দিল্লি , 8 ডিসেম্বর : তখন কুয়াশায় মোড়া রয়েছে চারপাশ ৷ রবিবারের ছুটির দিনে সকালে একটু দেরি করেই ঘুম ভাঙার কথা ছিল আনাজ মান্ডির ৷ হঠাৎই পোড়া গন্ধ আর আতঙ্কের চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় সকলের ৷ ততক্ষণে অনেকটাই ক্ষতি হয়ে গিয়েছে ৷ আগুনে পুড়ে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে 43জনের ৷
খবর ছড়িয়ে যায় চারপাশে ৷ আত্মীয়দের অনেকেই কারখানায় কাজ করছেন বা করছিলেন ৷ কেউ বা বিশ্রাম করছিলেন ৷ খবর পেতেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায় ৷ এক প্রত্যক্ষদর্শী জানাচ্ছেন, "দাউ দাউ করে জ্বলছিল আগুন ৷ বহুদূর পর্যন্ত ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছিল ৷ আমার দুই ভাইপো মহম্মদ ইমরান ও ইকরামুদ্দিন এই কারখানাতেই কাজ করেন ৷ এখন তাঁরা কী অবস্থায় জানি না ৷ কোনও খোঁজ পাচ্ছি না ৷ চারদিক থেকে শুধু কান্নার শব্দ আসছে ৷ মানুষ ছোটাছুটি করছে ৷ কারখানার মালিকের কথা জানি না ৷ ভাইপোদের সঙ্গে আমার এক বন্ধুও ছিল সেখানে ৷ ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে ৷ তবে চোখের সামনে আর এক বন্ধুকে পুড়তে দেখেছে ৷ " তিনি জানাচ্ছেন , দুজনেই একসঙ্গে পালানোর চেষ্টা করেছিল ৷ কিন্তু হঠাৎই পিছন ফিরে দেখলাম দাউ দাউ করে জ্বলছে বন্ধুটা ৷ আর কিছু ভাবতে পারছি না ৷
আর এক প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন , "তখন ভোরের আলো ঠিক মত ফোটেনি ৷ আজ ঠিক ছিল কয়েকজন মিলে ঘুরতে যাব ৷ ছুটির দিন তাই একটু দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার ইচ্ছা ছিল ৷ বন্ধুদের সঙ্গে আমিও ঘুমাচ্ছিলাম ৷ চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় ৷ প্রাণ হাতে করে পালাতে থাকি ৷ ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ৷ তাঁর কৃপাতেই আজ বেঁচেছি ৷ কিন্তু বন্ধুদের কোনও খবর নেই ৷ কী খবর পাব জানি না ৷ "
আরও পড়ুন : দিল্লিতে কারখানায় আগুন, মৃত কমপক্ষে 43
প্রাথমিকভাবে পুলিশ ও দমকলকর্মীরা জানিয়েছেন অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে ঘুমের মধ্যে ৷ চারপাশ থেকে আগুন ঘিরে ধরেছিল গোটা বাড়িটাকে ৷ বাইরে বেরিয়ে আসার বিন্দুমাত্র সুযোগ পাননি অনেকে৷ ঘুম ভাঙলেও বাইরে বেরোনোর আগেই ঝলসে গেছে অনেক দেহ ৷ যখন দমকল পুলিশ বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা ঘটনাস্থানে এসেছেন ততক্ষণে মৃতের সংখ্যা 20 ছাড়িয়েছে ৷ আগুনের ভিতর থেকে বাঁচার আকুতি ক্রমেই তীব্র হচ্ছিল ৷ শেষ চেষ্টা করতে অনেকে আগুনের ভিতর দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন ৷ ঘিঞ্জি এলাকার ভিতর দিয়ে গাড়ি-জলের পাইপ আনতে যে সময়টুকু দমকলের লাগত সেটুকুও তাদের হাতে ছিল না ৷
প্রাণে বাঁচতে জানলা দিয়ে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করেন অনেকে ৷ দেনও কেউ কেউ ৷ শরীরটা যখন বাইরে বেরিয়েছে তখন তা আধপোড়া ৷ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধার কাজ শুরু হলেও মৃতের সংখ্যা 30 ছাড়িয়েছে ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই ৷ কারখানার ভিতরে যন্ত্রাংশ এবং বহু দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুনের গতি তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে ৷ এক বাড়ি থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে আর এক বাড়িতে ৷ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রথমে বেগ পেতে হয় দমকলকে ৷ একদিকে ঘিঞ্জি এলাকা ৷ অন্যদিকে স্থানীয়দের ছোটাছুটি ৷
আরও পড়ুন : শোকপ্রকাশ প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর; পরিস্থিতিতে নজর অরবিন্দ কেজরিওয়ালের
দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীদের তৎপরতাকে অবশ্য কুর্নিশ জানাচ্ছেন স্থানীয়রা ৷ যে তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছিল তা না হলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত ৷ হাসপাতালগুলিতে দ্রুত শুরু হয় চিকিৎসা ৷ একের পর এক আহতকে আনা হতে থাকে স্থানীয় হাসপাতালগুলিতে ৷ খবর দেওয়া হয় চিকিৎসকদের ৷ বাতিল হয় ছুটি ৷ প্রতিটা হাসপাতালে একই ছবি ৷ মৃতদেহগুলি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হয় দ্রুতহারে ৷ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক ৷
রুটিরুজির জন্য এই কারখানায় কাজ করেন পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের বহু মানুষ ৷ নিহত , আহতদের অনেকেই এই দুই রাজ্যের বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে ৷ পাশাপাশি কারখানার অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে ৷ অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা করা হয়েছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে ৷ সঠিক অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা থাকলে পরিস্থিতি এতটা ভয়ঙ্কর হত না বলে দাবি অনেকের ৷ তবে এবিষয়ে মুখ খোলেনি দিল্লি পুলিশ ৷ কিছু বলেনি দমকলও ৷