ETV Bharat / bharat

অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে, 10 লাখ টাকার ভাড়াটে খুনি লাগিয়ে জামাইকে হত্যা ! - Miryalaguda honour killing

একজন উচ্চবর্ণের, একজন দলিত ৷ শুধু এই কারণেই বিয়ের আটমাসের মধ্যেই শ্বশুর টি মারুতি রাওয়ের পাঠানো ভাড়াটে খুনি কুপিয়ে খুন করে প্রণয়কে

অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে, 10 লাখ টাকার ভাড়াটে খুনি লাগিয়ে জামাইকে হত্যা !
author img

By

Published : Aug 21, 2019, 10:02 AM IST

হায়দরাবাদ, 21 অগাস্ট : পরস্পরের প্রতি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত ছেলে মেয়ে দুটি, কৈশোরের প্রেম ৷ বিয়েও করেছিল তারা অনেক বাধা পেরিয়ে ৷ অম্রুতা বর্ষিনী (21), প্রণয় পেরুমুল্লা (23) ৷ বাধা বলতে? একজন উচ্চবর্ণের, একজন দলিত ৷ শুধু এই কারণেই বিয়ের আটমাসের মধ্যেই শ্বশুর টি মারুতি রাওয়ের পাঠানো ভাড়াটে খুনি কুপিয়ে খুন করে প্রণয়কে ৷ অম্রুতা তখম তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা ৷ স্বামীর সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে গেছিলেন ৷ সেখানেই কুপিয়ে খুন করা হয় প্রণয়কে৷ এই মামলায় মূল অভিযুক্ত আসগর আলি সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেলেও নজর রাখা হয়েছে তার উপরে ৷ অভিজাত ও ধনী মারুতি রাও জামিনে মুক্ত ৷ তবে, বাবাকে শাস্তি দিতে যথাসাধ্য লড়ে যাচ্ছেন অম্রুতা ৷ প্রণয়ের সুবিচারের দাবিতে । 56 পাতার চার্জশিট তৈরি করেছে পুলিশ । সেই সঙ্গে আদালতে পেশ করা হয়েছে একটি কল রেকর্ডিং । সেই রেকর্ডিংয়ে ছিল রাওয়ের সঙ্গে এলাকার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার কথোপকথন । যাতে ধরা পড়ে, ভাড়াটে খুনি ও রাওয়ের মাঝে 'মিডলম্যান' হিসেবে কাজ করেছিলেন ওই নেতা । গ্রেপ্তার হন তিনি । ফের ধরা পড়েন রাও ।

তদন্তে উঠে এসেছে, অম্রুতার বাবা টি মারুতি রাও 10 লাখ টাকা দিয়েছিলেন প্রণয়কে খুন করতে ৷ প্রথম থেকেই অম্রুতা কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়ে এসেছেন তাঁর বাবার৷ সমাজের ভ্রূকুটি 2018 সালেও তাড়া করেছিল যুগলকে ৷ তবুও ভালোবাসার কাছে হার মেনেছিল সবকিছু ৷ হায়দরাবাদের আর্য সমাজে বিয়ে করেন প্রণয়-অম্রুতা৷ কিন্তু মারুতি রাও যে এজাতীয় কোনও পরিকল্পনা করেছেন, তা অম্রুতা ভাবতেও পারেনি ৷

ডাক্তারের চেম্বার ছেড়ে বেরোনোর পর প্রণয়ের উপর বিশাল ধারালো ভোজালি নিয়ে আচমকাই হামলা চালায় এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি ৷ এলোপাথাড়ি কোপ চলে মাথায়, ঘাড়ে । ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান প্রণয় । অন্তঃসত্ত্বা অম্রুতা জ্ঞান হারানোর আগে কেবল ফোন করতে পেরেছিলেন নিজের বাবাকে । ওইটুকু সময়ে তাঁর কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছিল সবই । অম্রুতা ফোনে বলেন, ''প্রণয়কে মেরে ফেললে ৷ এটা তুমি কী করলে?'' মামলাও শুরু হয় এই জায়গা থেকেই ৷ গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তেলাঙ্গানার এই ঘটনায় তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, অনার কিলিং অর্থাৎ পরিবারের সম্মান রক্ষার কারণে খুন করা হয়েছে প্রণয়কে । অম্রুতার বাবা স্বয়ং এই খুনের ছক সাজিয়েছেন বহু দিন ধরে । অস্পৃশ্য, মধ্যবিত্ত, দলিত সম্প্রদায়ের প্রণয়ের সঙ্গে নিজের আদরের মেয়ের সম্পর্ক মোটেই মেনে নিতে পারেননি অম্রুতার বাবা । তবে তিনি যে নিজের জামাইকে খুন করানোর জন্য ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করবেন, ভাবতে পারেননি কেউই ।

