দিল্লি, 21 সেপ্টেম্বর : হাজার বিরোধিতার মধ্যেও গতকাল রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে কেন্দ্রের প্রস্তাবিত কৃষি বিলগুলি । কাজে আসেনি ডেরেক ও'ব্রায়েনের ওয়েলে নেমে প্রতিবাদ । নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কৃষিপণ্য লেনদেন ও বানিজ্য উন্নয়ন বিল এবং মূল্য নির্ধারণে কৃষক সুরক্ষা ক্ষমতায়ন চুক্তি সংক্রান্ত বিলে রাজ্যসভার সবুজ সংকেত আদায় করে নিয়েছে কেন্দ্র । এরই মধ্যে আজ প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণে কৃষি বিলগুলিকে ঐতিহাসিক ও অতি আবশ্যিক বলে ব্যাখ্যা করলেন ।
বিহারে ন'টি জাতীয় সড়ক প্রকল্পের শিলান্যাসের অনুষ্ঠানে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । ওই ভিডিয়ো বার্তায় তিনি বলেন, "জুন মাস থেকে চালু হওয়া এই অর্ডিন্যান্সগুলির সুফল ইতিমধ্যেই পেতে শুরু করেছেন বেশ কিছু রাজ্যের কৃষকরা । " তাঁর কথায়, দেশের বিকাশের জন্য ঐতিহাসিক কৃষি সংক্রান্ত বিলগুলি অত্যন্ত জরুরি ।
এই কৃষি বিলগুলি নিয়ে বিগত কয়েক দিনে কম নাটকীয়তা হয়নি । লোকসভায় বিলগুলির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরসিমরত কউর বাদলের পদত্যাগ । রাজ্যসভায় ডেরেকের ওয়েলে নেমে প্রতিবাদ । বিরোধীদের থেকে বারবার বলা হচ্ছে, এই বিলগুলি "কৃষক বিরোধী" । প্রশ্ন উঠছে কৃষকরা ফসলের ন্যূনতম ন্যায্য় মূল্য পাবেন কি না সেই নিয়ে । বিরোধীরা বলছে, একবার এই বিল আইনে পরিণত হয়ে গেলে, ফসলের ন্যূনতম ন্যায্য মূল্য থেকে সরে যাবে সরকার । বদলে সেখানে আসবে আম্বানি, আদানির মতো বড় বড় বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি । কিন্তু বিরোধীদের এই সব দাবিকে আজ আবারও উড়িয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী ।
আরও পড়ুন : "অন্নদাতারা যেন অভুক্ত না থাকেন", বিল ফেরাতে রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ সুখবীরের
বিরোধীদের পালটা আক্রমণ করে তিনি বলেন, "কৃষকদের উপর থেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার ভয় পাচ্ছেন বিরোধীরা । মিথ্যা বলে ভুল বোঝানো হচ্ছে কৃষকদের ।" পাশাপাশি কৃষকরা যে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন না, সেই বিষয়েও আশ্বস্ত করেন । আবারও স্পষ্ট করে দেন, যে এই বিলগুলি কোনওভাবেই কৃষক বিরোধী নয় । তিনি আরও বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে এই বিল কৃষকদের আয় বাড়াতে অত্যন্ত সহায়ক হবে । এই বিল একবার আইনে পরিণত হয়ে গেলে দেশের যে কোনও প্রান্তে নিজেদের ফসল বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা । হিমঘরের সঙ্গে জড়িত আর্থিক ব্যবস্থাতেও উন্নতি আসবে ।”
তাঁর কথায়, অর্ডিন্য়ান্স চালু হওয়ার পর থেকে সরকারের কাছে যে তথ্য এসেছে তা থেকে স্পষ্ট, কৃষকরা অনেকক্ষেত্রেই উপকৃত হয়েছেন । মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও পশ্চিমবঙ্গে কৃষকরা যথেষ্ট পরিমাণে ডাল উৎপাদন করেছেন । গতবছরের তুলনায় 15-25 শতাংশ বেশি রোজগার হয়েছে এখানকার কৃষকদের ।
আরও পড়ুন : কৃষকদের "মৃত্যু পরোয়ানা"; রাজ্যসভায় সরব কংগ্রেস
এ-প্রসঙ্গে আজ পরোক্ষভাবে কংগ্রেসকে তুলোধোনা করতেও ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী । বলেন , এরাই সেইসব লোক যাঁরা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সংক্রান্ত স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ নিয়ে বছরের পর বছর বসে ছিলেন । তাঁদেরই আঁতে ঘা লাগছে বলে দাবি প্রধানমন্ত্রীর । প্রসঙ্গত, 2004 সালে UPA কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর আট সদস্যের একটি জাতীয় কমিশন তৈরি করা হয়েছিল, যাঁর কাজ কৃষি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা ।
এদিকে কৃষি বিলগুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ক্রমেই বাড়তে শুরু করেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে । পঞ্জাব, হরিয়ানা-সহ একাধিক রাজ্যে পথে নেমেছেন কৃষকরা । বাড়তে থাকা প্রতিবাদের জেরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন হরসিমরত কউর বাদল । NDA-তে BJP-র সবথেকে পুরানো জোটসঙ্গী শিরোমণি অকালি দল দ্বারস্থ হয়েছে রাষ্ট্রপতির । রামনাথ কোবিন্দের কাছে অকালি দলের প্রধান সুখবীর সিং বাদল আবেদন করেছেন, যেন এই বিলগুলি পুনরায় বিবেচনা করার জন্য রাজ্যসভায় ফেরত পাঠানো হয় । কিন্তু এতসবের মধ্যেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল কেন্দ্র । আজ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তা যেন আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল ।