আজ অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন । বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গণতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে সারা বিশ্ব । এই বছর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় আর একবার নির্বাচিত হওয়ার জন্য রিপাবলিকান পার্টির টিকিটে প্রার্থী হয়েছেন । অন্যদিকে ড্যামোক্র্যাটদের তরফে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করা হয়েছে জো বাইডেনকে । এখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সমস্ত পদ্ধতি উল্লেখ করা হল । সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পদ্ধতিকে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করা যায় । সেগুলি হল – প্রাইমারিজ ও ককাসেস, ন্যাশনাল কনভেনশন, জেনারেল ইলেকশন, ইলেকটোরাল কলেজ এবং উদ্বোধন ।
ETV ভারতের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত গৌতম বাম্বাওয়ালে জানান যে অ্যামেরিকার নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বোঝা খুবই জরুরি । আর এটা ভারতের থেকে একেবারে আলাদা । ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থা যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী ব্যবস্থার মতো । এখানে ‘দ্য ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট সিস্টেম’-এর মাধ্যমে নির্বাচন হয় । যিনি কোনও নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে সবচেয়ে ভোট পান কোনও একটি নির্বাচনে, তিনিই জয়ী হন । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ব্যবস্থা বেশ কিছুটা আলাদা । জনপ্রিয় ভোট ছাড়াও আরেকটি বিষয় রয়েছে, যার নাম ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ । যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
এই মার্কিন নির্বাচন প্রতি চার বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয় । প্রতি চার বছরে নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার মার্কিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । আর এর জন্য সময় লাগে ৯ থেকে ১০ মাস । যা শুরু হয় ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে । প্রার্থীদের একটা লম্বা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ।
প্রাইমারিজ ও ককাসেস
অনেক মানুষই প্রেসিডেন্ট হতে চান । সরকারের কাজ কেমন ভাবে চলা উচিত, তাঁদের কাছে এই নিয়ে বিভিন্ন ধারণা থাকে । যে সমস্ত মানুষের ধারণা মিলে যায়, তাঁরা একই রাজনৈতিক দলে থাকেন । এখানেই প্রাইমারিজ ও ককাসেস এর ভূমিকা আসে । প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা দলের সদস্যদের মন জয় করার জন্য দেশজুড়ে প্রচার করতে থাকেন । প্রাইমারিজ ও ককাসেস হল প্রধান ভোট প্রক্রিয়া, যা ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় । এখান থেকে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়, যাঁরা পরবর্তী কনভেনশনে প্রতিনিধিত্ব করেন । ককাসে দলের সদস্যরা একাধিক আলোচনা ও ভোট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেরা প্রার্থীকে বেছে নেন । আর প্রাইমারির ক্ষেত্রে দলের সদস্যরা সেই সেরা প্রার্থীকে ভোট দেন, যিনি সাধারণ নির্বাচনে দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন ।
ন্যাশনাল কনভেনশন
দ্বিতীয়ত, প্রতিটি দল একটি করে ন্যাশনাল কনভেনশনের আয়োজন করে প্রেসিডেন্ট পদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্ধারণ করতে । পছন্দের প্রার্থীকে ‘সমর্থনের’ জন্য প্রাইমারিজ ও ককাসেস থেকে বাছাই করা প্রদেশের প্রতিনিধিরা প্রতিনিধিত্ব করেন । আর এই কনভেনশনের শেষে প্রতিটি দল সরকারি ভাবে তাদের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে । প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থী তাঁর সহকারী বা রানিং মেটকেও বেছে নেন ( ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী ) । এই বছর মার্কিন নির্বাচন ২০২০ র জন্য কমলা হ্যারিসকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে ডেমোক্র্যাটদের তরফে । ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে ওই মনোনয়ন প্রক্রিয়া হয় । এই বছর কোরোনা প্যানডেমিকের জন্য ওই কনভেনশন ভার্চুয়ালি আয়োজন করা হয়েছিল ।
সাধারণ নির্বাচন
তৃতীয়ত, দেশের সমস্ত প্রদেশের মানুষ একজন প্রেসিডেন্ট ও একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট বেছে নেওয়ার জন্য ভোট দেন । যখন আমেরিকানরা ৩ নভেম্বর ভোটদান করবেন, তখন তাঁরা তাঁদের সবচেয়ে পছন্দের প্রেসিডেন্ট ও তাঁর সহকারি ( রানিং মেটকে ) বেছে নেবেন ।
বস্তুত, মানুষ যখন ভোট দেবেন, তখন তাঁরা আসলে একদল লোককে ভোট দেবেন । যাঁদের বলা হয় ইলেক্টরস বা নির্বাচকমণ্ডলী । যদি কোনও প্রদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোট কোনও প্রার্থী পেয়ে যান, তাহলে সেই প্রদেশের সমস্ত ইলেক্টোরাল ভোট ওই প্রার্থীর দিকে চলে যায় । তবে এই নিয়ম খাটে না মেইন ও নেব্রাস্কা প্রদেশের ক্ষেত্রে । সংখ্যাগরিষ্ঠ ইলেক্টোরাল ভোট যে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর কাছে থাকবে, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবেন ।
ইলেকটোরাল কলেজ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি ধাপটি হল ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ । কোনও প্রদেশের ভোটদানকারী জনসংখ্যার অনুপাতে সেই প্রদেশের নির্বাচক বা প্রতিনিধি নির্ধারিত হয়। যাঁরা প্রেসিডেন্ট কে হবেন, তা ঠিক করেন । কংগ্রেসে ( সেনেট, হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ) প্রতিনিধিত্বের বিচারে প্রতিটি প্রদেশকে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যর ইলেক্টর দেওয়া হয় । প্রতিটি প্রদেশের নীতির বিচারে ৫৩৮ জন করে ইলেক্টর থাকেন । প্রতিটি ইলেক্টর সাধারণ নির্বাচনের পর একটি ভোট দিতে পারেন । আর যে প্রার্থী অর্ধেকের বেশি ( ২৭০ ) ভোট পাবেন, তিনিই জিতবেন ।
প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত বাম্বাওয়ালে ব্যাখ্যা করেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর অন্যের থেকে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়াটাই যথেষ্ট নয় । উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিন্টন ডোনাল্ড ট্রাম্পের থেকে বেশি ‘পপুলার ভোট’ পেয়েছিলেন । কিন্তু ওই ভোটগুলি ক্লিন্টন নির্দিষ্ট কিছু রাজ্যে পেয়েছিলেন । আর তিনি ট্রাম্পের কাছে আরও অনেক রাজ্যে হেরে গিয়েছিলেন । সার্বিক ভাবে তাঁর কাছে বেশি ভোট থাকলেও তিনি ইলেকটোরাল কলেজে নিজের পক্ষে টানতে পারেননি । মার্কিন নির্বাচনী ব্যবস্থায় একজন প্রার্থীকে প্রতিটি প্রদেশ থেকেই একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোট পেতে হবে ।’’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচনী ব্যবস্থায় যে কেউ এক মাস আগেই তাঁর ভোট দিয়ে দিতে পারেন । এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৭৫ মিলিয়ন মানুষ ইতিমধ্যে তাঁদের ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলেছেন । তিনি নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেছেন যে মঙ্গলবার গত রাউন্ডের তুলনায় নজিরবিহীন সংখ্যক মানুষ ভোটদান করবেন ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ইলেকটোরাল কলেজের হিসেব বেশ জটিল । কারণ, যে দল ভোটের দিন অধিকাংশ প্রদেশে জিতে যায়, তারা আবার ইলেকটোরাল কলেজে হেরেও যেতে পারে ।