চার্জশিটে বলা হয়েছে, এই সময় দাঁড়িয়েও যে জাত-ধর্মের কারণে ধনী ও স্বচ্ছল পরিবার, দলিত সম্প্রদায় বা অনগ্রসর সম্প্রদায়ের কাউকে খুনের ছক কষছে, এটা লজ্জার ৷ দক্ষিণ ভারতের তুলনায় উত্তর ভারতে অনার কিলিংয়ের সংখ্যাটা আরও বেশি ৷ উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ডে এ জাতীয় ঘটনার হার সবচেয়ে বেশি, বলছে রিপোর্ট ৷ 2017 সালের একটি গবেষণা-রিপোর্ট বলছে, দেশে যত বিয়ে হয়, তার মধ্যে মাত্র 5.8 শতাংশ অন্য জাতের বিয়ের ঘটনা সামনে আসে । শুধু তাই নয়, গত চার দশক ধরে দেশে আরও নানা রকমের পরিবর্তন ঘটলেও, এই সংখ্যার তেমন পরিবর্তন ঘটেনি । অত্যন্ত হতাশাজনক ভাবে বেড়ে চলেছে শুধুমাত্র ভিন জাতে বিয়ের কারণে খুনের (অনার কিলিং) ঘটনা ৷

অমৃতার এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে দ্রুত ৷ গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রণয় খুন হওয়ার পর থেকেই ঘটনায় সুবিচার চেয়ে প্রতিবাদ শুরু হয় তেলাঙ্গানায় ৷ অম্রুতা জন্ম দিয়েছেন পুত্রসন্তানের ৷ তাঁর কথায়, “মেয়ের মতোই স্নেহ করেন শ্বশুরমশাই । নাতি তাঁর চোখের মণি ।” অবশ্য এখন নয়, বিয়ের আগে থেকেই যখন প্রণয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় অম্রুতার, তখন থেকেই প্রণয়ের পরিবারের স্নেহের পাত্রী ছিলেন তিনি । প্রণয়ের বাড়ি থেকে মিনিট পাঁচেকের দূরত্বেই অম্রুতার বাড়ি । কয়েক একর জায়গা নিয়ে বিলাসবহুল প্রাসাদ তাঁদের ৷ সেখানে প্রণয়ের সাধারণ বাড়ি ৷ তবে অম্রুতার বাবার কাছে অসমবর্ণ বিবাহ ছিল ঘৃণার কারণ ৷ অম্রুতার অভিযোগ, তিনি সন্তানসম্ভবা জানতে পেরে ভ্রূণ হত্যার পরামর্শও দিয়েছিলেন মারুতি । রাস্তাঘাটে সাবধানে থাকতেন তাঁরা ৷ প্রণয় ও অম্রুতা খানিকটা ভয়ও পেয়েছিলেন ৷ কিন্তু তাঁর বাবা যে প্রণয়কে খুন করবেন, তা অম্রুতা ভাবতে পারেননি, পুলিশের কাছে বাবার কঠিনতম শাস্তি চেয়ে একথা জানিয়েছেন তিনি ৷

অম্রুতা জানান, তিনি যখন খুব ছোটো ছিলেন, স্কুলে যেতেন, তখন থেকেই তাঁর বাবা-মা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল, তিনি আর্য বৈশ্য পরিবারের মেয়ে । যে কোনও জাতের ছেলেমেয়ের সঙ্গে যেন না মেশেন । বিশেষ করে দলিতদের নিয়ে তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করত অম্রুতার পরিবার । স্কুলে পড়ার সময় থেকেই স্কুলের দামাল অ্যাথলিট প্রণয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন অম্রুতা । বন্ধুত্ব গড়ায় প্রেমে । একথা জানতে পেরে মেয়েকে বেধড়ক মারেন মারুতি রাও । কেড়ে নেওয়া হয় ফোন, ল্যাপটপ । এক রকম গৃহবন্দি করে রাখেন অম্রুতাকে। কিছু দিন পরে ভরতি করিয়ে দেন অন্য স্কুলে । এর পরে কেটে যায় আরও ছ’বছর । স্কুল পেরিয়ে কলেজে পড়তে শুরু করেন অম্রুতা । কিন্তু ভালোবাসা তাতে একটুও কমেনি । বরং আরও প্রত্যয়ী হয়েছিলেন তাঁরা।

image
ছোট্ট নেহান বাবাকে দেখতে পায়নি ৷ বাবার খুনিদের যেন জেলের বাইরে দেখতে না হয় তাকে , বলছেন অম্রুতা৷

