COVID প্যানডেমিকের জেরে বিশ্বজুড়ে অসহায় মৃত্যুর সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়েছে । যদি বিশ্বের দেশগুলি সম্মিলিত ও সমবেত প্রয়াস না করে, তাহলে এই সংখ্যাটা 20 লাখ পার করে যেতে পারে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছে । নির্দিষ্ট প্রশ্নটি হল, “আমরা সবাই কি এই সংকট এড়াতে সম্মিলিত আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ?" কয়েকটি দেশের একতরফা মনোভাব দেখে এই লড়াইয়ে ঘাটতি খুঁজে পাচ্ছে WHO । ‘যতক্ষণ না সকলে সুরক্ষিত হচ্ছে, ততক্ষণ কেউ সুরক্ষিত নয়’, এই মনোভাবেই ঘাটতি রয়েছে ৷ COVID-এর যেখানে জন্ম, সেই চিনে মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র 4650 জন । অথচ এই প্যানডেমিকের জন্য অতি শক্তিশালী অ্যামেরিকায় মৃত্যুর সংখ্যা দুই লাখেরও বেশি । ভারতও প্রায় একই পথের পথিক হতে চলেছে । কারণ, এক সপ্তাহেই মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখে পৌঁছেছে । যদিও কোরোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থতার সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মৃত্যুর হার ক্রমশ নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে ৷ এটা খুবই আশাপ্রদ খবর । তবে রোজ আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা থেকে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে । এই মারাত্মক প্যানডেমিকে যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের পুরোপুরি সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব । এর সঙ্গে সচেতনতার প্রচার করতে হবে এবং জনগণকে সজাগ করতে হবে, তাহলেই এই মহামারীকে এড়ানো যেতে পারে । যদিও দেশের জনসংখ্যার 90% মানুষ এটা জানেন যে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক । তবে সবচেয়ে যন্ত্রণার হল মাস্কের সঠিক ব্যবহার করছেন মাত্র 44% মানুষ । কিছু অর্থহীন অজুহাত দেখা যাচ্ছে ৷ কেউ বলছেন মাস্ক পরলে দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে । আবার কারও বক্তব্য যেহেতু শারীরিক দূরত্ব পালন করা হচ্ছে, তাই মাস্ক পরার কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই । এর ফলে COVID-কে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে এবং মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে খেলা করা হচ্ছে ।
আজ মানবতার কাছে যে প্রশ্নটা সবচেয়ে বেশি তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে, তা হল COVID কবে নিয়ন্ত্রণে আসবে ? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন , ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষেধক প্রস্তুতকারক । COVID-এর ওষুধ প্রস্তুত ও সরবরাহের ক্ষমতার বিষয়টি নিয়ে বিশ্বের সব দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ স্থাপন করবে ভারত । বিভিন্ন দেশে হিমঘরের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা নিয়ে সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও তিনি সম্প্রতি দিয়েছেন ৷ সেরাম ইনস্টিটিউটের CEO আদর পুনাওয়ালা প্রশ্ন করেছেন, ‘‘যদি দেশের সব মানুষের জন্য ভ্যাকসিন উপলব্ধ করতে হয়, তাহলে পরের বছরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে 80 হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে ? কেন্দ্র কি এই পরিমাণ টাকা খরচ করতে প্রস্তুত ?’’ ভ্যাকসিন তৈরি করছে ভারত বায়োটেক, জাইডাস ক্যাডিলা ও সেরাম ইনস্টিটিউট । তারা এখন মানুষের উপর পরীক্ষার স্তরে রয়েছে । কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে দেশের 130 কোটি মানুষের জন্য বৈজ্ঞানিক ও সহযোগিতা মূলক স্বাস্থ্য পরিষেবা কৌশল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া উচিত । সংবাদে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে সমস্ত জেলায় প্রতিষেধকের ব্যবস্থা করা কোনও যোজনা তৈরির পরিকল্পনা করছে । 1977 সাল থেকে রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত কর্মসূচি বিশ্বব্যাপী চলছে । সেই কর্মসূচিকেই ব্যবহার করতে চাইছে সরকার । সময়ের সঙ্গে লড়াই করার মাধ্যমে জীবনদায়ী প্রতিষেধক তৈরি করে আমরা বিশ্বের চাহিদা পূরণ করতে পারব । এই বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক বড় বড় সংস্থাগুলি ৷ যদিও এখনও এটা নিশ্চিত নয় যে কোনও প্রতিষেধক কোরোনাকে প্রতিরোধ সক্ষম হবে এবং সুরক্ষা সংক্রান্ত মান বজায় থাকবে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ব্রিটেন ও জাপান ইতিমধ্যেই 130 কোটি ডোজ নেবে বলে আগেই চুক্তি করে রেখেছে । অতীতে যেমন হয়েছে, তেমন এবারও যাতে ধনী দেশগুলি সমস্ত প্রতিষেধক নিয়ে নিতে না পারে, তার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( WHO ) একটি দল তৈরি করেছে ভ্যাকসিন অ্যালয়েন্সের সঙ্গে । যাতে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত দেশগুলিকে 200 কোটি ডোজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় । যতক্ষণ না সঠিক প্রতিষেধক প্রস্তুত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ‘একজন সকলের জন্য এবং সকলে একজনের জন্য’ এই কথা মাথায় রেখে সচেতনতার সঙ্গে সুরক্ষা সংক্রান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে ।