ETV Bharat / bharat

LAC মুছে দেওয়ার ছক - প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC)

ভারত 255 কিলোমিটার দীর্ঘ ডারবুক-শায়োক-দৌলত বেগ রোড তৈরি করেছে ৷ এই নির্মাণ কাজের জন্য চিনের ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ যার জন্যই গালওয়ানে সেনা ঘাঁটি ও সেতু ধ্বংস করেছে তারা ৷ প্রাক্তন বিদেশ সচিব শ্যাম সরণ জানান, চিনা আগ্রাসনের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত ভারত 640 কিলোমিটার এলাকা হারিয়েছে ৷

Plot to erase the LAC
LAC মুছে দেওয়ার ছক
author img

By

Published : Jun 20, 2020, 9:02 PM IST

হিমালয় অঞ্চলে ভারতের সঙ্গে আঞ্চলিক বিবাদ থাকা সত্ত্বেও চিন সম্প্রতি লাদাখে ঢুকে পড়েছে ৷ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে যখন চিনা সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC) পেরিয়ে চলে এসেছে৷ প্যাংগং সো, ডেমচক, গালওয়ান উপত্যকা এবং দৌলতবেগ ওলডিতে ভারতীয় ও চিনা সেনা মুখোমুখি বাদানুবাদে জড়িয়েছে ৷ গালওয়ান উপত্যকায় সাম্প্রতিক গোলমালের জেরে 20 জন ভারতীয় জওয়ান মারা গিয়েছেন ৷ এরই মধ্যে চিন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় নিজেদের অধিকার দাবি করেছে ৷

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC) হল 3440 কিলোমিটারের একটা চিহ্নিতকরণ এলাকা । যার মাধ্যমে ভারতীয় সেনার দখলে থাকা এবং চিনা সেনার দখলে থাকা অঞ্চলকে আলাদা করা হয়৷ যেহেতু LAC একাধিক জায়গায় ওভারল্যাপ করে আছে, তাই চিনা নিজেদের অবৈধ দাবি সবসময় জানায় ৷ প্রায়শই বিবাদ এবং মুখোমুখি বাদানুবাদ এখানকার সাধারণ ঘটনা ৷ LAC তিনটি অংশে বিভক্ত৷ পশ্চিম, পূর্ব ও মধ্য৷

পশ্চিম অংশ (উত্তর-পূর্বে কারাকোরাম পাস থেকে ডেমচক পর্যন্ত 1570 কিলোমিটার বিস্তার লাভ করে আছে) ৷ 1950 সাল থেকে আকসাই চিন হল ভারত ও চিনের সবচেয়ে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা ৷ এর এলাকায় প্রায় 38 হাজার কিলোমিটার ৷ 1957 সালে চিন ওই এলাকা দখল করে ৷ কিন্তু ভারত বারবার দাবি করে এসেছে যে, ওই এলাকা লাদাখের অংশ ৷ 1962 সালে চিন আকসাই চিন বরাবর একটি রাস্তা তৈরি করে৷ ওই রাস্তা সরাসরি তিব্বত ও জিনজিয়াংয়ের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করে৷ ডেমচক একটা গ্রাম এবং ভারত ও চিনের মধ্যে বিতর্কিত ডেমচক সেক্টরে সেনা মোতায়েনও রয়েছে৷ ডেমচকের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত সীমান্ত বিস্তৃত রয়েছে বলে ভারতীয়রা দাবি করে৷ যেখানে ভারত ও চিনের সেনারা নিয়মিত মুখোমুখি বাদানুবাদে জড়ায় ৷

পূর্ব অংশ (সিকিম থেকে মায়ানমারের সীমান্ত পর্যন্ত 1325 কিলোমিটার এলাকা)৷ সবচেয়ে বিতর্কিত অঞ্চল রয়েছে অরুণাচল প্রদেশে৷ কিন্তু চিন অরুণাচল প্রদেশকে তাদের অংশ বলে কয়েক দশক ধরে দাবি করে আসছে৷ আপার সুবর্ণসিরি ডিভিশনের একটা অংশ হল অ্যাসাফিলা৷ যা জঙ্গল ও পার্বত্য এলাকা নিয়ে তৈরি৷ 1962 সালের চিন-ভারত যুদ্ধের সময় এই এলাকা চিনের দখলে চলে যায়৷ বর্তমানে এই এলাকায় কোনও দেশের কর্তৃত্ব নেই৷ তিব্বতে চিনা মিলিটারি ঘাঁটি মিগইটুনের ঠিক উলটোদিকে রয়েছে লংজু৷ এই এলাকাও আপার সুবর্ণসিরি ডিভিশনের মধ্যে পড়ে৷ 1959 সালে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (PLA) ও অসম রাইফেলসের সঙ্গে প্রথম সামরিক যুদ্ধ এখানেই হয় ৷ ভারত লংজু পুনরুদ্ধার করতে পারেনি৷ কিন্তু তার থেকে 10 কিলোমিটার দক্ষিণে মাজা এলাকায় একটা পোস্ট তৈরি করে ৷ তাওয়াংয়ের প্রায় 60 কিলোমিটার আগে অবস্থিত নামকা চু নদী উপত্যকা৷ এখানেই 1962 সালের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল৷ সামডোরোং চু হল একটা ক্ষুদ্র নদী, যা নামকা চু-র পূর্ব দিকে অবস্থিত ৷ এই এলাকা তাওয়াং জেলার কা ফো এলাকার মধ্যে পড়ছে ৷ 1986 সালে চিনের সেনাবাহিনী এই এলাকা দখল করে নেয়৷ 1986 সালের পরবর্তী অংশে পালটা প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় সেনা ইয়ংস্টে (তাওয়াং জেলার একটি অংশ) দখল করে নেয় ৷

মধ্য অংশ (ডেমচক থেকে নেপালের সীমান্ত সংলগ্ন 545 কিলোমিটার এলাকা) হল হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ৷ উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার পশুচারণ ক্ষেত্রও ওই এলাকার মধ্যে পড়ে ৷ এই এলাকাতেও চিনা আক্রমণের ইতিহাস রয়েছে ৷

হিমালয় অঞ্চলে অবস্থি প্যাংগং সো বা প্যাংগং হ্রদ ৷ এটা 135 কিলোমিটার দীর্ঘ একটা হ্রদ ৷ ভারত থেকে চিনের স্বশাসিত তিব্বত এলাকা পর্যন্ত এর বিস্তার৷ লেহ থেকে 54 কিলোমিটার দূরে এটা অবস্থিত ৷ এই শান্ত হ্রদ থেকেই 1962 সালের যুদ্ধে চিন মূল আক্রমণ করেছিল ৷ প্যাংগং সো-এর পূর্বপ্রান্তে চিন তাদের জাতীয় সড়ক তৈরি করেছে ৷ ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের পরিস্থিতি এই হ্রদের অবস্থান চিনের জন্য কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷

গালওয়ান নদী বিতর্কিত আকসাই চিন এলাকা থেকে ভারতের লাদাখ পর্যন্ত বিস্তৃত৷ 1962 সালের যুদ্ধে মূল এলাকাগুলির মধ্যে গালওয়ান উপত্যকাও অন্যতম ছিল, যেখানে ভারত ও চিনের সেনার মধ্যে লড়াই হয়েছিল৷ এই নদীর নামকরণ করা হয়েছে গোলাম রসুল গালওয়ানের নামে৷ যিনি একজন কাশ্মীরি বাসিন্দা এবং লাদাখে ঘুরে বেড়াতেন ৷ যখন ভারত আকসাই চিনের অধিকারের দাবি অনড় থেকেছে, তখন চিনের তরফে গালওয়ান নদীর পশ্চিম এলাকাকে নিজের বলে দাবি করা হয়েছে ৷

দৌলতবেগ ওল্ডি হল লাদাখে অবস্থিত একটি সামরিক ঘাঁটি ৷ এটা আকসাই চিন থেকে ঠিক 9 কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত ৷ প্রায় 43 বছর পর 2008 সালে ভারতীয় বায়ুসেনা সেখানে পৌঁছায় ৷ 1962 সালের যুদ্ধের পর থেকে এই এলাকাও বিতর্কিত ৷

সীমান্তে এই আক্রমণের পিছনে চিনের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব স্পষ্ট ৷ পূর্ব লাদাখকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করার পর চিনা আগ্রাসনের সাক্ষী ডেমচক-কুয়ুল অঞ্চলের বিস্তীর্ণ অংশ ৷ লাদাখের আগের সীমান্ত ছিল কেগুনারো-তে ৷ পরে চিনের সেনাবাহিনী একটু একটু করে নাগাসং (1984), নাকুং (1991), লাংমা সেরড্যাং(1992) এবং স্কাকজুং(2008) পর্যন্ত এগিয়ে এসেছে ৷ 2000 সালে চিন চিপ চ্যাপ নদী দখল করে নেয় ৷ যেটা বিতর্কিত আকসাই চিন থেকে চিনের জিংজ্যাং অঞ্চল পর্যন্ত প্রবাহিত ৷ 2013 সালে চিন ভারতের মূল ভূখণ্ডের 19 কিলোমিটার দখল করে নেয় ৷ প্রাক্তন বিদেশ সচিব শ্যাম সরণ জানান, চিনা আগ্রাসনের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত ভারত 640 কিলোমিটার এলাকা হারিয়েছে ৷

ফলে ভারত ও চিনের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিতর্কের একটা বড় ইতিহাস রয়েছে ৷ সাম্প্রতিক উত্তেজনা আসলে নতুন কিছু ঘটনার ফলাফল ৷ চিনের আগ্রাসন রুখতে ভারত তাদের সীমান্ত পরিকাঠামোর মান বৃদ্ধি করার কাজ শুরু করেছে ৷ ভারত 255 কিলোমিটার দীর্ঘ ডারবুক-শায়োক-দৌলত বেগ রোড তৈরি করেছে ৷ এই নির্মাণ কাজের জন্য চিনের ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ যার জন্যই গালওয়ানে সেনা ঘাঁটি ও সেতু ধ্বংস করেছে তারা ৷ লাদাখকে সম্প্রতি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবেই ঘোষণা করা হয়েছে ৷ চিন এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে ৷ একই সঙ্গে পূর্ব লাদাখে নিজেদের অধিকারের দাবি জানিয়েছে ৷ এরপর চিন রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অভিযোগ জানিয়েছে ৷ তাদের দাবি, জম্মু ও কাশ্মীরের পুনর্গঠন বেআইনি ৷ একাধিক দেশ চিনের বিরুদ্ধে নভেল কোরোনা ভাইরাস ছড়ানোর অভিযোগ এনেছে ৷ COVID19-এর উৎস খুঁজতে তদন্তের জন্য ভারতের সাহায্য চেয়েছে অ্যামেরিকা ৷ অন্য দেশের সঙ্গে সখ্যতা বৃদ্ধি করার বিষয়ে ভারতকে হুমকি দেওয়ার জন্যই চিন সীমান্তে আক্রমণ শুরু করেছে ৷ একই তারা নেপালকেও ভারতের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে ৷ নেপালকে নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র তৈরি করতে চিনই চাপ দিয়েছে ৷ যার মধ্যে লিপুলেক ও কালাপানি রয়েছে ৷

হিমালয় অঞ্চলে ভারতের সঙ্গে আঞ্চলিক বিবাদ থাকা সত্ত্বেও চিন সম্প্রতি লাদাখে ঢুকে পড়েছে ৷ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে যখন চিনা সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC) পেরিয়ে চলে এসেছে৷ প্যাংগং সো, ডেমচক, গালওয়ান উপত্যকা এবং দৌলতবেগ ওলডিতে ভারতীয় ও চিনা সেনা মুখোমুখি বাদানুবাদে জড়িয়েছে ৷ গালওয়ান উপত্যকায় সাম্প্রতিক গোলমালের জেরে 20 জন ভারতীয় জওয়ান মারা গিয়েছেন ৷ এরই মধ্যে চিন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় নিজেদের অধিকার দাবি করেছে ৷

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC) হল 3440 কিলোমিটারের একটা চিহ্নিতকরণ এলাকা । যার মাধ্যমে ভারতীয় সেনার দখলে থাকা এবং চিনা সেনার দখলে থাকা অঞ্চলকে আলাদা করা হয়৷ যেহেতু LAC একাধিক জায়গায় ওভারল্যাপ করে আছে, তাই চিনা নিজেদের অবৈধ দাবি সবসময় জানায় ৷ প্রায়শই বিবাদ এবং মুখোমুখি বাদানুবাদ এখানকার সাধারণ ঘটনা ৷ LAC তিনটি অংশে বিভক্ত৷ পশ্চিম, পূর্ব ও মধ্য৷

