ETV Bharat / bharat

2014-র ভরাডুবির জন্য দায়ী সোনিয়া ও মনমোহন, স্মৃতিকথায় প্রণব - Pranab Mukherjee's book The Presidential Years

আগামী বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হতে চলেছে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীমূলক বই "দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ারস" ।

pranab mukherjee blames sonia gandhi & manmohan singh for 2014 debacle in his book
pranab mukherjee blames sonia gandhi & manmohan singh for 2014 debacle in his book
author img

By

Published : Dec 12, 2020, 8:09 AM IST

Updated : Dec 12, 2020, 11:10 AM IST

দিল্লি, 12 ডিসেম্বর : বর্তমানে ঘরে-বাইরে সমালোচনায় বিদ্ধ কংগ্রেস । বিশেষ করে বিহার বিধানসভা ভোট ও কয়েকটি রাজ্যের উপনির্বাচনে কংগ্রেসের খারাপ ফলে দলের শীর্ষনেতাদের দিকে আঙুল উঠেছে । এই পরিস্থিতিতে ঘি ঢেলেছে প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রকাশিত হতে চলা আত্মজীবনীমূলক বই "দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ারস" । ইতিমধ্যেই বইটির কিছু অংশ প্রকাশ্যে এসেছে । যেখানে 2014 লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবির জন্য দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধি ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে দায়ী করেছেন কংগ্রেসের প্রয়াত নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় ।

আগামী বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হতে চলেছে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীমূলক বই "দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ারস"-এর অন্তিম পর্ব । তাঁর মৃত্যুর চারমাস পর । কিন্তু বইটি প্রকাশিত হওয়ার আগেই যেন বিতর্কের আঁচ । বইটির যেটুকু অংশ প্রকাশ্যে এসেছে তাতে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি লিখেছেন, "কংগ্রেসের অনেকেই মনে করেন যে 2004 সালে আমি প্রধানমন্ত্রী হলে 2014 সালের বিপর্যয় অনেকটাই এড়ানো যেত ।" যদিও এই ধারণার সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায় একমত ছিলেন না । তাঁর কথায়, "যদিও আমার মনে হয়েছে 2012 সালে আমি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর দলের শীর্ষনেতারা রাজনৈতিক দিশা হারিয়ে ফেলেছিলেন ।" এরজন্য সরাসরি দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধি ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের দিকে আঙুল তুলেছেন প্রণব । লিখেছেন, " সোনিয়া দলের কাজ সামলাতে পারছিলেন না । সংসদে মনমোহন সিংয়ের দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে অন্যান্য সাংসদদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ।"

আরও পড়ুন : "ইউপিএ চেয়ারম্য়ানের দায়িত্ব নিচ্ছি না", জল্পনা ওড়ালেন শরদ পাওয়ার

বইটিতে 2014-র লোকসভা ভোটে হারের কারণও বিশদে আলোচনা করেছেন । পাশাপাশি মনমোহন সিং ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে পার্থক্যটাও তুলে ধরেছেন । তিনি লিখেছেন, "আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রীর উপরই সরকারের নৈতিক কর্তৃত্ব থাকে । প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর প্রশাসনের ছায়া পড়ে দেশের প্রতিটি রাজ্যের কার্যকারিতার উপর । কিন্তু ড. সিং জোট বাঁচাতে বেশি সময় ব্যয় করেছিলেন । সরকারের উপর যার খারাপ প্রভাব পড়েছিল ।"

তাঁকে বলা হত "না হওয়া দেশের সেরা প্রধানমন্ত্রী" । রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কংগ্রেসের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন । তাই মনে করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁকেই বেছে নেবেন সোনিয়া গান্ধি । যদিও 2004 সালে প্রধানমন্ত্রী পদে বসেন মনমোহন সিং । এই সিদ্ধান্ত তাঁকে আঘাত করেছিল । তাঁর এই হতাশ হওয়াকে সঙ্গত বলেছিলেন মনমোহন সিং । 2017-তে বইটির আগের পর্বের প্রকাশ অনুষ্ঠানে মনমোহন সিং বলেন, "তাঁর হতাশ হওয়ার কারণ ছিল । যদিও উনি আমাকে শ্রদ্ধা করতেন । এবং আমাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ।" বইটির আগের পর্বে কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর জটিল সম্পর্ককে কীভাবে সামলেছিলেন তাঁর বর্ণনা করেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায় । এছাড়া বইটিতে বিভিন্ন রাজ্যে তাঁর রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে লেখা হয়েছে । 2016 সালে নোটবন্দীর সময় তাঁর ভূমিকা নিয়েও লেখা হয়েছে ।

প্রণববাবুর রাজনৈতিক চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল তিনি সারা জীবন ধরে এক জন সফল ‘ব্যাকরুম বয়’। বলা যায়, সারা জীবন তিনি ‘ব্যাক সিট ড্রাইভিং’ করেছেন । বলা যেতে পারে, তিনি যেন নাট্যমঞ্চের ‘গ্রিনরুম ম্যান’, নাটক বা ফিল্মের প্রযোজকের ভূমিকায় । তিনি নায়ক নন । কিন্তু অন্যতম ‘প্রোডিউসার অফ দা শো’। আর এই কমিটিতে সফল হওয়ার জন্য তাঁর চরিত্রে প্রধান গুণ ছিল, তিনি চিরকাল সকলকে ‘অন বোর্ড’ নিয়ে চলতে চেয়েছেন । তা সে লালুপ্রসাদ যাদবই হোন বা লালকৃষ্ণ আদবানি । তিনি ‘প্লুরালিস্ট’, তিনি ‘ম্যান অফ গ্রেট কনসেন্সাস’। ভারতীয় রাজনীতিতে সর্বসম্মতিতে তৈরি রাজনীতির তিনি অন্যতম জনক । এই একটা বৈশিষ্ট্যের জন্য পরমাণু চুক্তির সময় মনমোহন সিংহের আমলেও প্রকাশ কারাত ও সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে আলোচনায় বিবাদ মেটানোর দায়িত্বও পালন করেছিলেন তিনিই । আক্রমণাত্মক বিজেপি-কে ঠান্ডা করার জন্য কংগ্রেস জমানায় প্রণববাবুকেই মধ্যস্থতার দায়িত্ব দিতেন সোনিয়া গান্ধি । আবার কূটনৈতিক সমস্যায় বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ই ছিলেন ভরসার পাত্র ।

আরও পড়ুন : অজানা থেকে গেল অনেক কিছু...

জীবনের শেষ পর্বে রাজনৈতিক ‘সন্ন্যাস’ নিয়ে রাইসিনার বাসিন্দা হয়েছিলেন । কিন্তু, সে ক্ষেত্রেও নিজের স্বতন্ত্রকে বিসর্জন দেননি । রাইসিনা হয়ে উঠেছিল প্রণবময় । রাইসিনার বাগান-দরজা খুলেছিল সাধারণের জন্য । যেন সেখানেও নিজস্বতা । রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর প্রতিটি বিদেশ সফর নতুন মাইল-ফলক তৈরি করেছিল । পাশের দেশে বাংলাদেশ থেকে শ্রীলঙ্কা সব ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন নিজের মতো । তাই বোধ হয়, আগাগোড়া কংগ্রেসি হয়েও জীবনের শেষলগ্নে এসে সংঘের সভায় উপস্থিত হতে দুইবার ভাবেননি । বিতর্ক হয়েছে । সোনিয়াদের মুখের হাসি শক্ত হয়েছে । কিন্তু, নিজ সিদ্ধান্তে অচল থেকেছেন প্রণববাবু ।

আর এবার তাঁর নতুন বইকে ঘিরে ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের অন্দরমহলে শুরু হয়ে গিয়েছে নয়া বিতর্ক ।

দিল্লি, 12 ডিসেম্বর : বর্তমানে ঘরে-বাইরে সমালোচনায় বিদ্ধ কংগ্রেস । বিশেষ করে বিহার বিধানসভা ভোট ও কয়েকটি রাজ্যের উপনির্বাচনে কংগ্রেসের খারাপ ফলে দলের শীর্ষনেতাদের দিকে আঙুল উঠেছে । এই পরিস্থিতিতে ঘি ঢেলেছে প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রকাশিত হতে চলা আত্মজীবনীমূলক বই "দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ারস" । ইতিমধ্যেই বইটির কিছু অংশ প্রকাশ্যে এসেছে । যেখানে 2014 লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবির জন্য দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধি ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে দায়ী করেছেন কংগ্রেসের প্রয়াত নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় ।

আগামী বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হতে চলেছে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীমূলক বই "দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ারস"-এর অন্তিম পর্ব । তাঁর মৃত্যুর চারমাস পর । কিন্তু বইটি প্রকাশিত হওয়ার আগেই যেন বিতর্কের আঁচ । বইটির যেটুকু অংশ প্রকাশ্যে এসেছে তাতে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি লিখেছেন, "কংগ্রেসের অনেকেই মনে করেন যে 2004 সালে আমি প্রধানমন্ত্রী হলে 2014 সালের বিপর্যয় অনেকটাই এড়ানো যেত ।" যদিও এই ধারণার সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায় একমত ছিলেন না । তাঁর কথায়, "যদিও আমার মনে হয়েছে 2012 সালে আমি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর দলের শীর্ষনেতারা রাজনৈতিক দিশা হারিয়ে ফেলেছিলেন ।" এরজন্য সরাসরি দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধি ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের দিকে আঙুল তুলেছেন প্রণব । লিখেছেন, " সোনিয়া দলের কাজ সামলাতে পারছিলেন না । সংসদে মনমোহন সিংয়ের দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে অন্যান্য সাংসদদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ।"

আরও পড়ুন : "ইউপিএ চেয়ারম্য়ানের দায়িত্ব নিচ্ছি না", জল্পনা ওড়ালেন শরদ পাওয়ার

বইটিতে 2014-র লোকসভা ভোটে হারের কারণও বিশদে আলোচনা করেছেন । পাশাপাশি মনমোহন সিং ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে পার্থক্যটাও তুলে ধরেছেন । তিনি লিখেছেন, "আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রীর উপরই সরকারের নৈতিক কর্তৃত্ব থাকে । প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর প্রশাসনের ছায়া পড়ে দেশের প্রতিটি রাজ্যের কার্যকারিতার উপর । কিন্তু ড. সিং জোট বাঁচাতে বেশি সময় ব্যয় করেছিলেন । সরকারের উপর যার খারাপ প্রভাব পড়েছিল ।"

তাঁকে বলা হত "না হওয়া দেশের সেরা প্রধানমন্ত্রী" । রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কংগ্রেসের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন । তাই মনে করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁকেই বেছে নেবেন সোনিয়া গান্ধি । যদিও 2004 সালে প্রধানমন্ত্রী পদে বসেন মনমোহন সিং । এই সিদ্ধান্ত তাঁকে আঘাত করেছিল । তাঁর এই হতাশ হওয়াকে সঙ্গত বলেছিলেন মনমোহন সিং । 2017-তে বইটির আগের পর্বের প্রকাশ অনুষ্ঠানে মনমোহন সিং বলেন, "তাঁর হতাশ হওয়ার কারণ ছিল । যদিও উনি আমাকে শ্রদ্ধা করতেন । এবং আমাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ।" বইটির আগের পর্বে কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর জটিল সম্পর্ককে কীভাবে সামলেছিলেন তাঁর বর্ণনা করেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায় । এছাড়া বইটিতে বিভিন্ন রাজ্যে তাঁর রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে লেখা হয়েছে । 2016 সালে নোটবন্দীর সময় তাঁর ভূমিকা নিয়েও লেখা হয়েছে ।

প্রণববাবুর রাজনৈতিক চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল তিনি সারা জীবন ধরে এক জন সফল ‘ব্যাকরুম বয়’। বলা যায়, সারা জীবন তিনি ‘ব্যাক সিট ড্রাইভিং’ করেছেন । বলা যেতে পারে, তিনি যেন নাট্যমঞ্চের ‘গ্রিনরুম ম্যান’, নাটক বা ফিল্মের প্রযোজকের ভূমিকায় । তিনি নায়ক নন । কিন্তু অন্যতম ‘প্রোডিউসার অফ দা শো’। আর এই কমিটিতে সফল হওয়ার জন্য তাঁর চরিত্রে প্রধান গুণ ছিল, তিনি চিরকাল সকলকে ‘অন বোর্ড’ নিয়ে চলতে চেয়েছেন । তা সে লালুপ্রসাদ যাদবই হোন বা লালকৃষ্ণ আদবানি । তিনি ‘প্লুরালিস্ট’, তিনি ‘ম্যান অফ গ্রেট কনসেন্সাস’। ভারতীয় রাজনীতিতে সর্বসম্মতিতে তৈরি রাজনীতির তিনি অন্যতম জনক । এই একটা বৈশিষ্ট্যের জন্য পরমাণু চুক্তির সময় মনমোহন সিংহের আমলেও প্রকাশ কারাত ও সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে আলোচনায় বিবাদ মেটানোর দায়িত্বও পালন করেছিলেন তিনিই । আক্রমণাত্মক বিজেপি-কে ঠান্ডা করার জন্য কংগ্রেস জমানায় প্রণববাবুকেই মধ্যস্থতার দায়িত্ব দিতেন সোনিয়া গান্ধি । আবার কূটনৈতিক সমস্যায় বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ই ছিলেন ভরসার পাত্র ।

আরও পড়ুন : অজানা থেকে গেল অনেক কিছু...

জীবনের শেষ পর্বে রাজনৈতিক ‘সন্ন্যাস’ নিয়ে রাইসিনার বাসিন্দা হয়েছিলেন । কিন্তু, সে ক্ষেত্রেও নিজের স্বতন্ত্রকে বিসর্জন দেননি । রাইসিনা হয়ে উঠেছিল প্রণবময় । রাইসিনার বাগান-দরজা খুলেছিল সাধারণের জন্য । যেন সেখানেও নিজস্বতা । রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর প্রতিটি বিদেশ সফর নতুন মাইল-ফলক তৈরি করেছিল । পাশের দেশে বাংলাদেশ থেকে শ্রীলঙ্কা সব ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন নিজের মতো । তাই বোধ হয়, আগাগোড়া কংগ্রেসি হয়েও জীবনের শেষলগ্নে এসে সংঘের সভায় উপস্থিত হতে দুইবার ভাবেননি । বিতর্ক হয়েছে । সোনিয়াদের মুখের হাসি শক্ত হয়েছে । কিন্তু, নিজ সিদ্ধান্তে অচল থেকেছেন প্রণববাবু ।

আর এবার তাঁর নতুন বইকে ঘিরে ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের অন্দরমহলে শুরু হয়ে গিয়েছে নয়া বিতর্ক ।

Last Updated : Dec 12, 2020, 11:10 AM IST

For All Latest Updates

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.