ETV Bharat / bharat

মহুয়ার 'উলঙ্গ রাজা' বুঝিয়ে দিল কেন তিনি ফোবর্সের নজরে - মুখ্যমন্ত্রী মহুয়া মৈত্র

কেন্দ্রের বিরোধিতায় বারবার সরব হতে দেখা গিয়েছে তাঁকে । লোকসভায়ও কেন্দ্রকে প্রশ্ন করতে ছাড়েননি তিনি । পিএম কেয়ারস ফান্ড প্রসঙ্গ টেনে কেন্দ্রকে কার্যত তুলোধনা করলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র ।

mahuya maitra
মহুয়া মৈত্র
author img

By

Published : Sep 24, 2020, 8:51 PM IST

Updated : Sep 25, 2020, 10:17 PM IST

দিল্লি, 24 সেপ্টেম্বর : বছর 13 আগের কথা । সে দিন সালোয়ারের উপর 32 টা সেফটিপিন সেঁটে শাড়ি পড়ে তাঁর আন্দোলন নজর কেড়েছিল । কতটা মনের জোর থাকলে ইংরেজি শিক্ষিত-ঝাঁ চকচকে পরিবেশে বড় হওয়া মেয়েটা এমন ভাবে প্রকাশ্য আন্দোলনে নামতে পারেন- সে দিন তা প্রমাণ করেছিলেন । আর কংগ্রেসের গোষ্ঠী লড়াইয়ের কারণে অচিরেই মোহভঙ্গ হয়ে যে দিন তৃণমূলের সদস্য হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, সে দিনই তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন মমতা । ঝকঝকে শহুরে মুখ। সঙ্গে ঝরঝরে কর্পোরেট ইংরেজি । 2011 সালে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি বিধানসভায় টিকিট । সেখান থেকে কৃষ্ণনগরের সাংসদ । তৃণমূল কংগ্রেসে মহুয়া মৈত্রর এই রকেট গতির উত্থান, আসলে মমতার ভরসার পরিণতি ।

তৃণমূল নেত্রী যে তাঁকে ভরসা করে কোনও ভুল করেননি, 2019-এর লোকসভা নির্বাচন এবং তার পর থেকে সংসদে মহুয়া-ঝড় যেন সে কথাই বার বার প্রমাণ করে চলেছে । গতবার যেখানে শেষ করেছিলেন, এবার যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদটি । যে কৃষি বিল এবং পিএম কেয়ারস নিয়ে বিতর্ক, তা নিয়ে নিশানা করলেন কেন্দ্রীয় সরকারকে । সরকার পক্ষে আসনে তখন বসে রয়েছেন খোদ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতরমন । ছিলেন কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর । কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করতে বেছে নিয়েছেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর 'উলঙ্গ রাজা' কবিতাকে ।

আক্রমণাত্মক ভঙ্গিকে মহুয়া মনে করিয়ে দেন, "এটা গণতন্ত্র । স্বৈরতন্ত্র নয় । পিএম কেয়ারস ফান্ড নিয়ে আমরা কিছু জানতে পারি না । এই অন্ধকারে একটা আলো প্রবেশ করতে পারে না । সরকারকে বলতে চাই, সবসময় মিথ্যা বলা বন্ধ করুন । গ্রোথ রেট, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য সুবব্যস্থা,দেশের খরচ নিয়ে মিথ্যে বলা বন্ধ করুন । পিএম কেয়ারস ফান্ড নিয়েও মিথ্যে বলা বন্ধ করুন ।" মার্চ, 2020-তে কেন্দ্র একটি নির্দেশিকা জারি করে । বলা হয়, পিএম কেয়ারসের যাবতীয় দান কর্পোরেট সোশাল রেসপন্সিবিলিটির মধ্যে ধরা হবে । মহুয়ার অভিযোগ, স্টেট রিলিফ ফান্ডের সঠিক ব্যবহার হয়নি । এটি জনস্বার্থ বিরোধী । গণতান্ত্রিক নীতির বিরোধী ।

কী বললেন মহুয়া ?

এরপর সরাসরি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বলেন, স্কুল পড়ুয়া এবং পেনশনারদের একটা বড় তালিকা পড়ে শুনিয়েছিলেন । কিন্তু 38টি PSU নিয়ে নীরব ছিলেন মন্ত্রী । যা এই ফান্ডে 2100 কোটির বেশি দান করেছে । এই ফান্ডের প্রায় 70 শতাংশই PSU অনুদান থেকে এসেছে । মহুয়ার দাবি ছিল, চিনা সংস্থা থেকেও অনুদান এসেছে । শাওমি । যাদের বিরুদ্ধে নজরদারি চালানোর অভিযোগ এসেছে । তারা এই ফান্ডে 10 কোটি টাকা দিয়েছে । টিকটক 10 কোটি টাকা দিয়েছে । হুয়াওয়েই, যে কম্পানি বিশ্বে নিষিদ্ধ । কারণ তাদের সঙ্গে চিনা সেনার সংযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে । তারা 10 কোটি টাকা দিয়েছে । এর পরই মহুয়ার প্রশ্ন, "আপনি কেন শত্রুর থেকে টাকা নেবেন ? সেই টাকা আপনি ফেরাবেন না কেন ?"

অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশ্য তৃণমূল সাংসদের প্রশ্ন ছিল, আপনি জানিয়েছেন, 50 হাজার ভেন্টিলেটর কেনার জন্য 2000 কোটি টাকা ব্যয় করেছেন । সেই তথ্য আপনি দিন, কটা ভেন্টিলেটর এখনও পর্যন্ত ডেলিভার হয়েছে ? কোন রাজ্যের কোন হাসপাতালে ? সংগ্রহের পদ্ধতিও আপনি জানান ।

এরপরই উলঙ্গ রাজা কবিতার প্রসঙ্গ টেনে আনেন মহুয়া । বলেন, “আজকের ভারত হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনের গল্পের কথা মনে করিয়ে দেয় । যেখানে সম্রাটের গায়ে কোনও পোশাক ছিল না । তবে স্তাবকরা তা রাজাকে বলতে পারেনি ।” তৃণমূল সাংসদের কথায়, “বাংলার কবি তাঁর কবিতায় বলেছিলেন, এক ছোট্ট বালক একবার নগ্ন সম্রাটকে জিজ্ঞাসা করার সাহস দেখিয়েছিল, ‘রাজা, তোর কাপড় কোথায়?’ আর আজ আমিও সেই প্রশ্নই করছি, সম্রাট, আপনার কাপড়গুলি কোথায়?”

দিন কয়েক আগে তৃণমূল সাংসদের সেই আক্রমণাত্মক ভাষণ রীতিমতো ভাইরাল হয় সোশাল মিডিয়ায় । কেন্দ্রকে আক্রমণ করার জন্য়- কেন্দ্রীয় নীতির সমালোচনা করার জন্য- আন্দোলনের সুরকে সপ্তমে তোলার জন্য়ই মহুয়ার মতো প্রার্থীদের বেছে নিয়েছিলেন মমতা । প্রথম দিন থেকেই যেন মমতার স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছা পেয়ে বসেছিল । লড়াইটা প্রথম থেকেই নিয়েছিলেন মর্যাদার সঙ্গে । এক সময়ে বহুজাতিক সংস্থার উঁচু পদ ছেড়ে রাহুল গান্ধির ‘আম আদমি কা সিপাহি’ হন তিনি । পরে ‘দিদি’র দলে এসে গত বিধানসভা ভোটে জেতেন করিমপুরের মতো শক্ত আসন। এ বার তাঁকে আরও বড় মাঠে খেলতে ডেকেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। গোটা প্রচার পর্ব তুমুল দৌড়ে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে জয় হাসিল করেন সেই মহুয়া । লোকসভা তো বটেই, দিল্লির অলিন্দে প্রতিনিধিত্বের মতো আরও একটা ঝকঝকে মুখ পায় তৃণমূল । পাশের কেন্দ্র রানাঘাটে গেরুয়া ঝড়ে উড়ে যায় তৃণমূল । কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে অবশ্য তাদের বড় ভরসা ছিল প্রায় 37 শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট । বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা এই জেলায় BJP যত হিন্দুত্বের সুর চড়িয়েছিল, নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহেরা প্রচারে এসে যত জাতীয় নাগরিক পঞ্জির কথা তুলেছিলেন, স্থানীয় নানা ক্ষোভ-বিদ্বেষ সত্ত্বেও মুসলিম ভোট তত তৃণমূলের আঁচলে আশ্রয় খুঁজেছিল । তবে মহুয়ার লড়াইটা সহজ ছিল না । একে তো কৃষ্ণনগরে BJP-র একটা শক্তি বরাবরই ছিল, তার উপরে বাধা ছিল তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব । সব কিছুকে উড়িয়েই লোকসভায় পা রাখেন ইংরেজি শিক্ষিত ছিপছিপে মহিলাটি । আর প্রথম থেকেই শুরু তাঁর জাত চেনানোর লড়াই ।

গত বার রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে গিয়ে কেন্দ্রকে "মিথ্যাবাদী" বলে আক্রমণ করেছিলেন । আর বাদল অধিবেশনে বেছে নিলেন পিএম কেয়ারসকে । বেছেছিলেন কৃষি বিলকেও । মূলত কোরোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তার জন্য গঠিত হলেও পিএম কেয়ারস তহবিল নিয়ে গোড়া থেকে বিতর্ক রয়েছে । প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থাকতে কেন ফের নতুন করে পিএম কেয়ারসের মতো আরও একটি ফান্ড গঠন করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। তা ছাড়া, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলে এর টাকা হস্তান্তর করা বা এই তহবিলের সমস্ত তথ্য প্রকাশের জন্য বিরোধীরা বরাবরই দাবি করে আসছে। প্রথম দাবিটি শীর্ষ আদালত খারিজ করে দিলেও পিএম কেয়ারসের তথ্য প্রকাশ করা সংক্রান্ত মামলাটি এখনও বিচারাধীন । এই আবহে সম্প্রতি 2019-’20 আর্থিক বর্ষে পিএম কেয়ারস তহবিলে জমা পড়া অর্থ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইট অনুযায়ী, তহবিল গঠনের পর চলতি বছরের 27 মার্চ থেকে 31 মার্চ পর্যন্ত, মাত্র পাঁচ দিনে 3076 কোটি 62 হাজার টাকা জমা পড়েছে । এর মধ্যে শুধুমাত্র এ দেশের থেকে সংগ্রহ হয়েছে 3075 কোটি 85 হাজার টাকা । এবং বিদেশ থেকে ওই তহবিলে জমা পড়েছে 39 লাখ 67 হাজার টাকা । এ ছাড়াও জানানো হয়েছে, 2 লাখ 25 হাজার টাকা দিয়ে ওই তহবিল চালু করা হয়েছিল । প্রায় 35 লাখ টাকা এসেছে সুদ হিসাবে । তবে জমার খতিয়ান প্রকাশ করলেও, কারা এই তহবিলে অর্থদান করেছেন, তাঁদের নাম জানানো হয়নি। যা নিয়ে পিএম কেয়ারস তহবিল নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে । এবার সেই বিতর্কেই কেন্দ্রকেই নিশানা করেন মহুয়া ।

তিনি যে কতটা জনপ্রিয় তা ইতিমধ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছে ফোর্বস । ফোর্বসের দাবি, আগামী 10 বছরের গতিপ্রকৃতি যাঁরা নির্ধারণ করবেন, তাঁদের মধ্যে মহুয়া মৈত্র অন্যতম । তালিকায় অন্য আর এক নাম প্রশান্ত কিশোর । কিন্তু, তালিকায় মহুয়ার নাম প্রশান্ত কিশোরের অনেক আগেই। মহুয়া কবে রাজনীতিতে এলেন, কত দিন কংগ্রেসে ছিলেন, তার পরে কবে থেকে তৃণমূলে রয়েছেন, লোকসভায় নির্বাচিত হওয়ার পরে সংসদে দেওয়া প্রথম ভাষণেই কী ভাবে জ্বালাময়ী আক্রমণ শানিয়েছিলেন মোদি সরকারের বিরুদ্ধে— সবই উল্লেখ করেছিল ফোর্বস ।

মহুয়ার দ্বিতীয় ভাষণ যেন প্রমাণ করে দিল তিনি কেন ফোর্বসের নজর !

