ETV Bharat / bharat

কালোবাজারে সোনার মতো লাফিয়ে বাড়ছে রেমডেসিভিরের দাম

author img

By

Published : Jul 18, 2020, 6:37 PM IST

Updated : Jul 18, 2020, 7:08 PM IST

চিকিৎসা করাতে গিয়ে এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন দিল্লির এক ব্যবসায়ী ৷ কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যে কঠিন লড়াই চলছে, তার মধ্যে এই ঘটনা কর্তৃপক্ষের কাছে অবশ্যই চোখ খুলে দেওয়ার মতো ৷ অনুমোদিত বিক্রেতার কাছে নয়, রেমডেসিভির পাওয়া গিয়েছে কালোবাজারে ৷ আর এর দাম এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে মনে হচ্ছে যেন এটা সোনা ৷

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

কর্তৃপক্ষের একাংশের নজরদারির অভাবে ওষুধের ব্যবসায় যুক্ত লোভী ডিলারদের কাছে কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অন্যতম জীবনদায়ী ওষুধটি অর্থ উপার্জনের রাস্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ আপৎকালীন ব্যবহারের জন্য ওই ওষুধ ছাড়পত্র পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ৷ নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোরোনা আক্রান্ত এক রোগীর আত্মীয় ETV ভারতকে জানিয়েছেন যে, আমাদের হাসপাতাল থেকে রেমডেসিভিরের দু'টি বোতল জোগাড় করতে বলা হয় ৷ কিন্তু, দিল্লির দু'টি অনুমোদিত বিক্রেতার কাছে তা পাওয়া যায়নি ৷ বরং তা পাওয়া গিয়েছে কালোবাজারে ৷ আর এর দাম এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে মনে হচ্ছে যেন এটা সোনা ৷

এক কোরোনা আক্রান্ত আত্মীয়কে দিল্লির একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে (দেশের রাজধানীতে অবস্থিত কোরোনা কেয়ার সেন্টার হিসেবে পরিচিত) চিকিৎসা করাতে গিয়ে এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন দিল্লির এক ব্যবসায়ী ৷ কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যে কঠিন লড়াই চলছে, তার মধ্যে এই ঘটনা কর্তৃপক্ষের কাছে অবশ্যই চোখ খুলে দেওয়ার মতো ৷

কোরোনা সংক্রমণের জেরে দেশে এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন 26 হাজার 273 জন এবং সারা দেশে সংক্রমিত হয়েছেন 10 লাখ 38 হাজার 716 জন ৷ বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা 5 লাখ 47 হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে ৷ আর সংক্রমণ প্রায় 1.2 কোটিতে পৌঁছে গিয়েছে ৷

কোরোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার গত মাসে কয়েকটি ওষুধ অনুমোদন করেছে ৷ সিপলা, হেটেরো এবং মিলান রেমডেসিভির উৎপাদন করার এবং বিক্রি করার ছাড়পত্র পেয়েছে গিলেড সায়েন্সের থেকে লাইসেন্স নিয়ে ৷ অন্যদিকে, গ্লেনমার্ক ফ্যাভিপিরাভির তৈরির ও বিক্রির অনুমতি পেয়েছে ৷ তারা এই ওষুধ ফ্যাবিফ্লু নামে বিক্রি করছে ৷

রেমডেসিভির ছাড়পত্র পাওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়রা ৷ কারণ, এই ওষুধটিই এখনও পর্যন্ত SARS-Cov-2 ভাইরাসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছে ৷ কিন্তু এর ছাড়পত্র লোভী ওষুধ ডিলারদের কাছে লাভ করার সুযোগও এনে দিয়েছে ৷

কোরোনা রোগীর এক আত্মীয় ETV ভারতকে বলেছেন, "আমাদের রোগী যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, সেই হাসপাতালের একজন চিকিৎসক এই মাসের শুরুতে ফোন করেন ৷ তিনি জানান যে রোগীকে রেমডেসিভির দেওয়া প্রয়োজন ৷ তাঁরা আমাদের জানান যে ইতিমধ্যেই তাঁরা রোগীকে ওই ওষুধ দিয়েছেন ৷ কিন্তু তাঁদের কাছে ওই ওষুধ ঠিক মতো সরবরাহ করা হচ্ছে না ৷ তাই তাঁরা চাইছেন, দু’টো বোতল ওষুধ যাতে বাইরে থেকে কিনে দেওয়া হয় ৷ কারণ, তাঁরা জোগাড় করতে পারছেন না ৷"

