দিল্লি, 7 ফেব্রুয়ারি : উত্তরাখণ্ডের ধসে মৃতদের পরিবারপিছু প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে 2 লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী । গুরুতর আহতদের পরিবারপিছু দেওয়া হবে 50 হাজার টাকা । উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত মৃতদের পরিবারপিছু 4 লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে ।
আজ সকালে আচমকা ভেঙে পড়ে নন্দা দেবী হিমবাহ । তার জেরে প্রবল তুষারঝড়ের সৃষ্টি হয়। বেড়ে যায় ওই এলাকার নদীগুলির জলস্তর । প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যায় কয়েকটি বাঁধ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুত্ কেন্দ্র, এনটিপিসি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পাঁচটি সেতু । তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাড়ি । সেখানে কর্মরত বহু শ্রমিককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে । সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, 10 জনের মৃত্যু হয়েছে । নিখোঁজ কমপক্ষে আরও 170 জন । মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ।
যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে চলছে উদ্ধারকাজ । উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে সেনা । জোশিমঠের কাছে রিঙ্গি এলাকায় চার বাহিনী জওয়ান নামানো হয়েছে । দু'টি বাহিনী পাঠানো হয়েছে জোশিমঠ থেকে এবং অন্য দু'টি বাহিনী পাঠানো হয়েছে অলি থেকে । এছাড়াও আরও দুই বাহিনী প্রস্তুত রাখা হয়েছে । দুটি জেসিবি মেশিন নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্ক ফোর্স পাঠানো হয়েছে রিঙ্গি এলাকায় । আকাশপথে উদ্ধারের জন্য পাঠানো হয়েছে সেনার চিতা হেলিকপ্টার । প্রস্তুত রাখা হয়েছে, মার্কোস কমান্ডোদেরও । দিল্লি থেকে 16 জন মার্কোস কমান্ডো ও মুম্বই থেকে 40 জন কমান্ডোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ।
আরও পড়ুন : আট বছর আগের আতঙ্ক ফিরল উত্তরাখণ্ডে
প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, যে 170 জনকে এখনও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁদের মধ্যে 148 জন এনটিপিসি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মী । 22 জন ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মী । আশঙ্কা করা হচ্ছে, যাঁদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁদের মধ্যে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন ।
আইটিবিপির জওয়ানরা একটি সুড়ঙ্গের ভিতরে আটকে পড়া 12 জনকে উদ্ধার করেছেন । অন্য একটি সুড়ঙ্গে আরও 30 জন আটকে রয়েছে । দ্বিতীয় সুড়ঙ্গটি প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ । আইটিবিপি জওয়ানরা তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ।
দুর্গত এলাকায় যাঁরা আটকে পড়েছেন সাহায্যের জন্য তাঁরা হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত বিপর্যয় মোকাবিলা কেন্দ্রের ফোন করতে বলেছেন এই নম্বরে, 1070 অথবা 9557444486।
আরও পড়ুন : উত্তরাখণ্ডে হিমবাহ ভেঙে ব্যাপক তুষারধস! ভাঙল বাঁধ, 150 জনের মৃত্যুর আশঙ্কা
এই ঘটনার জেরে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশে। সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ গঙ্গা নদী সংলগ্ন সব জেলার জেলাশাসকদের প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি ও নদীর জলস্তরের দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। সরকারি এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ''এনডিআরএফ, এসডিআরএফ ও উত্তরপ্রদেশ প্রভিন্সিয়াল আর্মড কনস্ট্যাবুলারিকেও তৈরি রাখা হয়েছে।''
গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টুইটে জানিয়েছেন, উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত ও আইটিবিপি-র ডিজি এসএস দেসওয়ালের সঙ্গে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। কথা বলেছেন এনডিআরএফ-এর ডিজি এসএন প্রধান ও বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গেও।
দুর্ঘটনাগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে অ্যামেরিকা ও ফ্রান্স ।