দিল্লি, ২ মার্চ : প্রত্যাঘাত। এয়ারস্ট্রাইক। সার্জিকাল স্ট্রাইক ২.০। বলা যেতে পারে আরও অনেক কিছু। পুলওয়ামা হামলার পর ভারত ফের দেখিয়ে দিয়েছে জওয়ানদের বলিদান ব্যর্থ হবে না। চোখে চোখ রেখে পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে এয়ারস্ট্রাইক চালানো হয়েছে। এর মাঝে অভিনন্দনকে হেপাজতে রেখেছিল পাকিস্তান। কূটনৈতিক চাপে (পাকিস্তান অবশ্য বলছে শান্তির বার্তা দিতে) তাঁকে ছাড়া হয়েছে। গতকাল ভারতে ফিরেছে অভিনন্দন। ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু। ১ মার্চে একটা অধ্যায়ের শেষ হল যেন। একনজরে দেখে নেওয়া যাক, পুলওয়ামা থেকে বালাকোট, ল্যাম ভ্যালি থেকে অভিনন্দন।
১৪ ফেব্রুয়ারি : পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় শহিদ হন ৪০ জন CRPF জওয়ান। পাকিস্তানের সাহায্যপ্রাপ্ত জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ হামলার দায় স্বীকার করে।
১৪ ফেব্রুয়ারি : পুলওয়ামা হামলার নিন্দা করে টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। লেখেন, "CRPF জওয়ানদের উপর এই ঘৃণ্য হামলার তীব্র নিন্দা করছি। জওয়ানদের বলিদান ব্যর্থ হবে না। জঙ্গিরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে। সারা দেশ শহিদ জওয়ানদের পরিবারের পাশে রয়েছে।"
১৬ ফেব্রুয়ারি : "ভারতের নীতি হল যে আমরা কাউকে বিরক্ত করি না। কিন্তু, নতুন ভারতকে যদি কেউ বিরক্ত করে তাহলে তাকে ছাড়া হবে না।" পুলওয়ামা হামলা প্রসঙ্গে বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
১৭ ফেব্রুয়ারি : বিহারের বারাউনিতে মেট্রো রেল প্রোজেক্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বলেন, "দেশবাসীর অন্তরে যে আগুন জ্বলছে, তা আমার হৃদয়েও জ্বলছে।" পুলওয়ামা হামলা প্রসঙ্গে বিহারের বারাউনিতে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
১৮ ফেব্রুয়ারি : নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে খতম পুলওয়ামা হামলার মাস্টারমাইন্ড আবদুল রাশিদ গাজ়ি ।
১৯ ফেব্রুয়ারি : পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার পর একাধিকবার নাম না করে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ভারত। তা নিয়ে মুখ খোলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বলেন, "কাশ্মীর ইশুতে ভারত হামলা চালালে জবাবি হামলায় পিছপা হবে না পাকিস্তান।"
২৪ ফেব্রুয়ারি : "শান্তির একটি সুযোগ দিন। (পুলওয়ামা হামলায়) পর্যাপ্ত প্রমাণ পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে একথা লেখেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
২৫ ফেব্রুয়ারি : শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে দিল্লিতে ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
২৬ ফেব্রুয়ারি : প্রত্যাঘাত ! মঙ্গলবার ভোররাতে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের মূল ভূ-খণ্ডে অবস্থিত বালাকোটে জইশের তিনটি ট্রেনিং ক্যাম্পে অভিযান চালায় ভারতীয় বায়ুসেনার ১২টি মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান।
২৭ ফেব্রুয়ারি : সকাল ১১টা- ভারতের আকাশসীমা লঙ্ঘন পাকিস্তান বায়ুসেনার ২৪টি বিমানের। তাতে ছিল ৮টি F-16 যুদ্ধবিমান। ভারতীয় বায়ুসেনার MiG-২১ বাইসন, সুখোই-৩০MKI ও মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান পালটা ধাওয়া করে। একটি বিমানকে গুলি করে নামানো হয়।
দুপুর ৩টে ৩০ মিনিট - ভারতীয় বায়ুসেনার একটি MiG-২১ যুদ্ধবিমান ও তার পাইলটের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পাকিস্তানের দাবি, তাদের হেপাজতে রয়েছেন পাইলট (উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান)। একটি বিবৃতি জারি করে ভারতের বিদেশমন্ত্রকের তরফে একথা জানানো হয়।
বিকেল ৫টা - তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান ভারতীয় আকাশসীমা লঙ্ঘনের পর দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পর্যালোচনা করেন।
সন্ধ্যা ৭টা - অভিনন্দন বর্তমানের একটি ভিডিয়ো সামনে আসে। বিদেশমন্ত্রকের তরফে বিবৃতিতে জানানো হয়, ভারতের আশা তাঁকে অক্ষত অবস্থায় তাড়াতাড়ি দেশে পাঠানো হবে। শুরু হয় কূটনৈতিক টানাপোড়েন।
২৮ ফেব্রুয়ারি : ভিয়েতনামের হ্যানয় থেকে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, "আমার মনে হয়, ভারত ও পাকিস্তান থেকে কিছু যুক্তিযুক্ত এবং আকর্ষণীয় খবর আসবে।" তারপরই অভিনন্দন বর্তমানের দেশে ফেরা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়।
বিকেল ৪টে : ১ মার্চ ছেড়ে দেওয়া হবে অভিনন্দন বর্তমানকে। ঘোষণা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের।
১ মার্চ : বিকেলেই উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে ভারতের হাতে হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু, দু'বার হস্তান্তরের সময় বদল করে পাকিস্তান। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান শেষে ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ৯টা ২১ মিনিটে দেশের মাটিতে পা রাখেন উইং কমান্ডার।