করোনা ভাইরাস (CoV19) প্যানডেমিক ছড়িয়ে পড়ার পর লিকিউডিটি উইন্ডোর মাধ্যমে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পদক্ষেপ করল ৷ এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যাঙ্কগুলিকে প্রয়োজনীয় সুরাহা দেওয়ার জন্য RBI তাদের সুবিধাজনক অবস্থান অব্যাহত রেখে সপ্তম দ্বিমাসিক নীতি পর্যালোচনায় আর্থিক ও নীতিগত কিছু ব্যবস্থার কথা সামনে আনল ৷ RBI-এর পদক্ষেপ রক্ষণশীলতাকে বজায় রেখে কিছু উদ্ভাবনী ভাবনার সঙ্গে এই পথে হবে বলেই আশা করা হয়েছিল ৷ রেপো রেটকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে দেওয়ায় তা ৫.১৫ শতাংশ থেকে ৪.৪ শতাংশ হয়ে গেল ৷ এখানে কম হারে ঋণের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় হস্তান্তর হতে পারে, যেগুলি ইতিমধ্যেই বাহ্যিক মাপকাঠির হারের সঙ্গে সংযুক্ত ৷ কিছুটা হলেও হস্তান্তর হত এবং ঋণগ্রহীতারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পেত ৷
আরও স্পষ্ট উদ্ভাবনের কথা বললে, RBI রিভার্স রেপো রেট ৪ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে ৷ এই অনুযায়ী, বর্তমান পলিসির হার ৫০ bps থেকে বাড়িয়ে ৬৫ bps করা হয়েছে ৷ নতুন এই ব্যবস্থায় লিকিউডিটি অ্যাডজাস্টমেন্ট ফেসিলিটি (LAF)-র অধীনে রিভার্স রেপো রেট হচ্ছে ৪০ bps, যা বর্তমানের ২৫ bps পলিসি রেপো রেটের তুলনায় কম ৷ এই পদক্ষেপের ফলে ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে তহবিল বাড়াতে ঋণ নেওয়ার চাহিদা বাড়বে ৷ এর ফলে RBI-এর রিভার্স রেপো রেট কমবে ৷
- লিকিউডিটির সাহায্য ব্যবস্থা :
ব্যাঙ্কগুলিকে বাস্তবসম্মত হারে (fixed repo rate) টাকার যোগান দিতে ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত এক বছর ও তিন বছর মেয়াদের ১২৫০০০ টাকার পাঁচটি দীর্ঘমেয়াদী রেপো অপারেশন (LTROs) সংগঠিত করেছিল RBI ৷ অর্থ প্রদান এবং নিষ্পত্তির বিষয়ে RBI তার কাজের গতি বজায় রেখেছে ৷ লক ডাউনের জেরে নগদ জমার পরিমাণ কমে যাওয়ায় ব্যাঙ্কে জমা অর্থের পরিমাণ কমবে ৷ ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (CRR)-র হার ৪ শতাংশ থেকে কমে ৩ শতাংশে এসে পৌঁছেছে, যার পরিমাণ ১৩৭০০০ কোটি টাকা ৷ ব্যাঙ্কে যে টাকা জমা পড়ছে, তার মধ্যে যে পরিমাণ ব্যাঙ্ককে RBI-এর কাছে রাখতে হয়, সেটাই CRR ৷ নগদ অর্থের জোগানের প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে এই তহবিলকে শিল্পক্ষেত্রগুলিতে ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যবহারের অনুমতি দিল RBI ৷
মারজিনাল স্ট্যান্ডিং ফেসিলিটির (MSF) হার ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে ৷ এর মাধ্যমে ব্যাঙ্কগুলি স্ট্যাটুটরি লিকিউডিটি রেশিও (SLR)-র অধীনে RBI থেকে ধার নেয় ৷ এর ফলে ব্যাঙ্কের কাছে আরও ১৩৭০০০ কোটি ব্যবহারের সুযোগ বাড়ল এবং সমস্ত পদক্ষেপকে একসঙ্গে জুড়লে যা দাঁড়াচ্ছে, তাতে ব্যাঙ্কের কাছে নগদ ব্যবহার যোগ্য অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ৩৭৪০০০ কোটি টাকা ৷
- ব্যাঙ্কের ঋণগ্রহীতাদের জন্য সুরাহা :
বর্তমান সংকটকে বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখে সমস্ত ব্যাঙ্ক ও ব্যাঙ্ক নয় এমন সংস্থা তিন মাসের জন্য ঋণ পরিশোধ নেওয়া স্থগিত রাখছে ৷ এই প্যানডেমিকের জেরে যে সমস্ত ঋণগ্রহীতা সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা তাঁদের মাসিক কিস্তি (EMIs) দেওয়া থেকে মুক্ত হলেন ।
একই ভাবে ১ মার্চ, ২০২০-র হিসেবে ওয়ার্কিং ক্যাপিটলের উপর নেওয়া সুদ তিন মাস পিছিয়ে দেওয়া হল ৷ এতে শিল্পক্ষেত্রগুলিতে সুদ দেওয়ার চাপ কমে যাবে ৷ এই ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে পরিশোধ না করা পরিমাণ এবং কিস্তি দেওয়া পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে নন-পারফরমিং অ্যাসেট (NPAs) হিসেবে দেখা হবে না ৷ যা ব্যাঙ্কগুলির ক্ষেত্রে খুবই স্বস্তির ৷ এই টাকা দেওয়া বন্ধ থাকলেও ঋণগ্রহীতাদের ক্রেডিট রেটিং কমবে না ৷ যদি ঝুঁকিপূর্ণ কিস্তির পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন ব্যাঙ্কের রিস্ক বেসড প্রাইসিং মেট্রিক্সের উপর এর প্রভাব এড়াতে ভবিষ্যতে ঋণদানের পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে ৷
- ব্যাঙ্ককে সুরাহা :
ব্যাঙ্কের প্রুডেন্সিয়াল নর্মকে ১ এপ্রিল ২০২০-র বদলে ১ অক্টোবর ২০২০ পর্যন্ত স্থগিত করার সম্মতি দেওয়া হয়েছে ৷ ঋণ পরিশোধ ও বিভিন্ন সুবিধার পুনঃব্যবস্থার জন্য সম্পদ শ্রেণিবদ্ধকরণে ছাড় দেওয়া হয়েছে, তার জেরেই এই সিদ্ধান্ত ৷ ব্যাঙ্কের স্টেবল ফান্ডিং রেশিও (NSFR) বাড়ানো হচ্ছে ৷ ব্যাঙ্ককে এই স্টেবল ফান্ডিং রেশিও সব সময় ঠিক জায়গায় রাখতে হয় ৷ একই ভাবে নতুন প্রুডেনসিয়াল নর্মের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কগুলিতে যথেষ্ট পরিসর দেওয়া হচ্ছে ৷ তাই ক্যাপিটাল কনভারসেশন বাফার (CCB)-কে ৩১ মার্চ, ২০২০-র পরিবর্তে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত স্থগিত করার সম্মতি দেওয়া হয়েছে ৷
ব্যাঙ্কের গ্রাহকরা যখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন, তখন COVID19-এর জেরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে RBI-এর নেওয়া কিছু পদক্ষেপ কার্যক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলিকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে ৷ ব্যাঙ্কগুলি যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে তাদের ধারাবাহিক ব্যবসায়ীক পরিকল্পনা (BCP) বাস্তবায়িত করতে হবে ৷ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে কড়া নজরদারি করতে BCP-র উপর কাজ করতে RBI-এর দলের সঙ্গে আলোচনা করে এটাকে ব্যাঙ্কগুলি প্রয়োগ করতে পারে ৷
- ব্যাঙ্কগুলির অতি ব্যস্ততা :
এই ভাইরাসের প্রভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া এবং দুর্বল অংশকে বাঁচাতে ২৬ মার্চ, ২০২০ ১.৭ ট্রিলিয়ন টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে ৷ এর মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা দিতে সরাসরি টাকা পাঠানো (DBT)-র কথাও বলা হয়েছে ৷ RBI-এর নির্দেশ মেনে এই কাজ করার জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে নিজেদের সম্পদের উপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে হবে ৷ এটা পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলিতে সবচেয়ে বেশি জরুরি ৷ এই ভাইরাসের প্রভাবে সমাজের যে বড় অংশ প্রভাবিত হচ্ছে, তাদের সুরাহা দিতে RBI ও সরকার পরিকল্পনা করেছে ৷ ব্যাঙ্কের কাছে চ্যালেঞ্জ হল সঠিক পদক্ষেপ করে অন্য সম্পদগুলির ব্যবহার চালু রাখা ৷ এর ফলে RBI ও ব্যাঙ্কগুলি একসঙ্গে COVID19-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাতে হাত মিলিয়ে যেভাবে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে তাদেরও বিমার আওতায় আনা উচিত ৷
(লেখক Adjunct Professor, Institute of Insurance and Risk Management – IIRM. Hyderabad . মতামত লেখকের নিজস্ব ৷)