দিল্লি, 30 জুলাই : বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম 'লক্ষ্য' পূরণে সফল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ দ্বিধা-সংশয় কাটিয়ে লোকসভার পর রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গেল তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিল ৷ এবার রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে বিলটি ৷ আর বিল পাশের পর প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির প্রতিক্রিয়া, ''প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় প্রথার অবসান হল ৷ ''
দিনভর নাটক, বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার পর আজ (মঙ্গলবার) রাজ্যসভায় পাশ হল বিলটি ৷ বিল পাশের মুহূর্তে আজ রাজ্যসভা ছাড়েন AIADMK এবং নীতীশ কুমারের JDU দলের সাংসদরা ৷ লক্ষ্যণীয়ভাবে ভোটদান থেকে বিরত ছিল কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের TRS ৷ শরদ পাওয়ার, প্রফুল প্যাটেল , কংগ্রেসের চারজন এবং সমাজবাজী পার্টির দু'জন সাংসদ আজ ভোটদান থেকে বিরত ছিলেন ৷ যার ফলে সংসদের উচ্চকক্ষে এই বহু আলোচিত বিলটি পাশ করাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি গেরুয়া শিবিরকে ৷ গত সপ্তাহে লোকসভায় পাশ হয়েছিল তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিলটি ৷
মুসলিম শরিয়তি আইনে স্বামী তিন বার তালাক দিলেই সেটা বৈধ, অর্থাৎ স্ত্রীকে তিন বার তালাক বলে দিলেই বিচ্ছেদ হয় যেত, এমন কী ফোনে তিন বার তালাক বললেও তা বৈধ বলে গণ্য হত ৷ শরিয়তি আইনে এই প্রথাকে বলা হয়, 'তালাক-ই-বিদ্দত' ৷ এই 'তালাক-ই-বিদ্দত'-কেই বেআইনি ঘোষণা করে কড়া শাস্তির প্রস্তাব রয়েছে বর্তমান বিলে ৷ তিন তালাক দিলে স্বামীর কারাবাসের বিধানও রয়েছে অর্থাৎ ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে ৷ আর এখানেই আপত্তি তুলেছিলেন বেশিরভাগ বিরোধী সাংসদরা ৷ কংগ্রেস-তৃণমূলের মতো বিরোধীদের দাবি ছিল, স্বামী জেলে থাকলে খোরপোষ আসবে কোথা থেকে ৷ এই আইনকে মহিলাদের শাস্তি দেওয়ার নামান্তর বলে দাবি করতে শুরু করেছিলেন বিরোধীরা ৷
অন্যদিকে, বিলের পক্ষে কেন্দ্রের ছিল একাধিক যুক্তি ৷ আইন মন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদের দাবি ছিল, পাকিস্তান-মালয়েশিয়ার 20টি মুসলিম দেশে তিন তালাক নিষিদ্ধ ৷ ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দেশে কেন এই প্রথা চালু থাকবে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন রবিশংকর৷ কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, যে সব দেশে শরিয়তি আইন চালু রয়েছে, সেখানেও তিন তালাক ফৌজদারি অপরাধ, তাহলে ভারতে নয় কেন? দিনভর তর্কবিতর্কের পর আজ রাজ্যসভায় 99-84 ভোটে পাশ হয়ে যায় তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিলটি ৷ বিল পাশের পর স্বভাবতই খুশি কেন্দ্র ৷ কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ বলেন, ''আজ একটি ঐতিহাসিক দিন ৷ উভয় কক্ষই মুসলিম মহিলাদের পক্ষে সুবিচার দিল ৷ এটাই নতুন ভারতের দিকে যাত্রার সূচনা ৷ ''
লোকসভায় বিলটি পাশের সময় বিরোধীদের তরফে বেশ কিছু প্রতিরোধ এসেছিল ৷ স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় প্রথম থেকেই একটা চ্যালেঞ্জ ছিল মোদি-অমিত শাহের কাছে ৷ সেজন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনাও শুরু করেছিলেন তাঁরা ৷ তেলাঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি (TRS), নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দল (BJD) এবং জগনমোহন রেড্ডির YSR কংগ্রেসকে বাগে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করেন তাঁরা ৷ TRS এবং BJD-র সমর্থন পেতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও BJP-র সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ফোন করেছিলেন বলে সূত্রের খবর ৷ বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে কথা বলে তিন তালাক বিল পাশ করার পথ সুগম করেছিলেন বলেও শোনা যাচ্ছে ৷ আবার, আজ তাঁদের ওয়াক আউট প্রসঙ্গে AIADMK সাংসদ নবনীত কৃষ্ণার দাবি, ''সরকার তিন তালাক বিল নিয়ে আমাদের দাবি মানেনি ৷ বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হয়নি, আমরা বিশ্বাস করি, এভাবে কোনও বিল পাশ করা যায় না , আর সেজন্যই বাধ্য হয়ে আজ রাজ্যসভা কক্ষ ত্যাগ করেছিলাম ৷ ''
রাজ্যসভায় বিল পাশের প্রথম থেকেই বিরোধীদের দাবি ছিল, এটি যেন সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হয়, কারণ এই বিলে উল্লেখ থাকা তিন বছরের হাজতবাসের প্রসঙ্গেই মূলত আপত্তি বিরোধীদের ৷ তিন তালাক নিয়ে ইতিমধ্যেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছিল সুপ্রিম কোর্ট ৷ এবিষয়ে একটি অধ্যাদেশও জারি হয়েছিল ৷ আজ বিল পাশের ফলে এখন আইন তৈরির কাজটিই শুধু বাকি রয়ে গেল ৷