তিনি জানান, হাসপাতাল থেকে ফোন পাওয়ার পর ওষুধের খোঁজ শুরু হয় ৷ দিল্লির দু’টো অনুমোদিত ডিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ৷ তাঁকে জানানো হয় যে রেমডেসিভির পেতে হলে রোগীর আধার কার্ড, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন এবং কোরোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট দিতে হবে ৷ প্রতিটি বোতলের দাম পড়বে চার হাজার 500 টাকা করে ৷

রোগীর ওই আত্মীয় নিজের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণণা করতে গিয়ে বলেন, "দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই দুইটি জায়গা থেকে জানানো হয় যে, তাদের কাছে ওষুধ নেই ৷ তারা ওষুধের সরবরাহের সমস্যায় ভুগছে ৷" ওই ব্যক্তির আত্মীয় তখন হাসপাতালের ভেন্টিলেটরে চিকিৎসাধীন ৷ তিনি বলেন, "যেহেতু এটা জীবন ও মৃত্যুর বিষয় ছিল, তাই আমরা আরও চেষ্টা করতে শুরু করি ৷ আমরা অন্য কয়েকটি ওষুধ বিক্রেতাকে অন্য রাস্তা বের করার অনুরোধ করি ৷ আমাদের কথা ছড়িয়ে দেওয়ার পর কয়েকজন এগিয়ে আসেন ৷ আর জানায় যে এই ওষুধ কালো বাজারে পাওয়া যাবে ৷"

তিনি ETV ভারতকে বলেন, "আমাদের বলা হয় যে, ওই ওষুধের দাম বোতল প্রতি 15 হাজার টাকা করে পড়বে ৷ যেদিন আমরা এটা কিনব বলে ঠিক করলাম, সেদিন ওষুধের দাম চাওয়া হল 35 হাজার টাকা প্রতি বোতল ৷ এর ঠিক আগের দিন ওই ওষুধের দাম বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল 27 হাজার টাকা প্রতি বোতল ৷ কালো বাজারে রেমডেসিভির দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে যে এটা সোনা ৷"

ওই আত্মীয় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের নাম উল্লেখ করতে চাননি ৷ কারণ, তাঁর রোগী এখনও ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷ তিনি ঠিক করেন যে, এই বিষয়টি জানানোর জন্য সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট-লোকাল সার্কেলকে ব্যবহার করবেন বলে তিনি ETV ভারতকে জানান ৷ কারণ, নিজের পরিচয় গোপন করে সেখানে অভিজ্ঞতা জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে ৷ তিনি আরও জানান যে, NCR অঞ্চলে জীবনদায়ী ওষুধের কালো বাজারির রমরমার বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷ যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক ৷

ওই আত্মীয় বলেন, "আমরা দক্ষিণ দিল্লি, পূর্ব দিল্লি ও গুরুগ্রামে খুঁজে দেখি ৷ তিনটি জায়গার কালো বাজারেই এই ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে ৷ অথচ দিল্লির দুই জন অনুমোদিত ডিলারের কাছে তা পাওয়া যাচ্ছে না ৷ এর থেকে তখন আমরা কালোবাজারির রমরমার বিষয়টি বুঝতে পারি ৷" দিল্লি-NCR-এ কালোবাজারির রমরমার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, "ওষুধের ব্যবসায়ী আমাদের বলেন, অন্তত দুই ঘণ্টা আগে তাঁদের জানাতে হবে ৷ তাহলে তারা ওষুধ সরবরাহ করে দেবে ৷"

কালোবাজারের ব্যবসায়ীরা গুণমান যাচাইয়ের জন্য MRP-এর উপর বিল দিতেও রাজি

ওই আত্মীয় বলেন, কালোবাজারের বিক্রেতারা প্রথমে বিল দিতে অস্বীকার করেছিল ৷ তবে MRP-এর উপর বিল দিতে তাঁরা রাজি ৷ কারণ, ওষুধের গুণমান যাতে যাচাই করে নেওয়ার সুযোগ থাকে ৷ রোগীর আত্মীয় দিল্লি-NCR এলাকায় সফলভাবে ব্যবসা চালাচ্ছেন ৷ তিনি বলেন, "যখন ওষুধ বিক্রেতা আমাকে বললেন, আমি বিল পাব না, তখন আমি জানতে চাইলাম যে তাহলে আমি কীভাবে বুঝব যে ওটাই সঠিক ওষুধ ৷ যদি আপনি বোতলে আমাকে সাধারণ জল দিয়ে দেন ৷ তাঁকে বলি যে, অন্তত আমাকে MRP-এর উপর বিল দিতে হবে ৷ যাতে ওই ওষুধের ব্যাচ নম্বর থাকবে ৷ প্রয়োজনে সেটাকে যাচাই করা যাবে ৷ অন্তত এটুকু নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে যে ওষুধটা আসল ৷ তাতে তিনি রাজি হন ৷"