আদালতে অম্রুতা বলেন, “আমি একটু বড় হতেই আমার বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে বাবা । বিয়ে নিয়ে আমার ইচ্ছের কোনও মূল্য ছিল না । বাবা এ-ও বলেছিল, ''উঁচু জাতের কোনও ভিখারির সঙ্গে তোমার বিয়ে দেব তা-ও ভালো, তবু নিচু জাতে বিয়ে দেব না । সে যত ভালো ছেলেই হোক ।''

ফ্যাশন ডিজ়াইনিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন অম্রুতা । প্রণয়ও তত দিনে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন অন্য কলেজে । 2018 সালের 30 জানুয়ারি, বাড়ির সকলের অগোচরে, ছোটো ব্যাগে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে পালান অম্রুতা । ঠিক করেছিলেন, বিয়ে সেরে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যাবেন । সেখানে ব্যবসা শুরু করবেন দু’জনে মিলে । সেই মতো খুব কাছের কয়েক জন বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে হায়দরাবাদের আর্য সমাজে আইনি মতে বিয়ে করে নেন । আবেদনও করে দেন পাসপোর্ট-ভিসার । অম্রুতা তাঁর বাড়িতে জানিয়েও দেন সব কিছু । প্রণয়ের বাড়ি থেকে কোনও আপত্তি ছিল না অবশ্য । অম্রুতা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় স্থির হয়, এখনই বিদেশে যাবেন না । সামাজিক ভাবে ফের 17 অগাস্ট বেশ ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে যায় তাঁদের । অম্রুতার বাবা-মা অবশ্য আসেননি সেই বিয়েতে । তারপর সেপ্টেম্বরেই খুন হন প্রণয় ৷ অম্রুতার নেতৃত্বে শুরু হয় ‘জাস্টিস ফর প্রণয়’ নামে প্রতিবাদ-আন্দোলন । এলাকায় একটি ছোটো মূর্তিও নির্মিত হয় প্রণয়ের । দলিত সম্প্রদায়ের তরফেও শুরু হয় আন্দোলন ৷

যদিও আর্য বৈশ্য সমাজের একটা বড় অংশ মারুতি রাওয়ের গ্রেপ্তারির বিরোধিতা করে মিছিল বের করে । আর্য বৈশ্য সমাজের সভাপতি ভূপতি রাজুর দাবি, “এত ছোটো বয়সের প্রেম কোনও ভাবেই সঙ্গত ছিল না । সে কারণেই খুন হতে হয়েছে প্রণয়কে । নিজের সন্তানের ভালোর জন্য বাবা-মা অনেক কিছুই করেন ।” এমন কী, 'পেরেন্টস প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশন' তৈরি করা হয় মারুতি রাওয়ের সমর্থনে । মারুতি রাওয়ের পক্ষের উকিল, শ্যামসুন্দর চিলুকুরির বক্তব্য ছিল, ''নিম্নবর্ণের যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তাঁকে বিয়ে করেছেন অম্রুতা । এ ধরনের ঘটনাকে প্রশ্রয় দিলে সমাজের অন্য সব উচ্চ বর্ণের পরিবারের মেয়েরাও বিপথে যেতে পারে । প্রেমের অজুহাতে 'অন্যায়' ঘটে চলবে ।''

তবুও হাল ছাড়েনি প্রণয়ের পরিবার ৷ হাল ছাড়েননি অম্রুতা ৷ লড়ছেন সন্তানের জন্য ৷ নিজের ভালোবাসার জন্য ৷ তিনি চান, ছোট্ট নেহান বাবাকে দেখতে পায়নি ৷ বাবার খুনিদের যেন জেলের বাইরে দেখতে না হয় তাকে ৷

