ETV Bharat / bharat

গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানানো নাগরিকের মৌলিক অধিকার

গণতান্ত্রিক দেশের সংবিধান তার নাগরিকদের যে কোনও বিষয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানানোর এই অধিকার দেয় । এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের সাম্প্রতিক রায় বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে ।

fundamental right of a citizen
প্রতীকী ছবি
author img

By

Published : Jan 21, 2020, 3:04 AM IST

কোনও গণতান্ত্রিক দেশে সাধারণ মানুষের আইন মেনে কোনও বিষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর অধিকার রয়েছে । গণতান্ত্রিক দেশের সংবিধান তার নাগরিকদের যে কোনও বিষয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানানোর এই অধিকার দেয় । এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের সাম্প্রতিক রায় বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে । এক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখ্য, এই রায় শীর্ষ আদালত এমন সময় দিয়েছে যখন দেশে প্রতিবাদ জানানোর সাংবিধানিক অধিকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার জন্য স্বৈরতান্ত্রিক উপায়ে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে । এই গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের এই সাংবিধানিক অধিকারের কথা শীর্ষ আদালত তার আইনসভা ও প্রশাসনের আধিকারিকদের বিশেষভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ।

গত বছর অগাস্টে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে 370 ধারা প্রত্যাহার করে কেন্দ্রীয় সরকার । তারপর থেকে সেখানে ইন্টারনেট ও টেলিফোন পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার । একাধিক রাজনৈতিক নেতাকে গৃহবন্দী করার পাশাপাশি সাধারণ জনজীবনে একাধিক বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়েছে । সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজ়াদ শীর্ষ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন । এছাড়া সম্প্রতি পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, 2019 এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধেও দেশের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে । সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজন এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছে । কাশ্মীরে যেভাবে বিক্ষোভ দমানোর চেষ্টা করে সরকার, ঠিক একই পদ্ধতিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, 2019 এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধেও দেশজুড়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দমানোর চেষ্টা করছে সরকার । গোটা বিষয়টি নিয়ে ভারতের প্রধান বিচারপতি এন এ বোবদে সরব হয়েছেন ৷ আর সেই প্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি পি ভি রামানা, বিচারপতি বি আর গাভাই ও বিচারপতি আর সুভাষ রেড্ডির সাংবিধানিক বেঞ্চ তিনটি মুখ্য বিষয়ের প্রসঙ্গ টেনে সরকারকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ।


সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, গত বছরের 16 অক্টোবর আদালতের তরফে নির্দেশ জারি করা হলেও সরকার বিধিনিষেধ আরোপের আদেশ প্রত্যাহার করেনি । গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেখানে প্রশাসনে স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করা সরকারের অন্যতম দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, সেখানে আদালতের নির্দেশ কার্যকর করাও সরকারের অন্যতম কর্তব্য । আদালত সরকারকে আরও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংবিধান প্রদেয় ৷ সেই পবিত্র কর্তব্যগুলির মধ্যে অন্যতম, যা শাসকের অহং নিয়ন্ত্রণ করে । পাশাপাশি শীর্ষ আদালত এ'টাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সংবাদমাধ্যমের মাথার উপর খাঁড়া ঝুলিয়ে রাখাটা মোটেই সমীচিন নয় । শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, CRPC-র অধীনে বিধিনিষেধ আরোপ এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা আইনি প্রেক্ষিতে মোটেই অভিপ্রেত নয় । এই ধরনের নির্দেশ বাস্তবে গণতন্ত্রের পরিপন্থী ।

আমরা বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র – এই কথাটা বলে গর্ব করাটাই কিন্তু যথেষ্ট নয় । সে'টা সরকারের কাজ ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেও প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন । দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে কিছু নেতার মানসিকতা থেকে গণতান্ত্রিক চেতনা ও দায়িত্ব ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে । তাই তাঁরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হওয়া প্রতিবাদ আন্দোলন ও বিক্ষোভ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না । জনজীবনে আইন-শৃঙ্খলার বিঘ্ন যাতে না ঘটে, সে জন্য ব্রিটিশ আমলে 1861 সালে প্রতিবন্ধকতামূলক আইন কার্যকর হয়েছিল । পরবর্তীতে ইন্ডিয়ান পিনাল কোড, 1973 সালে প্রতিবন্ধকতামলূক আইনটি স্থান পায় ।

এই প্রসঙ্গে যে'টা বলার, তা হল দু'টো বিষয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা শাসকের পক্ষে খুব জরুরি । সে'টা হল, একদিকে নাগরিকদের প্রতিবাদ জানানোর স্বাধীনতা দিতে হবে এবং অন্যদিকে সরকারের তরফে এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে, সে যেন আত্মনিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয় । ক্ষমতার দম্ভে নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে সরকার যেন সমাজের ক্ষতি না করে । সরকারের নিজেকেই এই ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে । যখন সরকার এই ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না, তখন জনজীবনে বিধিনিষেধ আরোপ করা, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করা, পুলিশের লাঠিচার্জে সাধারণ নাগরিকের রক্তপাত ইত্যাদি ঘটনা ঘটে । আর তখনই সাধারণ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হয় ৷ এ'টা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কখনও কাঙ্খিত নয় ।

144 ধারার সাংবিধানিক যৌক্তিকতা কতটা তা 1970 সালে সুপ্রিম কোর্ট খতিয়ে দেখেছিল । সেই সময় শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, কোন কোন ক্ষেত্রে এবং কীভাবে এই ধারা কার্যকর করা উচিত । 144 ধারা কার্যকর করার ক্ষেত্রে সংবিধানের 19 নম্বর ধারা অনুসারে ‘যথোপযুক্ত বিধিনিষেধ’-এর বিষয়টিও স্পষ্ট করে দিয়েছিল আদালত । শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন ছিল, 144 ধারা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত যথোপযুক্ত খতিয়ে দেখা হয় কি না এবং বিধিনিষেধ আরোপের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় কি না । শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশ সবিস্তারে নথিভূক্ত থাকলেও সরকার কখনও তা সঠিকভাবে মেনে চলেছে, এমন কোনও উদাহরণ কিন্তু বাস্তবে নেই ।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, 2019 পাশ হওয়ার পর 22 কোটি জনসংখ্যার রাজ্য উত্তরপ্রদেশ জুড়ে 144 ধারা জারি করা হয়েছিল । শুধুমাত্র টুইটারে একটি সাধারণ পোস্ট করে 144 ধারা জারির বিষয়টি ঘোষণা করা হয়েছিল, যা কখনও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কাম্য নয় । অন্যদিকে কর্ণাটক হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, নাগরিকদের প্রতিটি প্রতিবাদ আন্দোলনই হিংসাত্বক হয়ে উঠতে পারে এই আশঙ্কায় কি সরকার প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির উপর আগাম বিধিনিষেধ জারি করতে পারে ? অন্যদিকে, শীর্ষ আদালতের রায় সত্ত্বেও অন্ধ্রপ্রদেশে গ্রামীণ এলাকায় সাধারণ মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের উপর পুলিশ যথেচ্ছ লাঠি চালিয়েছে, যা সাধারণ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল ।

সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ রায়ে এ'টা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, দেশের সাধারণ নাগরিকদের আইনি পথে প্রতিবাদ জানানোর রাস্তা বন্ধ করার জন্য, তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ দমানোর জন্য 144 ধারা কখনও সরকারের অস্ত্র হতে পারে না । এই ধরনের প্রতিবন্ধকতামূলক ধারা একমাত্র তখনই জারি করা উচিত যখন সরকার মনে করবে যে, আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতির যথার্থই অবনতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে । তাই যথেচ্ছ ও খামখেয়ালিভাবে এই ধারা প্রয়োগ করা মোটেই সমীচিন নয় । এই ধরনের নির্দেশ জারি করার পর তা ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত যে, কোন প্রেক্ষিতে সেই নির্দেশ জারি করা হয়েছিল এবং সেই বিষয়টিও জনসমক্ষে আনা উচিত যাতে ক্ষতিগ্রস্তদের আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হয় ।

শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চের এই রায় অবশ্যই স্বাগত ও প্রশংসনীয় । পরিসংখ্যান বলছে, ইন্টারনেট সংযোগে প্রতিবন্ধকতা আরোপের ক্ষেত্রে বিশ্বে ভারতের স্থান তৃতীয় । ভারতের আগে রয়েছে ইরাক ও সুদান । আর এই প্রতিবন্ধকতা জারির ফলে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় 10 হাজার কোটি টাকা । শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা কার্যত নাগরিকদের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল এবং সরকারের উচিত এই ধরনের পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকা । 2017 সালে শীর্ষ আদালত তার নির্দেশে আইনসভাকে বলেছিল, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারির ক্ষেত্রে 'সাময়িক' শব্দের যেন যথোপযুক্ত প্রয়োগ করা হয় । যাই হোক, শীর্ষ আদালত জম্মু ও কাশ্মীরে ইন্টারনেট সংযোগ ফের জারি করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, যা অবশ্যই প্রশংসনীয় । আমাদের গণতন্ত্রের বয়স সত্তরের বেশি, তবু এখনও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাজকর্মে গণতান্ত্রিক আদর্শ পরিলক্ষিত হয় না । তবে এর মধ্যে আশার আলো একটাই যে, বিচার ব্যবস্থা এখনও আমাদের দেশে নিরলস হয়ে তার কাজ করে যাচ্ছে এবং নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় সে সদাজাগ্রত ।

কোনও গণতান্ত্রিক দেশে সাধারণ মানুষের আইন মেনে কোনও বিষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর অধিকার রয়েছে । গণতান্ত্রিক দেশের সংবিধান তার নাগরিকদের যে কোনও বিষয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানানোর এই অধিকার দেয় । এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের সাম্প্রতিক রায় বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে । এক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখ্য, এই রায় শীর্ষ আদালত এমন সময় দিয়েছে যখন দেশে প্রতিবাদ জানানোর সাংবিধানিক অধিকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার জন্য স্বৈরতান্ত্রিক উপায়ে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে । এই গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের এই সাংবিধানিক অধিকারের কথা শীর্ষ আদালত তার আইনসভা ও প্রশাসনের আধিকারিকদের বিশেষভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ।

গত বছর অগাস্টে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে 370 ধারা প্রত্যাহার করে কেন্দ্রীয় সরকার । তারপর থেকে সেখানে ইন্টারনেট ও টেলিফোন পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার । একাধিক রাজনৈতিক নেতাকে গৃহবন্দী করার পাশাপাশি সাধারণ জনজীবনে একাধিক বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়েছে । সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজ়াদ শীর্ষ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন । এছাড়া সম্প্রতি পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, 2019 এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধেও দেশের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে । সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজন এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছে । কাশ্মীরে যেভাবে বিক্ষোভ দমানোর চেষ্টা করে সরকার, ঠিক একই পদ্ধতিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, 2019 এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধেও দেশজুড়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দমানোর চেষ্টা করছে সরকার । গোটা বিষয়টি নিয়ে ভারতের প্রধান বিচারপতি এন এ বোবদে সরব হয়েছেন ৷ আর সেই প্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি পি ভি রামানা, বিচারপতি বি আর গাভাই ও বিচারপতি আর সুভাষ রেড্ডির সাংবিধানিক বেঞ্চ তিনটি মুখ্য বিষয়ের প্রসঙ্গ টেনে সরকারকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ।


সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, গত বছরের 16 অক্টোবর আদালতের তরফে নির্দেশ জারি করা হলেও সরকার বিধিনিষেধ আরোপের আদেশ প্রত্যাহার করেনি । গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেখানে প্রশাসনে স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করা সরকারের অন্যতম দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, সেখানে আদালতের নির্দেশ কার্যকর করাও সরকারের অন্যতম কর্তব্য । আদালত সরকারকে আরও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংবিধান প্রদেয় ৷ সেই পবিত্র কর্তব্যগুলির মধ্যে অন্যতম, যা শাসকের অহং নিয়ন্ত্রণ করে । পাশাপাশি শীর্ষ আদালত এ'টাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সংবাদমাধ্যমের মাথার উপর খাঁড়া ঝুলিয়ে রাখাটা মোটেই সমীচিন নয় । শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, CRPC-র অধীনে বিধিনিষেধ আরোপ এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা আইনি প্রেক্ষিতে মোটেই অভিপ্রেত নয় । এই ধরনের নির্দেশ বাস্তবে গণতন্ত্রের পরিপন্থী ।

আমরা বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র – এই কথাটা বলে গর্ব করাটাই কিন্তু যথেষ্ট নয় । সে'টা সরকারের কাজ ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেও প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন । দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে কিছু নেতার মানসিকতা থেকে গণতান্ত্রিক চেতনা ও দায়িত্ব ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে । তাই তাঁরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হওয়া প্রতিবাদ আন্দোলন ও বিক্ষোভ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না । জনজীবনে আইন-শৃঙ্খলার বিঘ্ন যাতে না ঘটে, সে জন্য ব্রিটিশ আমলে 1861 সালে প্রতিবন্ধকতামূলক আইন কার্যকর হয়েছিল । পরবর্তীতে ইন্ডিয়ান পিনাল কোড, 1973 সালে প্রতিবন্ধকতামলূক আইনটি স্থান পায় ।

এই প্রসঙ্গে যে'টা বলার, তা হল দু'টো বিষয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা শাসকের পক্ষে খুব জরুরি । সে'টা হল, একদিকে নাগরিকদের প্রতিবাদ জানানোর স্বাধীনতা দিতে হবে এবং অন্যদিকে সরকারের তরফে এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে, সে যেন আত্মনিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয় । ক্ষমতার দম্ভে নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে সরকার যেন সমাজের ক্ষতি না করে । সরকারের নিজেকেই এই ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে । যখন সরকার এই ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না, তখন জনজীবনে বিধিনিষেধ আরোপ করা, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করা, পুলিশের লাঠিচার্জে সাধারণ নাগরিকের রক্তপাত ইত্যাদি ঘটনা ঘটে । আর তখনই সাধারণ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হয় ৷ এ'টা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কখনও কাঙ্খিত নয় ।

