হায়দরাবাদ : 1999 সালের মে ও জুলাই । রক্তাক্ত হয়েছিল সীমান্ত । কাশ্মীরের কার্গিল জেলায় নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর যুদ্ধ বেঁধেছিল ভারত আর পাকিস্তানের । সংঘর্ষের সূত্রপাত 1999 সালের ফেব্রুয়ারিতে । নিয়ন্ত্রণরেখার এপারে অর্থাৎ, ভারতের দিকে বেশ কিছু সেনা ছাউনি দখল করার জন্য সেনা পাঠিয়েছিল পাকিস্তান । পাকিস্তানের এলিট স্পেশাল সারভিসেস গ্রুপ ও নর্দার্ন লাইট ইনফ্যানট্রির চার থেকে সাতটি ব্যাটেলিয়নের জওয়ানরা ঘাঁটি গেড়েছিল ভারতীয় ভূখণ্ডে । নিজেরা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে এমন প্রায় 132 টি এলাকায় নিজেদের ঘাঁটি তৈরি করেছিল পাকিস্তান ।
লোয়ার মুশকো উপত্যতা, দ্রাসের মারপো লা এলাকা, কার্গিলের কাকসার, সিন্ধু নদের পূর্বপাড়ে বালটিক সেক্টর, চোরবাটলা সেক্টরের উপরের দিকে ও সিয়াচেনের দক্ষিণে তুরতুক সেক্টরে পাকিস্তানের সেনা ঢুকে গেছিল ।
তারপর কীভাবে ভারতীয় সেনা নিজেদের এলাকাগুলি পুনরুদ্ধার করেছিল ? পাকিস্তানের দখল করা এলাকাগুলি ফের নিজেদের কবজায় নিতে কী কী কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারতীয় সেনা? সেই ইতিহাসের পাতা থেকে আরও একবার ঘুরে আসা যাক ।
কী হয়েছিল দ্রাস সেক্টরে ?
মোড় ঘুরিয়েছিল টোলোলিং
টোলোলিংয়ের গুরুত্ব : দ্রাস সেক্টরের টোলোলিং দখল করে নিয়েছিল শত্রু শিবির । দ্রাস থেকে এই টোলোলিংয়ের দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার । শ্রীনগর-কার্গিল-লেহ সংযোগকারী সড়ক গেছে এই এলাকার উপর দিয়ে । দ্রাস সেক্টরের এই টোলোলিং-ই হল সেই জায়গা, যেখানে পাকিস্তানের সেনা সবথেকে ভিতর পর্যন্ত ঢুকে এসেছিল ।
প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে লড়াইয়ের পর টোলোলিং পুনরুদ্ধার করেছিল ভারতীয় সেনা । আর এখান থেকেই মোড় ঘুরে যায় ভারতের পক্ষে । প্রথম দিকে নাগা, গাড়োয়াল ও গ্রেনেডিয়ার ব্যাটেলিয়ন শত্রুপক্ষকে টোলোলিং থেকে হঠাতে ব্যর্থ হয়েছিল । এরপর আরও শক্তি বাড়ায় ভারতীয় সেনা । কামানের সংখ্যা বাড়ানো হয় । একটি নতুন ব্যাটেলিয়ন ও রাজস্থানের রাইফেলের দু'টি বাহিনী নিয়ে আসা হয় টোলোলিংয়ের জমি ফিরে পেতে ।
কী হয়েছিল যুদ্ধে?