দিল্লি, 24 সেপ্টেম্বর : বছর 13 আগের কথা । সে দিন সালোয়ারের উপর 32 টা সেফটিপিন সেঁটে শাড়ি পড়ে তাঁর আন্দোলন নজর কেড়েছিল । কতটা মনের জোর থাকলে ইংরেজি শিক্ষিত-ঝাঁ চকচকে পরিবেশে বড় হওয়া মেয়েটা এমন ভাবে প্রকাশ্য আন্দোলনে নামতে পারেন- সে দিন তা প্রমাণ করেছিলেন । আর কংগ্রেসের গোষ্ঠী লড়াইয়ের কারণে অচিরেই মোহভঙ্গ হয়ে যে দিন তৃণমূলের সদস্য হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, সে দিনই তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন মমতা । ঝকঝকে শহুরে মুখ। সঙ্গে ঝরঝরে কর্পোরেট ইংরেজি । 2011 সালে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি বিধানসভায় টিকিট । সেখান থেকে কৃষ্ণনগরের সাংসদ । তৃণমূল কংগ্রেসে মহুয়া মৈত্রর এই রকেট গতির উত্থান, আসলে মমতার ভরসার পরিণতি ।

তৃণমূল নেত্রী যে তাঁকে ভরসা করে কোনও ভুল করেননি, 2019-এর লোকসভা নির্বাচন এবং তার পর থেকে সংসদে মহুয়া-ঝড় যেন সে কথাই বার বার প্রমাণ করে চলেছে । গতবার যেখানে শেষ করেছিলেন, এবার যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদটি । যে কৃষি বিল এবং পিএম কেয়ারস নিয়ে বিতর্ক, তা নিয়ে নিশানা করলেন কেন্দ্রীয় সরকারকে । সরকার পক্ষে আসনে তখন বসে রয়েছেন খোদ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতরমন । ছিলেন কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর । কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করতে বেছে নিয়েছেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর 'উলঙ্গ রাজা' কবিতাকে ।

আক্রমণাত্মক ভঙ্গিকে মহুয়া মনে করিয়ে দেন, "এটা গণতন্ত্র । স্বৈরতন্ত্র নয় । পিএম কেয়ারস ফান্ড নিয়ে আমরা কিছু জানতে পারি না । এই অন্ধকারে একটা আলো প্রবেশ করতে পারে না । সরকারকে বলতে চাই, সবসময় মিথ্যা বলা বন্ধ করুন । গ্রোথ রেট, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য সুবব্যস্থা,দেশের খরচ নিয়ে মিথ্যে বলা বন্ধ করুন । পিএম কেয়ারস ফান্ড নিয়েও মিথ্যে বলা বন্ধ করুন ।" মার্চ, 2020-তে কেন্দ্র একটি নির্দেশিকা জারি করে । বলা হয়, পিএম কেয়ারসের যাবতীয় দান কর্পোরেট সোশাল রেসপন্সিবিলিটির মধ্যে ধরা হবে । মহুয়ার অভিযোগ, স্টেট রিলিফ ফান্ডের সঠিক ব্যবহার হয়নি । এটি জনস্বার্থ বিরোধী । গণতান্ত্রিক নীতির বিরোধী ।

কী বললেন মহুয়া ?

