দিল্লি, 2 মে : প্রতিটি মানুষের মানসিক শান্তি, সুখ ও বিবাহের অধিকার রয়েছে ৷ বিবাহ একতরফা সম্পর্ক হতে পারে না ৷ দম্পতির পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধ বিবাহের ক্ষেত্রে জরুরি ৷ দিল্লি হাইকোর্ট একটি বিবাহবিচ্ছেদের মামলার বিষয়ে এই প্রসঙ্গে একটি পর্যবেক্ষণ করেছে ৷ বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে এক পক্ষের নিষ্ঠুরতা কিছু ক্ষেত্রে দায়ি, একটি মামলার প্রেক্ষিতে বলা হয় এমনই ৷
এক ব্যক্তির আর্জি খারিজ করার সময় বিষয়টির নজরে আসে হাইকোর্টের ৷ সে তার স্ত্রীর উপর অত্যাচার চালাত এবং স্ত্রীকে একলা করে দিয়েছিল বলে অভিযোগ ৷ সেইসময় পরিবার আদালতে মহিলা বিচ্ছেদ চান ৷ মহিলার স্বামী যদিও তা ভিত্তিহীন বলে আদালতে আর্জি জানায় ৷ স্বামীর আবেদন খারিজ করে হাইকোর্ট ৷
বিচারপতি হিমা কোহলি ও আশা মেননের জাস্টিস বেঞ্চ বলে, বিষয়টি খুবই সংবেদনশীল ও ব্যক্তির স্বার্থপর আচরণেরই প্রমাণ ৷ বর্তমানে তাঁদের প্রাপ্তবয়স্কা মেয়ের সাক্ষ্য থেকে বিষয়টি পরিষ্কার যে, ওই ব্যক্তি শুধু নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে চেয়েছে ৷ সে সুবিধাবাদী ৷ ঘটনার পর আদালত জানায়, এই মামলা থেকে স্পষ্ট যে একপক্ষের জন্য বিচ্ছেদ কতটা মানসিকভাবে ক্ষতিকারক ৷
এরপর হাইকোর্টের বিচারকের বেঞ্চ জানায় , " প্রতিটি মানুষেরই মানসিক শান্তি, সুখের অধিকার আছে ৷ বিবাহ নিঃসন্দেহে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ৷ তবে এটি একতরফা সম্পর্ক হতে পারে না । বিবাহের উভয় পক্ষই সমান অংশীদার ও এরজন্য দরকার পারস্পরিক শ্রদ্ধা, কর্তব্য ও দায়িত্বভাগ করে নেওয়া ৷ স্নেহ, মানসিক বন্ধন, আর্থিক সহায়তা ও পরস্পরের মঙ্গল কামনা করা ৷ যদি সম্পর্কটি তিক্ততায় পরিণত হয়, তবে সেখানে কোনও পবিত্রতা থাকতে পারে না ৷ "
স্বামীর অভিযোগ, ওই মহিলা নিজে অন্যায় করেছেন ৷ তিনি ওই ব্যক্তির সংস্থা ছেড়ে দিয়েছিলেন ৷ বাকি সব দাবি ভিত্তিহীন ৷ বিচ্ছেদ চেয়ে নিজের ভুলের ফায়দা ওঠাতে চেয়েছিলেন মহিলা, দাবি তাঁর স্বামীর ৷ তার মত, মহিলার দাবি ছিল, দম্পতির মধ্যে আয় ও শিক্ষার পার্থক্য রয়েছে ৷ যদিও বিয়ের সময় স্বামীর যোগ্যতা সম্পর্কে জানতেন স্ত্রী। অথচ স্বামীর বক্তব্য, তাঁরা নাকি 20 বছর সুখী দাম্পত্য কাটিয়েছেন ৷
সব শুনে আদালত বলে, রেকর্ড অনুযায়ী স্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রমাণ করে তিনি মেয়ের কথা ভেবে পরবর্তীতে বিয়ে বাঁচাতে চেয়েছেন, মেয়ের পাশেও থেকেছেন সর্বতোভাবে ৷ তাঁদের মেয়ে সুইৎজারল্যান্ডে গবেষণা করছে, এটাও মায়েরই প্রচেষ্টায় ৷ মাস্টারের প্রোগ্রামের ও কাজের জন্য তাঁর বাবার 50 শতাংশ সাহায্য চেয়েছিল ৷ কিন্তু তা মেলেনি ৷ আদালতে ওঠে সে কথাও ৷ এরপর আদালত 2011 সালে ওই ব্যক্তি অর্থসাহায্য করতে না চেয়ে যে আপিল করেন, সেটিও উল্লেখ করা হয় ৷ 2011 সালের পরই যে মেয়েটি আরও বেশি সাফল্য পেয়েছে মায়েরই জন্য, সে কথাও বলে আদালত ৷
এরপর এই ব্যক্তি হাইকোর্টে পারিবারিক আদালতের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানায় ৷ হাইকোর্ট সূত্রে খবর , ওই মামলা অনুযায়ী 1992 সালে ওই দম্পতির বিয়ে হয় ৷ এরপর ওই দম্পতি বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আদালতে মামলা করে ৷ জানা যায়, স্বামীর নির্মম ব্যবহারের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য পারিবারিক আদালতে যোগাযোগ করা হয় । এরপর আবেদনটি 2019 সালের নভেম্বর মাসে পারিবারিক আদালতের দ্বারা অনুমোদিত হয় । এরপর বিবাহবিচ্ছেদের মামলার শুনানির সময় এই পর্যবেক্ষণের কথা বলে হাইকোর্ট ৷