তিরুবনন্তপুরম, 3 জুন : কুকুর, বিড়ালের লেজে বাজি বেঁধে দেওয়া, দোলের দিন তাদের গায়ে রং দিয়ে আনন্দ পাওয়া বা এমন পশুদের ঢিল ছুড়ে, মারধর করা কোনও নতুন বিষয় নয় মানুষের কাছে ! পশুদের উপর অত্যাচারের একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে । পশু অত্যাচার রুখতে হাজারো আইন, সচেতনতার প্রচার চললেও সমাজের এক শ্রেণির মানুষের মানসিকতায় কোনও পরিবর্তন হয়নি । যার ফল গতকালের কেরালার ঘটনা । একটি গর্ভবতী হাতিকে আনারসে বাজি মিশিয়ে খাইয়ে হত্যা করল গ্রামবাসীরা । আর কিছু না বুঝেই তা খেয়ে মৃত্যু হল সন্তানসহ হাতিটির । ঘটনাটির বিবরণ রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো ।
কেরালার মালপ্পুরম জেলা । খাবার না পেয়ে লোকালয়ে চলে এসেছিল একটি গর্ভবতী হাতি । খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছিল মালপ্পুরমের গ্রামে গ্রামে । ক্ষুধার্ত হাতিটিকে দেখে কেউ তো খেতে দেয়নি উলটে মারার ফন্দি আঁটে । হাতিটি কিন্তু কারও ক্ষতি করেনি । চাষের জমিতে দাপিয়েও বেড়ায়নি । ভাঙেনি কোনও বাড়ি । নিজের মতো খাবার খুঁজছিল সে ।
কিন্তু লোকালয়ে ঢুকে পড়াই কাল হয় তার । গ্রামবাসীরা একটি আনারসে বারুদ ভরে রেখে দেয় । হাতিটি মানুষকে বিশ্বাস করে সেটিকে খাবার ভেবে খেয়ে ফেলে । ব্যাস সব শেষ । আনারসটি গলায় পৌঁছাতেই ফাটতে থাকে । তীব্র জ্বালায় ছটফট করতে থাকে সে । একজন মা হিসেবে তখনও সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টায় একটি নদীতে নেমে পড়ে । অর্ধেক জলে ডুবে শরীরের জ্বালা মেটানোর চেষ্টা করে । কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি । বারুদের তীব্রতায় পুড়ে যায় শরীরে ভিতরটা । প্রায় চার ঘণ্টা জলে দাঁড়িয়ে শরীর ঠান্ডা করার চেষ্টা করার পর অবশেষে মৃত্যু হয় হাতিটির । বন দপ্তরের কর্মীরা এলেও বাঁচাতে পারেনি তাকে । বিষয়টি ভাইরাল হতেই ধিক্কার জানানো শুরু হয় সোশাল মিডিয়ায় ।
পুরো বিষয়টি কেরালার বনদপ্তরের এক কর্মী নিজের ফেসবুক পোস্টে জানান । তিনিই এই শিউরে ওঠার মতো ঘটনা বিশ্লেষণ করেন । বলেন, "হাতিটি গ্রামের কাউকে বিরক্ত করেনি । একটি বাড়িও ভাঙেনি । হাতিটি কারও কোনও ক্ষতিই করেনি ।" মোহন কৃষ্ণান নামে ওই ব্যক্তি আরও জানান, ওই হাতিকে তুলতে আরও দুটি হাতি আনা হয়েছিল । কিন্তু শত চেষ্টা করেও তারা ওই হাতিকে তুলতে পারেনি । জলে দাঁড়িয়েই মৃত্যু হয় তার । মানুষের অত্যাচারে আবারও চলে গেল একটি নিরীহ পশুর প্রাণ ।