এরপর সরাসরি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বলেন, স্কুল পড়ুয়া এবং পেনশনারদের একটা বড় তালিকা পড়ে শুনিয়েছিলেন । কিন্তু 38টি PSU নিয়ে নীরব ছিলেন মন্ত্রী । যা এই ফান্ডে 2100 কোটির বেশি দান করেছে । এই ফান্ডের প্রায় 70 শতাংশই PSU অনুদান থেকে এসেছে । মহুয়ার দাবি ছিল, চিনা সংস্থা থেকেও অনুদান এসেছে । শাওমি । যাদের বিরুদ্ধে নজরদারি চালানোর অভিযোগ এসেছে । তারা এই ফান্ডে 10 কোটি টাকা দিয়েছে । টিকটক 10 কোটি টাকা দিয়েছে । হুয়াওয়েই, যে কম্পানি বিশ্বে নিষিদ্ধ । কারণ তাদের সঙ্গে চিনা সেনার সংযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে । তারা 10 কোটি টাকা দিয়েছে । এর পরই মহুয়ার প্রশ্ন, "আপনি কেন শত্রুর থেকে টাকা নেবেন ? সেই টাকা আপনি ফেরাবেন না কেন ?"

অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশ্য তৃণমূল সাংসদের প্রশ্ন ছিল, আপনি জানিয়েছেন, 50 হাজার ভেন্টিলেটর কেনার জন্য 2000 কোটি টাকা ব্যয় করেছেন । সেই তথ্য আপনি দিন, কটা ভেন্টিলেটর এখনও পর্যন্ত ডেলিভার হয়েছে ? কোন রাজ্যের কোন হাসপাতালে ? সংগ্রহের পদ্ধতিও আপনি জানান ।

এরপরই উলঙ্গ রাজা কবিতার প্রসঙ্গ টেনে আনেন মহুয়া । বলেন, “আজকের ভারত হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনের গল্পের কথা মনে করিয়ে দেয় । যেখানে সম্রাটের গায়ে কোনও পোশাক ছিল না । তবে স্তাবকরা তা রাজাকে বলতে পারেনি ।” তৃণমূল সাংসদের কথায়, “বাংলার কবি তাঁর কবিতায় বলেছিলেন, এক ছোট্ট বালক একবার নগ্ন সম্রাটকে জিজ্ঞাসা করার সাহস দেখিয়েছিল, ‘রাজা, তোর কাপড় কোথায়?’ আর আজ আমিও সেই প্রশ্নই করছি, সম্রাট, আপনার কাপড়গুলি কোথায়?”

দিন কয়েক আগে তৃণমূল সাংসদের সেই আক্রমণাত্মক ভাষণ রীতিমতো ভাইরাল হয় সোশাল মিডিয়ায় । কেন্দ্রকে আক্রমণ করার জন্য়- কেন্দ্রীয় নীতির সমালোচনা করার জন্য- আন্দোলনের সুরকে সপ্তমে তোলার জন্য়ই মহুয়ার মতো প্রার্থীদের বেছে নিয়েছিলেন মমতা । প্রথম দিন থেকেই যেন মমতার স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছা পেয়ে বসেছিল । লড়াইটা প্রথম থেকেই নিয়েছিলেন মর্যাদার সঙ্গে । এক সময়ে বহুজাতিক সংস্থার উঁচু পদ ছেড়ে রাহুল গান্ধির ‘আম আদমি কা সিপাহি’ হন তিনি । পরে ‘দিদি’র দলে এসে গত বিধানসভা ভোটে জেতেন করিমপুরের মতো শক্ত আসন। এ বার তাঁকে আরও বড় মাঠে খেলতে ডেকেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। গোটা প্রচার পর্ব তুমুল দৌড়ে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে জয় হাসিল করেন সেই মহুয়া । লোকসভা তো বটেই, দিল্লির অলিন্দে প্রতিনিধিত্বের মতো আরও একটা ঝকঝকে মুখ পায় তৃণমূল । পাশের কেন্দ্র রানাঘাটে গেরুয়া ঝড়ে উড়ে যায় তৃণমূল । কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে অবশ্য তাদের বড় ভরসা ছিল প্রায় 37 শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট । বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা এই জেলায় BJP যত হিন্দুত্বের সুর চড়িয়েছিল, নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহেরা প্রচারে এসে যত জাতীয় নাগরিক পঞ্জির কথা তুলেছিলেন, স্থানীয় নানা ক্ষোভ-বিদ্বেষ সত্ত্বেও মুসলিম ভোট তত তৃণমূলের আঁচলে আশ্রয় খুঁজেছিল । তবে মহুয়ার লড়াইটা সহজ ছিল না । একে তো কৃষ্ণনগরে BJP-র একটা শক্তি বরাবরই ছিল, তার উপরে বাধা ছিল তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব । সব কিছুকে উড়িয়েই লোকসভায় পা রাখেন ইংরেজি শিক্ষিত ছিপছিপে মহিলাটি । আর প্রথম থেকেই শুরু তাঁর জাত চেনানোর লড়াই ।

