দেখলে মনে হয়,
শহরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কেউ যেন একটি ধূসর চাদর বিছিয়ে দিয়েছে
। বিশেষ করে শহরের সমুদ্রতট বরাবর গাছ, রাস্তাঘাট সমস্ত কিছু একটি আস্তরণে
ঢাকা পড়ে যায় । তবে কারণটা বেশ আকর্ষণীয় । শহরের এই অদ্ভূত সৌন্দর্যায়নের জন্য
দায়ি এক বিশেষ প্রজাতির মাকড়সা । এই মাকড়সারাই তাদের তৈরি জালে ঢেকে দেয় পুরো
এলাকা ।
পশ্চিম গ্রিসের উপকূলবর্তী অঞ্চল আকার্নানিয়ার আইটোলিকো । মাঝে
মাঝে এই শহরের বেশ কিছু জায়গা,
বিশেষ করে সমুদ্রতট বরাবর 300-500 মিটার পর্যন্ত পুরো এলাকা মাকড়সার
জালে ঢাকা পড়ে যায় । এই জালের দৈর্ঘ্য 1000 ফুটেরও বেশি । জীববিদ্যার বিশেষজ্ঞ ও
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছরে শহরের এই নতুন রূপ দেখা যায় । কিন্তু কেন
হয় এইরকম ? এভাবে শহরের সংশ্লিষ্ট ঘাস, ঝোঁপঝাড়, গাছ, রাস্তাঘাটকে জালে ঢেকে দেওয়ায় কারিগর
হল টেট্রাগনাথা প্রজাতির এক মাকড়সা । এটি প্রায় ০.৭ ইঞ্চি দীর্ঘ । গরম আবহাওয়া
এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকলেই এই মাকড়সাদের আধিক্য দেখা যায় । এমনই
জানাচ্ছেন জীববিদ্যার বিশেষজ্ঞরা । এর কারণ এই ধরনের আবহাওয়ায় এলাকায় মশা, মাছি,কীট-পতঙ্গদের উপদ্রব বেড়ে যায় । যা
এই টেট্রাগনাথা প্রজাতির মাকড়সার পছন্দের খাবার । কীট পতঙ্গের সংখ্যা যত বাড়তে
থাকে, ততই মাকড়সার সংখ্যাও বাড়তে থাকে । আর এভাবেই বংশবিস্তারের
পাশাপাশি জাল বুনতে বুনতে শহরের সমুদ্রতটকে ঢেকে দেয় ।
এবিষয়ে গ্রিসের ডেমোক্রিটাস ইউনিভার্সিটি অফ থ্রাসের
অণু-জীববিদ্যার অধ্যাপক মারিয়া চাটজাকি জানিয়েছেন, এই ঘটনার জন্য জলবায়ুই দায়ি ।
আইটোলিকোর আর্দ্র আবহাওয়ার জেরে পতঙ্গদের সংখ্যা বাড়তে থাকে । ফলে টেট্রাগনাথা
প্রজাতির মাকড়সারা এই কয়েক মাস যেন পার্টি শুরু করে দেয় । ক্রমশ জাল বিস্তার করতে
থাকে । এই ক'মাসের মধ্যেই তিন-চার প্রজন্ম পর্যন্ত বংশবিস্তার করে ফেলে তারা ।
তবে এরা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয় । নির্দিষ্ট সময়ের পর প্রকৃতির নিয়মেই মারা যায় ।
গ্রিক জীববিজ্ঞানী ফোটিস পারগ্যানটিস জানিয়েছেন, তাপমাত্রা হ্রাস না হওয়া পর্যন্ত পতঙ্গদের পরিমাণ কমে না । তাই মাকড়সার এই জালবিস্তার কমাও অসম্ভব । একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর তাপমাত্রা হ্রাস পেলে মাকড়সাদের সংখ্যাও হ্রাস পেতে শুরু করে । ধীরে ধীরে পুরোনো চেহারায় ফিরতে শুরু করে শহরের সমুদ্রতট ।