পশ্চিম অংশ (উত্তর-পূর্বে কারাকোরাম পাস থেকে ডেমচক পর্যন্ত 1570 কিলোমিটার বিস্তার লাভ করে আছে) ৷ 1950 সাল থেকে আকসাই চিন হল ভারত ও চিনের সবচেয়ে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা ৷ এর এলাকায় প্রায় 38 হাজার কিলোমিটার ৷ 1957 সালে চিন ওই এলাকা দখল করে ৷ কিন্তু ভারত বারবার দাবি করে এসেছে যে, ওই এলাকা লাদাখের অংশ ৷ 1962 সালে চিন আকসাই চিন বরাবর একটি রাস্তা তৈরি করে৷ ওই রাস্তা সরাসরি তিব্বত ও জিনজিয়াংয়ের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করে৷ ডেমচক একটা গ্রাম এবং ভারত ও চিনের মধ্যে বিতর্কিত ডেমচক সেক্টরে সেনা মোতায়েনও রয়েছে৷ ডেমচকের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত সীমান্ত বিস্তৃত রয়েছে বলে ভারতীয়রা দাবি করে৷ যেখানে ভারত ও চিনের সেনারা নিয়মিত মুখোমুখি বাদানুবাদে জড়ায় ৷

পূর্ব অংশ (সিকিম থেকে মায়ানমারের সীমান্ত পর্যন্ত 1325 কিলোমিটার এলাকা)৷ সবচেয়ে বিতর্কিত অঞ্চল রয়েছে অরুণাচল প্রদেশে৷ কিন্তু চিন অরুণাচল প্রদেশকে তাদের অংশ বলে কয়েক দশক ধরে দাবি করে আসছে৷ আপার সুবর্ণসিরি ডিভিশনের একটা অংশ হল অ্যাসাফিলা৷ যা জঙ্গল ও পার্বত্য এলাকা নিয়ে তৈরি৷ 1962 সালের চিন-ভারত যুদ্ধের সময় এই এলাকা চিনের দখলে চলে যায়৷ বর্তমানে এই এলাকায় কোনও দেশের কর্তৃত্ব নেই৷ তিব্বতে চিনা মিলিটারি ঘাঁটি মিগইটুনের ঠিক উলটোদিকে রয়েছে লংজু৷ এই এলাকাও আপার সুবর্ণসিরি ডিভিশনের মধ্যে পড়ে৷ 1959 সালে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (PLA) ও অসম রাইফেলসের সঙ্গে প্রথম সামরিক যুদ্ধ এখানেই হয় ৷ ভারত লংজু পুনরুদ্ধার করতে পারেনি৷ কিন্তু তার থেকে 10 কিলোমিটার দক্ষিণে মাজা এলাকায় একটা পোস্ট তৈরি করে ৷ তাওয়াংয়ের প্রায় 60 কিলোমিটার আগে অবস্থিত নামকা চু নদী উপত্যকা৷ এখানেই 1962 সালের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল৷ সামডোরোং চু হল একটা ক্ষুদ্র নদী, যা নামকা চু-র পূর্ব দিকে অবস্থিত ৷ এই এলাকা তাওয়াং জেলার কা ফো এলাকার মধ্যে পড়ছে ৷ 1986 সালে চিনের সেনাবাহিনী এই এলাকা দখল করে নেয়৷ 1986 সালের পরবর্তী অংশে পালটা প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় সেনা ইয়ংস্টে (তাওয়াং জেলার একটি অংশ) দখল করে নেয় ৷

মধ্য অংশ (ডেমচক থেকে নেপালের সীমান্ত সংলগ্ন 545 কিলোমিটার এলাকা) হল হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ৷ উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার পশুচারণ ক্ষেত্রও ওই এলাকার মধ্যে পড়ে ৷ এই এলাকাতেও চিনা আক্রমণের ইতিহাস রয়েছে ৷

হিমালয় অঞ্চলে অবস্থি প্যাংগং সো বা প্যাংগং হ্রদ ৷ এটা 135 কিলোমিটার দীর্ঘ একটা হ্রদ ৷ ভারত থেকে চিনের স্বশাসিত তিব্বত এলাকা পর্যন্ত এর বিস্তার৷ লেহ থেকে 54 কিলোমিটার দূরে এটা অবস্থিত ৷ এই শান্ত হ্রদ থেকেই 1962 সালের যুদ্ধে চিন মূল আক্রমণ করেছিল ৷ প্যাংগং সো-এর পূর্বপ্রান্তে চিন তাদের জাতীয় সড়ক তৈরি করেছে ৷ ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের পরিস্থিতি এই হ্রদের অবস্থান চিনের জন্য কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷

গালওয়ান নদী বিতর্কিত আকসাই চিন এলাকা থেকে ভারতের লাদাখ পর্যন্ত বিস্তৃত৷ 1962 সালের যুদ্ধে মূল এলাকাগুলির মধ্যে গালওয়ান উপত্যকাও অন্যতম ছিল, যেখানে ভারত ও চিনের সেনার মধ্যে লড়াই হয়েছিল৷ এই নদীর নামকরণ করা হয়েছে গোলাম রসুল গালওয়ানের নামে৷ যিনি একজন কাশ্মীরি বাসিন্দা এবং লাদাখে ঘুরে বেড়াতেন ৷ যখন ভারত আকসাই চিনের অধিকারের দাবি অনড় থেকেছে, তখন চিনের তরফে গালওয়ান নদীর পশ্চিম এলাকাকে নিজের বলে দাবি করা হয়েছে ৷

দৌলতবেগ ওল্ডি হল লাদাখে অবস্থিত একটি সামরিক ঘাঁটি ৷ এটা আকসাই চিন থেকে ঠিক 9 কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত ৷ প্রায় 43 বছর পর 2008 সালে ভারতীয় বায়ুসেনা সেখানে পৌঁছায় ৷ 1962 সালের যুদ্ধের পর থেকে এই এলাকাও বিতর্কিত ৷

সীমান্তে এই আক্রমণের পিছনে চিনের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব স্পষ্ট ৷ পূর্ব লাদাখকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করার পর চিনা আগ্রাসনের সাক্ষী ডেমচক-কুয়ুল অঞ্চলের বিস্তীর্ণ অংশ ৷ লাদাখের আগের সীমান্ত ছিল কেগুনারো-তে ৷ পরে চিনের সেনাবাহিনী একটু একটু করে নাগাসং (1984), নাকুং (1991), লাংমা সেরড্যাং(1992) এবং স্কাকজুং(2008) পর্যন্ত এগিয়ে এসেছে ৷ 2000 সালে চিন চিপ চ্যাপ নদী দখল করে নেয় ৷ যেটা বিতর্কিত আকসাই চিন থেকে চিনের জিংজ্যাং অঞ্চল পর্যন্ত প্রবাহিত ৷ 2013 সালে চিন ভারতের মূল ভূখণ্ডের 19 কিলোমিটার দখল করে নেয় ৷ প্রাক্তন বিদেশ সচিব শ্যাম সরণ জানান, চিনা আগ্রাসনের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত ভারত 640 কিলোমিটার এলাকা হারিয়েছে ৷

ফলে ভারত ও চিনের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিতর্কের একটা বড় ইতিহাস রয়েছে ৷ সাম্প্রতিক উত্তেজনা আসলে নতুন কিছু ঘটনার ফলাফল ৷ চিনের আগ্রাসন রুখতে ভারত তাদের সীমান্ত পরিকাঠামোর মান বৃদ্ধি করার কাজ শুরু করেছে ৷ ভারত 255 কিলোমিটার দীর্ঘ ডারবুক-শায়োক-দৌলত বেগ রোড তৈরি করেছে ৷ এই নির্মাণ কাজের জন্য চিনের ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ যার জন্যই গালওয়ানে সেনা ঘাঁটি ও সেতু ধ্বংস করেছে তারা ৷ লাদাখকে সম্প্রতি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবেই ঘোষণা করা হয়েছে ৷ চিন এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে ৷ একই সঙ্গে পূর্ব লাদাখে নিজেদের অধিকারের দাবি জানিয়েছে ৷ এরপর চিন রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অভিযোগ জানিয়েছে ৷ তাদের দাবি, জম্মু ও কাশ্মীরের পুনর্গঠন বেআইনি ৷ একাধিক দেশ চিনের বিরুদ্ধে নভেল কোরোনা ভাইরাস ছড়ানোর অভিযোগ এনেছে ৷ COVID19-এর উৎস খুঁজতে তদন্তের জন্য ভারতের সাহায্য চেয়েছে অ্যামেরিকা ৷ অন্য দেশের সঙ্গে সখ্যতা বৃদ্ধি করার বিষয়ে ভারতকে হুমকি দেওয়ার জন্যই চিন সীমান্তে আক্রমণ শুরু করেছে ৷ একই তারা নেপালকেও ভারতের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে ৷ নেপালকে নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র তৈরি করতে চিনই চাপ দিয়েছে ৷ যার মধ্যে লিপুলেক ও কালাপানি রয়েছে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.