144 ধারার সাংবিধানিক যৌক্তিকতা কতটা তা 1970 সালে সুপ্রিম কোর্ট খতিয়ে দেখেছিল । সেই সময় শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, কোন কোন ক্ষেত্রে এবং কীভাবে এই ধারা কার্যকর করা উচিত । 144 ধারা কার্যকর করার ক্ষেত্রে সংবিধানের 19 নম্বর ধারা অনুসারে ‘যথোপযুক্ত বিধিনিষেধ’-এর বিষয়টিও স্পষ্ট করে দিয়েছিল আদালত । শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন ছিল, 144 ধারা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত যথোপযুক্ত খতিয়ে দেখা হয় কি না এবং বিধিনিষেধ আরোপের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় কি না । শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশ সবিস্তারে নথিভূক্ত থাকলেও সরকার কখনও তা সঠিকভাবে মেনে চলেছে, এমন কোনও উদাহরণ কিন্তু বাস্তবে নেই ।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, 2019 পাশ হওয়ার পর 22 কোটি জনসংখ্যার রাজ্য উত্তরপ্রদেশ জুড়ে 144 ধারা জারি করা হয়েছিল । শুধুমাত্র টুইটারে একটি সাধারণ পোস্ট করে 144 ধারা জারির বিষয়টি ঘোষণা করা হয়েছিল, যা কখনও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কাম্য নয় । অন্যদিকে কর্ণাটক হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, নাগরিকদের প্রতিটি প্রতিবাদ আন্দোলনই হিংসাত্বক হয়ে উঠতে পারে এই আশঙ্কায় কি সরকার প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির উপর আগাম বিধিনিষেধ জারি করতে পারে ? অন্যদিকে, শীর্ষ আদালতের রায় সত্ত্বেও অন্ধ্রপ্রদেশে গ্রামীণ এলাকায় সাধারণ মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের উপর পুলিশ যথেচ্ছ লাঠি চালিয়েছে, যা সাধারণ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল ।

সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ রায়ে এ'টা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, দেশের সাধারণ নাগরিকদের আইনি পথে প্রতিবাদ জানানোর রাস্তা বন্ধ করার জন্য, তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ দমানোর জন্য 144 ধারা কখনও সরকারের অস্ত্র হতে পারে না । এই ধরনের প্রতিবন্ধকতামূলক ধারা একমাত্র তখনই জারি করা উচিত যখন সরকার মনে করবে যে, আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতির যথার্থই অবনতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে । তাই যথেচ্ছ ও খামখেয়ালিভাবে এই ধারা প্রয়োগ করা মোটেই সমীচিন নয় । এই ধরনের নির্দেশ জারি করার পর তা ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত যে, কোন প্রেক্ষিতে সেই নির্দেশ জারি করা হয়েছিল এবং সেই বিষয়টিও জনসমক্ষে আনা উচিত যাতে ক্ষতিগ্রস্তদের আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হয় ।

শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চের এই রায় অবশ্যই স্বাগত ও প্রশংসনীয় । পরিসংখ্যান বলছে, ইন্টারনেট সংযোগে প্রতিবন্ধকতা আরোপের ক্ষেত্রে বিশ্বে ভারতের স্থান তৃতীয় । ভারতের আগে রয়েছে ইরাক ও সুদান । আর এই প্রতিবন্ধকতা জারির ফলে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় 10 হাজার কোটি টাকা । শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা কার্যত নাগরিকদের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল এবং সরকারের উচিত এই ধরনের পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকা । 2017 সালে শীর্ষ আদালত তার নির্দেশে আইনসভাকে বলেছিল, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারির ক্ষেত্রে 'সাময়িক' শব্দের যেন যথোপযুক্ত প্রয়োগ করা হয় । যাই হোক, শীর্ষ আদালত জম্মু ও কাশ্মীরে ইন্টারনেট সংযোগ ফের জারি করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, যা অবশ্যই প্রশংসনীয় । আমাদের গণতন্ত্রের বয়স সত্তরের বেশি, তবু এখনও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাজকর্মে গণতান্ত্রিক আদর্শ পরিলক্ষিত হয় না । তবে এর মধ্যে আশার আলো একটাই যে, বিচার ব্যবস্থা এখনও আমাদের দেশে নিরলস হয়ে তার কাজ করে যাচ্ছে এবং নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় সে সদাজাগ্রত ।

New Delhi, Jan 21 (ANI): Ragib Ikram, a JNU student staying at Narmada hostel was allegedly beaten up by three students. The incident happened a day after Ragib had allegedly refused to let those students have food at the hostel during 'special dinner', as they belonged to a different hostel. He's admitted at Safdarjung Hospital. Ragib Ikram's brother said, "His roommate says attackers said that he's a Muslim and they'll make him disappear just like Najib. He said they hit him on his chest, head and slapped him twice. They also threatened him. While I was bringing my brother to hospital, I saw ABVP poster on attackers' door."

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.