গত বার রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে গিয়ে কেন্দ্রকে "মিথ্যাবাদী" বলে আক্রমণ করেছিলেন । আর বাদল অধিবেশনে বেছে নিলেন পিএম কেয়ারসকে । বেছেছিলেন কৃষি বিলকেও । মূলত কোরোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তার জন্য গঠিত হলেও পিএম কেয়ারস তহবিল নিয়ে গোড়া থেকে বিতর্ক রয়েছে । প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থাকতে কেন ফের নতুন করে পিএম কেয়ারসের মতো আরও একটি ফান্ড গঠন করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। তা ছাড়া, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলে এর টাকা হস্তান্তর করা বা এই তহবিলের সমস্ত তথ্য প্রকাশের জন্য বিরোধীরা বরাবরই দাবি করে আসছে। প্রথম দাবিটি শীর্ষ আদালত খারিজ করে দিলেও পিএম কেয়ারসের তথ্য প্রকাশ করা সংক্রান্ত মামলাটি এখনও বিচারাধীন । এই আবহে সম্প্রতি 2019-’20 আর্থিক বর্ষে পিএম কেয়ারস তহবিলে জমা পড়া অর্থ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইট অনুযায়ী, তহবিল গঠনের পর চলতি বছরের 27 মার্চ থেকে 31 মার্চ পর্যন্ত, মাত্র পাঁচ দিনে 3076 কোটি 62 হাজার টাকা জমা পড়েছে । এর মধ্যে শুধুমাত্র এ দেশের থেকে সংগ্রহ হয়েছে 3075 কোটি 85 হাজার টাকা । এবং বিদেশ থেকে ওই তহবিলে জমা পড়েছে 39 লাখ 67 হাজার টাকা । এ ছাড়াও জানানো হয়েছে, 2 লাখ 25 হাজার টাকা দিয়ে ওই তহবিল চালু করা হয়েছিল । প্রায় 35 লাখ টাকা এসেছে সুদ হিসাবে । তবে জমার খতিয়ান প্রকাশ করলেও, কারা এই তহবিলে অর্থদান করেছেন, তাঁদের নাম জানানো হয়নি। যা নিয়ে পিএম কেয়ারস তহবিল নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে । এবার সেই বিতর্কেই কেন্দ্রকেই নিশানা করেন মহুয়া ।

তিনি যে কতটা জনপ্রিয় তা ইতিমধ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছে ফোর্বস । ফোর্বসের দাবি, আগামী 10 বছরের গতিপ্রকৃতি যাঁরা নির্ধারণ করবেন, তাঁদের মধ্যে মহুয়া মৈত্র অন্যতম । তালিকায় অন্য আর এক নাম প্রশান্ত কিশোর । কিন্তু, তালিকায় মহুয়ার নাম প্রশান্ত কিশোরের অনেক আগেই। মহুয়া কবে রাজনীতিতে এলেন, কত দিন কংগ্রেসে ছিলেন, তার পরে কবে থেকে তৃণমূলে রয়েছেন, লোকসভায় নির্বাচিত হওয়ার পরে সংসদে দেওয়া প্রথম ভাষণেই কী ভাবে জ্বালাময়ী আক্রমণ শানিয়েছিলেন মোদি সরকারের বিরুদ্ধে— সবই উল্লেখ করেছিল ফোর্বস ।

মহুয়ার দ্বিতীয় ভাষণ যেন প্রমাণ করে দিল তিনি কেন ফোর্বসের নজর !

Last Updated : Sep 25, 2020, 10:17 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.