- 12 জুন রাজপুতানা রাইফেলের দুটি কম্পানি নিজেদের সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে । সি কম্পানির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মেজর বিবেক গুপ্তা । ডি কম্পানির নেতৃত্বে ছিলেন মেজর মোহিত সাক্সেনা ।
- আরও দুটি কম্পানি একটি ফায়ারবেস তৈরি করেছিল । সি ও ডি কম্পানি অসফল হলে এই দুই কম্পানির কাজ ছিল, তাদের জায়গা নেওয়া ।
- ডি কম্পানি প্রথমে দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে এগোয় অবজেক্টিভ পয়েন্ট 4590-র দিকে ।
- খুব কাছ থেকে গুলির লড়াই হওয়ার পরেও কম্পানিটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল ।
- আর ঠিক এই সময়েই সি কম্পানি আক্রমণ শানায় ।
- কিন্তু টোলোলিং টপের কাছাকাছি গিয়ে থমকে যায় সি কম্পানিটি । এরপর মেজর বিবেক গুপ্তা নিজে পরিবর্ত কম্পানিকে নেতৃত্ব দিয়ে টোলোলিং টপ পর্যন্ত নিয়ে যান ।
- একাধিক জখম থাকা সত্বেও, শত্রুপক্ষকে সেখান থেকে শেষ না করা পর্যন্ত বীরের মতো নেতৃত্ব দেন বিবেক গুপ্তা ।
- এরপর কম্পানির দায়িত্ব নেন ক্যাপ্টেন মৃদুল কুমার সিং । আর্টিলারি ফরওয়ার্ড অবজ়ারভেশন অফিসার । বয়সও অনেকটাই কম । শত্রুপক্ষকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর যে পালটা আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তার জন্য জওয়ানদের প্রস্তুত করেন ।
- পাকিস্তানের মধ্যে তখন জ্বলছিল প্রতিহিংসার আগুন । এভাবে টোলোলিং টপ নিজেদের হাতছাড়া করে ফেলায় পাকিস্তান লড়াইয়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছিল । এরপর পাকিস্তানের দিক থেকে প্রতিআক্রমণও আসে । কিন্তু সি কম্পানি তা প্রতিহত করতে সফল হয় ।
- রাজপুতানা রাইফেলের দুই কম্পানির কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম বি রবীন্দ্রনাথ তখন মেজর পি আচার্যর নেতৃত্বে একটি এ কম্পানিকে পাঠান পয়েন্ট 4590-র দিকে ।
- দুই কম্পানি এত কাছাকাছি থাকা সত্বেও কামান আনা হয়েছিল । পাশাপাশি, টোলোলিংয়ের উত্তরের ঢাল থেকে শত্রু শিবিরকে নিশ্চিহ্ন করার দায়িত্বে ছিল বি কম্পানি ।
- অবশেষে 13 জুলাই রাজপুতানা রাইফেলের দুই কম্পানি মিলে টোলোলিং পুনরায় উদ্ধার করতে পেরেছিল ।
এই যুদ্ধে সুবেদার ভানওয়ার লাল, কম্পানি হাবিলদার মেজর যশবীর সিং, হাবিলদার সুলতান সিং, নারওয়ারিয়ে ও নায়েক দিগেন্দ্র সিং অতুলনীয় সাহসিকতার পরিচয় দেখিয়েছিলেন ।
এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন ক্যাপ্টেন এন কেনগুরুসে । তাঁর দায়িত্ব ছিল কমান্ডো বাহিনীকে নিয়ে হাম্প ও টোলোলিংয়ের মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা । পাশাপাশি আর নতুন করে যাতে শত্রুপক্ষের কোনও সেনা টোলোলিংয়ে ঢুকতে না পারে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও ছিল কেনগুরুসের উপর ।
দ্য টাইগার হিল
- আশেপাশের পাহাড়গুলির তুলনায় টাইগার হিল অনেকটাই উঁচু । তবে শ্রীনগর-কার্গিল-লেহ সংযোগকারী সড়কের থেকে মাত্র 10 কিলোমিটার দূরে এই টাইগার হিল । টাইগার হিলেও কবজা করেছিল পাকিস্তানের সেনা । ফলে শ্রীনগর-কার্গিল-লেহ সংযোগকারী সড়কের উপরেও বেশ নিয়ন্ত্রণ পেয়ে গেছিল তারা । ফলে টোলোলিং পুনরুদ্ধার করার পর সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল টাইগার হিলকে শত্রু মুক্ত করা ।
- দ্রাস সেক্টরের মধ্যে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ লড়াই ছিল টাইগার হিলে । টাইগার হিলের উপর থেকে খুব সহজেই শ্রীনগর-কার্গিল-লেহ সংযোগকারী সড়কে নজর রাখতে পারত শত্রুপক্ষ । ফলে খুব সহজেই সড়কের বিস্তীর্ণ এলাকায় কামানের গোলা বর্ষণ করার সুবিধা ছিল তাদের । 192 মাউনন্টেন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার এম পি এস বাজওয়া টাইগার হিল পুনরুদ্ধার করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন 18 গ্রেনেডিয়ার, 8 শিখ ও 2 নাগা ব্যাটেলিয়নের উপর । সঙ্গে ছিল কামান ।
- 3 জুলাই শত্রুশিবিরের উপর হামলা চালায় ভারতীয় জওয়ানরা । প্রায় 120 টি ফিল্ড ও মাঝারি বন্দুক, 122 mm মাল্টিব্যারেলড গ্র্যাড রকেট লঞ্চার ও মর্টার দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয় শত্রুঘাঁটি ।
- শুধু তাই নয়, 2 জুলাই ও 3 জুলাই আকাশপথেই হানা দেয় বায়ুসেনা । অভিযান চলাকালীন, বেশ কয়েক দফায় টাইগার হিলের শত্রুঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল বায়ুসেনা ।
- টাইগার হিলের দুটি পয়েন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ । প্রথমটি হল টাইগার হিল থেকে প্রায় 500 মিটার পশ্চিমে "ইন্ডিয়া গেট" ও অন্যটি হল "হেলমেট" ।
- পাকিস্তানের 12 নম্বর নর্দার্ন লাইট ইনফ্যানট্রির একটি কম্পানি সেখানে অবশিষ্ট ছিল ।
- 3 জুলাই 18 গ্রেনেডিয়ার খারাপ আবহাওয়া ও অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে চারিদিক থেকে হামলা চালায় অবশিষ্ট পাকিস্তানের সেনার উপর । পাশাপাশি কামান ও মর্টার দিয়েও হামলা চালানো হয়েছিল ।
- 4 জুলাই গভীর রাত 1 টা 30 মিনিটে টাঙ নামে একটি জায়গা নিজেদের দখলে নেয় ভারতীয় সেনা ।
- ডি কম্পানিকে পূর্ব দিক থেকে নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন নিমবালকর । তাঁর এই অতর্কিত হানায় হকচকিয়ে যায় বিপক্ষ শিবির । কিছু গুলির লড়াইয়ের পর টাইগার হিলের পূর্ব দিক শত্রুমুক্ত করেন তিনি । টাইগার হিল টপ থেকে মাত্র 100 মিটারের মধ্যেই এই এলাকা ।
- লেফটেন্যান্ট বলওয়াল সিংয়ের নেতৃত্বে ঘাতক কমান্ডো ও সি কম্পানিও চমকে দেয় শত্রুদের । এই এলাকাটি ছিল টপ থেকে মাত্র 30 মিটার দূরে ।
- 4 জুলাই ভোর চারটের সময় সচিন নিমবালকর ও বলওয়ান সিং তাঁদের জওয়ানদের নিয়ে কামান দিয়ে হামলা চালান শত্রুঘাঁটিতে । কিছুসময় খালি হাতে লড়াইয়ের পর ওই এলাকা নিজেদের দখলে নিয়েছিল ভারতীয় সেনা ।
- যদিও 18 নম্বর গ্রেনেডিয়ারস টপ নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছিল, তবে তাঁদের যোগাযোগ করাটা মোটেও সহজ ছিল না । ভারতীয় জওয়ানদের হামলার প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটিয়ে ওঠার পরই প্রত্যাঘাত শুরু করে পাকিস্তানের সেনা ।
- 8 নম্বর মাউন্টেন ডিভিশন এটা বুঝতে পারে, যতক্ষণ পর্যন্ত না পশ্চিমভাগের সঙ্গে যোগাযোগ ঠিকভাবে করা যাচ্ছে, ততক্ষণ পাকিস্তানের সেনাকে পুরোপুরি হটানো যাবে না ।
- হেলমেট ও ইন্ডিয়া গেট, দুটি জায়গায় পশ্চিমদিকের ঢালে । মহিন্দর পুরি ও এম পি এস বাজওয়া 8 নম্বর শিখ ব্যাটেলিয়নকে নির্দেশ দেন হেলমেট ও ইন্ডিয়া গেটের দখল নেওয়ার জন্য ।
- টাইগার হিলের এই পশ্চিমের ঢালটি 1.5 কিলোমিটার প্রশস্ত । এই এলাকাটি অনেকটা খাড়া । আর এখান দিয়েই 8 নম্বর শিখ ব্যাটেলিয়ন এগোতে থাকে ।
- মেজর রবীন্দ্র সিং ও লেফটেন্যান্ট আর কে শেরাওয়াতের নেতৃত্বে চার JCO ও 52 জন জওয়ান মিলে ইন্ডিয়া গেটের দখল নেয় ।
