলের দাবিতে নতুন দল গঠন করেন । নাম রাষ্ট্রীয় লোকমঞ্চ । কিন্তু নতুন দল নিয়ে সেভাবে কিছু সাফল্য পাননি তিনি । ধীরে ধীরে তাঁর শারীরের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে । ফলে নতুন দলের জন্য সে ভাবে সময়ও দিতে পারেননি তিনি । এমনকী, আস্তে আস্তে রাজনৈতিক গুরুত্ব হারাতেও শুরু করেন ।

এ বছরের মার্চ মাসেই তাঁর মৃত্যুর ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়েছিল । নিজের মৃত্যু নিয়ে জল্পনা ওড়াতে তিনি একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেন সোশাল মিডিয়ায় । ভিডিয়োয় লেখেন "টাইগার জ়িনদা হ্যায়" । তবে আজ সত্যিই বিদায় নিলেন "টাইগার" ৷

দিল্লি, 1 অগাস্ট : প্রয়াত হলেন সমাজবাদী পার্টির প্রাক্তন মহাসচিব তথা রাজ্যসভার সাংসদ অমর সিং । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল 64 বছর । আজ সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি । শেষ কয়েকমাস ধরে কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি । গতকালই তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভরতি হয়েছিলেন অমর সিং ।

বিগত কয়েক মাস ধরে সিঙ্গাপুরের ওই হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল । শেষ কিছুদিন তিনি ICU-তে ছিলেন । এর আগে 2013 সালে তাঁর কিডনি বিকল হয়ে যায় । সে সময়ে তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় । আজ সকালেও বাল গঙ্গাধর তিলকের মৃত্যুবার্ষিকীতে টুইট করেন তিনি । পাশাপাশি অনুগামীদের বখরি-ইদের শুভেচ্ছাও জানান ।

একসময় সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো মুলায়ম সিং যাদবের খুব কাছের মানুষ ছিলেন অমর সিং । কিন্তু, 2010 সালের 6 জানুয়ারি সমাজবাদী পার্টির সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দেন । আলাদা দলও গঠন করেন । এরপর থেকেই ভারতীয় রাজনীতির আঙিনায় গুরুত্ব হারাতে থাকেন তিনি ।

শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন অমর সিং । 22 মার্চ তিনি হাসপাতালের বেডে শুয়েই অনুগামীদের জন্য টুইটারে একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেন । সেই ভিডিয়োয় কোরোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুগামীদের কাছে অনুরোধ করেন ৷

সাংসদ অমর সিংয়ের প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করে টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । টুইটারে তিনি লেখেন, "অমর সিং-জি একজন শক্তিশালী জনপ্রতিনিধি ছিলেন । বিগত কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘাত-প্রতিঘাতের ছিলেন । জীবনের বহু ক্ষেত্রে তিনি তাঁর বন্ধুত্বের পরিচয় দিয়েছেন । তাঁর মৃত্যুতে দুঃখিত । তাঁর বন্ধু ও পরিবারবর্গকে সমবেদনা জানাই । ওম শান্তি ।"

  • Amar Singh Ji was an energetic public figure. In the last few decades, he witnessed some of the major political developments from close quarters. He was known for his friendships across many spheres of life. Saddened by his demise. Condolences to his friends & family. Om Shanti.

    — Narendra Modi (@narendramodi) August 1, 2020 " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data=" ">

ভারতীয় রাজনীতিতে অমর সিং

1990-এর দশক । সমাজবাদী পার্টি ও অমর সিং তখন একে অপরের পরিপূরক মনে করা হত । রাজনীতিতে আসার আগে শিল্পমহলেও তাঁর নাম যথেষ্ট নাম-ডাক ছিল । কিন্তু সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো মুলায়ম সিং যাদবের সাহচর্যে আসার পর থেকেই তাঁর ভূমিকা বদলে যেতে থাকে । শিল্পপতির পরিচয় ঝেড়ে ফেলে তিনি হয়ে ওঠেন দেশের প্রথম সারির রাজনীতিবিদদের মধ্যে একজন । ভারতের রাজনীতির কিংমেকার বলা হত তাঁকে ।

জন্ম 1956 সালের 27 জানুয়ারি । আজ়মগড়ের তরওয়া এলাকায় । কলকাতায় পড়াশোনা । এরপর 1987 সালে পঙ্কজা কুমারী সিংয়ের সঙ্গে বিয়ে । দুই যমজ মেয়ে । দৃষ্টি ও দিশা ।

শুধুমাত্র রাজনীতির আঙিনাতেই নয়, শিল্পমহলে ও সিনেমার দুনিয়াতেও যথেষ্টই খ্যাতি ছিল তাঁর । অমিতাভ বচ্চন তাঁকে নিজের বড় ভাই বলতেন । আবার মুকেশ আম্বানি ও অনিল আম্বানি তাঁকে ডাকতেন ছোটো ভাই বলে । প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবেগৌড়া ও চন্দ্র শেখর থেকে শুরু করে সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুলায়ম সিং যাদব, সকলেরই খুব কাছের মানুষ ছিলেন অমর সিং । অমিতাভ বচ্চনকে একসময় দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি । অনিল আম্বানি যখন উত্তরপ্রদেশে পাওয়ার প্রজেক্ট বসানোর কাজ করছিলেন, তখন তাঁকে রাজনৈতিকভাবে সমর্থন দিয়েছিলেন অমর সিং ।

