দিল্লি, 13 জুলাই : মধ্যপ্রদেশের ছায়া এবার রাজস্থানেও ? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সংকটের মুখে পড়েছে কংগ্রেস পরিচালিত রাজস্থান সরকার ৷ মুখ্য়মন্ত্রী অশোক গেহলটের গদি থাকবে কি না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা ৷ আর এই সব কিছুর মধ্যমণি যিনি, তিনি হলেন রাজস্থানের উপমুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলট ৷ দলের বিরুদ্ধে গিয়ে এবার মুখ খুললেন সচিন পাইলট ৷ দাবি করলেন, 30 জন কংগ্রেস বিধায়ক-সহ বেশ কয়েকজন নির্দল বিধায়কের সমর্থন রয়েছে তাঁর সঙ্গে ৷ যদিও সচিন পাইলটের এই দাবি উড়িয়ে দিচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের শিবির ৷ তাঁদের দাবি, দল একজোট রয়েছে ৷ কোথাও সমস্যা নেই ।
সচিন পাইলটের এক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে দাবি করা হয়, অশোক গেহলটের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের এখন আর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই ৷ শোনা যাচ্ছে, আজ যে দলীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, সেখানেও যোগ দেবেন না রাজস্থান কংগ্রেসের সভাপতি পাইলট ৷
কংগ্রেসের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অবিনাশ পাণ্ডে জানিয়েছেন, "বেশিরভাগ বিধায়কের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে ৷ যাঁরা দিল্লি এসেছিলেন, তাঁরাও জয়পুরে ফিরে গেছেন ৷ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁদের দেখা হয়েছে ৷ আমি মনে করি, রাজস্থানের সরকার সুরক্ষিত ৷ মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের নেতৃত্বে আমাদের বিধায়করা একজোট রয়েছেন ৷''
এদিকে, 16 জন কংগ্রেস বিধায়ক ও 3 নির্দল বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে গতকালই দিল্লি উড়ে গেছেন সচিন পাইলট ৷ সূত্রের খবর, রাজস্থানে কংগ্রেসের টালমাটাল পরিস্থিতি নিয়ে কংগ্রেস নেতা আহমেদ প্যাটেলের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি ৷
কেন এই ভাঙন রাজস্থানের কংগ্রেস শিবিরে ?
কংগ্রেসের যুব নেতা হিসেবে সবথেকে প্রতিশ্রুতিবান যে মুখ দুটি বার বার সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছিল, তাঁরা হলেন সচিন পাইলট ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ৷ একসময় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করতেন, এই দুই যুব নেতার মধ্যে কংগ্রেসের মুখ হিসেবে উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ কিন্তু, নানা সময় নানা ভাবে দলের ভিতরেই দুইজনকে কোণঠাসা করে দেওয়া বলে অভিযোগ । ফল হিসেবে এর আগে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসে ভাঙন ধরে ৷ একঝাঁক বিধায়ক নিয়ে দল ছেড়ে BJP-তে যোগ দেন সিন্ধিয়া ৷ তার মাত্র তিনমাসের মধ্যে বড়সড় ভাঙনের মুখে এবার পড়তে চলেছে রাজস্থান কংগ্রেস ।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, সিন্ধিয়া বা সচিন পাইলট দু'জনের ক্ষেত্রেই সমস্যার শুরুটা হয়েছিল মন্ত্রিসভার বণ্টনের সময়েই ৷ মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস জেতার পর অনেকই মনে করেছিলেন সিন্ধিয়াই হবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ৷ কিন্তু, বাস্তবে তা হয়নি ৷ বরং অনেকটাই লঘু পদ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে ৷ রাজস্থানেও সেই একই সমস্যা ৷ বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভের পর সচিনকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হবে বলে মনে করেছিলেন পর্যবেক্ষকরা ৷ কিন্তু, তা না করে অশোক গেহলটকে মুখ্যমন্ত্রীত্ব দেওয়া হয় ৷ আর সচিন পাইলটকে করা হয় উপমুখ্যমন্ত্রী ৷
এদিকে পাইলটের দলত্যাগী হওয়ার সম্ভাবনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই টুইট করেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ৷ টুইটারে তিনি লিখেছেন, "আমার প্রাক্তন সহকর্মী সচিন পাইলটের দলের মধ্যেই অশোক গেহলট দ্বারা কোণঠাসা ও নিগৃতীত হতে দেখাটা সত্যিই বেদনাদায়ক ৷ প্রতিভা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসে কিছু হয় না ৷"
রাজস্থানের বিধানসভায় মোট আসন সংখ্যা 200 ৷ এর মধ্যে বর্তমানে কংগ্রেসের পকেটে রয়েছে 107 টি আসন ৷ পাশাপাশি 12 জন নির্দল বিধায়কেরও সমর্থন রয়েছে কংগ্রেস শিবিরের সঙ্গে ৷ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার 101 টি ৷ এছাড়া রাষ্ট্রীয় লোক দল, CPI(M) ও ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টির মিলিয়ে রয়েছে 5 টি আসন ৷ সূত্রের খবর, এই তিনটি দলেরই সমর্থন রয়েছে গেহলটের সঙ্গে ৷