ধর্মীয় সম্প্রীতি ও শান্তি বজায় রাখতে পারে একমাত্র দুই তরফের সদর্থক আলোচনা ৷ আর দেশে সৌভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে শান্তিকেই ধর্মরূপে মানতেন ও রীতিমতো চর্চা করতেন মহাত্মা গান্ধি ৷ ধৈর্য ও শান্তি একে অপরের পরিপূরক ৷ ধৈর্য ছাড়া শান্তিনীতি চর্চা করা যায় না ৷ এই দুইয়ের অনুশীলনেই সমাজে শান্তিরক্ষা সম্ভব ৷ কোনও নেতিবাচক সময়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া মানুষের দৈনন্দিন জীবনে শান্তি বিঘ্নিত করার জন্য সবচেয়ে বড় কারণ ৷
এই শান্তিরক্ষার প্রক্রিয়া অনেক ভাগে ভাগ করা যায় ৷ তবে, প্রত্যেক ভাগেই যে প্রধান বিষয়বস্তু তা হল যুদ্ধ ও হিংসার বিরোধ ৷ সমাজের এই বিষয়গুলি যদি শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটমাট করা যায় তবে, সামাজিক সাম্যতা বজায় থাকবে ৷ শান্তিবিদ টলস্টয়, গান্ধি, মার্টিন লুথার কিং - এর নীতি ছিল সমাজে ধর্মীয় শান্তি বজায় রাখা ৷ শান্তির নীতি সর্বদাই অহিংসা ও যুদ্ধ বিরোধী ৷
এই শান্তিনীতির সবথেকে বড় উদাহরণ ভারতের মতো বহুধর্মী সমাজের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ৷ অহিংস আন্দোলন ৷ যার নেতৃত্ব দেন গান্ধিজি ৷ মহাত্মা গান্ধি ছিলেন ধর্মীয় সহাবস্থান, সহনশীলতা, শ্রদ্ধা ও ভ্রাতৃত্বের প্রবক্তা । তিনি চেয়েছিলেন ভারতের হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায় রাজনীতি ও সমাজে সমান অংশীদারী থাকুক ৷ তিনি 1919 থেকে 1922 সাল পর্যন্ত খিলাফৎ আন্দোলনে যোগ দেন ও পূর্ণ সমর্থন করেন ৷
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় টার্কির খলিফাকে ব্রিটিশরা পদচ্যুত করার ফলে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে আন্দোলন শুরু করে ৷ সেই সময় গান্ধিজি ভারতীয় মুসলিমদের মনে ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাবের ফলে তাদের খিলাফৎ আন্দোলনকে সমর্থন করেন ৷ পরে এই আন্দোলনে হিন্দুদের যোগদানের পরে স্বাধীনতার খিলাফৎ আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হয় ৷ খিলাফৎ আন্দোলন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন হিসেবেও পরিচিত ৷ এই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ফলে সেই সময়ের হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বের সমন্বয় হয়েছিল ৷ গান্ধিজি এই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সমন্বয়কেই হাতিয়ার করে হিন্দু - মুসলিমকে একত্রিত করে অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন ৷
1920 সালে কলকাতায় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে গান্ধিজির নীতিকে সমর্থন করা হয় ৷ পরবর্তীকালে নাগপুরে কংগ্রেসের পরবর্তী বার্ষিক অধিবেশনে এই নীতিকে নিশ্চিত করা হয় ৷ যদিও, বিশ্বব্যাপী এই ইসলামিক আন্দোলন ছড়িয়েছিল ৷ কিন্তু ইসলামিক বিশ্বের এই আন্দোলনে খিলাফৎ ইশুর তুলনায় ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইশু বেশি প্রভাব ফেলেছিল ৷ গান্ধিজি এই খিলাফৎ আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশদের বুঝিয়ে দেন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বার্থে আঘাত হানলে প্রয়োজনে হিন্দু - মুসলিম একত্রিত হতে পারে ৷
আজকাল তথ্যপ্রযুক্তির যুগ, শিক্ষার যুগ ৷ একইসাথে বহুধর্মী, সাংস্কৃতিক, বহুজাতিক সমাজের যুগ ৷ এই বহুজাতিক সমাজে মানুষ মানুষের সঙ্গেই যুদ্ধে মেতেছে ৷ তবে, একজন সমাজ-সংস্কারক যথার্থই বলেছেন যে প্রকৃতি অভিন্নতা ঘৃণা করে ৷ বৈচিত্র্যের প্রতি সহনশীলতাই শান্তিপূর্ণ সমাজ তৈরি করতে পারে । আর এই শান্তিনীতি দিতে একমাত্র সক্ষম হয়েছে গান্ধিবাদী দর্শন ৷ গান্ধিজি এমন সমাজ তৈরি করতে চেয়েছিলেন যেখানে জাতিধর্ম নির্বিশেষে মানুষ একসাথে থাকতে পারবে ৷ যেখানে মানুষ মানুষের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠবে না ৷ শান্তিপূর্ণ ও নৈতিক জীবনযাপনের উপর সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন গান্ধিজি ।