হায়দরাবাদ, 21 অগাস্ট : পরস্পরের প্রতি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত ছেলে মেয়ে দুটি, কৈশোরের প্রেম ৷ বিয়েও করেছিল তারা অনেক বাধা পেরিয়ে ৷ অম্রুতা বর্ষিনী (21), প্রণয় পেরুমুল্লা (23) ৷ বাধা বলতে? একজন উচ্চবর্ণের, একজন দলিত ৷ শুধু এই কারণেই বিয়ের আটমাসের মধ্যেই শ্বশুর টি মারুতি রাওয়ের পাঠানো ভাড়াটে খুনি কুপিয়ে খুন করে প্রণয়কে ৷ অম্রুতা তখম তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা ৷ স্বামীর সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে গেছিলেন ৷ সেখানেই কুপিয়ে খুন করা হয় প্রণয়কে৷ এই মামলায় মূল অভিযুক্ত আসগর আলি সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেলেও নজর রাখা হয়েছে তার উপরে ৷ অভিজাত ও ধনী মারুতি রাও জামিনে মুক্ত ৷ তবে, বাবাকে শাস্তি দিতে যথাসাধ্য লড়ে যাচ্ছেন অম্রুতা ৷ প্রণয়ের সুবিচারের দাবিতে । 56 পাতার চার্জশিট তৈরি করেছে পুলিশ । সেই সঙ্গে আদালতে পেশ করা হয়েছে একটি কল রেকর্ডিং । সেই রেকর্ডিংয়ে ছিল রাওয়ের সঙ্গে এলাকার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার কথোপকথন । যাতে ধরা পড়ে, ভাড়াটে খুনি ও রাওয়ের মাঝে 'মিডলম্যান' হিসেবে কাজ করেছিলেন ওই নেতা । গ্রেপ্তার হন তিনি । ফের ধরা পড়েন রাও ।

তদন্তে উঠে এসেছে, অম্রুতার বাবা টি মারুতি রাও 10 লাখ টাকা দিয়েছিলেন প্রণয়কে খুন করতে ৷ প্রথম থেকেই অম্রুতা কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়ে এসেছেন তাঁর বাবার৷ সমাজের ভ্রূকুটি 2018 সালেও তাড়া করেছিল যুগলকে ৷ তবুও ভালোবাসার কাছে হার মেনেছিল সবকিছু ৷ হায়দরাবাদের আর্য সমাজে বিয়ে করেন প্রণয়-অম্রুতা৷ কিন্তু মারুতি রাও যে এজাতীয় কোনও পরিকল্পনা করেছেন, তা অম্রুতা ভাবতেও পারেনি ৷

ডাক্তারের চেম্বার ছেড়ে বেরোনোর পর প্রণয়ের উপর বিশাল ধারালো ভোজালি নিয়ে আচমকাই হামলা চালায় এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি ৷ এলোপাথাড়ি কোপ চলে মাথায়, ঘাড়ে । ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান প্রণয় । অন্তঃসত্ত্বা অম্রুতা জ্ঞান হারানোর আগে কেবল ফোন করতে পেরেছিলেন নিজের বাবাকে । ওইটুকু সময়ে তাঁর কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছিল সবই । অম্রুতা ফোনে বলেন, ''প্রণয়কে মেরে ফেললে ৷ এটা তুমি কী করলে?'' মামলাও শুরু হয় এই জায়গা থেকেই ৷ গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তেলাঙ্গানার এই ঘটনায় তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, অনার কিলিং অর্থাৎ পরিবারের সম্মান রক্ষার কারণে খুন করা হয়েছে প্রণয়কে । অম্রুতার বাবা স্বয়ং এই খুনের ছক সাজিয়েছেন বহু দিন ধরে । অস্পৃশ্য, মধ্যবিত্ত, দলিত সম্প্রদায়ের প্রণয়ের সঙ্গে নিজের আদরের মেয়ের সম্পর্ক মোটেই মেনে নিতে পারেননি অম্রুতার বাবা । তবে তিনি যে নিজের জামাইকে খুন করানোর জন্য ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করবেন, ভাবতে পারেননি কেউই ।

