যদি নিজের নাক দিয়ে আপনি একটি ছোটো গাছ উপড়ে ফেলতে পারতেন বা জলের তলা থেকে নাক উঁচিয়ে শ্বাস নিতে পারতেন অথবা অনেক মাইল দূরে থেকেও জলের অস্তিত্ব বুঝতে পারতেন, তাহলে কেমন হত ? আমি, আপনি বা পৃথিবীর অন্য কোনও প্রাণী এর কোনওটাই পারি না ৷ অথচ এইগুলি এক চুটকিতেই করে হাতিরা । এমন কী গন্ধ শুঁকে বোমাও চিনে নিতে পারে । কী মনে হচ্ছে ? হাতির শুঁড়ে বম্ব ডিটেক্টর লাগানো আছে ! একদমই না । তাহলে কীভাবে এই অসাধ্য সাধন করে হাতিরা, সেখানেই আসল রহস্য ...
ছোটোদের হাতির শুঁড় নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই । প্রায়ই বাড়ির ছোটোদের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দেয় বড়রা ৷ প্রশ্ন করে, "বলো দেখি, হাতির শুঁড়টা আসলে কী?" এইখানেই প্রশ্ন । হাতির শুঁড় আসলে কী ? নাক, জিভ না কি হাতের মতো । আসলে তিনটি অঙ্গের কাজই একসঙ্গে করে হাতির শুঁড় । যদি হাতির শুঁড়ের ডিসেকশন করা যায়, তবে তা দেখতে লাগে মানুষের জিভের মতো । হাতির শুঁড়, মানুষের জিভ এবং অক্টোপাসের শুঁড়ে একটি অঙ্গ থাকে । যার নাম মাসকিউলার হাইড্রোস্ট্যাটস । অর্থাৎ, সম্পূর্ণটাই পেশি দিয়ে তৈরি । হাতির শুঁড়ে 40 হাজারের কাছাকাছি পেশি থাকে । যেখানে মানুষের সারা শরীরে থাকে মাত্র 650টি পেশি ।
সাধারণত হাড় এবং জয়েন্টের উপর নির্ভর করে পেশিগুলি । যখন আমরা কোনও ডাম্বেল তুলি, আমাদের বাইসেপের পেশি ফুলে ওঠে । কারণ হাতের হাড় সাহায্য করে । কিন্তু হাতির শুঁড়ের ক্ষেত্রে বিষয়টি তেমন নয় ৷ সেখানে কোনও হাড় নেই । তাই ইচ্ছেমতো গতিবিধি শুঁড়ের । তবে এই পেশিগুলি খুবই শক্তিশালী, সহজেই শতাধিক পাউন্ড তুলে নিতে পারে ।
এই শুঁড় দেখতে জিভের মতো ৷ কাজ করে হাতের মতো । কিন্তু, আদতে এটি একটি নাকই ৷ যেটি সবার থেকে আলাদা ৷ এইরকম নাক প্রাণীজগতে আর কারও নেই । সাধারণত ঘ্রাণক্ষমতার জন্য সাহায্য করে অলফ্যাক্টরি রেসিপেটর । এর সংখ্যার উপর অনেকটাই নির্ভর করে ঘ্রাণশক্তি । প্রায় দুই হাজারটি অলফ্যাক্টরি রেসিপেটর থাকে হাতির । যে কোনও প্রাণীর থেকে বেশি । ব্লাড হাউন্ড প্রজাতির কুকুরের এই অলফ্যাক্টরি রেসিপেটর থাকে 800-র মতো । মানুষের আরও কম থাকে ।
আসলে হাতির ঘ্রাণশক্তি এতটাই জোরালো যে, তারা খুঁজে বের করতে পারে বোমাও । অঙ্গোলায় ল্যান্ড মাইন এড়িয়ে চলতে পারে আফ্রিকান হাতিরা ৷ 2015 সালের গবেষণায় উঠে আসে এরকম তথ্য । অনেকগুলো বালতির সামনে আনা হয়েছিল হাতিদের । এক একটি বালতিতে ছিল এক একটি সামগ্রী । প্রত্যেকটি গন্ধ ভিন্ন । সেগুলির মধ্যে ছিল TNT-ও । ল্যান্ড মাইনের প্রধান সামগ্রী । 97টি TNT নমুনার মধ্যে হাতিগুলি প্রত্যেকটাই চিনেছিল, কেবল একটা চিনতে পারেনি ।
তবে হাতির শুঁড় বম্ব ডিটেক্টর না । আসলে যেমন আমরা চোখকে ব্যবহার করি, ওরা একইরকমভাবে শুঁড়কে ব্যবহার করে । কাছে কোথায় খাবার আছে, শুঁড়ের সাহায্যে বুঝে নেয় ৷ যখন গভীর নদীতে সাঁতার কাটে, তখন জলের উপরে শ্বাস নেওয়ার জন্য ব্যবহার করে শুঁড় । আবার স্নানের সময় শুঁড়কে পাইপের মতোও ব্যবহার করতে পারে । যা কোনও দমকল পাইপের থেকে কোনও অংশে কম নয় ৷ একবারে 10 লিটারের কাছাকাছি জল টেনে নিতে পারে ।