2008 সালে অ্যামেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি, সরকারের প্রতি বামেদের সমর্থন টানা, মনমোহন সিংয়ের সরকারকে বাঁচানো । প্রতিটি ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন প্রয়াত সাংসদ । শুধু তাই নয়, 1999 সালে বাজপেয়ী সরকারের পতনের পর বিদেশি নাগরিকের প্রশ্ন তুলে সোনিয়া গান্ধিকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া থেকে আটকানোতেও বিশেষ ভূমিকা ছিল তাঁর ।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি মুম্বইয়ে থাকতে শুরু করলেও তাঁর পরিচয় কিন্তু ছিল পূর্বাঞ্চলের বাবুসাহেব । সমাজবাদী পার্টির হাত ধরেই রাজনীতিতে আসা । তখন খুব কম সময়েই ঠাকুর সম্প্রদায়ের মধ্যে তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন । জীবনের একটা লম্বা সময় তিনি মুম্বইয়ে কাটালেও পূর্বাঞ্চলে তাঁর জনপ্রিয়তা কোনওদিনও কমেনি । নব্বইয়ের দশকে বীর বাহাদুর সিং ও চন্দ্রশেখরের মতো রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল অমর সিংয়ের । এই বীর বাহাদুর সিংয়ের সূত্র ধরেই মুলায়ম সিং যাদবের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল ।

শিল্পপতি ও প্রভাবশালী ঠাকুর নেতা হিসেবে অমর সিং খুব কম সময়েই মুলায়ম সিং যাদবের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন । ক্রমে তিনি এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন যে তাঁকে সমাজবাদী পার্টির কেন্দ্রীয় মহাসচিব পদে বসান মুলায়ম সিং যাদব । রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, 2000-র আশেপাশের সময়টায় দলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি ।

সমাজবাদী পার্টির সমর্থন নিয়ে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন অমর সিং । কিন্তু শুধুমাত্র সমাজবাদী পার্টিই নয়, এক সময় গোটা উত্তরপ্রদেশের রাজনীতির সব থেকে বড় ম্যানেজার বলা হত তাঁকে । দল কোনও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়লে, দলের সেখান থেকে উদ্ধার করার দায়িত্ব ছিল অমর সিংয়ের । পাশাপাশি, অখিলেশ যাদবের পড়াশোনা ও অন্যান্য দায়িত্বও একসময়ে সামলেছেন তিনি । মুলায়মের পরিবারের সঙ্গে তিনি যতটা ঘনিষ্ঠ ছিলেন, এতটা হয়ত আর কেউই ছিলেন না ।

বলিউডের দুনিয়াতেও তিনি ছিলেন সমান জনপ্রিয় । অমর সিংয়ের শুধুমাত্র রাজনীতিবিদ ও শিল্পপতিদের সঙ্গেই ওঠাবসা ছিল না, বলিউডের একাধিক নায়ক নায়িকার সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল । অনেক নায়ক-নায়িকাকেই রাজনীতির আঙিনায় নিয়ে এসেছিলেন তিনি ।

এমনও শোনা যায়, মুলায়ম সিং যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী করার পিছনেও তাঁর বড় হাত ছিল । অমিতাভ বচ্চন ও তাঁর পরিবারকে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে যুক্ত করার ক্ষেত্রেও তাঁর বিশেষ অবদান ছিল । কিন্তু এরপর 2010 সালে দলের সমস্ত পদ থেকে তিনি ইস্তফা দিয়ে দেন । এর কিছুদিন পর তাঁকে দল থেকে বহিস্কার করা হয় । দল থেকে বহিস্কৃত হওয়ার পরেও তিনি রাজনীতির আঙিনা কোনওদিনই ছাড়েননি । পৃথক পূর্বাঞ্চলের দাবিতে নতুন দল গঠন করেন । নাম রাষ্ট্রীয় লোকমঞ্চ । কিন্তু নতুন দল নিয়ে সেভাবে কিছু সাফল্য পাননি তিনি । ধীরে ধীরে তাঁর শারীরের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে । ফলে নতুন দলের জন্য সে ভাবে সময়ও দিতে পারেননি তিনি । এমনকী, আস্তে আস্তে রাজনৈতিক গুরুত্ব হারাতেও শুরু করেন ।

এ বছরের মার্চ মাসেই তাঁর মৃত্যুর ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়েছিল । নিজের মৃত্যু নিয়ে জল্পনা ওড়াতে তিনি একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেন সোশাল মিডিয়ায় । ভিডিয়োয় লেখেন "টাইগার জ়িনদা হ্যায়" । তবে আজ সত্যিই বিদায় নিলেন "টাইগার" ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.