এই প্রকৃতির সমস্ত জীবিত প্রাণীর বেঁচে থাকার অবলম্বন জল । পরিবেশ রক্ষায় জল একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে । মানবদেহের বিভিন্ন কোষের সমষ্টি ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পুরোদমে কাজ করতে প্রতিদিন অন্তত আট থেকে দশ গ্লাস জল দরকার । পানীয় জলকে পরিষ্কার হতে হবে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে, পরিচ্ছন্ন পানীয় জল প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার । সংরক্ষিত জলকে সুস্থ মানবদেহের জোরালো ভিত্তি বলা যায় । ইউনিসেফ বলছে, জলবাহিত রোগ আমাদের দেশকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে । দেশে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 1170 মিলিমিটার । এছাড়াও প্রাকৃতিক জলের উৎসগুলোও রয়েছে । অদক্ষ ও অপর্যাপ্ত জল সংরক্ষণের ফলে এর বেশিরভাগটাই সমুদ্রে গিয়ে নষ্ট হয় । অতিরিক্ত জলদূষণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া আমাদের দেশে গুরুতর জলসঙ্কট ডেকে আনছে । কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, 2016-17 সালে দেশের মাত্র 65 শতাংশ মানুষ পাইপ ও হ্যান্ড পাম্পের মাধ্যমে নিরাপদ পানীয় জল পান করে । কিন্তু হাজার হাজার গ্রাম এখনও সাধারণ জলসরবরাহ ব্যবস্থা থেকে অনেক দূরে রয়েছে । 2016 সালে প্রকাশিত "ওয়ার্ল্ড ওয়াটার এইড" রিপোর্ট অনুযায়ী, আমাদের দেশে সংরক্ষিত মিষ্টি জলের লভ্যতা সীমাবদ্ধ । কেন্দ্রের হিসেব অনুযায়ী, আমাদের বর্তমানর জলের চাহিদা প্রতি বছর 110 কোটি কিউবিক লিটার । 2025 সালের মধ্যে এটা 120 কোটি কিউবিক লিটার ও 2050 সালের মধ্যে তা 144 কোটি কিউবিক লিটারে পৌঁছবে । এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক বলেছে, 2030 সালের মধ্যে আমাদের দেশের জলসঙ্কট পঞ্চাশ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে ।
সিসার দূষণ
পরিচ্ছন্ন পানীয় জল পাওয়াটা আজকাল আমাদের দেশে একটা বিরাট ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে । বিশেষজ্ঞরা বলছে যে আমরা যে পানীয় জল পাই, তার মান সন্তোষজনক নয় । জলের শুদ্ধতা যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় খামতি থাকার ফলে, বহু মানুষ অজান্তেই দূষিত জল ব্যবহার করছেন । আইসিএমআর এবং এনআইএন-এর মতো সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে বহু এলাকায় জল ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং সিসা, আর্সেনিক, নিকেল ও তামার মতো ভারী ধাতুর মাধ্যমে দূষিত হতে পারে । কারখানা থেকে বেরিয়ে আসা রাসায়নিক এবং বাড়ির বর্জ্য ভূগর্ভস্থ জলকে দূষিত করছে । মৎস্যচাষ ও কৃষিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয় । চিকিৎসকরা বলেন, খাবার, পানীয় জল ও দুধে বিষ থাকলে তা রোগ ও শারীরিক সমস্যার জন্ম দিতে পারে । অর্গ্যানো-ক্লোরাইডে দূষিত দল থেকে মানুষের স্নায়ুতন্ত্র, লিভার, কিডনি ও পেশীতে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হয় । ভারী বৃষ্টি ও বন্যার সময় এই দূষিত জলের প্রভাব মানুষের ওপর আরও বেশি পড়ে ।
প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণ
জলদূষণের সুযোগ নিয়ে প্লাস্টিকের বোতলে পানীয় জলের ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে উঠছে । পানীয় জলের প্রয়োজন কিছুটা মেটাতে সক্ষম হলেও, এর ফলে তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণ । বিপজ্জনক রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে, প্রায় আশি শতাংশ প্লাস্টিকের বোতল মাটি ও জলের উৎসকে দূষিত করে । প্লাস্টিকের পুরোপুরি নষ্ট হতে প্রায় হাজার বছর লাগে । এর ফলে মানুষ, গবাদি পশু ও গাছপালা গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় । বর্তমানে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ টন প্লাস্টিক স্তুপীকৃত হয়ে চলেছে ।
সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে এখন থেকেই জলের উৎস সংরক্ষণ ও জলদূষণ বন্ধ করতে মনোযোগ দিতে হবে । সময় সময় নমুনা পরীক্ষা করে জনগণের কাছে পরিচ্ছন্ন জল পৌঁছে দিতে ব্যবস্থা নিতে হবে । নিষিদ্ধ কীটনাশকের ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে । রাসায়নিক ব্যবহারের কুপ্রভাব সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করতে হবে এবং জৈব চাষের জন্য তাঁদের উৎসাহিত করতে হবে । প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে গণসচেতনতার প্রচার আরও জোরালো করতে হবে ।