চার্জশিটে বলা হয়েছে, এই সময় দাঁড়িয়েও যে জাত-ধর্মের কারণে ধনী ও স্বচ্ছল পরিবার, দলিত সম্প্রদায় বা অনগ্রসর সম্প্রদায়ের কাউকে খুনের ছক কষছে, এটা লজ্জার ৷ দক্ষিণ ভারতের তুলনায় উত্তর ভারতে অনার কিলিংয়ের সংখ্যাটা আরও বেশি ৷ উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ডে এ জাতীয় ঘটনার হার সবচেয়ে বেশি, বলছে রিপোর্ট ৷ 2017 সালের একটি গবেষণা-রিপোর্ট বলছে, দেশে যত বিয়ে হয়, তার মধ্যে মাত্র 5.8 শতাংশ অন্য জাতের বিয়ের ঘটনা সামনে আসে । শুধু তাই নয়, গত চার দশক ধরে দেশে আরও নানা রকমের পরিবর্তন ঘটলেও, এই সংখ্যার তেমন পরিবর্তন ঘটেনি । অত্যন্ত হতাশাজনক ভাবে বেড়ে চলেছে শুধুমাত্র ভিন জাতে বিয়ের কারণে খুনের (অনার কিলিং) ঘটনা ৷

অমৃতার এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে দ্রুত ৷ গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রণয় খুন হওয়ার পর থেকেই ঘটনায় সুবিচার চেয়ে প্রতিবাদ শুরু হয় তেলাঙ্গানায় ৷ অম্রুতা জন্ম দিয়েছেন পুত্রসন্তানের ৷ তাঁর কথায়, “মেয়ের মতোই স্নেহ করেন শ্বশুরমশাই । নাতি তাঁর চোখের মণি ।” অবশ্য এখন নয়, বিয়ের আগে থেকেই যখন প্রণয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় অম্রুতার, তখন থেকেই প্রণয়ের পরিবারের স্নেহের পাত্রী ছিলেন তিনি । প্রণয়ের বাড়ি থেকে মিনিট পাঁচেকের দূরত্বেই অম্রুতার বাড়ি । কয়েক একর জায়গা নিয়ে বিলাসবহুল প্রাসাদ তাঁদের ৷ সেখানে প্রণয়ের সাধারণ বাড়ি ৷ তবে অম্রুতার বাবার কাছে অসমবর্ণ বিবাহ ছিল ঘৃণার কারণ ৷ অম্রুতার অভিযোগ, তিনি সন্তানসম্ভবা জানতে পেরে ভ্রূণ হত্যার পরামর্শও দিয়েছিলেন মারুতি । রাস্তাঘাটে সাবধানে থাকতেন তাঁরা ৷ প্রণয় ও অম্রুতা খানিকটা ভয়ও পেয়েছিলেন ৷ কিন্তু তাঁর বাবা যে প্রণয়কে খুন করবেন, তা অম্রুতা ভাবতে পারেননি, পুলিশের কাছে বাবার কঠিনতম শাস্তি চেয়ে একথা জানিয়েছেন তিনি ৷

অম্রুতা জানান, তিনি যখন খুব ছোটো ছিলেন, স্কুলে যেতেন, তখন থেকেই তাঁর বাবা-মা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল, তিনি আর্য বৈশ্য পরিবারের মেয়ে । যে কোনও জাতের ছেলেমেয়ের সঙ্গে যেন না মেশেন । বিশেষ করে দলিতদের নিয়ে তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করত অম্রুতার পরিবার । স্কুলে পড়ার সময় থেকেই স্কুলের দামাল অ্যাথলিট প্রণয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন অম্রুতা । বন্ধুত্ব গড়ায় প্রেমে । একথা জানতে পেরে মেয়েকে বেধড়ক মারেন মারুতি রাও । কেড়ে নেওয়া হয় ফোন, ল্যাপটপ । এক রকম গৃহবন্দি করে রাখেন অম্রুতাকে। কিছু দিন পরে ভরতি করিয়ে দেন অন্য স্কুলে । এর পরে কেটে যায় আরও ছ’বছর । স্কুল পেরিয়ে কলেজে পড়তে শুরু করেন অম্রুতা । কিন্তু ভালোবাসা তাতে একটুও কমেনি । বরং আরও প্রত্যয়ী হয়েছিলেন তাঁরা।

image
ছোট্ট নেহান বাবাকে দেখতে পায়নি ৷ বাবার খুনিদের যেন জেলের বাইরে দেখতে না হয় তাকে , বলছেন অম্রুতা৷

