মুম্বই, 27 অগাস্ট : 2018-19 আর্থিক বছরের উদবৃত্তসহ সংরক্ষিত মূলধন খাতে থাকা অর্থ সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) । বিপুল এই অর্থের পরিমাণ 1.76 লাখ কোটি টাকা । যার মধ্যে 2018-19 আর্থিক বছরের উদবৃত্ত বাবদ 1,23,414 কোটি টাকা এবং মূলধন খাত থেকে আরও 52,637 কোটি টাকা সরকারকে দিতে চলেছে RBI । গতকাল RBI-এর গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় পর্ষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । RBI জুন-জুলাই মাসকে নিজেদের আর্থিক বছর হিসাবে ঘোষণা করেছে । বার্ষিক অ্যাকাউন্টের হিসাব চূড়ান্ত হলে অগাস্টে আর্থিক বছরের উদবৃত্ত ঘোষণা করা হয় ।
গত কয়েক বছরে দেশের অর্থনীতির গতি অনেকটা নেমে গেছে । দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন সাংবাদিক বৈঠকে দেশের অর্থনীতির খতিয়ান তুলে ধরেন । অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নানা পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন । যদিও দেশের GDP-র অবস্থা খারাপ, এই কথা মানতে রাজি হননি । তাঁর ব্যাখ্যা ছিল, বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতেও মন্দা চলছে । সেই প্রেক্ষিতে ভারতের বৃদ্ধির হার ভালো । পাশাপাশি জানিয়েছিলেন, আগামী দিনেও অর্থনৈতিক সংস্কারের পথেই থাকবে সরকার । তবে আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়াতে ও বাজারে নগদের প্রবাহ বাড়াতে RBI-এর দ্বারস্থ হয় সরকার ।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের অতিরিক্ত অর্থনৈতিক মূলধন কাঠামো (EECF) পর্যালোচনার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছিল । প্রাক্তন RBI গভর্নর বিমল জালানের নেতৃত্বাধীন সেই কমিটির রিপোর্ট সম্প্রতি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের কাছে জমা পড়ে । সেই কমিটির সুপারিশ মতোই অতিরিক্ত লভ্যাংশের পাশাপাশি মূলধনও সরকারকে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নিল RBI । রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, মোট অঙ্কের অন্তত 5.5 শতাংশ থেকে 6.8 শতাংশ পর্যন্ত রিয়েলাইজ়ড ইক্যুইটি হিসেবে থাকা জরুরি । বিমল জালানের নেতৃত্বাধীন কমিটি সুপারিশ করেছিল,6.5-5.5 শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে রিয়েলাইজ়ড ইক্যুইটি । সব দিক খতিয়ে দেখার পরই শেষমেশ কমিটির সমস্ত সুপারিশ মেনে নিয়েছে RBI ।
চলতি বছরের মার্চ মাসে RBI-র উদবৃত্ত খাত থেকে 28 কোটি টাকা ইতিমধ্যেই সরকারকে হস্তান্তরিত করেছে RBI । সাধারণত প্রতি আর্থিক বছর শেষে অতিরিক্ত লভ্যাংশের অর্থ সরকারের হাতে তুলে দেয় RBI । 2013-14 আর্থিক বছর থেকে RBI তাদের মোট লাভের 99.99 শতাংশ সরকারের হাতে তুলে দিচ্ছিল । সেই মতো আরও 90 কোটি টাকা সরকারকে হস্তান্তর করার কথা ছিল RBI-র । তবে জালানের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ মতো লভ্যাংশ বাবদ 95,414 কোটি টাকা সরকারকে দেবে RBI । তিন থেকে পাঁচ দফায় এই অর্থ সরকারকে হস্তান্তর করবে RBI ।
এদিকে, লভ্যাংশ বাবদ 95,414 কোটি টাকা ছাড়াও মূলধন তহবিল থেকে 52,637 কোটি টাকা সরকারকে দিতে চলেছে RBI । উল্লেখ্য, এই মূলধন হস্তান্তর নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল প্রাক্তন RBI গভর্নর উর্জিত প্যাটেল ও সরকারের মধ্যে । শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেন উর্জিত প্যাটেল । সেই সময়েও RBI-র অতিরিক্ত সঞ্চয় উন্নয়নের কাজে লাগতে পারে বলে তা হস্তান্তর করতে বলেছিল সরকার । তবে ব্যাঙ্কের যুক্তি ছিল, আপতকালীন তহবিল হিসাবে ওই টাকা রাখা হয়েছে । তা দেওয়া যাবে না । অবশ্য উর্জিতের পদত্যাগের পর নিযুক্ত হওয়া গভর্নর শক্তিকান্ত দাস সরকারকে সেই তহবিল হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিলেন ।
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের 578তম কেন্দ্রীয় পর্ষদের বৈঠকে শক্তিকান্ত দাস ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তিন ডেপুটি গভর্নর, অর্থ সচিব অতনু চক্রবর্তী এবং পর্ষদের অন্য তিন সদস্য- এস গুরুমূর্তি, এন চন্দ্রশেখরন, মণীশ সাভারওয়াল ।
এদিকে এই অর্থ হস্তান্তর নিয়ে সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি । সরকারকে এই বিষয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাহুল টুইট করেন, "প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী নিজেদের তৈরি করা আর্থিক সংকটের মোকাবিলা কী ভাবে করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না ৷ RBI-থেকে চুরি কাজে আসবে না ৷ এযেন গুলি লেগে জখম ব্যক্তির ডিসপেনসরি থেকে ব্যান্ডঅ্যাড চুরি করে ক্ষতস্থানে লাগানোর মতো ৷"