- লড়াইয়ে অনেকে প্রাণ হারালেও, শেষ পর্যন্ত 5 জুলাই হেলমেট শত্রুমুক্ত করে ভারতীয় সেনা ।
- এরপর 8 জুলাই পুরো টাইগারহিল নিজেদের দখলে নেয় ভারতীয় সেনা জওয়ানরা । 18 নম্বর গ্রেনেডিয়ার টাইগার হিলে ভারতের পতাকা উত্তোলন করে ।
এরিয়া থ্রি পিম্পলস
থ্রি পিম্পলস হল গা ঘেষাঘেষি করে থাকা তিনটি পাহাড়ের চূড়া । টোলোলিংয়ের পশ্চিমে মারপোলার পয়েন্ট 5100-র খুব কাছেই এই এলাকা । ভৌগোলিকভাবে থ্রি পিম্পলস থেকে খুব সহজেই জাতীয় সড়ক, দ্রাস গ্রাম ও স্যান্ডো নালার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় । এখানে সবথেকে উল্লেখ্য নল, লোন হিল ও থ্রি পিম্পলস ।
দ্য অপারেশনস
- হামলার ঘণ্টা দুয়েক আগে থেকে 120টি বন্দুক, মর্টার ও রকেট লঞ্চার নিয়ে 20 নম্বর আর্টিলারি ফায়ার ইউনিট শত্রুঘাঁটি লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করতে থাকে ।
- মেজর মোহিত সাক্সেনার নেতৃত্বে ডি কম্পানি ও মেজর পি আচারিয়ার নেতৃত্বে এ কম্পানি হানা চালায় । দু'জনেই মারাত্মকভাবে জখম হয়েছিলেন । কিন্তু তারপরেও দলকে নেতৃত্ব দিয়ে যান । শেষ পর্যন্ত নিজেদের জীবনের বিনিময়ে ওই এলাকা শত্রুমুক্ত করেছিলেন তাঁরা ।
- মেজর শহিদ হওয়ার পরেও এ কম্পানির বাকি জওয়ানরা পিছিয়ে আসেনি । শত্রুপক্ষ প্রতিআক্রমণের চেষ্টা করলেও আমাদের জওয়ানরা শুধুমাত্র মাঝারি আকারের বন্দুক দিয়েই তা প্রতিহত করেছিলেন ।
- এরপর নলে এসে বি কম্পানির সঙ্গে মিলিত হয় এ কম্পানি । এখান থেকে থ্রি পিম্পলসের উপর নজর রাখাটা খুবই সহজ কাজ ছিল ভারতীয় জওয়ানদের জন্য । এখান থেকেই লাগাতার গোলাবর্ষণের মাধ্যমে শত্রুঘাঁটিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন জওয়ানরা ।
- এরপরের লক্ষ্য ছিল লোন হিল । লোন হিলে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল শত্রুপক্ষের MMG ।
- রাতের অন্ধকারে শুধুমাত্র চাঁদের আলোয় এই অপারেশন সফল করাটা মোটেও সহজ কাজ ছিল না ।
- শত্রুপক্ষের নজর এড়িয়ে মোহিত সাক্সেনা তাঁর কম্পানিকে পাহাড়ি চোরাপথ দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যান । তিনি দক্ষিণ দিক থেকে শত্রুঘাঁটির উপর হামলা চালান । আর এর জন্য তাঁকে 200 ফুটেরও বেশি উঁচু একটি খাড়া এলাকা পার করতে হত । তাঁর এই সাহসী নেতৃত্বে লোন হিল নিজেদের দখলে নেয় ভারতীয় সেনা । তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাইফেলম্যান জয় রাম ও ক্যাপ্টেন এন কেনগুরুসে ।
- 29 জুন থ্রি পিম্পলস শত্রুমুক্ত করে ভারতীয় সেনা ।
পয়েন্ট 5140 শত্রুমুক্ত করা
- পয়েন্ট 5140 আয়তনের দিক থেকে বেশ বড় ছিল । তাই ওই এলাকা শত্রুমুক্ত করতে ভারতীয় সেনা বিভিন্ন দিক থেকে হামলা করার পরিকল্পনা নেয় ।
- পূর্ব দিক থেকে হামলা চালায় 18 নম্বর গাড়োয়াল রাইফেলের জওয়ানরা । দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে হামলা চালায় 1 নম্বর নাগা । আর দক্ষিণ দিক থেকে হামলা চালায় 13 নম্বর জম্মু ও কাশ্মীর রাইফেলস ।
- 19 জুন 13 নম্বর জম্মু ও কাশ্মীর রাইফেলস-এর বি কম্পানি ও ডি কম্পানি দক্ষিণের পাহাড়ি ঢাল দিয়ে পয়েন্ট 5140-র দিকে এগোতে থাকে । আর অতর্কিত হানায় চমকে দেয় শত্রুশিবিরকে । ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা অসাধারণভাবে লড়েছিলেন । পাকিস্তানের চার জওয়ানকে খালি হাতে মেরেছিলেন তিনি । এরপর তাঁর সাফল্যের ইঙ্গিত হিসেবে তিনি তাঁর কমান্ডিং অফিসারকে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, "ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর" ।
