1947, 1965, 1999 সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এবং 1962 সালে চিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারতীয় সেনাকে সাহায্য করেছিল অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি । সেই অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির বিলগ্নিকরণের প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার । এরপর আশঙ্কা জেগেছে দেশের সেনাবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের উৎপাদন বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার দিকে এগোচ্ছে কেন্দ্র । অনেকের বক্তব্য, এ ধরনের পদক্ষেপ জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার পক্ষে বিপজ্জনক ।
অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড গঠন হয় 1775 সালে । অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের অধীনে দেশে 60 হাজার একর জমি রয়েছে । সারা দেশে এই প্রতিষ্ঠানে রয়েছে 41টি ফ্যাক্টরি, 9টি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, প্রায় 1 লাখ 60 হাজার অফিসার ও কর্মী । এই প্রতিষ্ঠান তৈরি করে নানা ধরনের অস্ত্র ও সরঞ্জাম, যা ব্যবহার করে আমাদের সেনারা দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত রাখেন ।
নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার দেশের অর্থনীতি বৃদ্ধির জন্য কয়েকটি সংশোধন প্রস্তাব করেছিলেন । যার মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ । নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় NDA সরকার সেই প্রস্তাব মতোই কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণের পথে হাঁটছে । সেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড । তা ছাড়া বিলগ্নিকরণ করা হবে এয়ার ইন্ডিয়ার মতো সংস্থারও ।
তবে বিলগ্নিকরণ কি সব সমস্যার সমাধান করবে ? CAG রিপোর্ট অনুযায়ী কারগিল যুদ্ধের সময় অপারেশন বিজয়ের জন্য ভারত সরকার বেসরকারি সংস্থাদের 2150 কোটি টাকার অস্ত্রের অর্ডার দিয়েছিল । তবে 1762.21 কোটি টাকার মূল্যের অস্ত্র অপারেশন বিজয় শেষ হওয়ার 6 মাস পর হাতে পায় সরকার । তা ছাড়া হাতে পাওয়া অস্ত্রের মধ্যে 260.55 কোটি টাকার অস্ত্র নিম্নমানের ছিল ।
2016 সালে নোটবাতিল করার পর সরকার এখন দেশের অর্থনীতিতে নগদ প্রবাহ বাড়াতে চাইছে । এর জেরে 40টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ করার প্রস্তাব দিয়েছে সরকার । এর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত হিন্দুস্তান অ্যারোনেটিকস লিমিটেডের বিলগ্নিকরণের পথে হেঁটেছে সরকার । তবে 4200 কোটি টাকার IPO-তে তেমন সাড়া পায়নি সরকার ।
একই ভাবে বিলগ্নিকরণের লক্ষ্য পূরণ করতে দেশের সব থেকে বড় বিমা সংস্থাকে 2014-18 আর্থিক বছরগুলিতে 48 হাজার কোটি টাকা দিয়ে দেশের বেশ কয়েকটি অলাভজনক সংস্থাকে কিনতে বাধ্য করেছিল সরকার । তবে এর প্রভাব সংস্থার উপর খুব খারাপ ছিল ।
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নরেন্দ্র মোদি গুজরাত স্টেট পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন গঠন করেন । 20 হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে গঠন করা হয়েছিল সেই সংস্থা । পরবর্তীতে কেন্দ্রের অধীনে থাকা ONGC সেই সংস্থাকে 8 হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে কিনতে বাধ্য হয় ।
জম্মু ও কাশ্মীর থেকে 370 ধারা ও 35A প্রতিবেদন প্রত্যাহারের পিছনে আসলে সরকারের অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে । এই পদক্ষেপের জেরে সেই রাজ্যে বেসরকারি সংস্থাগুলির 2.2 কোটি হেক্টর জমি কিনতে আর বাধা থাকল না । আর এই কারণেই সরকার একটি রাজ্যের স্বায়ত্বশাসন কেড়ে নেয় ।
উক্ত লেখাটি সোশালিস্ট পার্টির সহ সভাপতি সন্দীপ পান্ডের । মতামত লেখকের ব্যক্তিগত । উল্লিখিত মতামত ETV ভারতের নয় ।