কালোবাজারির এই রমরমা প্রকাশ্যে আসা উচিত

দিল্লির ওই ব্যবসায়ী, যিনি নিজের আত্মীয়র জন্য ওষুধ কেনার চেষ্টা করেন, তিনি জানান, তাঁর মতো আরও অনেকেই অতিরিক্তি টাকা দিয়ে ওই জীবনদায়ী ওষুধ কেনার বিষয়ে দু’বার ভাববেন না ৷ কারণ, জীবন বাঁচানোটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ৷ যেহেতু সাধারণ মানুষের পক্ষে এত টাকা খরচ করা সম্ভব নয় ৷ তাই তিনি এই বিষয়ে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷

তাঁর কথায়, "ভগবানের আশীর্বাদে আমি টাকা জোগাড় করতে পেরেছি ৷ আর ওষুধও পেয়ে গিয়েছি ৷ কিন্তু আমার বিবেক পরে এটার অনুমতি দেয়নি ৷ এই বিষয়টাতেই আমি সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি ৷ আমি সেদিন আমার অফিসে বসে ভাবছিলাম, আমাদের দেশে এসব কী হচ্ছে ৷ এটা তো খুবই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি ৷ এটা ভেবেই আমার মন খারাপ হয়ে গেল ৷" তিনি হেটেরো কম্পানির অনুমোদিত DSA-এর কাছ থেকে ওষুধ কিনতে সমর্থ হন ৷ আর তারা ওষুধ সরাসরি দিল্লির ওই হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে ৷

কালো বাজারি রুখতে কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি

লোকাল সার্কেলের প্রতিষ্ঠাতা সচিন তাপারিয়া কর্তৃপক্ষের সামনে এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন ৷ তিনি ETV ভারতকে জানান, এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের দাম যাচাই করার জন্য দেশে কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নেই ৷

সচিন তাপারিয়া বলেন, "দিল্লির বড় হাসপাতালেও এই ধরনের ঘটনা ঘটছে ৷ এটা সারা দেশ জুড়ে ঘটছে ৷ হাসপাতাল রোগীর আত্মীয়দের বলছে, আমাদের কাছে এই পরিমাণ রেমডেসিভির রয়েছে ৷ বাকিটা আপনারা বাইরে থেকে জোগাড় করুন ৷ যখন আপনি ওষুধের ব্যবসায়ীর কাছে গেলেন, আর তিনি বললেন, কালোবাজারে ওষুধের দাম 15 হাজার টাকা থেকে 60 হাজার টাকা পর্যন্ত চলছে ৷ তখন কী হবে ৷ তাঁরা আপনাকে বলবেন, তাঁরা দুই ঘণ্টার মধ্যে ওষুধের ব্যবস্থা করে দেবে ৷ আপনি যদি অনুমোদিত ডিলারের কাছে যান, তিনি বলবেন যে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না ৷ তাঁদেরই মধ্যে কেউ কেউ পিছনের রাস্তা দিয়ে ওষুধ কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন ৷ এর প্রবল সম্ভবনা রয়েছে ৷"

লোকাল সার্কেলের তরফে করা অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনেরাল ভি জি সোমানি রাজ্যগুলিকে রেমডেসিভিরের কালোবাজারির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছে ৷ এই নিয়ে ভি জি সোমানি সোমবার রাজ্য কর্তৃপক্ষগুলিকে চিঠি লেখেন ৷ সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, "এই অফিসে M/s লোকাল সার্কেলের তরফে MoHFW-এর মাধ্যমে একটি চিঠি এসেছে ৷ তাতে কিছু বিবেক বর্জিত মানুষের দ্বারা রেমডেসিভির বেশি দামে এবং কালোবাজারে বিক্রি করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ৷"