- ক্যাপ্টেন এস এস জামওয়ালের নেতৃত্বে পয়েন্ট 5140-র শত্রুঘাঁটিতে শেষ হামলাটি আসে । 20 জুনের সকালের মধ্যে সবকটি শত্রুঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়া হয় ।
মাশকো উপত্যকা
দ্য মাশকো ভ্যালি - পাকিস্তানের সেনা মাশকো উপত্যকায় যে'কটি জায়গার উপর কবজা করেছিল, তার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল পয়েন্ট 4875 ।
পয়েন্ট 4875
পয়েন্ট 4875 চূড়ার গুরুত্ব - এই পয়েন্টের থেকে মোঘলপুরা থেকে দ্রাস পর্যন্ত প্রায় 30 কিলোমিটারের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জাতীয় সড়কের উপর নজর রাখা যায় । আর এখান থেকে সহজেই মাতায়িন থেকে দ্রাস পর্যন্ত এলাকার মধ্যে যে কোনও গাড়ির উপর গোলাবর্ষণ পারত পাকিস্তানের সেনা ।
দ্য অপারেশন
- দায়িত্ব দেওয়া হয়ছিল 13 নম্বর জম্মু ও কাশ্মীর রাইফেলসকে । 4 জুলাই গোলাবর্ষণের মাধ্যমে ফ্ল্যাট টপ এলাকায় হামলা শুরু করে ভারতীয় সেনা । পয়েন্ট 4875 সংলগ্ন ওই এলাকাটিও ছিল পাকিস্তানের সেনা অধ্যুষিত । জায়গাটি ছিল 4875 পয়েন্টের পূর্ব দিকের ঢালে । মেজর গুরপ্রীত সিংয়ের নেতৃত্বে সি কম্পানি পশ্চিম দিকের ঢাল দিয়ে এগোচ্ছিলেন । গোলাবর্ষণ থামার পর, ফায়ার বেস থেকে ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার নেতৃত্বে MMGS ট্রেসার ফায়ার করতে থাকে । যে কম্পানিগুলি পয়েন্ট 4875-এর দিকে এগোচ্ছিল, তাঁদের সঠিক দিকনির্দেশ করতেই এই ট্রেসার ফায়ারিং করা হচ্ছিল ।
- দুইদিক থেকে হামলা চালানোয় শত্রুদের নজরও দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় । কিন্তু যখন আমাদের জওয়ানরা খুব কাছাকাছি পৌঁছে যায়, তখন পয়েন্ট 4875 থেকে ছোটো আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়তে শুরু করে বিপক্ষ শিবির । বেশ কয়েকদফায় চেষ্টা করার পরেও আর এগোতে পারছিল না ভারতীয় সেনা ।
- এরপর যখন দিনের আলো ফোটে, জওয়ানরা তখন পাহাড়ের এক খোলা জায়গায় আটকে ছিল ।
- তখন এ কম্পানি ও সি কম্পানির ফরওয়ার্ড অবজ়ারভেশন অফিসার ক্যাপ্টেন বি এস রাওয়াত ও ক্যাপ্টেন গনেশ ভাট পয়েন্ট 4875-এর দিকে তাক করে গোলাবর্ষণ শুরু করেন । ফ্যাগট মিজ়াইল দিয়ে পয়েন্ট 4875-এর বেশ কয়েকটি শত্রুঘাঁটি নষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিলেন তাঁরা । এরপর আরও একবার হামলার পর 5 জুলাই বিকেলের মধ্যে ফ্ল্যাট টপ নিজেদের দখলে নেন ভারতীয় সেনার জওয়ানরা ।
- রাইফেলম্যান সঞ্জয় কুমার ও শ্যাম সিং খুব কাছে থেকে লড়াইয়ে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান । পরের দিন পাকিস্তানের সেনা গোলাবর্ষণ করে ভারতীয় জওয়ানদের উপর । ফলে মেজর বিকাশ বহড়া ও ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা আরও বাড়তি জওয়ান পাঠান ওই এলাকায় । পয়েন্ট 4875-এর খুব কাছে গুলির লড়াই চলতে থাকে দুই পক্ষের ।
- এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, পয়েন্ট 4875-এর ঠিক উত্তরে ওই শত্রুঘাঁটির দখল নিতেই হবে । এই কাজ সফল করার দায়িত্ব নেন ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা । মিশনের সাফল্যের জন্য নিজের আত্মবলিদান দিয়েছিলেন ।
- দীর্ঘ লড়াইয়ের শেষে চারিদিক থেকে অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা জওয়ানদের দেহ পাওয়া গেছিল ।
- 13 নম্বর জম্মু ও কাশ্মীর রাইফেলসকে সেখানে রেখে দেওয়া হয় 2 নম্বর নাগা ও 17 নম্বর জাট রাইফেলসকে সাহায্য করার জন্য ।
জ়ুলু
পাকিস্তান যখন চুক্তি মতো নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে নিজেদের সেনা ফিরিয়ে না নেয়, তখন ভারতীয় সেনা জওয়ানরা নিয়ন্ত্রণরেখার এপারে পাকিস্তানের ঘাঁটিগুলি ধ্বংস করতে অভিযান শুরু করে ।
জ়ুলুর গুরুত্ব
- মাশকো সেক্টরেই অবস্থিত জ়ুলু । জ়ুলুর মূল পয়েন্টগুলি ছিল ট্রাই-জাংশন, জ়ুলু রিজ লাইন ও স্যান্ডো টপ । নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এই এলাকাগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
- এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন 192 মাউন্টেন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার এম পি এস বাজওয়া । তিনি দুই দফায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন । প্রথম দফায় 3/3 গোর্খা রাইফেলসকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ট্রাই-জাংশনের উপর কবজা করার ।
- 22 জুলাই অভিযান শুরু হয় । ক্যাপ্টেন হেমঙ্গ গুরুংয়ের নেতৃত্বে সি কম্পানি অভিযান চালায় । লড়াই চলাকালীন তিনি গুরুতরভাবে জখম হন । এরপর বাকি কাজ শেষ করেন সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মেজর এস সাইনি ।
- লড়াইয়ে অসামান্য বাহাদুরির পরিচয় দেন ক্যাপ্টেন অমিত আউল ( 56 মাউন্টেন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার এ এন আউলের ছেলে ) । এছাড়াও রাইফেলম্যান ধন বাহাদুর ও দিনেশ গুরুং অসাধারণ বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন ।
- মেজর পল্লব মিশ্রের নেতৃত্বে ডি কম্পানি এবার আক্রমণ শানায় জ়ুলুতে শত্রু ঘাঁটির দিকে । সি কম্পানির ফরওয়ার্ড অবজ়ারভেশন অফিসার ক্যাপ্টেন নন্দন সিং মিশ্রও ট্রাই জাংশন শত্রুমুক্ত করার পর ডি কম্পানির সঙ্গে যুক্ত হন ।
- একনাগাড়ে গোলাবর্ষণের পর 24 জুলাই জওয়ানরা ওই এলাকা শত্রুমুক্ত করতে সক্ষম হয় ।
- এরপর দ্বিতীয় দফায় 9 নম্বর প্যারা স্পেশাল ফোর্সের জওয়ানরা হামলা শুরু করে ।
- 3/3 গোর্খা রাইফেলসের থেকে বাড়তি জওয়ানকদের সাহায্যের জন্য পাঠানো হয় 9 নম্বর প্যারা স্পেশাল ফোর্সের কাছে । মিলিত এই বাহিনী জ়ুলু পুরোপুরি শত্রুমুক্ত করতে সক্ষম হয় । লড়াইয়ে অসামান্য বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন সুধীর কুমার ও নায়েক কুশল যাদব ।
বালটিক সেক্টর
এখানে পাকিস্তানের সেনা প্রায় 8-10 কিলোমিটার পর্যন্ত ঢুকে এসেছিল । এখানে জুবার- কুকারথাং- খালুবার ও পয়েন্ট 5203- চুরুবার পো সবক'টি এলাকার উচ্চতা 15 হাজার ফুট থেকে 16 হাজার 800 ফুটের মধ্যে ।
দ্য খালুবার
খালুবারের গুরুত্ব
- পদ্মা গো-খালুবার রিজলাইনের পূর্বে রয়েছে জাঙ্ক লুঙ্গপা, পশ্চিমে গ্র্যাগরিও নালা, দক্ষিণ পশ্চিমে কুকারথাং ও উত্তরপশ্চিমে শত্রুপক্ষের লজিসটিক বেস মুনথো ধালো ।
- বালটিক সেক্টরে শত্রুপক্ষের মূল প্রতিরক্ষা শিবির ছিল খালুবার রিজ এলাকায় ।
দ্য অপারেশনস
