বিশ্বব্যাঙ্কের আংশিক অর্থসাহায্যে ‘'STARS’ ( স্ট্রেনদেনিং টিচিং-লার্নিং অ্যান্ড রেজাল্টস ফর স্টেটস) নামে একটি প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা. যার লক্ষ্য ভবিষ্যতের জন্য উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করে স্কুলশিক্ষাকে মজবুত করা । গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর গবেষণায় জোর দিতে 250 কোটি টাকার বরাদ্দ নিয়ে যে ‘'STARS’ প্রকল্পের সূচনা করেন, তার সম্ভাবনা ও উদ্দেশ্য আলাদা । জাভড়েকর বলেন, এই সাম্প্রতিক উদ্যোগের লক্ষ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, বোর্ডের পরীক্ষাগুলোর উন্নয়ন এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়ন । এই প্রকল্পের খরচ 5718 কোটি টাকা, যার মধ্যে 3700 কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাঙ্ক । শিক্ষামন্ত্রক এই প্রকল্প চালু করবে হিমাচলপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, কেরালা ও ওড়িশায় । এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক এরমধ্যেই গুজরাত, তামিলনাড়ু, উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড ও অসমে একইধরণের প্রকল্পে অর্থসাহায্য করছে, যার লক্ষ্য উন্নত মানের স্কুলশিক্ষা । যদিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বলছেন , ‘সগুন’ ও ‘দীক্ষা’ - র মতো অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে একটি রাজ্য অন্য রাজ্যগুলির অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে পারে, কিন্তু জাতীয় স্তরে স্কুলশিক্ষাকে শক্তিশালী করতে এটা আদৌ যথাযথ ? কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছিলেন, দেশজুড়ে এগারো লাখ শিক্ষকের সঠিক প্রশিক্ষণ নেই । বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষকের প্রয়োজনীয় যোগ্যতাই নেই । এই যদি ছবি হয়, তাহলে কয়েকটি রাজ্যে সীমাবদ্ধ নতুন প্রকল্প কি দেশজুড়ে স্কুলশিক্ষার উন্নতি করতে পারবে?
বিশ্বব্যাঙ্ক সম্প্রতি হিসেব করে দেখেছে, কোরোনা বিপর্যয়ের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হওয়ায় এবং দেশজুড়ে পড়ুয়াদের শিক্ষার সুযোগ নষ্ট হওয়ায় ভারতের 30 লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হবে । যদি দেশ কোরোনা - দুর্বিপাকের কারণে এক বছরেই এতটা ক্ষতির মুখে পড়ে, তাহলে বছরর পর বছর ধরে প্রশিক্ষিত শিক্ষক এবং উন্নতমানের শিক্ষার অভাবে কতটা ক্ষতি হয়েছে, তার পরিমাপ কীভাবে করা যাবে ? যদিও কোঠারি কমিশন, চট্টোপাধ্যায় কমিটি ও যশপাল কমিটি ব্যাখ্যা করেছিল , কীভাবে দেশে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার উন্নতি হতে পারে ৷ কিন্তু দশকের পর দশক সরকারগুলোর তরফ থেকে প্রতিক্রিয়া মোটেই উৎসাহের ছিল না । স্কুলগুলিতে উন্নতমানের শিক্ষার লক্ষ্যে তিন বছর আগে শিক্ষার অধিকার আইনে সংশোধন করা হয়েছিল, যেখানে স্কুলশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল । কিন্তু পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি । বিশেষজ্ঞদের পৃষ্ঠপোষকতায় গতবছর দেশজুড়ে 42 লাখ স্কুলশিক্ষকের দক্ষতাবৃদ্ধির লক্ষে ‘শিক্ষা’ নামে একটি দ্বিস্তরীয় প্রশিক্ষণ কর্মসূচির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল , যা এখনও শুরুই হয়নি । কেন্দ্রের উচিত অন্য দেশগুলোর থেকে শিক্ষা নেওয়া, যারা উন্নত মানের শিক্ষার উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে উঠে এসেছে এবং যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে । দক্ষিণ কোরিয়া, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও হংকং সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থায় নেতৃত্ব দিচ্ছে । তারা মেধাবীদের চিহ্নিত করে লাগাতার প্রশিক্ষণ ও আকর্ষণীয় বেতন দিয়ে শিক্ষকতায় আমন্ত্রণ জানাচ্ছে । দক্ষ শিক্ষক ও শিক্ষাবিদরাই সেরা ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, আইনজীবী ও অন্যান্য পেশাদারদের তৈরি করেন । শিক্ষক প্রশিক্ষণের সর্বোচ্চ জায়গায় যেতে গেলে IIT-IIM - এর সমতুল্য একটি প্রতিষ্ঠান জাতীয় স্তরে তৈরি করতে হবে, যাতে দেশের স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থার খামতিগুলো পূরণ করে তার উন্নতি করা যায় ।