আদালতে অম্রুতা বলেন, “আমি একটু বড় হতেই আমার বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে বাবা । বিয়ে নিয়ে আমার ইচ্ছের কোনও মূল্য ছিল না । বাবা এ-ও বলেছিল, ''উঁচু জাতের কোনও ভিখারির সঙ্গে তোমার বিয়ে দেব তা-ও ভালো, তবু নিচু জাতে বিয়ে দেব না । সে যত ভালো ছেলেই হোক ।''

ফ্যাশন ডিজ়াইনিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন অম্রুতা । প্রণয়ও তত দিনে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন অন্য কলেজে । 2018 সালের 30 জানুয়ারি, বাড়ির সকলের অগোচরে, ছোটো ব্যাগে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে পালান অম্রুতা । ঠিক করেছিলেন, বিয়ে সেরে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যাবেন । সেখানে ব্যবসা শুরু করবেন দু’জনে মিলে । সেই মতো খুব কাছের কয়েক জন বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে হায়দরাবাদের আর্য সমাজে আইনি মতে বিয়ে করে নেন । আবেদনও করে দেন পাসপোর্ট-ভিসার । অম্রুতা তাঁর বাড়িতে জানিয়েও দেন সব কিছু । প্রণয়ের বাড়ি থেকে কোনও আপত্তি ছিল না অবশ্য । অম্রুতা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় স্থির হয়, এখনই বিদেশে যাবেন না । সামাজিক ভাবে ফের 17 অগাস্ট বেশ ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে যায় তাঁদের । অম্রুতার বাবা-মা অবশ্য আসেননি সেই বিয়েতে । তারপর সেপ্টেম্বরেই খুন হন প্রণয় ৷ অম্রুতার নেতৃত্বে শুরু হয় ‘জাস্টিস ফর প্রণয়’ নামে প্রতিবাদ-আন্দোলন । এলাকায় একটি ছোটো মূর্তিও নির্মিত হয় প্রণয়ের । দলিত সম্প্রদায়ের তরফেও শুরু হয় আন্দোলন ৷

যদিও আর্য বৈশ্য সমাজের একটা বড় অংশ মারুতি রাওয়ের গ্রেপ্তারির বিরোধিতা করে মিছিল বের করে । আর্য বৈশ্য সমাজের সভাপতি ভূপতি রাজুর দাবি, “এত ছোটো বয়সের প্রেম কোনও ভাবেই সঙ্গত ছিল না । সে কারণেই খুন হতে হয়েছে প্রণয়কে । নিজের সন্তানের ভালোর জন্য বাবা-মা অনেক কিছুই করেন ।” এমন কী, 'পেরেন্টস প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশন' তৈরি করা হয় মারুতি রাওয়ের সমর্থনে । মারুতি রাওয়ের পক্ষের উকিল, শ্যামসুন্দর চিলুকুরির বক্তব্য ছিল, ''নিম্নবর্ণের যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তাঁকে বিয়ে করেছেন অম্রুতা । এ ধরনের ঘটনাকে প্রশ্রয় দিলে সমাজের অন্য সব উচ্চ বর্ণের পরিবারের মেয়েরাও বিপথে যেতে পারে । প্রেমের অজুহাতে 'অন্যায়' ঘটে চলবে ।''

তবুও হাল ছাড়েনি প্রণয়ের পরিবার ৷ হাল ছাড়েননি অম্রুতা ৷ লড়ছেন সন্তানের জন্য ৷ নিজের ভালোবাসার জন্য ৷ তিনি চান, ছোট্ট নেহান বাবাকে দেখতে পায়নি ৷ বাবার খুনিদের যেন জেলের বাইরে দেখতে না হয় তাকে ৷

Gorakhpur (Uttar Pradesh), Aug 21 (ANI): In Uttar Pradesh's Gorakhpur, a unique initiative has begun on August 20. The city administration of Gorakhpur has started a project to geo-tag cattle to curb the rising cases of abandoned cattle wandering the streets. Gorakhpur Municipal Commissioner Anjani Kumar Singh said that the project was launched as there were several complaints regarding traffic issues due to abandoned cattle wandering on streets. While speaking to ANI, Municipal Commissioner of Gorakhpur Anjani Kumar Singh said, "We have started geo-tagging of cattle as there were several complaints regarding traffic issues due to abandoned cattle wandering on roads." "Now, if a geo-tagged animal is found wandering on streets, we can identify the owner and penalise him for leaving his or her cattle stranded on roads. With Geo-tagging, it will also help us to keep a count of cattle in the area," he added.
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.