- 30 জুন, 22 নম্বর গ্রেনেডিয়ার প্রাথমিক হামলা শুরু করে খালুবার এলাকায় । বিকাশ ব্যাটেলিয়নের (তিব্বতীয় বংশোদ্ভুদের নিয়ে তৈরি বিশেষ বাহিনী) তিন পর্বতারোহী এই লড়াইয়ে 22 নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ানদের একটি খাড়া পাহাড়ি ঢাল চড়তে সাহায্য করেছিল । পয়েন্ট 5287-এর দক্ষিণে খালুবার রিজলাইন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল আমাদের জওয়ানদের । তবে শেষ পর্যন্ত মেজর অজিত সিং তাঁর কম্পানিকে নিয়ে সব প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে চূড়ায় পৌঁছাতে পেরেছিলেন । এর কিছু সময়ের মধ্যেই রিজ়ার্ভ ব্যাটেলিয়নের জওয়ানরা গ্রেনেডিয়ারদের সঙ্গে যুক্ত হন ।
- 9 মে 1/11 গোর্খা রাইফেলসের ব্যাটেলিয়ন প্রাথমিক অভিযান চালানোর জন্য বালটিক সেক্টরে পাঠানো হয় । জুনের শেষের দিকে খালুবার রিজের পশ্চিমে জুবার ও চুড়ুবার সিসপো এলাকায় শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অনেকটাই দুর্বল করে দিয়েছিল ভারতীয় সেনা । 2 জুলাই পয়েন্ট 4812-এর নীচের দিকে ইয়ারডরের একটি ফরওয়ার্ড অ্যাসেম্বলি এলাকায় পৌঁছায় ব্যাটেলিয়নটি । একদিনের মধ্যেই আক্রমণের কৌশল তৈরি করে নেওয়া হয় । এরমধ্যে ব্রিগেডের ফিল্ড আর্টিলারি, বোফর্স ও 130 mm-এর শক্তিশালী শেল পাকিস্তানের ঘাঁটির বেশ কিছু এলাকা ধ্বংস করে দেওয়া হয় । যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সাপ্লাই লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় । প্রায় সাত ঘণ্টা পাহাড়ি চড়াইয়ের পর গোর্খা রাইফেলসের জওয়ানরা খালুবার রিজে পৌঁছায় । লড়াইয়ের এই পর্যায় অনেক ভারতীয় জওয়ানের বীরত্বের সাক্ষী ছিল ।
- এদিকে লেফটেন্যান্ট মনোজ কুমার পাণ্ডে ও তাঁর জওয়ানরা খালুবারের দক্ষিণের বাঙ্কারগুলির দখল নেন । এরপর খালুবারও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন জওয়ানরা ।
- কমান্ডিং অফিসার কর্নেল ললিত রাই এরপর 22 নম্বর গ্রেনেডিয়ারের অজিত সিংয়ের সঙ্গে একসঙ্গে লড়াই চালাতে থাকেন । ললিত রাইয়ের হাঁটু গুরুতর জখম ছিল । কিন্তু এরপরও টানা তিন দিন ধরে তিনি তাঁর জওয়ানদের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়ে যান ।
- এছাড়াও নায়েক জ্ঞানেন্দ্র কুমার রাই ও হাবিলদার ভীম বাহাদুর দেওয়ানও অসামান্য সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন লড়াইয়ে । এরপর 6 জুলাই জওয়ানরা খালুবারকে শত্রুমুক্ত করেন । খালুবার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ব্যাটেলিয়নটি দক্ষিণে 12 নম্বর জম্মু ও কাশ্মীর রাইফেলের লাইট ইনফ্যানট্রির সঙ্গে যোগ দেয় ।
- এই লড়াইয়ে শত্রুপক্ষের অনেক জওয়ান মারা যায় । অ্যামেরিকার তৈরি স্টিংগার মিজ়াইলসহ অনেক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয় ।
পদ্মা গো
খালুবার- পয়েন্ট 5287 কমপ্লেক্সের উত্তরে পদ্মা গো রিজে রয়েছে স্ট্যাঙ্গবা, পয়েন্ট 5000 ও ডগ হিল ।
এই এলাকার গুরুত্ব - এই এলাকা থেকে পাকিস্তানের সেনাঘাঁটি ধ্বংস করাটা অত্যন্ত জরুরি ছিল, যাতে খালুবারের পয়েন্ট 5287 কমপ্লেক্সে অভিযান চালাতে অসুবিধা না হয় ।
- 30 জুন লাদাখ স্কাউটের একটি বাহিনী অভিযান চালায় পয়েন্ট 5000-এ । খাড়া পাহাড়ি ঢাল, কোমর সমান উঁচু তুষারের স্তুপের প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে হয়েছিল অভিযানটি সফল করতে ।
- তবে পরের দিকে টানা গোলাবর্ষণ ও মর্টারের হামলায় অনেকটাই সহজ হয়েছিল পদ্মা গো দখল করার জন্য ।
- 5 ও 6 জুলাই ডগ হিল নিজেদের দখলে নেয় ভারতীয় সেনা । অনেক প্রতিকূলতা সত্বেও সফল হয়েছিল জওয়ানরা ।
- নায়েক সুবেদার তাশি ছেপাল এই লড়াইয়ে অসাধারণ বীরত্ব দেখিয়েছিলেন ।
- মেজর জন লেউইস ও ক্যাপ্টেন এন কে বিষ্ণইয়ের নেতৃত্বে দু'টি বাহিনী পদ্মা গো -তে অভিযান চালিয়ছিল । 9 জুলাই পদ্মা গো পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হয় । এরপর লাদাখ স্কাউট নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে পয়েন্ট 5229-এর দিকে চলে যায় ।
- খালুবারের পয়েন্ট 4812, পদ্মা গোয়ের পয়েন্ট 5287 হাতছাড়া হওয়ায় বালটিক সেক্টরের পূর্বদিকে শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড ভেঙে গেছিল ।
জুবার, থারু ও কুকারথাং
- পয়েন্ট 4812- খালুবার, পয়েন্ট 5287- পদ্মা গো উদ্ধার করার পর শত্রুপক্ষের আসা যাওয়ার পথটা বেশ চিন্তার হয়ে দাঁড়িয়েছিল ।
- 70 ইনফ্যানট্রি ব্রিগেডকে দায়িত্ব দেওয়া হয় জুবার, থারু ও কুকারথাং শত্রুমুক্ত করার জন্য ।
- 1 নম্বর বিহার রেজিমেন্টকে দায়িত্ব দেওয়া হয় জুবারের জন্য । জুবার ও থারুতে গোলাবর্ষণ করতে থাকে ভারতীয় সেনা । 122 mm গ্র্যাড মালটি ব্যারেল রকেট লঞ্চার দিয়ে শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলা হয় ।
- 29 জুন, 1 নম্বর বিহার রেজিমেন্ট হামলা শুরু করেছিল । প্রথম পর্যায়ে পরিকল্পনামাফিকই হামলা করা হয় । হামলায় 30 জুন জুবার অবজ়ারভেশন পোস্টে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় পাকিস্তানের সেনা ।
- অভিযানে পাকিস্তান সেনার অনেক জওয়ান মারা যায় । এরপর প্রতিআক্রমণও করেছিল তারা ।
- জুবার অবজ়ারভেশন পোস্টের উত্তরেই জুবার টপ । যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল এই এলাকা পুনরুদ্ধার করতে । টানা পাঁচদিন ধরে লড়াই চলেছিল । 1 নম্বর বিহারের জওয়ানরা আর্টিলারি ও ইনফ্যানট্রি মোটর দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল শত্রুপক্ষের অস্ত্রঘাঁটি । এতে অনেকটাই ঘাবড়ে গেছিল জুবার টপের পাকিস্তানের জওয়ানরা । এরপর থেকেই এলাকা থেকে পালাতে শুরু করে তারা । 6 জুলাই রাতে ফের আক্রমণ করা হয় । গোলাবর্ষণ ও গুলির লড়াইকে ঢাল বানিয়ে মেজর কে পি আর হরির নেতৃত্ব আক্রমণ করা হয় । শত্রুপক্ষের নজর এড়িয়ে পাকিস্তানের দখল করা এলাকার 50 মিটারের মধ্যে ঢুকে পড়েন জওয়ানরা । 7 জুলাই জুবার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন তাঁরা ।
- এরপর 9 জুলাই বিহার রেজিমেন্ট থারু (পয়েন্ট 5103) শত্রুমুক্ত করে । এরজন্য 15 হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতায় উঠতে হয়েছিল জওয়ানদের । শত্রুমুক্ত করার পর ব্যাটেলিয়নটি কুকারথাং রিজলাইনে 1/11 গোর্খা রাইফেলসের সঙ্গে যুক্ত হয় । কুকারথাং শত্রুমুক্ত করার জন্য থারু একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ।
কুকারথাং
- 8 জুলাই 1/11 গোর্খা রাইফেলসের জওয়ানরা কুকারথাং-এ আক্রমণ শুরু করে । টানা গোলাবর্ষণ ও মর্টার হামলা করা হয়েছিল শত্রুশিবিরের উপর ।
- 8 জুলাই এ কম্পানি পয়েন্ট 4821 নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় । পাকিস্তানের সেনার গোলাবর্ষণ ও স্বয়ংক্রিয় গুলি চালানোর পরেও ডি কম্পানি রিং কনটোর নিজেদের দখলে নিতে সক্ষম হয় । এই দু'টি শত্রুঘাঁটিই কুকারথাং টপের পথে পড়ে ।
- এরপর 9 জুলাই কুকারথাং পুরোপুরি শত্রুমুক্ত করে ভারতীয় সেনা ।