তিনি আরও লেখেন, "এর পরিপ্রেক্ষিতে আপনাদের অনুরোধ করা হচ্ছে যে, আপনারা আপনাদের এনফোর্সমেন্ট আধিকারিকদের কড়া নজরদারি করতে বলুন, যাতে রেমডেসিভির ইনজেকশন কালোবাজারে এবং MRP-এর থেকে বেশি দামে বিক্রি করা আটকানো যায় ৷"

প্রতিবেদনটি লিখেছেন- কৃষ্ণানন্দ ত্রিপাঠি, ETV ভারত

কর্তৃপক্ষের একাংশের নজরদারির অভাবে ওষুধের ব্যবসায় যুক্ত লোভী ডিলারদের কাছে কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অন্যতম জীবনদায়ী ওষুধটি অর্থ উপার্জনের রাস্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ আপৎকালীন ব্যবহারের জন্য ওই ওষুধ ছাড়পত্র পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ৷ নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোরোনা আক্রান্ত এক রোগীর আত্মীয় ETV ভারতকে জানিয়েছেন যে, আমাদের হাসপাতাল থেকে রেমডেসিভিরের দু'টি বোতল জোগাড় করতে বলা হয় ৷ কিন্তু, দিল্লির দু'টি অনুমোদিত বিক্রেতার কাছে তা পাওয়া যায়নি ৷ বরং তা পাওয়া গিয়েছে কালোবাজারে ৷ আর এর দাম এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে মনে হচ্ছে যেন এটা সোনা ৷

এক কোরোনা আক্রান্ত আত্মীয়কে দিল্লির একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে (দেশের রাজধানীতে অবস্থিত কোরোনা কেয়ার সেন্টার হিসেবে পরিচিত) চিকিৎসা করাতে গিয়ে এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন দিল্লির এক ব্যবসায়ী ৷ কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যে কঠিন লড়াই চলছে, তার মধ্যে এই ঘটনা কর্তৃপক্ষের কাছে অবশ্যই চোখ খুলে দেওয়ার মতো ৷

কোরোনা সংক্রমণের জেরে দেশে এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন 26 হাজার 273 জন এবং সারা দেশে সংক্রমিত হয়েছেন 10 লাখ 38 হাজার 716 জন ৷ বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা 5 লাখ 47 হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে ৷ আর সংক্রমণ প্রায় 1.2 কোটিতে পৌঁছে গিয়েছে ৷

কোরোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার গত মাসে কয়েকটি ওষুধ অনুমোদন করেছে ৷ সিপলা, হেটেরো এবং মিলান রেমডেসিভির উৎপাদন করার এবং বিক্রি করার ছাড়পত্র পেয়েছে গিলেড সায়েন্সের থেকে লাইসেন্স নিয়ে ৷ অন্যদিকে, গ্লেনমার্ক ফ্যাভিপিরাভির তৈরির ও বিক্রির অনুমতি পেয়েছে ৷ তারা এই ওষুধ ফ্যাবিফ্লু নামে বিক্রি করছে ৷

রেমডেসিভির ছাড়পত্র পাওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়রা ৷ কারণ, এই ওষুধটিই এখনও পর্যন্ত SARS-Cov-2 ভাইরাসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছে ৷ কিন্তু এর ছাড়পত্র লোভী ওষুধ ডিলারদের কাছে লাভ করার সুযোগও এনে দিয়েছে ৷

কোরোনা রোগীর এক আত্মীয় ETV ভারতকে বলেছেন, "আমাদের রোগী যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, সেই হাসপাতালের একজন চিকিৎসক এই মাসের শুরুতে ফোন করেন ৷ তিনি জানান যে রোগীকে রেমডেসিভির দেওয়া প্রয়োজন ৷ তাঁরা আমাদের জানান যে ইতিমধ্যেই তাঁরা রোগীকে ওই ওষুধ দিয়েছেন ৷ কিন্তু তাঁদের কাছে ওই ওষুধ ঠিক মতো সরবরাহ করা হচ্ছে না ৷ তাই তাঁরা চাইছেন, দু’টো বোতল ওষুধ যাতে বাইরে থেকে কিনে দেওয়া হয় ৷ কারণ, তাঁরা জোগাড় করতে পারছেন না ৷"

তিনি জানান, হাসপাতাল থেকে ফোন পাওয়ার পর ওষুধের খোঁজ শুরু হয় ৷ দিল্লির দু’টো অনুমোদিত ডিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ৷ তাঁকে জানানো হয় যে রেমডেসিভির পেতে হলে রোগীর আধার কার্ড, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন এবং কোরোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট দিতে হবে ৷ প্রতিটি বোতলের দাম পড়বে চার হাজার 500 টাকা করে ৷

রোগীর ওই আত্মীয় নিজের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণণা করতে গিয়ে বলেন, "দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই দুইটি জায়গা থেকে জানানো হয় যে, তাদের কাছে ওষুধ নেই ৷ তারা ওষুধের সরবরাহের সমস্যায় ভুগছে ৷" ওই ব্যক্তির আত্মীয় তখন হাসপাতালের ভেন্টিলেটরে চিকিৎসাধীন ৷ তিনি বলেন, "যেহেতু এটা জীবন ও মৃত্যুর বিষয় ছিল, তাই আমরা আরও চেষ্টা করতে শুরু করি ৷ আমরা অন্য কয়েকটি ওষুধ বিক্রেতাকে অন্য রাস্তা বের করার অনুরোধ করি ৷ আমাদের কথা ছড়িয়ে দেওয়ার পর কয়েকজন এগিয়ে আসেন ৷ আর জানায় যে এই ওষুধ কালো বাজারে পাওয়া যাবে ৷"

তিনি ETV ভারতকে বলেন, "আমাদের বলা হয় যে, ওই ওষুধের দাম বোতল প্রতি 15 হাজার টাকা করে পড়বে ৷ যেদিন আমরা এটা কিনব বলে ঠিক করলাম, সেদিন ওষুধের দাম চাওয়া হল 35 হাজার টাকা প্রতি বোতল ৷ এর ঠিক আগের দিন ওই ওষুধের দাম বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল 27 হাজার টাকা প্রতি বোতল ৷ কালো বাজারে রেমডেসিভির দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে যে এটা সোনা ৷"

ওই আত্মীয় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের নাম উল্লেখ করতে চাননি ৷ কারণ, তাঁর রোগী এখনও ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷ তিনি ঠিক করেন যে, এই বিষয়টি জানানোর জন্য সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট-লোকাল সার্কেলকে ব্যবহার করবেন বলে তিনি ETV ভারতকে জানান ৷ কারণ, নিজের পরিচয় গোপন করে সেখানে অভিজ্ঞতা জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে ৷ তিনি আরও জানান যে, NCR অঞ্চলে জীবনদায়ী ওষুধের কালো বাজারির রমরমার বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷ যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক ৷

ওই আত্মীয় বলেন, "আমরা দক্ষিণ দিল্লি, পূর্ব দিল্লি ও গুরুগ্রামে খুঁজে দেখি ৷ তিনটি জায়গার কালো বাজারেই এই ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে ৷ অথচ দিল্লির দুই জন অনুমোদিত ডিলারের কাছে তা পাওয়া যাচ্ছে না ৷ এর থেকে তখন আমরা কালোবাজারির রমরমার বিষয়টি বুঝতে পারি ৷" দিল্লি-NCR-এ কালোবাজারির রমরমার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, "ওষুধের ব্যবসায়ী আমাদের বলেন, অন্তত দুই ঘণ্টা আগে তাঁদের জানাতে হবে ৷ তাহলে তারা ওষুধ সরবরাহ করে দেবে ৷"

কালোবাজারের ব্যবসায়ীরা গুণমান যাচাইয়ের জন্য MRP-এর উপর বিল দিতেও রাজি

ওই আত্মীয় বলেন, কালোবাজারের বিক্রেতারা প্রথমে বিল দিতে অস্বীকার করেছিল ৷ তবে MRP-এর উপর বিল দিতে তাঁরা রাজি ৷ কারণ, ওষুধের গুণমান যাতে যাচাই করে নেওয়ার সুযোগ থাকে ৷ রোগীর আত্মীয় দিল্লি-NCR এলাকায় সফলভাবে ব্যবসা চালাচ্ছেন ৷ তিনি বলেন, "যখন ওষুধ বিক্রেতা আমাকে বললেন, আমি বিল পাব না, তখন আমি জানতে চাইলাম যে তাহলে আমি কীভাবে বুঝব যে ওটাই সঠিক ওষুধ ৷ যদি আপনি বোতলে আমাকে সাধারণ জল দিয়ে দেন ৷ তাঁকে বলি যে, অন্তত আমাকে MRP-এর উপর বিল দিতে হবে ৷ যাতে ওই ওষুধের ব্যাচ নম্বর থাকবে ৷ প্রয়োজনে সেটাকে যাচাই করা যাবে ৷ অন্তত এটুকু নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে যে ওষুধটা আসল ৷ তাতে তিনি রাজি হন ৷"

কালোবাজারির এই রমরমা প্রকাশ্যে আসা উচিত

দিল্লির ওই ব্যবসায়ী, যিনি নিজের আত্মীয়র জন্য ওষুধ কেনার চেষ্টা করেন, তিনি জানান, তাঁর মতো আরও অনেকেই অতিরিক্তি টাকা দিয়ে ওই জীবনদায়ী ওষুধ কেনার বিষয়ে দু’বার ভাববেন না ৷ কারণ, জীবন বাঁচানোটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ৷ যেহেতু সাধারণ মানুষের পক্ষে এত টাকা খরচ করা সম্ভব নয় ৷ তাই তিনি এই বিষয়ে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷

তাঁর কথায়, "ভগবানের আশীর্বাদে আমি টাকা জোগাড় করতে পেরেছি ৷ আর ওষুধও পেয়ে গিয়েছি ৷ কিন্তু আমার বিবেক পরে এটার অনুমতি দেয়নি ৷ এই বিষয়টাতেই আমি সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি ৷ আমি সেদিন আমার অফিসে বসে ভাবছিলাম, আমাদের দেশে এসব কী হচ্ছে ৷ এটা তো খুবই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি ৷ এটা ভেবেই আমার মন খারাপ হয়ে গেল ৷" তিনি হেটেরো কম্পানির অনুমোদিত DSA-এর কাছ থেকে ওষুধ কিনতে সমর্থ হন ৷ আর তারা ওষুধ সরাসরি দিল্লির ওই হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে ৷

কালো বাজারি রুখতে কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি

লোকাল সার্কেলের প্রতিষ্ঠাতা সচিন তাপারিয়া কর্তৃপক্ষের সামনে এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন ৷ তিনি ETV ভারতকে জানান, এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের দাম যাচাই করার জন্য দেশে কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নেই ৷

সচিন তাপারিয়া বলেন, "দিল্লির বড় হাসপাতালেও এই ধরনের ঘটনা ঘটছে ৷ এটা সারা দেশ জুড়ে ঘটছে ৷ হাসপাতাল রোগীর আত্মীয়দের বলছে, আমাদের কাছে এই পরিমাণ রেমডেসিভির রয়েছে ৷ বাকিটা আপনারা বাইরে থেকে জোগাড় করুন ৷ যখন আপনি ওষুধের ব্যবসায়ীর কাছে গেলেন, আর তিনি বললেন, কালোবাজারে ওষুধের দাম 15 হাজার টাকা থেকে 60 হাজার টাকা পর্যন্ত চলছে ৷ তখন কী হবে ৷ তাঁরা আপনাকে বলবেন, তাঁরা দুই ঘণ্টার মধ্যে ওষুধের ব্যবস্থা করে দেবে ৷ আপনি যদি অনুমোদিত ডিলারের কাছে যান, তিনি বলবেন যে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না ৷ তাঁদেরই মধ্যে কেউ কেউ পিছনের রাস্তা দিয়ে ওষুধ কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন ৷ এর প্রবল সম্ভবনা রয়েছে ৷"

লোকাল সার্কেলের তরফে করা অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনেরাল ভি জি সোমানি রাজ্যগুলিকে রেমডেসিভিরের কালোবাজারির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছে ৷ এই নিয়ে ভি জি সোমানি সোমবার রাজ্য কর্তৃপক্ষগুলিকে চিঠি লেখেন ৷ সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, "এই অফিসে M/s লোকাল সার্কেলের তরফে MoHFW-এর মাধ্যমে একটি চিঠি এসেছে ৷ তাতে কিছু বিবেক বর্জিত মানুষের দ্বারা রেমডেসিভির বেশি দামে এবং কালোবাজারে বিক্রি করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ৷"

তিনি আরও লেখেন, "এর পরিপ্রেক্ষিতে আপনাদের অনুরোধ করা হচ্ছে যে, আপনারা আপনাদের এনফোর্সমেন্ট আধিকারিকদের কড়া নজরদারি করতে বলুন, যাতে রেমডেসিভির ইনজেকশন কালোবাজারে এবং MRP-এর থেকে বেশি দামে বিক্রি করা আটকানো যায় ৷"

প্রতিবেদনটি লিখেছেন- কৃষ্ণানন্দ ত্রিপাঠি, ETV ভারত

Last Updated : Jul 18, 2020, 7:08 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.